আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় সেই আমার বহু পুরোনো দিনের পরিচিত এক হাসিমুখের ইটিভির সেই সুন্দর এক লেডি রিপোর্টার এর গল্প। যার কথা লিখতে আমার ভয়ে বুক কেঁপে ওঠেনি। ইটিভির আধ ঘণ্টার অনুষ্ঠান কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এর সেই, এই দেশ এই সময়ের সুদক্ষ কারিগর সোমা মুখোপাধ্যায় এর কথা। হ্যাঁ, সেই আনন্দবাজার পত্রিকার বিখ্যাত হেলথ বিটের সাংবাদিক সোমা মুখোপাধ্যায় এর কথা। কাগজে যাঁর ছাপার অক্ষরের তাঁর নাম দেখেই আর ভালো লেখা দেখেই আমি উত্তেজনায়, ভালো কপি বলে হয়তো তাঁকে মেসেজ করে ফেলি। আমি ভুল করেই কোনো নিয়মনীতি না মেনেই। হয়তো ছোট্ট উত্তর আসে কোনোদিন আবার কোনও সময় ব্যস্ততায় সেটা আসেও না। তাতে কিছুই মনে হয় না আমার। দুজনের সম্পর্ক আজও এক ভাবেই রয়ে গেছে আমাদের।
আসলে পরিচিত মানুষদের জন্য এইভাবেই আমার মনটা কেমন করে যেন জীবনের ঘেরাটোপ ছেড়ে, সম্পর্কের কড়া নজরদারি আর সম্পর্কের হিসেব নিকেশ ছেড়ে মাঠে ময়দানে ছুটে বেড়ায় আপনমনে আপন খেয়ালে। একবার পরখ করে দেখতে ইচ্ছা হয় ওই সব বহু দুর দেশের ওই চেনা মানুষগুলো কি আজও আমায় চিনতে পারে নাকি সবাই ভুলেই গেছে আমায়। মাঝে মাঝেই পরখ করে দেখতে বড়ই ইচ্ছা হয় আমার।
আর তাই ফোন করে সেই সকাল সকাল হুগলীর শ্রীরামপুরের ইটিভি বাংলার অফিস থেকে এই দেশ এই সময়ের সব ছবি আর কপি পাঠিয়ে জানিয়ে দেওয়া তাকে। আর কিছু লাগবে কি। আমার সবকিছু চলে গেছে ভিস্যাট দিয়ে অমিতাভ সেনগুপ্ত ছবি পেয়েছে জানিয়েছে আমায়। ওপর প্রান্ত থেকে উত্তর আসতো খুব ধীর গলায়, না না, বেশ ভালো হয়েছে স্টোরিটা। আর কিছুই লাগবে না। এই সপ্তাহে যাবে তোমার এই স্টোরি এই দেশ এই সময়ের অনুষ্ঠানে। খবরের থেকে বেশি সময় ধরে দেখাবে নিজের জেলার নানা ধরনের স্টোরি। সেটা বেশ ভালই লাগত আমার। আর তার জন্য এত দরদ দিয়ে এই স্টোরি করা।
আর ধীর স্থির হয়ে গুছিয়ে সংসার সামলানোর মতোই সে গুছিয়ে নিজের ওই আধ ঘণ্টার সেই শো সামলে দিত কেমন হাসতে হাসতেই কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়েই হৈ হুল্লোড় না করেই। কাজ করে নিজের ঢাক নিজে না পিটিয়েই। আজও যেমন কত কঠিন কাজ আর খববের দুনিয়ায় কত কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করছে সে হাসতে হাসতেই একদম নীরবে চুপচাপ মিষ্টি হাসি হেসে। ঘরে, বাইরে, অফিসে সর্বত্রই। সত্যিই অসাধারণ সাধে কি আর মেয়েদের বলে মা দশভূজা।
সেই মহাকরণে সপ্তাহের কি বার আজ আর মনে নেই আমার, বুধবার কি কি জানে। যেদিন সকালে ডিউটি পড়তো তার, কাঁধে একটা ব্যাগ নিয়ে হাসি মুখে প্রবেশ করতো সে মহাকরণে প্রেস কর্নারে। একদম ধীর পায়ে ধীর গতিতে। একদম ফিটফাট হয়ে। একটু নিজের খবরের ফিল্ডের বাইরে অন্য ফিল্ড বলে একটু অস্বস্থি আর অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করলেও নতুন ফিল্ডে ফিল্ডিং করতো সে হাসি মুখেই কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে।
ঠিক যেমন হঠাৎ করেই টিভির দুনিয়া ছেড়ে ইটিভি বাংলা ছেড়ে কাগজের দুনিয়ায় পা দিলো সে আচমকাই। আর মহাকরণে আমায় দেখেই বলতো কিছু হয়নি তো সকালে এখনও। আমি বলতাম না না, কিছুই হয়নি এখনও। বেশ নিশ্চিন্ত হয়ে যেতো এটা শুনে। হয়তো পুরোনো দিনের পরিচয় আর আলাপ এর জন্য এমন সহজ সরল ভাবেই মিশতে পারত সে ওই বিখ্যাত সাদা বাড়ির লোক হয়েও। যেটা অনেকের কাছেই এমন সহজ সরল ব্যবহার পাইনি আমি। একটা শক্ত বর্মের আড়ালেই রয়ে গেছে তারা অনেকেই এক সাথে কাজ করেও।
আমার এই রাতের অন্ধকারে আচমকা স্মৃতির ঝাঁপি খুলে উপুড় করে বসে পড়া। আর তারপর একপয়সা, দু পয়সা, তিন পয়সাকে খুঁজে খুঁজে বের করা একে একে আর এমন হারিয়ে যাওয়া নানা চরিত্রকে খুঁজে পেয়ে একে অপরকে কেমন অক্লেশে কাছে টেনে নেওয়া, হারিয়ে যাওয়া মানুষের সাথে যোগাযোগ হয়ে যাওয়া, স্মৃতির সরণী বেয়ে পথ চলা শুরু হওয়া। কতদিনের পুরোনো জং পরা সম্পর্কের মাঝে নতুন করে এক মধুর স্মৃতির জোয়ারে ভেসে যাওয়া। বেশ মন্দ নয় কিন্তু কি বলেন আপনারা।
জীবনের এই হলুদ সবুজ সর্ষে ক্ষেতের মাঝে এমন নানা রঙে রঙিন হয়ে ভেসে বেড়ানো। ফেলে আসা অতীতকে আঁকড়ে ধরা। মন্দ কি এমন কোনো কিছু ভেবে তো আর আমার এই আঁকিবুঁকি ব্লগে আঁকাবাঁকা অক্ষরে মেঠো পথ ধরে হেঁটে বেড়ানো নয়। তাই যখন সেই এবেলায় লোক নেওয়া হবে বলে শুনলাম। আমি ইন্টারভিউতে ডাক পেলাম।
এক বুক সাহস নিয়ে গেলাম সাদা বাড়িতে ইন্টারভিউ দিতে। সেই সময় আমায় কত যে সাহস জুগিয়েছিল সেই সময় এই সোমা মুখোপাধ্যায় সেটা আজও মনে পড়ে যায় আমার। সত্যিই তো জীবনের এই সব গভীর গোপন কথা তো রাতের অন্ধকারেই আচমকা স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বেরিয়ে আসে এমন হঠাৎ করেই।
মণিমানিক্যের মত ছড়িয়ে পরে অন্ধকার রাস্তায় এদিক ওদিক ছিটকে। আর আমি সেই অন্ধকার রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে সযত্নে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে তাদেরকে আঁকড়ে ধরে রাখি বুকের মাঝে। আমার এই সাদা জীবনের কালো কথা বলার জন্য, লেখার জন্য। হারিয়ে যাওয়া মানুষদের খুঁজে বের করার জন্য। ভালো থেকো তুমি সোমা।
এই দেশ এই সময়ের সোমা - অভিজিৎ বসু।
আঠারো ডিসেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
Beautiful writing
উত্তরমুছুন