সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

তাপসী মালিক দিবস

আজ সেই ১৮ ই ডিসেম্বর। সিঙ্গুর জমি আন্দোলনের প্রথম শহীদ তাপসী মালিকের মৃত্যু দিন আজ। সেই সিঙ্গুরের তিন ফসলি জমি। সবুজ ধান ক্ষেত। হলুদ সর্ষে ক্ষেত। কালো একটি হাসি মাখা মুখের গ্রাম্য মেয়ে। উজ্জ্বল তার দুটি চোখ। যে দুটি চোখের মাঝে প্রতিবাদের ভাষা লুকিয়ে থাকে সংগোপনে। আর তার বুকের মাঝে জ্বলে আগুন। বাপ ঠাকুর্দার জমিকে জোর করে দখল করতে দেওয়া যাবে না কিছুতেই। আর সেই জোর করে জমি অধিগ্রহণ করতে না দিতেই আন্দোলনে যোগ দেয় সে। সিঙ্গুরের জমি আন্দোলন। যে আন্দোলনের প্রথম শহীদ সেই সিঙ্গুরের বজেমেলিয়ার মেয়ে তাপসী মালিক। যাঁর মৃত্যুর জন্য বদলে গেলো বাংলার রাজনীতির গোটা ছবিটাই। ভেঙে পড়লো ৩৪ বছরের বাম আমলের পুরোনো স্থাপত্যের অন্যতম সেরা নিদর্শন। 

খবরটা শুনে মনটা একটু থমকে গেল। আজ মারা গেছেন সিঙ্গুরের তাপসী মালিক ধর্ষণকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত সিপিএম নেতা সুহৃদ দত্ত। কত স্মৃতি উপচে পড়ছে মনের কোনে কোনে।কত অচেনা অজানা কথা মনে পড়ে গেল আমার। মনের কোনে কত স্মৃতি ভীড় করে দাঁড়িয়ে আছে। তাপসীর হত্যাকাণ্ড নিয়ে এক সময় তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য-রাজনীতি। তাতে নাম জড়িয়ে যায় সুহৃদ দত্তের। তখন তিনি ছিলেন সিপিএমের সিঙ্গুর জোনাল সম্পাদক। ২০০৭ সালের জুন মাসে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হন সুহৃদ দত্ত এবং দেবু মালিক। প্রায় দু’বছর জেলে ছিলেন তিনি। তারপর ২০০৯-এর ফেব্রুয়ারিতে জামিনে ছাড়া পান তিনি। 

জেল থেকে ছাড়া পেলেও আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি সুহৃদ দত্ত। অসুস্থতা তাঁকে গ্রাস করে ধীরে ধীরে। গোটা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে বিষাক্ত ঘা। অনেক ডাক্তার দেখিয়েও তাকে আর সুস্থ করা যায় না। শেষ জীবনে তার স্মৃতিশক্তিও অনেকটা নষ্ট হয়ে যায়। সিঙ্গুরের জলাপাড়ায় তার বাড়ি ছিল। সিঙ্গুরে টাটাদের ন্যানো কারখানা যেখানে তৈরি হয়েছিল, সেখান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে জলাপাড়া এলাকা। কাজের সুত্রে অনেক বার গেছি তার বাড়ি। সিঙ্গুরের দগ দগে ঘাকে বুকে চেপে নিয়ে তিনি বলতেন, আবার কি হলো রে বাবা কি দরকার তোদের, সব তো হয়ে গেছে আমি কিছুই বলবো না কিছুই যা তোরা আমায় আর বিরক্ত করিস না। এই বলে ধীর পায় ঘরে ঢুকে পড়তেন তিনি।

 তাঁর ঘরের দেওয়ালে রামকৃষ্ণ, স্ট্যালিন, মার্কস এর ছবি। ভাবলেও অবাক লাগে আমার। এই লোকটাই সিঙ্গুরের কারখানার জন্যে দিন রাত এক করে সকলকে এককাট্টা করে ছিলেন জমির জন্য। আবার সে লোকটাই এমন কাজ করতে পারে। কেন জানিনা মনটা খারাপ হয়ে যেত সুহৃদদাকে দেখে। ফ্যাল ফ্যাল করা কেমন একটা শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমাদের বলতেন যা তোরা আর জ্বালাস না তোরা। 

মনে হতো সত্যিই বোধ হয় বলছে মানুষটা কিন্তু তাহলে সেই আঠারো ডিসেম্বর এর ভোর বেলা শীতের রাতে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আমি। হটাৎ ভোর চারটা কুড়ি মাথার পাশে রাখা মোবাইল ফোনের আওয়াজ। ঘুম জড়ানো চোখে হাত বাড়িয়ে ফোনটা ধরি আলগোছে। ওপর প্রান্তে তৃণমূল নেতা মদন মিত্রর গলা অভিজিৎ দিদি কথা বলবে ধর ফোনটা। এক ঝটকায় ঘুমের ঘোর কেটে যায় আমার। ধড়মড় করে উঠে বসি বিছানায়। ওপর প্রান্তে তখন ধর্মতলার অনশন মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আওয়াজ ভাই অভিজিৎ,আমার উত্তর হ্যা দিদি বলুন , ভাই ওরা তাপসীকে পুড়িয়ে মেরেছে সিপিএমের গুন্ডারা সব। একটু দেখো তুমি। এখন ওরা অন্য প্ল্যান করছে এটা ধর্ষণ করে খুন করে ওরা তাপসীর দেহ পুড়িয়ে দিয়েছে একটু দেখো তুমি। সি পি এম বলছে তাপসী আত্মহত্যা করেছে তা নয়, ওরা এটা মিথ্যা কথা বলছে সিপিএম।

 দীর্ঘ অনশনে কাহিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই কটি কথা বলে ফোন কেটে দিলেন। আমার সারা শরীরে আগুন জ্বলে উঠলো যেনো। সেকি এই ভাবে অত্যাচার করে একটা নিরীহ মেয়েকে মেরে ফেলে চুপি চুপি পুড়িয়ে দেবে প্রমাণ লোপাট করতে। এটা হতে দেওয়া যায় না কোনো ভাবেই। সঙ্গে সঙ্গে আমি আমার সিঙ্গুরের ক্যামেরাম্যান রানা কর্মকারকে ফোন করলাম। ফোন করলাম কলকাতা টিভির কামেরামান গৌতম ধোলেকে। বললাম এক্ষুনি তাপসীর গ্রামে যা দেখ বডি পুড়ছে পুলিশ গায়েব করে দেবে তাপসীর বডি। যে করে হোক এই ছবিটা কর তোরা আমি আসছি একটু ভোর হলেই। 

রাতের অন্ধকারে আচমকা এই খবরে আমিও কিছুটা যেনো দিশেহারা। কি করবো বুঝতে পারলাম না। তার ওপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর ফোন, ভাই অভিজিৎ দেখো একটু তুমি। আমার সারা শরীরে একটা শিহরণ খেলে গেল। ঘুমের ঘোরে বউ বললো কি হলো কি রে বাবা রাত দুপুরে ঘুমোতে পারি না। আমি বললাম উঠে পরো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফোন করেছেন আমায়। সিঙ্গুরে বড় খবর হয়েছে আমি বের হবো এক্ষুনি।

 দিনের আলো ছড়িয়ে পড়তেই ঝাঁপিয়ে পড়ল গোটা মিডিয়া। হই হই করে খবরের শিরোনামে তাপসীর ঝলসানো আধ পোড়া দেহ। যা পুলিশ গাড়িতে কম্বল জড়িয়ে লুকিয়ে তোলার সময় ছবি করে ফেলে গৌতম আর রানা কোনও রকমে। শীতের রাতে ওরাও এই ছবি করতে গিয়ে ঘেমে যায় একি দেখছে তারা। কি নৃশংস করে পুড়িয়ে মেরেছে একটা মেয়েকে। কেনো ছবি তোলা হচ্ছে এই বলে পুলিশ অনেক ভয় দেখায় তাদের দুজনকে। ছবি তোলার লোক আসার খবর পেয়ে পুলিশ তাপসীর বডি নিয়ে টাটার ঘেরা জমির ওপর দিয়ে জীপ চালিয়ে চম্পট দেয় দ্রুত। এসব তো ইতিহাস। সেই ইতিহাসের অন্যতম নায়ক আজ নেই। আর সেই ঘটনার নায়ক আজ নেই চলে গেল দূরে অনেক দূরে। যার কোনো ভাবে বিচার হলো না সে দোষ করেছে না করেনি করেনি, জানতে পারলো না সে নিজেও। শুধু কটা বছর জেল খেটে ঘরে বসে অসুস্থ্ হয়ে কিছু স্মৃতিকে আগলে রেখে মরে গেলো মানুষটা।

জীবনের সব কিছু দিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিল গ্রামে কারখানা হবে। যে কারখানা হলে তার গ্রামের ছেলেরা কাজ পাবে। সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে যায় একটা মেয়ের মৃত্যুতে। যে মৃত্যুর দায় তার ওপর বর্তায় মমতার দল। আর তাপসীর ঝলসানো আধ পোড়া দেহ নিয়ে রাজনীতির কারবারিরা তাদের সুদ আসল একেবারে তুলে নেয় দাড়িপাল্লা মেপে। রাজনীতির ময়দানে এক ধাপে অনেক এগিয়ে যায় তারা। নিজের দল ও একসময় ভাবতে থাকে বোধ হয় বিবাগী বাউল বিয়ে না করা এই লোকটা বোধ হয় সত্যিই এই জঘন্য অপরাধ করেছে। আর এই সব যন্ত্রণা নিয়ে কোনো ভাবে দিন যাপন করেছেন সুহৃদ দত্ত অন্ধকার ঘরে মুখ লুকিয়ে একা একা। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন নিশ্চয়ই একদিন আমি অপরাধী নয় এটা বুঝতে পারবে সিঙ্গুরের মানুষরা। এটাও বুঝবে সেদিন আমি হয়তো মারা যাবো থাকবো না কিন্তু আমি যে জমির জন্য চেষ্টা করেছি ,কারখানার জন্য চিন্তা করেছি আমার নিজের জন্য নয় ,গ্রামের ছেলে মেয়েদের জন্য সেটাও তারা বুঝবে একদিন। 

আজ সেই সুহৃদ দত্তর চলে যাওয়া অনেক কিছু প্রশ্নকে আমাদের সামনে নিয়ে এলো। সত্যিটা কি আর কোনো দিন জানতে পারবেন তিনি। না পারবেন না এই ঘৃণ্য পৃথিবীর নগ্ন রূপ দেখে দুর থেকে তিনি ভাববেন ভালই হলো ওই নিজের বাড়ি, গ্রাম, সিঙ্গুরের তিন ফসলি জমির ঘ্রাণ ফেলে তিনি চুপি চুপি হারিয়ে যাচ্ছেন অচিনলোকে। পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে। যেখানে নিঝুম রাতে গোপন অভিসারে মেতে ওঠে সকলে বাজনা বাজিয়ে বাঁশি বাজিয়ে গান গেয়ে দিন কাটায়। না সেখানে রাজনীতির কারবারিরা ভিড় জমায় না। এ ওর গায় কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করে না নিজের আখের গোছাতে। যে যার নিজের মতো বাঁচে। বুক ভরে শ্বাস টেনে নিয়ে তিনি বলেন এটাই ভালো হলো বেশ। তাই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে যেতে কষ্ট হয় না কমরেড সুহৃদ দত্তর। কমরেড লাল সেলাম আপনাকে। আপনি চির নিদ্রায় শায়িত থাকুন এই বিশ্বাস নিয়ে আপনি অপরাধী নন। যারা আপনাকে অপরাধী বানিয়ে ফয়দা লুটেছে আসল অপরাধী তারাই। ঘুমিয়ে থাকুন আপনি কমরেড। 

শান্তির দেবদূত একদিন নিশ্চয়ই এসে আপনাকে বলে দেবে আসল সত্যি কথাটা। সেদিন নিশ্চয়ই আপনি আবার ফিরতে চাইবেন সিঙ্গুরের কারখানার জমিতে। সেই জমির ওপর বসে হাউ হাউ করে ডুকরে কেঁদে উঠে বলবেন, দাও দাও আমার হারিয়ে যাওয়া যন্ত্রণার আঁধার রাতের জীবনটা ফিরিয়ে দাও। হয়তো কমরেড আপনার সেই কথা শোনার কোনো লোক সেদিন থাকবে না সিঙ্গুরের বাজেমেলিয়া, খাসেরভেড়ি গ্রামে। শুধু আপনার মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাবে সাদা মেঘ। এক পশলা বৃষ্টি পড়বে আর আপনি সেই বৃষ্টিতে স্নাত হবেন আর বলবেন সত্যিই কি আরাম আমার আর কোন জ্বালা যন্ত্রনা নেই। সব এক নিমেষে দুর হয়ে গেছে। ভালো থাকবেন সুহৃদ দা আমার প্রনাম নেবেন আপনি।

আজ সেই ১৮ ডিসেম্বর। তাপসী মালিক দিবস। যে দিবস পালন করা হলো সিঙ্গুরের সেই তাপসীর বাড়ীর সামনে সেই বাজেমেলিয়া উজ্জ্বল সংঘের পাশে । যেখানে রাস্তার ধারে তৈরি হয়েছে তাপসীর নামে মূর্তি। পাশে রয়েছে রাজকুমার ভুলের মূর্তিও। তাপসীর বাবা মনোরঞ্জন মালিককে পাশে নিয়ে বর্তমান তৃণমূল সরকারের মন্ত্রী তথা দাপুটে নেতা একসময় সিঙ্গুর জমি আন্দোলন এর নেতা সিঙ্গুর জমি বাঁচাও কমিটির আহবায়ক বেচারাম মান্নার গলায় আজও সেই এক সুর। তাপসীর ন্যায় বিচার হয়নি। যাঁরা খুনী তাঁরা আজও ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর সেই সময় বামেদের মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনার পর তাপসীর বাবা মার কাছে একবারও আসেননি। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই এই ঘটনার পর তাপসী মালিক এর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করেছেন। তাঁদের সরকার সব সময় এই ভাবেই বিপদে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। এটাই হলো মা মাটি মানুষের সরকার।

শীতের সকালে বাজেমেলিয়া গ্রামে দাঁড়িয়ে মন্ত্রীর গায়ে লাল পাঞ্জাবি পরে এমন শোক পালনের দিনেও তাঁর মুখে বামেদের কড়া সমালোচনা। বাজেমেলিয়া গ্রামের মেঠো রাস্তা, মেঠো পথ আজ অনেকটাই বদলে গেছে। বদলে গেছে সিঙ্গুরের রাজনীতির চিত্র। দীর্ঘ পনেরো বছর ধরেই বামেরা আজ আর ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে শতেক যোজন দূরে সরে গেছে। সেই সময় বাম সরকারের রাজ্যে শিল্পের স্বপ্ন দেখা মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তিনিও আজ আর নেই। আজ আর নেই সেই সুহৃদ দত্ত। শুধু বেঁচে আছে দেবু মালিক। তবুও পুরনো সেই অভিযোগকে সামনে রেখেই নিঃশব্দে তৃণমূল কংগ্রেস পালন করলো তাপসী মালিক দিবস।

 বাজেমেলিয়ার গ্রামের সেই মেয়ের কথা আরও একবার এতদিন পরে সবার সামনে এলো বছরের এই দিনে। যে সিপিএমের জন্য এমন একটা মেয়ের মৃত্যু হয়েছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণ এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে। চারিদিকে স্লোগান উঠলো তাপসী মালিক অমর রহে। মন্ত্রী বেচারাম মান্না তাপসীর গলায় মালা দিলেন গম্ভীর মুখে। তাপসীর পরিবার চোখের জলে মেয়েকে স্মরণ করলেন প্রতিদিনের মতই এই দিনেও। শুধু তাপসীর মা নিজের ঘরে বসে মেয়ের ছবির সামনে একা একাই চোখের জল ফেললেন নীরবে নিভৃতে। আর মনে মনে বললেন, রাজনীতির কথা না ভেবে মনে মনে মেয়েকে অস্ফুটে বললেন, ভালো থাকিস মা তুই। যেখানেই থাকিস তুই ভালো থাকিস। এই সিপিএম, তৃণমূল, কংগ্রেস, এসইউসি এদের কথা শুনে আর কোনোদিন প্রতিবাদ করতে যাস না। তাহলে তো আর তোকে এই ভাবে আমার কোল ছেড়ে মরতে হতো না এই ঘৃণ্য রাজনীতির ঘেরাটোপে বন্দী হয়ে। 

তাপসী মালিক দিবস - অভিজিৎ বসু।
আঠারো ডিসেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য রানা ও সৌগত ও গুগল।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...