আজ সাদা জীবনের কালো কথাতে চুঁচুড়ার সেই বিখ্যাত ফটোগ্রাফার তাপস ঘোষ এর কথা। সেই আনন্দবাজার পত্রিকার বিখ্যাত ফটোগ্রাফার তিনি। সারাটা জীবন সেই কবে থেকে যে তাপসদা শুধু ছবি তুলেই জীবন কাটিয়ে দিলেন হাসিমুখে তিনি কে জানে। সেই কাঁধে ক্যামেরার একটা ব্যাগ নিয়ে, একদম সাদা মাটা একটি জামা আর প্যান্ট পড়ে, হাসি মুখেই জীবনটা কাটিয়ে দিলেন তিনি। চুপচাপ, নির্বিরোধী, শান্ত, ভদ্র, মিতভাষী মানুষ হিসেবে আমরা তাঁকে এতদিন ধরেই চিনি সবাই।
আসলে কিছু কিছু মানুষ এই মিডিয়ার কাজ করেও কেমন নির্বাক হয়েই জীবনটা কাটিয়ে দেন গোটা জীবন ধরেই হাসি মুখে। কিছু না চেয়েই আর কিছু না পেয়েই। আর হৈ চৈ হুল্লোড় না করেও। আবার কেউ কেউ এতো মাত্রায় নিজেদের প্রচার করেন যেটা বেশ চোখে পড়ে আমাদের। কাউকে বুঝতে দেন না তাঁরা কিন্তু কিছুতেই। কিন্তু আমাদের তাপসদা কিন্তু দ্বিতীয় শ্রেনীর লোক। মুখ বুজে চুপ করে কাজ করে যাওয়া এক জন প্রাচীন আমলের ক্যামেরাম্যান। যে আজকের এই প্রজন্মের সাথে একদম বেমানান কিছুটা।
সেই চুঁচুড়া গেলেই তাপসদার সাথে দেখা হওয়া সেই চায়ের দোকানে আর জেরক্সের দোকানে আড্ডা দেওয়া। অভিজিৎ কি খবর বলে এগিয়ে আসা। বাড়ির সব খবর নেওয়া। কি খবর হবে সেটা জানার কৌতুহল না দেখিয়ে। কিন্তু যে কোনো খবরে সেই ডানলপ কারখানা বন্ধ হোক, সেই কারখানা বন্ধের নোটিশ ঘিরে নানা ঝামেলার খবর হোক। সেই নিয়েও জোর কদমে আলোচনা করে এগিয়ে চলা একসাথে। সেই কোনও সময় বিধান এর সাথে, কোনসময় বহুকাল আগে সেই ইটিভির সৌরভ হাজরার সাথে। যদিও আজ আর সৌরভকে দেখতে পাওয়া যায়না আর। সেই বিশ্বজিৎ সিংহ রায় কিট্টু এর সাথেও। তাদের গাড়িতে পেছনে বসে স্পটে পৌঁছে যাওয়া। তারপর ক্যামেরা বের করে খচ খচ করে ছবি করা গম্ভীর মুখে। স্পটে গিয়ে কিন্তু তাপসদা খুব গম্ভীর মুখেই কাজ করেন।
সেই চুঁচুড়াতে এসপি অফিসের অনুষ্ঠান হোক, সেই হুগলীর পোলবাতে অস্ত্র উদ্ধার হোক, সেই ডানলপ কারখানার চত্বরে মহাসমাবেশ হোক, কারখানা বাঁচাও এর জন্য আন্দোলন হোক। সব জায়গায় গুটি গুটি পায়ে হাজির হয়ে যাওয়া। কেউ যদি নিয়ে যায় তাহলে ভালোই হলো তাঁর। আর যদি কেউ না নেয় তাহলেও মূখে কোনো কথা নেই, বিরক্তি নেই স্পটে পৌঁছে যাওয়া এই বয়সেও। সত্যিই অসাধারণ এই ছবির নেশা। যা পেটের টানকেও হার মানায় কিছুটা।
এক নম্বর কাগজে কাজ করেও কেমন নির্মোহ হয়েই হাসি মুখে জীবন কাটিয়ে দেওয়া। অতি সাধারণ জীবন যাপন করে হৈ হুল্লোড় না করেই। যেটা আমার বেশ ভালই লাগে তাপসদার এই দিন যাপন এর স্টাইল। গায়ে সেই চেনা জ্যাকেট চাপিয়ে এগিয়ে চলা ছবি তুলতে। সত্যিই বলতে কি এমন সব নানা জায়গার মানুষজন এর ভীড়ে তাপসদা একটু অন্য ধরনের। তাপসদা খবরের গন্ধ পেলেই সে উপেন হোক, সে ছুটু হোক, সে মিল্টন হোক, যেই হোক তাদের ধরে যে করেই হোক স্পটে পৌঁছে যাওয়া। যেটা একটা বড় গুণ তাঁর। বোধহয় প্রিন্ট মাধ্যমে কাজ করার জন্যই এটা হয়েছে তাঁর।
আজ বহুদিন ধরেই কথা বলা হয়না আমার তাপসদার সাথে। আগে কাগজে তাঁর নাম দেখলেই আমি ফোন করতাম আগে তাঁকে। তাপসদার সাথে কত আড্ডা হতো। মজার গল্প হতো। সেই ব্যানার্জী কেবিনে চা খাওয়া হতো। সেই ঘড়ির মোড়ে বিজেপি বা তৃণমূলের এসপি অফিস এর ঘেরাও অভিযানে ক্যামেরায় চোখ লাগিয়ে রেডি তাপস দা। অ্যাকশন হলেই ছবি উঠবে তাঁর হাতে। সেই চুঁচুড়া স্টেশন এর কাছে চায়ের দোকানে আড্ডা দেওয়া সবাই মিলে।
এমন সব দিনগুলো আজ আর নেই। আজও তাপস দা এই বয়সেও কেমন ক্যামেরা হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে পেটের টানে, খবরের টানে আর নিজের মনের টানে। খবরের সন্ধান পেলেই ছুটে যায় সে দৌড়ে স্পটে। যাতে তাঁর আগে ছবি কেউ না তুলতে পারে। আনন্দবাজার পত্রিকা যে একনম্বর কাগজের ছাপ পেয়েছে সেটার সম্মান রাখতে এই বয়সেও দৌড়ে বেড়ান তিনি হাসি মুখেই। আর তাই বহু পুরোনো দিন এর মানুষের কথা আজ মনে পড়ে যায় আমার লিখতে ইচ্ছা হয় আমার। তাপস দা ভালো থাকবেন আপনি।
চুঁচুড়ার তাপস ঘোষ - অভিজিৎ বসু।
উনিশ ডিসেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন