সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জৈন টিভির রিপোর্টার ধ্রুবদা

আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আজ সেই জৈন টিভির ধ্রুবজ্যোতি নন্দীর কথা। যাঁর সাথে হঠাৎ আজ বহুদিন পর দেখা হয়ে গেল আমার শান্তিনিকেতনে। আজ থেকে প্রায় পঁচিশ বছর আগের এক দুপুরের কথা মনে পড়ে গেলো আমার। দু হাজার সাল হবে সেটা। আজ থেকে প্রায় পঁচিশ বছর আগের ঘটনা এটা। শ্রীরামপুরে ওয়ালস হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি আমি। মাথার কাছে বন্দুক ধারী পুলিশের কড়া পাহারা। ঠিক একদিন আগেই উত্তরপাড়া পৌরসভার নির্বাচনে সিপিএমের গুণ্ডা বাহিনীর বা ক্যাডার বাহিনীর হাতে মার খেয়ে আমি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।

 কাগজে কাগজে প্রথম পাতায় বেরিয়েছে আমার খবর আর সেই আমার ছবি। মাথার কাছে বাংলা, ইংরাজি বহু কাগজ রাখা আছে। আর মাঝে মাঝেই কংগ্রেস আর তৃণমূল কংগ্রেস এর নেতারা আসছেন দেখা করতে হাসপাতালে আমার সাথে। কেমন আছি জানতে। নিজেকে বেশ কেউকেটা মনে হচ্ছে হাসপাতালের বেডে শুয়ে শুয়ে। হঠাৎ হাফ শার্ট জামা আর প্যান্ট পরে জামা কি গোঁজা ছিল মনে পড়ছে না ঠিক এত দিন পরে আমার। মুখে কাঁচা পাকা দাড়ি, বেশ ভারী চেহারা মুখে হাসি নিয়ে এলেন একজন। শুনলাম দিল্লী থেকে এসেছেন জৈন টিভির লোক তিনি। আমার ইন্টারভিউ নেবেন তিনি। 

এসেই ক্যামেরার ব্যাগ খুলে ফেললো এক ক্যামেরা ম্যান। আমার মুখে ডিঙ্কি লাইটের আলো পড়ল। হাসপাতালে শুয়ে থাকা অবস্থায় সেদিন কি হয়েছিল জানতে চাইলেন সেই দিল্লির রিপোর্টার আমার কাছে। আমি তো বাংলায় গড় গড় করে বলতে শুরু করলাম আমি সেদিনের ঘটনা। কিন্তু মাঝ পথে ইন্টারভিউ থামিয়ে দিলেন তিনি। হেসে বললেন অভিজিৎ তুমি বাংলা বাদে হিন্দি বা ইংরেজী তে বলো। যেটা তুমি বলতে পারবে। চারিদিকে সব ভীড় করে ঘিরে দাঁড়িয়ে আমায়। দিল্লী থেকে রিপোর্টার এসেছেন ইন্টারভিউ নেওয়া চলছে। আমার মুখের সামনে সেই বাম আমলে নীল সাদা বুম।

 আর সেই বাংলা ছাড়া বলতে হবে শুনে আমি কেমন যেন মিইয়ে গেলাম। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে আমার। বললাম আচ্ছা দেখছি। কিন্তু মনে মনে ভাবলাম কেনো যে আমি ভোটের ছবি করতে গেলাম ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর মার না খেলে তো আর হিন্দি বা ইংরাজীতে কথা বলতে হতো না আমায়। মনে মনে প্রমাদ গুনছি আমি। ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে বলার চেষ্টা করলাম আমি। কিন্তু সেটা যা বের হলো আমার মুখ থেকে। সেটা শুনে আর রিস্ক নিতে পারেন নি সেই দিল্লি থেকে আসা বিখ্যাত রিপোর্টার। নিজেই পিটিসি দিলেন আমায় দেখিয়ে ছবি করলেন। হেসে বললেন অভিজিৎ আসছি আমি, তুমি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠো।আর তখন আমার বেডের পাশে ভীড় জমে গেছে চার দিকে। 

সেই প্রথম আলাপ আমার জৈন টিভির ধ্রুবজ্যোতি নন্দীদার সাথে। তারপরে কত জল যে গঙ্গা দিয়ে বয়ে গেছে। মার খাওয়ার পর নানা জন দেখা করেছে আমার সাথে। কিন্তু এইভাবে ইন্টারভিউ নেওয়া হয়নি আর আগে কোনো সময় আমার। আর তাই এই ধ্রুব দার সাথে আজ দেখা হতেই এত কিছু মনে পড়ে গেলো আমার। আজ এই শান্তিনিকেতনে এক অনুষ্ঠানে। কত বদলে গেছেন তিনি। আরও গম্ভীর আর একটু ভারী হয়েছে তাঁর চেহারা। এরপরে তো আমি সেই ডানলপ কারখানায় দেখেছি তাঁকে। সেই পবন রুইয়ার আমলে তিনি সাহাগঞ্জের কারখানায় আসতেন। গাড়ী থেকে নামতেন। সাদা হাফ শার্ট পরা। নিজে রিপোর্টার ছিলেন বলে একগাল হেসে বলতেন কি খবর অভিজিৎ তুমি ভালো আছো তো। আমি ঘাড় নেড়ে বলতাম হ্যাঁ, দাদা। 

সেই ধ্রুবদাকে আজ সন্ধ্যায় দেখলাম। কম ঠাণ্ডায় গায়ে সাদা শাল জড়ানো ধীর পায়ে হেঁটে আসছেন এক অনুষ্ঠান শেষে। দেখা হতেই বললেন ভালো তো। চিনতে পারলেন মনে হয় আমায় তিনি। একদিন বাড়ীতে এসো তুমি আড্ডা হবে দুজনে। আমি মনে করলাম সত্যিই তো একদিন যাওয়াই যায়। আমি ওনার কথা শুনে ভাবলাম মনে মনে। মনে হলো একটা যদি ছবি তোলার সুযোগ পেতাম আমি তাহলে ভালো হতো বেশ। সেদিন তিনি আমার ছবি তুলে খবর করেছিলেন হাসপাতালে ভর্তির সময়। আর আজ সেই মানুষটার একটা ছবি যদি আমি তুলে রাখতে পারতাম এতদিন পরে। তাহলে যে কি ভালো লাগতো আমার কে জানে। 

কিন্তু না, সব চাওয়া কি পাওয়া যায় এই একটা জীবনে। সব চাওয়া আর পাওয়ার হিসেব কি মেলে এক জীবনে। তার সঠিক উওর আমার জানা নেই। আর তাই আমি তাই সেই কথা আলো আঁধারির পরিবেশে তাঁকে বলতে পারলাম না কিছুতেই।যে দাদা একটা ছবি তোলা যাবে আপনার। ধীরে ধীরে তিনি ঘরে ফিরলেন গাড়ী করে। সেই প্রফেসর কলোনিতে মনে হয় ওনার বাড়ী। আমিও একটু একটু করে ঘরে ফিরলাম আমার প্রিয় সাইকেল করে। কিন্তু সেই আমাদের জৈন টিভি চ্যানেলের রিপোর্টার ধ্রুবদাকে বলতে পারলাম না যে দাদা একটা ছবি তুলবো আপনার। আপনি ভালো থাকবেন দাদা। নিশ্চয়ই আবার একদিন কোথাও এইভাবেই দেখা হয়ে যাবে রাস্তায়। সেদিন না হয় সত্যিই করেই আপনার একটা ছবি তুলে রাখবো। 

জৈন টিভির রিপোর্টার ধ্রুবদা - অভিজিৎ বসু।
আট ডিসেম্বর দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...