সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

চৈতন্য মহাপ্রভু ও আমরা

একটা ছবি দেখে এই লেখার বাসনা হলো আমার। সত্যিই বলতে কি এই ছবিটা না দেখলে এই লেখার ভাবনা হয়তো আসত না আমার। সোশ্যাল মিডিয়াতে আমার এক হুগলী জেলার শ্রীরামপুরের প্রবীণ সাংবাদিক বন্ধু মৃণাল দত্ত এই ছবিটি পোস্ট করেন কিছু দিন আগে। সেটা পোস্ট করে তিনি লেখেন - মনের দুঃখে , কাঁদবো বলে গিয়েছিলাম , তারপর দেখি প্রভুই কাঁদছেন, কোমরে ওনার দড়ি।


এই ছবি আর লেখা দেখে মনে হলো সত্যিই কি অবস্থা হলো আমাদের। নিজের চোখের জল মুছে দেবার জন্য এই সাংবাদিক বন্ধুটি তাঁর মানে প্রভুর শরণাপন্ন হয়ে ছিলেন। হয়তো সত্যিই তিনি নিজের কষ্টের যন্ত্রণার কথা বলতে গিয়েছিলেন তাঁকে। কিন্তু নিজের কথা মুখ ফুটে বলতে পারেন নি। সামনে গিয়ে যা দেখলেন তাতে তার চক্ষু চড়কগাছ। কী আর নিজের দুঃখের কথা বলবেন তারপর।


একি দেখছেন তিনি। প্রভুর কোমরে দড়ি বাঁধা। শিকল পরা প্রভু নিজেই আজ কাঁদছেন একা একা। যদিও সেই কান্না নিজের জন্য নয়। অন্যর জন্য কাঁদছেন তিনি। যে কান্না ভেজা আকুল আর্তি ছড়িয়ে পড়ছে নিঃশব্দে চারিদিকে। কিন্তূ তাঁর সেই আর্তি শুনবে কে। এক পা ভাঙ্গা অবস্থায় কোমরে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা আছে তাঁকে। কী করুন অবস্থা তাঁর।

লিখতে লিখতে একটু যেনো থমকে দাঁড়িয়ে গেলাম আমিও। সত্যিই কি অদ্ভুত অবস্থা তাই না। যিনি একসময় হিন্দু ধর্মের জাতিভেদকে উপেক্ষা করে হরিনাম সংকীর্তন করে গেছেন, প্রেম বিলিয়েছেন অকাতরে। যে কোনো বাধাকে উপেক্ষা করে। যিনি সমাজের সব নিম্ন বর্গের মানুষদের বুকে জড়িয়ে ধরে হরি নাম বিলিয়েছেন। 

যিনি অত্যাচারী জগাই মাধাইকে ভক্তরূপে পরিণত করেছিলেন নিজে মার খেয়েও। তাঁর প্রভাবে মুসলমান যবন হরিদাস ঠাকুর সনাতন ধর্ম ও বৈষ্ণব মত গ্রহণ করেন তাঁর কাছে। নবদ্বীপের শাসক চাঁদ কাজী তার আনুগত্য স্বীকার করেন। এমনকি তিনি জাতিভেদ প্রথাকে সমর্থন না করার জন্য তিনি শুদ্র রাম রায়কে দিয়ে শাস্ত্র ব্যখ্যা করিয়ে ছিলেন। সেই মানুষটার কোমরে আজ দড়ি পড়ানো।বলতে নেই এটা ভাবলেই কেমন নিজেকে অপরাধী মনে হয়।


এই ভাবেই তো তিনি তাঁর দর্শনের ভিত্তিতে বৈষ্ণব ভক্তিযোগে গোটা দেশকে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন আজ থেকে প্রায় পাঁচশো বছর আগে। যে ডাক তিনি দেন সেটা হলো।
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
 হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে। 
এই গানের সুর ছড়িয়ে দিয়ে ধনী, দরিদ্র, চণ্ডাল, মুচি, মেথর, উচ্চ নীচ সব বর্ণের লোকদের একত্রিত করেন তিনি শুধু প্রেমের ডাক দিয়ে। যে প্রেমের আজ বড়ো অভাব। সমাজে, সংসারে, রাজনীতিতে, কর্মক্ষেত্রে সব জায়গায়।

মনের ভাবের উদয় ঘটিয়ে জীবনকে পরমার্থের সন্ধান দেন তিনি। যিনি মনে করেন মানুষের হৃদয়ে প্রেম ভক্তি শ্রদ্ধা ভালোবাসা দরকার। না হলে মানুষের জীবন সঠিক ভাবে গড়ে উঠবে না। সেই মানুষটি আর কেউ নন। তিনি হলেন শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু। 

চৈতন্য মহাপ্রভু (১৪৮৬ – ১৫৩৪) ছিলেন ষোড়শ শতাব্দীর বিশিষ্ট বাঙালি ধর্ম ও সমাজ সংস্কারক। তিনি পশ্চিমবঙ্গের নদিয়ায় নবদ্বীপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন দোল পূর্ণিমার দিন। গৌড়ীয় বৈষ্ণবগণ তাঁকে শ্রীকৃষ্ণের পূর্ণাবতার বলে মনে করেন। শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য ছিলেন ভাগবত পুরাণ ও ভগবদ্গীতা-য় উল্লিখিত দর্শনের ভিত্তিতে সৃষ্ট বৈষ্ণব ভক্তিযোগ মতবাদের এক জন বিশিষ্ট প্রবক্তা। তিনি বিশেষত রাধা ও কৃষ্ণ রূপে ঈশ্বরের পূজা প্রচার করেন এবং হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্রটি জনপ্রিয় করে তোলেন। সংস্কৃত ভাষায় শিক্ষাষ্টক নামক প্রসিদ্ধ স্তোত্রটিও তাঁরই রচনা। 

চৈতন্য মহাপ্রভুর পূর্বাশ্রমের নাম গৌরাঙ্গ বা নিমাই। তাঁর গায়ের রং স্বর্ণালি আভাযুক্ত ছিল বলে তাঁকে গৌরাঙ্গ বা গৌর নামেও ডাকা হত। অন্য দিকে নিম বৃক্ষের নীচে জন্ম বলে তাঁর নামকরণ হয়েছিল নিমাই।এই সব নানা গল্পই তাঁর আছে।

চৈতন্য চরিতামৃত গ্রন্থের বর্ণনা অনুযায়ী, ১৪৮৬ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি দোলপূর্ণিমার রাত্রে চন্দ্রগ্রহণের সময় নদিয়ার নবদ্বীপে চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্ম। তাঁর পিতামাতা ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার অন্তর্গত নবদ্বীপের অধিবাসী জগন্নাথ মিশ্র ও শচী দেবী। চৈতন্যদেবের পূর্বপুরুষেরা ছিলেন ওড়িশার জাজপুরের আদি বাসিন্দা। তাঁর পিতামহ মধুকর মিশ্র ওড়িশা থেকে বাংলায় এসে বসতি স্থাপন করেন।

চৈতন্যদেবের পিতৃদত্ত নাম ছিল বিশ্বম্ভর মিশ্র। প্রথম যৌবনে তিনি ছিলেন স্বনামধন্য পণ্ডিত। তর্কশাস্ত্রে নবদ্বীপের নিমাই পণ্ডিতের খ্যাতি ছিল অবিসংবাদিত। 

জপ ও কৃষ্ণের নাম কীর্তনের প্রতি তাঁর আকর্ষণ যে ছেলেবেলা থেকেই বজায় ছিল, তা জানা যায় তাঁর জীবনের নানা কাহিনি থেকে। কিন্তু তাঁর প্রধান আগ্রহের বিষয় ছিল সংস্কৃত গ্রন্থাদি পাঠ ও জ্ঞানার্জন। পিতার মৃত্যুর পর গয়ায় পিণ্ডদান করতে গিয়ে নিমাই তাঁর গুরু ঈশ্বরপুরীর সাক্ষাৎ পান। ঈশ্বরপুরীর নিকট তিনি গোপাল মন্ত্রে দীক্ষিত হন।

 এই ঘটনা নিমাইয়ের পরবর্তী জীবনে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। বাংলায় প্রত্যাবর্তন করার পর পণ্ডিত থেকে ভক্ত রূপে তাঁর অপ্রত্যাশিত মন পরিবর্তন দেখে অদ্বৈত আচার্যের নেতৃত্বাধীন স্থানীয় বৈষ্ণব সমাজ আশ্চর্য হয়ে যান। অনতিবিলম্বে নিমাই নদিয়ার বৈষ্ণব সমাজের এক অগ্রণী নেতায় পরিণত হন।এর মধ্যে তিনি বিবাহ করেন। কিন্তু না ঘরে মন টেকে না তার।

কেশব ভারতীর নিকট সন্ন্যাসব্রতে দীক্ষিত হওয়ার পর নিমাই শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য নাম গ্রহণ করেন। সন্ন্যাস গ্রহণের পর তিনি জন্মভূমি বাংলা ত্যাগ করে কয়েক বছর ভারতের বিভিন্ন তীর্থস্থান পর্যটন করেন। এই সময় তিনি অবিরত কৃষ্ণনাম জপ করতেন। জীবনের শেষ চব্বিশ বছর তিনি অতিবাহিত করেন জগন্নাথধাম পুরীতে।

 ওড়িশার সূর্যবংশীয় হিন্দু সম্রাট গজপতি মহারাজা প্রতাপরুদ্র দেব চৈতন্য মহাপ্রভুকে কৃষ্ণের সাক্ষাৎ অবতার মনে করতেন। মহারাজা প্রতাপরুদ্র চৈতন্যদেব ও তাঁর সংকীর্তন দলের পৃষ্ঠপোষকে পরিণত হয়েছিলেন। ভক্তদের মতে, জীবনের শেষ পর্বে চৈতন্যদেব ভক্তিরসে আপ্লুত হয়ে হরিনাম সংকীর্তন করতেন এবং অধিকাংশ সময়েই ভাবসমাধিস্থ থাকতেন। 

 তাঁর মৃত্যু হয় ১৪ জুন ১৫৩৩ মাত্র ৪৭ বছর বয়সে।
শ্রীক্ষেত্র জগন্নাথপুরী উৎকল অধুনা ওড়িশাতে তাঁর মৃত্যু হয়। অনেকে বলেন তাঁর দেহ পুরী ধামের জগন্নাথের দেহে লীন হয়ে যান তিনি।


হরের্নাম, হরের্নাম, হরের্নামৈব কেবলম্।
কলৌঃ নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব গতিরন্যথা।

এই মহামন্ত্র করেই প্রেমের জোয়ারে মাতিয়েছিলেন তিনি সকলকে।
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।

  লিখতে লিখতে মনে হলো সত্যিই কি তাঁকে এই ভাবে। বেঁধে রাখা সম্ভব। যদি না তিনি চান। যিনি সমাজের এত মানুষকে প্রেম বিলিয়ে জগৎ সংসারকে রক্ষা করলেন। হিংসা হানাহানি দুর করতে পথে ঘুরে বেড়ালেন। হরি নাম প্রচার করলেন। ধনী দরিদ্র এর বিভেদকে দূরে সরিয়ে দিয়ে একসাথে নাম গানে মাতিয়ে দিলেন।


তিনি কি এই ভাবে আটকে যাবেন শুধু একটা দড়ির বাঁধনে। মনে হলো না আমার তিনি আটকে যাবেন। নিশ্চয়ই আবার দরকার পড়লে, প্রভু নিজেই নিজের বাঁধন ছিঁড়ে রাস্তায় নেমে পড়বেন যে কোনো সময়। হরি নামের প্রেমের জোয়ারে আবার ভাসিয়ে দেবেন জগত সংসারকে। এই ঘোর কলিযুগে, যা তিনি পাঁচশো বছর আগেই করেছিলেন পথে নেমে।

সেই অপেক্ষায় রইলাম আমিও। যেখানে রাজনীতির কারবারিরা, সংসারী স্বার্থপর জগাই মাধাই এর মত মানুষরা, যবন হরিদাস এর মত লোকরা সেই হরিনাম এর জোয়ারে আবার সবাই ভেসে যাবে। মনে মনে তাঁকে দুর থেকে প্রনাম জানিয়ে এই কামনাই করলাম আমি। 

প্রভু তুমি এই ভাবেই আটকে থাকো। যখন মনে করবে সেই সময় এই ভাবেই আবার জগৎ সংসার বাঁচাতে রাস্তায় নেমে পড়ো। কোনো কিছুই যেনো তোমায় আটকে রাখতে না পারে। আর তোমার নাম গানে আমাদের অহংকার, অবিশ্বাস, আতম্ভরিতা, যেনো জলের মতো গলে যায়। আমরা যেনো হিংসা হানাহানি ভুলে প্রেমের জীবন লাভ করি। এই প্রাথর্না করি তোমার কাছে। আর কিছুই চাই না আমি।

চৈতন্য মহাপ্রভু ও আমরা - অভিজিৎ বসু।
এগারো ডিসেম্বর দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক ও মৃণাল দা।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...