সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ফেলে আসা দিনের ছবি

রাতের অন্ধকারে সাত বছর আগের ছবি যখন উড়ে আসে আমার কাছে। বাইরে তখন নিঝুম নিশুতি রাতে ডানা ঝাপটায় বাদুড়, দূরের গাছের ডালে।আর অনেক দূরে রাতচরা পাখির ডাক, ট্রেনের হুইসেলের আওয়াজ শুনতে শুনতে বিছানায় এপাশ ওপাশ করি আমি একা একাই। ঘরের দেয়ালে নিস্তব্ধ ঘড়ি জানান দেয় এই ছবি যে পুরোনো ফেলে আসা দিনের ছবি একে আঁকড়ে ধরে কি লাভ তোমার। উজ্জ্বল রঙের কিছু মুহূর্ত, উজ্জ্বল কিছু মুখ, আর জীবনের রঙিন পোশাক আর ভেজা কুয়াশার স্বপ্ন মাখা ভোরের হাতছানি দেয় আমায় আবার এই পুরোনো নানা ছবি। 


আমার ফিরে যেতে ইচ্ছা হয় বড়ই সেই ফেলে আসা দিনগুলোতে আবার। সেই শীতের রুক্ষতায় মোড়া খোয়াই এর ধূসর প্রান্তরে ভোরের আলো গায়ে মেখে হেঁটে বেড়াতে ইচ্ছা হয় আমার বারবার। সেই দূরে সোনাঝুরির পাতায় হালকা হিমেল হাওয়া বয়ে যায় ঘাস, মাঠ, ঘাট, প্রান্তর পেরিয়ে কোপাই এর তীর ধরে দূরে অনেক দূরে সেই গণপুরের জঙ্গলে। কেমন করে যেন আমায় হাতছানি দিয়ে ডাকে ওরা সবাই মিলে আয় আয়। আমি কেমন যেন স্থবির হয়ে জীবনের মোরাম রাস্তায় হেঁটে চলে বেড়াই ওদের ডাকে সাড়া দিতে পারি না আর কোনও ভাবেই। 

আমার সেই ছোট্টো চেনা বুটা। সেই চেনা পথ। সেই চেনা রিসোর্ট। সেই কত কিছুই যে চেনা ছিল সেই সময়। সেই চেনা আমার মনের মানুষ। যে আজ বড়ো অচেনা হয়ে গেছে যেনো। মাঝে মাঝেই আমার লুকিয়ে এই সব চেনা মুখের ছবিদের বড়ো ভালবাসতে ইচ্ছা করে আজকাল রাতদুপুরে। মনে হয় জীবন কেনো যে বদলে গেলো এইভাবেই। চেনা পথ ছেড়ে অচেনা অজানা পথ ধরে। এমনতো হতে না দিলেই হতো। কে জানে ভুলভাল বকে আর লাভ কি। 

তবু মন যে বড়ো উতলা হয় ওই রাত পেঁচার ডাক শুনে। মন যে উতলা হয় ঘড়ির দীর্ঘশ্বাস শুনে। মন যে উতলা হয় উত্তুরে হাওয়ার বেগে ঠাণ্ডা হাওয়া লেগে জানলার ফাঁক গলে হিমশীতল হাওয়ার ছোঁয়া পেয়ে শরীরে আর মনে। মন যে উতলা হয় আমার ভালোবাসার কাছের মানুষদের উদ্বিগ্ন মনোভাব দেখে। মনে হয় একবারে নিজের হাতে জাহাজের কেবিনের মতই ফেলে আসা দিনের সময়ের চাকা ঘুরিয়ে ফিরে যাই সেই পুরোনো দিনে আবার এক লহমায়। হেঁটে বেড়াই একা একাই ভোর বেলায় রুক্ষ শীতের ভেজা কুয়াশা মেখে খোয়াই এর এবড়ো খেবড়ো ধূসর জমিতে মনের মানুষের সাথে হাত ধরে দুজন মিলে, পাশে পাশে, কাছ ঘেঁষে। বেশ ভালই হবে তাহলে। আমার বিধুর মন হঠাৎ করেই ভালো হয়ে যাবে আবার যেনো। 

বদলে যাবে জীবনের জলছবি এক লহমায়। হলদে সবুজ ঘাসের মাঠে খেলে বেড়াবে আমার বুটা। উড়ে উড়ে বেড়াবে মিষ্টি প্রজাপতির মতো। আর আমি কেমন অবাক হয়ে দেখবো দুর থেকে। আমায় ভরসা করে ভালোবেসে ঘর ছেড়ে চলে এসে সংসার করে বিপদে পড়া সোমা কেমন যেনো অবাক হয়ে যাবে সেই সব দেখে। ওর উদ্বিগ্ন মুখে হালকা হাসি ফুটে উঠবে। হাসি লুকিয়ে জরিপ করবে ও আমায় কড়া নজরে। আর আমি চুপ করে দুর থেকে সেই দৃশ্য দেখে কেমন আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাবো আবার। মনে মনে হাততালি দিয়ে নেচে উঠবো আমি। সত্যিই যদি এমন ঘটনা ঘটে যেতো কেমন হতো কে জানে। 

ফেলে আসা দিনের ছবি - অভিজিৎ বসু।
এগারো ডিসেম্বর দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...