সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বাসুবাটির তারক কর্মকার

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বহু পুরোনো দিনের তৃণমূল কংগ্রেস দলের প্রথম দিকের এক সৈনিকের গল্প। যার কথা আজ আমরা অনেকেই ভুলে গেছি। যখন এই তৃণমুল দল রাজ্যে ক্ষমতা সম্পন্ন হয়নি, প্রতিষ্ঠা পায়নি কোনোভাবেই , সিপিএমের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে সেই দল তখন সবে গুটিগুটি পায়ে হাঁটতে শুরু করেছে একটু একটু করে গ্রামে আর শহরে, আর সেই সময় ব্যবসা করা, বিরোধী পার্টি করা বেশ কঠিন কাজ ছিল সেই সময় এই রাজ্যে সিপিএমকে সামাল দিয়ে। আর সেই সময় হাসতে হাসতে দলের জন্য প্রায় সবকিছুই যিনি উজাড় করে গিয়েছিলেন তিনি। কোনো হিসেব নিকেশ না করেই। পরিবারকে না জানিয়ে। সেই হারিয়ে যাওয়া মানুষের কথা আজ আমার এই আঁকিবুঁকি ব্লগে। বহুদিন ধরেই আমি যে ব্যক্তিকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। 

আসলে এই ছবিটা দেখে আমিও প্রথমে একদম কিছুতেই চিনতেই পারিনি। আমায় যিনি এই ছবি জোগাড় করে দিলেন অনেক কসরৎ করে আর কষ্ট করে। সেই শিয়াখালার ভজাদা বললেন , হ্যাঁ এটাই সেই হুগলীর পুরোনো তৃণমূলের আমাদের সবার প্রিয় নেতা তারক কর্মকার এর ছবি। আমি তো এই ছবি দেখে অবাক হলাম। একি একদম চিনতেই পারছিনা যে আমি তারকদাকে। সুগার এর কারণেই শুনলাম শরীর অনেক ভেঙে গেছে তারকদার।

সেই জঙ্গিপাড়া বা ফুরফুরা শরীফে গেলেই আকবরদা মানে আকবর আলি খোন্দকার যাদের সাথে দেখা করতেন। সেই তালিকায় ছিল ভজাদা আর তরুণ পান শিয়াখালার। আর সেই বিখ্যাত বাসুবাটি ইট ভাটার মালিক তারক কর্মকার। যার ভাটার দরজা খোলা থাকতো সবসময় সবার জন্যে অবারিত দ্বার ছিল। সে রাজনৈতিক নেতা হোক, সাংবাদিক হোক যে কেউ যে কোনো সময় হাজির হতো তাঁর ভাটায়। আর বড়ভাই ডাক দিলে তো কথাই নেই। আকবর আলী খোন্দকার কে এই নামেই ডাকতেন তাঁরা সবাই।

মুখে সেই হাসি, দাদা আপনি এয়েছেন কি সৌভাগ্য আমার। বলেই হাতজোড় করে নমস্কার করা। একটু বেঁটে চেহারা, গোঁফটা বেশ মোটা, মাথার চুল ব্যাকব্রাশ করা। চোখে কালো ফ্রেমের চশমা পড়া। তারপর চা মুড়ি চপ সহযোগে মিষ্টি দিয়ে টিফিন এর ব্যবস্থা করা সাংবাদিকদের জন্য একদম সঙ্গে সঙ্গেই। আর তারপর সাংবাদিকদের পথ খরচ বাবদ তেল এর পয়সা তুলে দেওয়া তাঁদের হাতে, একটু আড়াল করে সবার সামনে নয় কিন্তু। এটাই তাঁর একমাত্র স্বভাব। আর অন্যথা হয়নি কোনোদিন কোনো সময়। তাতে কেউ কাগজে তাঁর নাম লিখলো কি লিখলো না সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই তারক কর্মকার এর। যা আজকের নেতাদের মূল লক্ষ্য যেনতেন প্রকারে নিজের নাম আর নিজের ছবিকে প্রকাশ করা যে কোনো উপায়ে।

একবার তো পূজোর সময় আমি আর মিন্টে বোধহয় জাঙ্গীপাড়া থেকে শ্রীরামপুরে ফেরার পথে দাঁড়ালাম তাঁর ইট ভাটায় বিকেল হবে তখন। তারকদা তখন ভাটায় কাজে ব্যস্ত ছিলেন অফিস ঘরে। আমাদের দেখেই বলেন দাদা কি সৌভাগ্য আমার আপনি এয়েছেন যে। বলেই চা তৈরি করতে বললেন একজনকে ভাটার লোককে। আর তারপরে এই সব বলেই চুপি চুপি একটা ঘরে আমায় ডেকে নিয়ে গিয়ে। তাঁর পকেট থেকে দু হাজার টাকার একটা নোট দিয়ে বললেন, দাদা পূজো আসছে সামনে এটা রাখুন আপনি, বৌদি আর ভাইঝির জন্য কিছু কিনে দেবেন আপনি। কিছু মনে করবেন না আপনি কিন্তু আর রাগ করবেন না কিন্তু। সেই আমলে দু হাজার টাকা কম নয়।

আমি তো কি বলব তারকদাকে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা, ভেবেই পেলাম না অতর্কিতে এই আক্রমণে আমি একদম চুপ। আমি অন্য কেউ হলে হয়তো রাগারাগি করতাম এই ঘটনায়। চিৎকার করতাম হয়তো গাল দিয়ে বলতাম আমি কি ভিখারী। যেটা আমার স্বভাব কিন্তু তারকদার এই সহজ সরল ভাবে কথা বলা যা উনি সবার সাথেই করে অভ্যস্থ সেটাই করেছেন আমার সাথে। এটাতো আর তাঁর কোনো দোষ নেই। আমি বললাম না, দাদা এটা আপনি রেখে দিন। একটু মনঃক্ষুন্ন হলেন হয়তো কিন্তু কিছুই বললেন না তিনি। বুঝতে পারলেন সবাই এক রকমের এক প্রকৃতির নয়। সেই ঘটনাটা আমার আজও মনে আছে এতদিন পরেও। তারপর চা খেয়ে শ্রীরামপুরে বাড়ী ফিরে এলাম আমরা।

সেই যে বার গাড়ী করে আমি, ফাল্গুনী দা, দেবাঞ্জন দা, তরুণ দা, গৌতমদা ছিল কি না মনে নেই আজ। আমরা সবাই মিলে খবর করতে যাচ্ছি গাড়ী ভাড়া করে জাঙ্গিপাড়াতে। কোনো বড়ো ঘটনা কভার করতে যাওয়া। সেই তারকদার ভাটার কাছে এসে ফাল্গুনীদার মন্তব্য, ভাই খবরের আগে রেড করতে হবে তারক কর্মকারের ইট ভাটায়। তারপর খবরে যাওয়া হবে। 

সোজা গাড়ী ঢুকিয়ে দেওয়া হলো তারকদার ভাটায়। আর আমাদের সবাইকে দেখে তারকদা খুব খুশি। সেই সবাইকে চা মুড়ি খেতে দিয়ে বসতে বলা। তারপর ফাল্গুনীদার কথা তারকদার উদ্দেশে, কিরে গাড়ী কি খাবে হাওয়া। জল দিয়ে কি গাড়ি চলবে নাকি ভাই। এই কথা শুনেই তারক দা সেই পুরোনো আমলের কড়কড়ে পাঁচশো টাকার নোট দেওয়া, গাড়ীর তেলের জন্য টাকা দেওয়া আমাদেরকে। এইসব দিন যে ভোলা যাবে না কিছুতেই কোনোদিন।

 বেশ মজার দিন ছিল কিন্তু সেই সময়। এমনিই ছিলেন আমাদের তারকদা। শুধু সাংবাদিকরাই নয় কিন্তু তাঁর কাছে উপকার পেয়েও পরে তাকে ভুলে গেছেন সিঙ্গুর, বাসুবাটি, শিয়াখালার, চন্ডীতলার অনেক পুরোনো রাজনৈতিক তাঁর বন্ধুরা। যাঁরা হয়তো আজ তারক কর্মকারের জন্য এই দলে আসতে পেরেছেন, নেতা হতে পেরেছেন। যদিও তারা কেউই সেটা আর মনে রাখেন নি আজ। 

সেই সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন বাবুর লোক হয়েই তাঁর এই তৃণমূলের রাজনীতিতে প্রবেশ করা। তারপর থেকে ধীরে ধীরে তাঁর অর্থনৈতিক অবস্থা মজবুত সেই কারনে অনেকটাই এই নতুন দলে প্রভাব বিস্তার করা। আর এই ভাবে নানা রকম ভাবেই সাহায্য করা সবাইকে। কিন্তু সেই সাহায্য কি আর সবাই মনে রেখেছে সেই ছোটো নেতা থেকে মন্ত্রী হয়ে পদ পেয়ে মনে হয় না। যাঁদের একদিন তিনি মনপ্রাণ দিয়েই দলকে ভালবেসে সাহায্য করেছিলেন আজ তারাই কেমন দল ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার পরে বেমালুম তাঁকে ভুলেই গেছে এক দিন। যদিও এতে তাঁর কোনো আফশোষ নেই বা অভিমান নেই আজ। শুধু মনে হয় বেশ ভালই আছেন তিনি রাজনীতি ছেড়ে শুধু নিজের পরিবার নিয়ে আর ব্যবসা নিয়ে।

ধীরে ধীরে হাসি মুখেই নিজের পথকে আলাদা করে নিয়েছেন তিনি। যে দলকে তিনি একদিন মন প্রাণ দিয়ে ভালোবেসে ছিলেন সেই দল তাঁকে ভুলে গেলেও তিনি দলকে ভুলতে পারেননি । আজ হয়তো তিনি একা একাই বাসুবাটী এলাকায় আর শিয়াখালায় ব্যবসার কাজে মেতে আছেন। ছেলে বড়ো হয়েছে সেও বাবাকে সাহায্য করে এখন অনেকটাই। তবুও পুরনো কথা কি আর ভোলা যায়।

 শুধু মাঝে মাঝে তাঁর পুরনো দিনের কথা বড়ো বেশি করে মনে পড়ে যায়। সেই আকবরদার কথা, সেই তরুণ পান এর কথা। মাঝে মাঝেই ভজাদার সাথেও দেখা হয়ে যায় তার। কিছুটা সুখ দুঃখের কথা হয় দুজনের। সেই পুরোনো আমলের সাংবাদিক বন্ধুদের কথা মনে পড়ে যায়। সেই রানা কর্মকার, সেই গৌতম ধোলে, সেই নির্মল এর কথা যারা আগে কত আসতো তার কাছে। এখন আর তাঁর খবর নেয়না কেউই।

 তিনি বুঝতে পারেন এখন অনেকটাই বদলে গেছে দিন। বদলে গেছে রাজনীতির ধরন আর গতিপ্রকৃতি। বদলে গেছে রাজনীতির নেতাদের আচার ও আচরণ। নিজের মনকে তাই তিনি স্বান্তনা দেন নিজেই একা একাই। মনে মনে ভাবেন ভাগ্যিস তিনি আর সেই তার প্রিয় পুরোনো বদলে যাওয়া দলে নেই। তাহলে হয়তো তিনিও বদলে যেতেন অন্যদের মতোই। তিনি যে বদলে যেতে চাননা কিছুতেই।

 সবার কাছে সেই হাসিমুখের তারক দা হয়েই বেঁচে থাকতে চান তিনি। আপনি ভালো থাকবেন দাদা। আমাদের সবার কাছে সেই পুরোনো চেনা তারক কর্মকারের মতই। সেই হারিয়ে যাওয়া তারক কর্মকারের কথা লিখতে পেরে আজ আমার বেশ ভালো লাগছে। আমার হারিয়ে যাওয়া তারক দাকে খুঁজে পেয়ে খুব ভালো লাগছে। ভালো থাকবেন দাদা আপনি।

বাসুবাটির তারক কর্মকার - অভিজিৎ বসু।
সতেরো ডিসেম্বর দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ভজা দা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...