ইটিভি বাংলার সেই উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস মানেই তো আমাদের নব্যেন্দু গুহ। সেই সুন্দর চা বাগান এর দুটি পাতা একটি কুঁড়ি মানেই তো আমাদের নব্যেন্দু গুহ। সুভাষ ঘিসিং এর নয়া আন্দোলনের ঘোষণার খবর পাওয়া মানেই আমাদের সবার প্রিয় হাসিখুশি সেই সবার বড়ো দাদা নব্যেন্দু গুহ। আর ইটিভির আমার বাংলার খবর মানেই যে নব্যেন্দু গুহ। এটাই তো আমরা জানি সেই কবে থেকে আমাদের সেই ইটিভির শৈশবের কাল থেকেই।
আমাদের সবার মাঝে থেকেও সবার সাথে কাজ করেও কেমন একটা আলাদা আলাদা অনুভূতি নিয়ে আলাদা হয়ে একটু নিজেকে আড়াল করে থাকা। ইটিভির সেই আদিম যুগের সময়েও আশীষ ঘোষদার স্নেহধন্য ও ঘনিষ্ট এই সাংবাদিককে আমরা একটু সমীহ করেই চলতাম সবাই। বস এর কাছের লোক বলে কথা। উত্তরবঙ্গের খবরের মাঠের একমাত্র অবিসংবাদিত নেতা। কুচবিহার এর গৌতম সরকার, দিনাজপুর এর উত্তম রায় বোধহয় এদের থেকেও তিনি কয়েক কদম এগিয়ে ছিলেন বরাবর তিনি উত্তরবঙ্গে ও দক্ষিণবঙ্গে দুই বঙ্গেই।
খুব সম্ভবত আশিষদাকে নাম ধরে ডাকা, চেয়ারম্যান এর মিটিং এ ডাক পাওয়া, খুব কম কথা বলা, পান খেয়ে থাকা, আর বেশ সেই আমলেও দামী সিগারেট খাওয়া এই রিপোর্টারকে আমি দেখি কলকাতার এক মিটিং এ তিন নম্বর চৌরঙ্গী স্কোয়ার বা চেয়ারম্যানের মিটিং তাজ বেঙ্গলে হবে মনে হয়। একদম বেশ সুন্দর দেখতে সবার মাঝে ভিড়ের মাঝে থেকেও কেমন একটা আলাদা সীমারেখা টেনে নিজেকে গুটিয়ে রাখা সবার থেকে। কিন্তু নিজের উজ্জ্বল নক্ষত্র এর মত উপস্থিতি জানান দিতেন তিনি।
সত্যিই বলতে কি আমি একটু ভয় পেতাম আর কি ওনাকে প্রথম প্রথম। পরে যদিও কলকাতায় যখন ওনাকে বস হয়ে পেলাম আমি প্রথমে কিছুটা অস্বস্তি ছিল পরে সেটা ধীরে ধীরে কেটে যায় আমারও। সেই পিঠ চাপড়ে বলা অভিজিৎ বসু হুগলীর বিখ্যাত সাংবাদিক আজ কি খবর দেবে তুমি। আর সেটা শুনে মনে হতো ভয় না পেলেও হবে আর কি। এমন দাদার মত ভালোবেসে কে আর বলবে এই মিডিয়ায়। যা সব আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তখন সেই পুরোনো আমলেও কত যে খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার।
হ্যাঁ,তবে ওনাকে দেখে আমার মনে হয়েছে এমন রুচিশীল, আপাদমস্তক একজন ভদ্র, সৌজন্য পূর্ণ ব্যবহার, অফিস এর কর্মীদের কাছে আতঙ্কের নয় কোনো দিনই যেটা মিডিয়া হাউসে সব থেকে বেশি আতঙ্কের হয়। তাই উনি যখন শিলিগুড়ি থেকে কলকাতা এলেন প্রথম প্রথম একটু দূরেই থাকতাম আমি। পরে সেটা কেটে যায় ধীরে ধীরে স্বচ্ছন্দ হয়ে যাই আমিও।
সেই মির্জা গালিব স্ট্রীট এর অফিস। সেই দীপালি, পিয়ালী, মৌসুমী, শুভ্র, পার্থ, বিশ্বজিৎ, অরূপ দত্ত, মনীশ, অমিতাভ, সুদীপ্ত রায় চৌধুরী আরও কতজন যে ছিল সেই সময়। সেই সাধন, সুদীপ, আরও সব লোকজন। ক্যামেরার মানস, ফান্টা, সৌমেন, রাও, দেবাশীষ মৈত্র, শুভেন্দু, মনোজ কত যে চেনা সব লোক ছিল।আজ তারা কে কোথায় যে ছিটকে গেছে দূরে কে জানে।
জীবন বড়ই স্মৃতিকাতর তাই মনে হলো আমার সাদা জীবনের কালো কথায় এই মানুষটার কথা লিখতে ইচ্ছা হলো আজ। সেই ভোটের কভারেজ করতে গিয়ে গাড়ি করে ওনার চা বাগানের স্পেশাল রিপোর্ট। সেই গাড়ির মধ্যে বসেই ইটিভির লাল বুমে পিটুসি দেওয়া। সেই সুন্দর পূজো এলেই কাছে দূরে বেড়াতে যাওয়ার অজানা অচেনা জায়গার সন্ধান দেওয়া। মনে মনে ছবি দেখে ভাবতাম আমি কি সুন্দর জায়গায় যে নব্যেন্দু দা থাকেন কাজ করেন সত্যিই উনি ভাগ্যবান। সব দিক থেকেই উনি সিনিয়র সাংবাদিক হওয়ায় ভাগ্যবান ছিলেন। মনে মনে ওনার খবর দেখে ফোন করতে ইচ্ছা হলেও সেটা করা হয় ওঠেনি আর কোনোদিন ওনার সেই বিএসএনএল এর নম্বরে। ওই একটাই দুজনের মধ্যে সীমারেখা টেনে নিজেকে একটা আলাদা কক্ষে রেখে বাস করা। সেটা ভেদ করে আর এগিয়ে যাওয়া হয়নি আমার।
আজ এতদিন পরেও সেই সীমারেখা অতিক্রম করে, সেই পাহাড়ের চুড়ো অতিক্রম করে, লাটাগুড়ির জঙ্গল পেরিয়ে কিছুতেই তাঁর কাছে পৌঁছানো যাচ্ছে না আজও। সেই হীরক কর, নব্যেন্দু গুহ, জয়ন্ত চৌধুরী, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, রবিশঙ্কর দত্ত, সেই কত যে বিখ্যাত সব সাংবাদিক ছিল সেই সময় মির্জা গালিব স্ট্রিট এর অফিসে কে জানে আজ তারা কে কোথায়।
তবু আজ সেই অফিস আর নেই। বদলে গেছে রামোজি রাও এর সেই ইটিভির নিরপেক্ষ চরিত্র, বদলে গেছে মালিকানা সব কিছুই। আজ নেই রামোজি রাও নিজেও। শুধু সেই উত্তরবঙ্গের নায়ক নব্যেন্দু গুহ, মালদার সনৎ ঝাঁ, মুর্শিদাবাদ এর আশাবুল হোসেন, কুচবিহার এর গৌতম সরকার, সেই উত্তর দিনাজপুর এর উত্তম রায়, বর্ধমানের বিখ্যাত হীরক কর, সঞ্জয় বিশ্বাস, অভিজিৎ বসু , পলাশ মুখোপাধ্যায়, তীর্থঙ্কর বোস, শৌনক ঘোষ, সুজিত ভৌমিক, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়,তরুনকান্তি দাস, অরূপ কালী, বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, অর্কপ্রভ সরকার, এই সব নামগুলো আজও রয়ে গেছে। যে নামফলককে আঁকড়ে ধরেই বেঁচে থাকা এই বাকি জীবন।
আমি জানিনা কেমন আছেন নব্যেন্দু গুহ দা এখন। কলকাতায় শুনেছিলাম ফ্ল্যাট কিনেছেন তিনি। ওনার মেয়ে বোধহয় আনন্দবাজার পত্রিকায় কাজ করেন। কলকাতায় থাকেন না শিলিগুড়ি থাকেন তাও জানিনা আমি। শুধু মনে হলো এই ব্লগে তো তাঁর কথাও লেখা দরকার। সেই প্রথম বাংলা মিডিয়ার এই উত্তরবঙ্গের মানুষটার কথা। যে মানুষটার কাজ, যে মানুষটার কথা, যে মানুষটার খবর এর কথা আজও মনে করে উত্তরবঙ্গের সাংবাদিকরা। কলকাতার ইটিভির অফিসে সেই সময় কাজ করা সাংবাদিকরা। সেই ইটিভির জেলার দুই বঙ্গের নানা সাংবাদিকরা। ভালো থাকবেন আপনি দাদা। হয়তো ভালো লিখতে পারলাম না আমি। তবু একবার পড়ে দেখবেন সময় করে।
হারিয়ে যাওয়া উত্তরবঙ্গের নব্যেন্দু দা - অভিজিৎ বসু।
চব্বিশ ডিসেম্বর দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন