সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মগরার হারিয়ে যাওয়া রঘু

হুগলী জেলার মগরার রঘুর কথা মনে পড়ে গেলো আমার হঠাৎ করেই। সেই শেওড়াফুলির স্টেশনের পাশে ছাতুগঞ্জের আকবরদার অফিসে তখন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন ভীড় জমাচ্ছেন তারা সকাল হতেই একটু একটু করে। সবে মাত্র কংগ্রেস ভেঙে নতুন দল তৈরি হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর বিভিন্ন এলাকায় এলাকায় সেই দলের নেতা তৈরি করতে, সংগঠন করতে দিন রাত পরিশ্রম করতে হচ্ছে আকবর আলি খন্দকারকে। 


কে এলাকায় সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবে এমন লোকজনকেই খুঁজে বের করতে হচ্ছে তাঁকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ খবর করে। সেই আকবরদার ভীড় ছাতুগঞ্জের অফিসে এককোনে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতাম ওকে। কোনো মাতব্বর ভাব নয়। একদম হাত জোড় করে যেনো মাস্টার এর সামনে বাধ্য ছাত্রের দাঁড়িয়ে থাকা। একদম ভয়ে নয়, ভালোবাসায়। গালমন্দ শুনেও এক পা না নড়ে যাওয়া তার। 

এমন সব নানা মানুষের ভীড়ে ওকে দেখতাম আমি। সাদা ফুল শার্ট জামা পরে। হাতে অনেক আংটি পরা। হাসি মুখে জিজ্ঞাসা করতো আমায়, অভিজিৎ দা ভালো আছো তো তুমি। তখন প্রায় মোবাইলহীন যুগে সেই সময় এইভাবেই দলীয় কার্যালয়ে, পার্টি অফিসে, আর কোনো রাজনৈতিক সভায় এলাকার স্থানীয় নেতাদের সাথে দেখা হয়ে যেত জেলা রিপোর্টারদের। আর তারাই তখন নানা খবর দিত আমাদের দেখা হলে তাঁর এলাকার কোথায় কি হচ্ছে সেই সব খবর।

এইভাবেই খবরের যোগাযোগ হয়ে যেতো আমাদের। অনেক পরে আরও দ্রুত মোবাইল ছড়িয়ে পড়লো দিকে দিকে তখন তো ফোন করে সেই এলাকার স্থানীয় নেতাদের সাথে কথা বলা যেতো। কোনো ঘটনা ঘটলে খবর জানা যেতো। তবে সেই ঘোরানো ফোন নম্বর থেকে ফোন করে খবর দেওয়া বেশ একটা কষ্টকর ব্যাপার ছিল সেই সময়। তবু তো সেই আমলেও কষ্ট করেই গ্রামগঞ্জ থেকে খবর এসে পৌঁছে যেতো ঠিক। কোনও সময় আকবরদার অফিসে, কোনো সময় শ্রীরামপুরে পল্লীডাক প্রেসে প্রবীরদার কাছে, আবার কোনো সময় সোজা আমাদের কাছেও মানে রিপোর্টারদের কাছেও খবর চলে আসতো। এইভাবেই চলতো খবরের আসা আর যাওয়া।

যাইহোক সেই আমলেই এই মগরার রঘু, ভজা, তরুণ পান যে আজ আর নেই, তারক কর্মকার, ডানকুনির অনিল দা, সেই সুদর্শন বর,সেই গুপ্তিপাড়ার বিশ্বজিৎ, খানাকুলের শৈলেন দা, সেই আরামবাগের সমীর ভান্ডারী, উত্তরপাড়ার দিলীপ দা, চন্ডীতলার ট্যাবো মানে অমিত মিত্র বোধহয়। সেই সুবীর মুখোপাধ্যায়, সুগন্ধার সেই নামটা মনে পড়ছে না, হ্যাঁ, সাধন সাঁতরা, সেই পান্ডুয়ার আনিসুল ইসলাম, এমন কত যে মানুষজন ভীড় করতো এই ছাতুগঞ্জের অফিসে তার ঠিক নেই সেই সময়। সবার কথা কি আর মনে থাকে। আর এদের মাঝেই চুপটি করে হেডস্যার এর সামনে ছাত্র দাঁড়িয়ে থাকার মতো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতো সেই মগরার বড়ো ভাই এর সুযোগ্য শিষ্য রঘুনাথ ভৌমিক। 

আমি ওর সাথে দেখা হলেই বলতাম দাদা, কোনো খবর হলে দিও একটু জানিও আমায়। কত যে খবর মগরা থেকে সেই সময় রঘু আমাদের দিয়েছে সেটা গুণে শেষ করা যাবে না। বহু ভালো ভালো খবর ও দিয়েছে আমাদের সেই সময়। বহুদিন এই ভাবেই গ্রামে গঞ্জে এই সব স্থানীয় নেতা না হয়েও তারাই আমাদের খবরের বড়ো সোর্স হিসেবে কাজ করেন তারা দিনের পর দিন। এইভাবেই চলেছে রিপোর্টার আর তাদের খবরের সোর্সের সেই পুরনো আমলের পুরোনো দিনের সংসার। 

আর আজ তো আর শুধু খবর নয় সব ছবি তুলে সব কিছু রেডি করে মোবাইল এর মাধ্যমে ঘটনার কপি লিখে রিপোর্টার এর কাছে সোজা সেটা মোবাইল ফোনে চলে আসে। স্পটে না পৌঁছেও কেমন অনায়াসেই সব ঘরে বসেই মিলে যায় যে আজকাল এই বর্তমান যুগে। আগে এমন কথা তো ভাবাই যেত না। সত্যিই আজকাল যেটা জলভাত আজ থেকে ত্রিশ বছর আগেই কত কঠিন আর দুরূহ ব্যাপার ছিল এই খবরের দুনিয়ায় খবর পৌঁছে দেওয়া। ঠিক যেনো ওই এভারেস্ট শৃঙ্গের ওপরে ওঠার মতই।

যাই হোক কথা হচ্ছিল রঘুকে নিয়ে। সেই রঘু সারাদিন পার্টি অফিসে দাঁড়িয়ে বড়ো ভাই আকবরদার কাছে কি কি করতে হবে এলাকায় সেটা ভালো করে বুঝে সন্ধ্যার সময় সেই দৌড়ে বর্ধমান লোকাল ধরে সাতটার ট্রেন ধরে মগরা ফিরে যেতো। হয়তো মেজদির কাছে সারাদিনে একবার লুকিয়ে গিয়ে ভাত খেয়ে নিত সে। এইভাবেই তো তৈরি হয়েছে নতুন দল। যে দলের মূল ভিত্তি ছিল শুধু মাত্র ভালোবাসা। কিছু পাওয়ার নেশায় দল করা নয়। বড়ো ভাইকে ভালোবেসে, দিদিকে ভালোবেসে আর সিপিএমকে ঘৃণা করে দল করা। 

বহুকাল পরে একদিন শুনলাম আমি মগরা পঞ্চায়েত এর দায়িত্ব পালন করে রঘু। আমার বেশ মনটা খুশিতে ভরে উঠলো সেইদিন ওর কথা শুনে। বহুদিন ওর সাথে আমার কথা হয়নি বহুকাল। আর ফোন নম্বর নেই আর আমার কাছে আজ। তবু মনে হলো সেই রঘুর কথা। রাজনীতি ছাড়াও যে ধর্ম নিয়েও ব্যাপৃত রেখেছে তাঁর জীবন নানা ভাবেই। 

সেই মগরার বাগাটি কলেজ, সেই মগরার স্টেশন পার হয়ে, রেললাইন পার হয়ে, কয়লার কালো গুঁড়ো পায়ে মাড়িয়ে জি টি রোড পৌঁছে যাওয়া পায়ে হেঁটে হেঁটে, সেই রেলগেট পড়লে বহুক্ষণ অপেক্ষা করা কখন গেট খুলবে সেই জন্যে, সেই মগরার অনুকূল ঠাকুরের মন্দির, সেই মন্দিরে লক্ষ্মী নারায়ণ দত্তদার দু হাত তুলে কীর্তন করা, সেই কীর্তন করতে করতে মাটিতে লুটিয়ে পড়া। 

সেই নভেম্বর মাসে ঠাকুরের উৎসব হও‌য়া, সেই ছোটবেলায় মার হাত ধরে মন্দিরে যাওয়া, ঘুরে বেড়ানো এদিক ওদিক, সেই মন্দিরের গৌর দা, সেই জগন্নাথ দা, সেই সঞ্জয় খামারু, কত যে স্মৃতি এমন কত যে কথা মনে পড়ে গেলো আজ এই গভীর রাতে। শুধু মগরার রঘুর কথা বলতে গিয়ে ভেসে এলো নানা স্মৃতি। ত্রিবেণীর গঙ্গার পাড় ধরে ভেসে এলো এমন নানা পুরোনো স্মৃতি। যে স্মৃতির সরণীতে হাঁটলাম আমি রঘুর হাত ধরে। 

আজ সেই মগরার শ্রী শ্রী ঠাকুরের মন্দিরে লক্ষ্মী দত্ত দা আজ আর নেই, তিনি মারা গেছেন অনেকদিন হলো। আমার মাও চলে গেছেন আজ প্রায় দু বছর হলো। এই মন্দিরে এখন থাকে আমাদের রিষড়ার সেই উত্তম দত্ত। যে সারাটা জীবন ঘর ছেড়ে বেরিয়ে চলে এসেছে এই মন্দিরে। সত্যিই জীবন বড়ো বিচিত্র। জীবন বড়ই অনুভূতিময়। জীবন বড়ই স্মৃতিকাতর। সময় পেলেই এই জীবন স্মৃতি মেদুরতায় গা ডুবিয়ে বসে থাকতে বড়ই ভালোবাসে যে।

আজ মগরা পঞ্চায়েত এর সেই রঘুর কথা লিখতে বসে ভেসে এলো এমন সব নানা গভীর গোপন কথা। আমি জানিনা আর কোনোদিন আমার সেই মগরায় যাওয়া হবে কি না। আমি জানি না আর রঘুর সাথে কোনোদিন আর দেখা হবে কিনা। ইচ্ছা হয় আমার একবার সেই চেনা ফেলে আসা পথ পেরিয়ে চলে যাই সেই মগরাতে। দেখা করি রঘুর সাথে, দেখা করি ঠাকুরের মন্দিরে উত্তম এর সাথে। দেখা করি হারিয়ে যাওয়া আমার অতীত স্মৃতির সাথে। আবার মন্দিরের চাতালে বসে ভাত খাই একবার সবার সাথে। আর ট্রেন পাবো না বলে দৌড়ে স্টেশন যাবো বলতেই রঘু বলতো দাদা কোনো চিন্তা নেই আমি তোমায় পৌঁছে দেবো। সেই দিন গুলো যদি একটি বার ফিরে আসতো কি ভালো যে হতো তাহলে। 

মগরার হারিয়ে যাওয়া রঘু - অভিজিৎ বসু।
উনিশে ডিসেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...