সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমাদের মেঘলাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ সেই মেঘলালদার কথা। শ্রীরামপুরে পল্লীডাক প্রেসে আসতেন তিনি। একদম নায়কের মত ফর্সা চেহারা। ফিটফাট। মূখে হাসি। আমায় জিজ্ঞাসা করতেন প্রবীর বাবু কখন আসবেন। প্রথমে তাঁকে চিনতাম না।পড়ে যদিও তাঁর সাথে আলাপ হয়, ঘনিষ্টতা বাড়ে অনেকটাই। যে গল্প যে কথা লেখার জন্য আজ এই কলম ধরা। 


মেঘলাল দা সম্ভবত চুঁচুড়া সদর শহরে এসপি অফিস এর ডিআইবিতে কর্মরত ছিলেন। সুন্দর মোটা গোঁফ, চুলটা ব্যাকব্রাশ করা। মোটা ফ্রেমের চশমা পরে চলে আসতেন সাংবাদিকদের ডেরায় সন্ধে হবে সেই সময়। বাঘের ডেরায় আসার মতোই। রাস্তার ধারে সেই দিলীপ দার লাল চা এর অর্ডার দিত প্রবীর দা। প্রেসে তখন খবর এর তাড়া চলছে। লেখার জন্য ব্যস্ত সাংবাদিকরা। আর এসবের মাঝেই সেই সাইকেল নিয়ে ঘুরে যেতেন তিনি বাড়ী ফেরার সময়। প্রবীর বাবু কেমন আছেন আপনি।

প্রবীরদার কাছে নানা খবর আসে ডিআইবিতে কাজ এর সুবাদে সেই খবর সংগ্রহ করা আর একটু সম্পর্ক ঝালিয়ে নেওয়া সবার সাথে। সেই কাছ থেকে দেখা হাসিখুশি মানুষ একজন যিনি গোয়েন্দা অফিসার। বেশ মজা লাগতো আমার মেঘলালদাকে দেখে। সেই সময় সিপিএম নেতা পীযূষ নাগ বোধহয় আসতেন। আরও অনেকের আসা যাওয়া ছিল এই পল্লী ডাক প্রেসে। 

সেই মেঘলালদার সাথেই কেমন একটা ছোট্ট ঘটনায় সম্পর্ক আরও গভীর হয়ে গেলো আমার। উনিও আমায় খুব ভালোবাসতেন। সেই সময় রিষড়ার বাড়ী থেকে শ্রীরামপুরে আসতাম আমি সাইকেল করে। ট্রেনে আসার টিকিট কাটার পয়সা ছিল না সেই সময়। কিন্তু সাংবাদিক হবার নেশা খবর পেতে হবে এই নেশা ছিল ষোলো আনা। তরুণ মুখার্জী দার বাড়ী হয়ে খটির বাজার হয়ে শ্রীরামপুরে আসতাম আমি। একদিন প্রবীরদা বললেন বাড়ী যাওয়ার পথে তুই মেঘলালদার বাড়ী হয়ে যাস একটু। বললাম ঠিক আছে। উনি সেই সময় মাহেশের পুলিশ আবাসনে থাকতেন। 

ওই আবাসনে গিয়ে ওনার নাম বলে নিচে সাইকেল রেখে ওপরে গেলাম বেল দিলাম। দরজা খুলে দিলেন বৌদি মনে হয়। তারপর আমার কাছে একটা ব্যাগ ছিল সেই ব্যাগে পুলিশ এর রেশন থেকে পাওয়া চাল প্রায় পাঁচকেজি চাল দিলেন বললেন এটা নিয়ে যাও। তখন চাল দিলে তবে আমাদের ভাত জোটে। যে ব্যবস্থা করেছিলেন প্রবীরদা। মেঘলালদাকে বলে যে আমার বন্ধু যাবে একটু দেখে দিও। খুব গরীব ওরা। সেই ঘটনার পর থেকে মেঘলাল দার সাথে আমার সম্পর্ক আরও গভীর হয়ে যায়। 

আজ এতদিন পরে এই রাতের অন্ধকার কেটে ভোরবেলায় মনে পড়ে গেলো আমার এই কথা। সেই মেঘলাল দার পুলিশের কোয়ার্টার, সেই ছোটো ঘর, সেই ছোটো সিঁড়ি ভেঙে দরজার সামনে গিয়ে বেল দেওয়া। চাল এর সাথে আর কিছু একটা দিয়েছিলেন মনে হয়। সত্যিই অসাধারণ এই জীবন। জীবনের নানা ঘটনা আর তার অভিঘাত। যে অভিঘাতে আহত হয়ে এটা লিখে ফেললাম আমি। সেদিন দুপুরে চাল নিয়ে যাবার পর মা ভাত বসিয়ে ছিলেন। ফেনা ভাত খেয়েছিলাম আমরা। আজ যে এই গভীর গোপন কথা বলতে ইচ্ছা হলো আমার।

সত্যিই বড়ো ভালো মানুষ এই মেঘলালদা। শ্রীরামপুরে টকিজ সিনেমার সামনের বাজারে রবিবার দেখা হলেই একগাল হেসে বলেন তিনি অভিজিৎ ভালো আছো তুমি। এসপি অজয় কুমার এর লেখায় ওনার মন্তব্য দেখে মনে পড়ে গেলো তাঁর কথা। সেই পুরোনো দিন এর কথা। যে দিন হয়তো আর ফিরে আসবে না কোনোদিনই। তবু কেন জানিনা মনে হলো এই কথাও লেখা থাক আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায়। আঁকাবাঁকা অক্ষরে আঁকিবুঁকি ব্লগে। ভালো থাকবেন আপনি দাদা। 

আমাদের মেঘলাল দা - অভিজিৎ বসু।
তেরো ডিসেম্বর দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...