সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভালো থেকো তুমি পর্ণা

জলপাইগুড়ি থেকে সাংবাদিক হতে এসেছিল পর্ণা কলকাতা শহরে। বেশ সুন্দর হাসিখুশি মেয়ে পর্ণা। পাহাড়ী ঝর্নার মতোই উচ্ছল মেয়ে সে। আসলে এই কম বয়সে সাংবাদিক হবার ঝোঁক আর এই বিভিন্ন মিডিয়ার চ্যানেলের এই ফাঁদ পাতা ভুবনে যে কত এমন পর্নার মত ছেলে আর মেয়েরা পা দেয় তার ঠিক নেই। সেও ঠিক এমন করেই চলে আসে চব্বিশ ঘণ্টার চ্যানেলে ইন্টার্নশিপ করতে। যাদবপুর থেকে পড়াশোনা করে মনে হয় ওর এই ইন্টার্নশিপ এর ফাঁদে পা দেওয়া। আমি তখন সেই চ্যানেলে কাজ করি। 


আমি শুনেছিলাম ওর মুখেই ওর মা একা থাকেন। বাবা নেই মারা গেছেন। জলপাইগুড়িতে ওদের নিজের বাড়িতে মা থাকেন। বেশ স্ট্রাগল করেই কম বয়স থেকেই ওর মানুষ চেনা শুরু। জীবনের ঘাত আর প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে ওর পথ চলা শুরু। কত অল্প বয়সে ও বোধহয় নতুন করে এই পৃথিবীকে চিনে নিলো নিজের মতো করেই। এক বছরের ইন্টার্নশিপ শেষ হলো ওর। ভেবেছিল বোধহয় এই কোলকাতায় এই মিডিয়ায় কিছু ব্যবস্থা হবে। কিন্তু হলো না। আমি ওকে বিকল্প পথের সন্ধান করতে বলেছিলাম। তখন ওর চোখে সাংবাদিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার স্বপ্ন দেখা সবে শুরু হয়েছে। হয়তো আমার কথায় কিছুটা রাগ করেছিল সেই সময় ও। 

একদিন বোধহয় কলকাতায় ওর সেই ভাড়া বাড়ির কাছেই দেখা হলো আমার। ওর মাও ছিলেন। আলাপ হলো কথা হলো। তারপর হঠাৎ একদিন শুনলাম কলকাতা ছেড়ে পর্ণা দিল্লী চলে গেছে। সেখানেই নতুন করে আবার পড়াশোনা করে। নতুন ফিল্ড খুঁজে নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছে। কথায় কথায় একদিন মনে হয় ও স্বীকার করেছিল অভিজিৎ দা ভাগ্যিস আমি সেইদিন কলকাতা ছেড়ে বাংলা ছেড়ে সাংবাদিকতার মোহ ছেড়ে দিল্লী চলে এসেছিলাম। না হলে যে কি অবস্থা হতো আমার কে জানে। 

শুনলাম ও বিয়ে করলো দিল্লী গিয়ে। নতুন সংসার হলো ওর। ওর মুখের হাসি দেখে বেশ ভালো লাগে আমার এখন। প্রতি রাতেই ওর ডিউটি করতে হয় নাইট শিফট এর। আর আমার হলো রাতে ঘুম আসে না কিছুতেই। তাই সারারাত ওর জেগে থাকা কাজে আর আমার জেগে থাকা অকাজে। আজও একটু আগেই ওর ডিউটি শেষ হলো। ও হয়তো ঘরে ফিরবে। কেমন যেনো একটা সুন্দর সাজানো জীবনের সন্ধান পেলো সে নিজের কর্মদক্ষতায় আর উদ্যোগে। 

মনে মনে বলি আমি ওকে সেদিন আমি তাহলে ঠিক কথাই বলেছিলাম তোমায়, কি বোলো তুমি। যে সাংবাদিকতার পেশাকে বেছে নিওনা। অন্য পেশায় কাজ করো সন্ধান করো। যা আমি পারিনি সেটাই আজ ও করে দেখালো কেমন হাসি মুখে মিডিয়াকে বিদায় জানিয়ে, সাংবাদিকতার ভূতকে ঘাড় থেকে ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দিয়ে। অন্য কাজ করে সুপ্রতিষ্ঠিত হলো ও নিজে নিজেই। বেশ ভালো লাগে আমার ওর এই ঘুরে দাঁড়ানো জীবন দেখে। লড়াই করা হাসি মুখের সংগ্রাম করা জীবন যাপন দেখে। ওর উজ্জ্বল মুখ দেখে। আবার ভালো লাগে যে সেই সুদূর জলপাইগুড়ি থেকে সাংবাদিক হতে আসা একটি মেয়ে কেমন করে যে রাজধানীতে প্রতিষ্ঠা পেলো নিজের ক্যারিশমায় সেটাই বেশ আমায় মুগ্ধ করে। ভালো থেকো তুমি পর্না। এই ভাবেই মাঝে মাঝে রাতের অন্ধকারে আচমকা স্মৃতির পাতা উল্টে দেখো তুমি দেখবে সেদিনের ভাবনা চিন্তা বোধহয় ভুল ছিলো। আমায় দেখে সেটা অনুধাবন করতে পারবে তুমি। ভালো থেকো তুমি।

ভালো থেকো তুমি পর্ণা - অভিজিৎ বসু।
বিশে ডিসেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...