সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

স্যার আমার প্রনাম নেবেন

স্যার এর ছবি আর খবরটা ফেসবুকে দেখে জানতে পেরেই কেমন মনটা খারাপ হয়ে গেলো আমার। সেই শ্রীরামপুর হাইস্কুল মানে বাংলা স্কুলের ফিজিক্স এর শিক্ষক শ্যামলবাবু আর নেই। সেই স্যার এর পুরোনো চেনা ছবি, সেই সাদা জামা, চোখে হাই পাওয়ার এর চশমা, চুলগুলো অবিন্যস্ত, জামার হাতা ঝুলছে কোনোভাবে। আর স্যার একমনে ক্লাস রুমে চক দিয়ে ফিজিক্স এর কঠিন বিষয় অবলীলায় বুঝিয়ে যাচ্ছেন আমাদের। আর আমি কেমন ফ্যাল ফ্যাল করে বোর্ডের দিকে তাকিয়ে আছি কিছুই বুঝতে পারছিনা। আর স্যার সেটা দুর থেকে বুঝতে পেরেই আমায় ডেকে বলছেন অভিজিৎ কি বললাম এখানে এসে দাঁড়িয়ে বল তুই সবার সামনে। আমি তো অবাক কিছুই বুঝিনি যে। 


আর সেটা বুঝতে পেরেই স্যার, আবার বলতে শুরু করলেন গড়গড় করে সেই এক বিষয়। আর এই সাবজেক্টের বিপদ বুঝে তাই স্যার এর কাছেই সেই ঢুলি পাড়ায় স্যার এর বাড়ী প্রাইভেট পড়তে যাওয়া। সেই ভীড়ে ঠাসা কোচিং ক্লাস, গাদাগাদি করে নোটস নেওয়া, কোনো রকমে পরীক্ষায় উগরে দেওয়া। আর সব থেকে কঠিন সাবজেক্ট এ কোনোভাবে পাশ করা। আর তাই তো সেই ভয়েই তো উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেই আর ওই কঠিন পথে পা দিলাম না আমি। 

সোজা পদার্থ বিদ্যার বই ছেড়ে গাছপালা, উদ্ভিদ, প্রাণী জগতে প্রবেশ করলাম আমি। কিছুটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম যেনো। জুলজি, বোটানি, আর শারীর বিদ্যা বা ফিজিওলজি তবু ভালো ওই ওই শ্যামল বাবুর কঠিন সাবজেক্ট পদার্থবিদ্যার থেকে। সেই শ্রীরামপুর উচ্চ বিদ্যালয় এর ঠাণ্ডা ক্লাস রুম। সেই কেমিস্ট্রি ক্লাসের গৌতমবাবু। কিছুদিন আগেও দেখা হলো রাস্তায় আমার সাথে বললেন কি রে কি খবর। বায়োলজি বিভাগের বিশ্বজিৎ বাবু। যাঁর বিয়ের সময় হরিপাল এর ভান্ডারহাটিতে গিয়েছিলাম আমরা। সেই প্রথম স্যার এর বিয়েতে বাইরে রাত কাটানো। কি মজা হয়েছিল সেই দিন। আর সেই ব্রহ্মপদ বাবু ছিলেন আমাদের স্যার। কথা কম বলতেন তিনি। 

সেই স্কুলের তিনতলায় ল্যাবরেটরি। ঝাঁঝাল গন্ধ, ব্যাঙ কাটার তোড়জোড়, ফিজিক্স এর ল্যাবরেটরি রুমে শক্ত সব বিষয়ের পরীক্ষা দেওয়া। সেই স্কুলের গেট পেরিয়ে হেড স্যার দেবীপ্রসাদ কাঁড়ার এর ঘর। পর্দা ঝুলছে সামনে। গেট থেকে বের হবার সময় কি ভয়। আর সেই আমার মামার বাড়ীর পাড়ার এঁদো পুকুরের গবা মামা। স্কুলের শিক্ষক নয় কিন্তু অনেক ক্ষমতা ছিল তাঁর। আসলে মাধ্যমিকে খুব কম নম্বর পেয়েই তো বিজ্ঞান নিয়ে ভর্তি হতে পারলাম গবা মামা বা সুবীর গাঙ্গুলী জন্যে। এই ভাবেই তো কেটে গেলো ক্লাস টুয়েলভ এর পড়াশোনা আমার। আর তার মাঝেই শ্যামল বাবুর এই জলের মতো করে কঠিন বিষয়ের পড়াকে বুঝিয়ে দেওয়া আমাদের। যা আমি নিতে পারিনি কিন্তু বাকিরা তো পেরেছে। 

আজ একটু আগেই স্যার এর সেই বহু দিনের চেনা মিষ্টি হাসিমুখের ছবিটা দেখে, স্যার আর নেই জানতে পেরে মনে পড়লো কিছু পুরোনো ছাত্র জীবনের কথা। যে কথা হয়তো না লিখলেও চলতো। তবু আজ এই রাতের বেলায় স্যার এর বাড়ির সামনের ঘরে মাটিতে বসে পড়া করা। সেই সব দিন গুলো বহুদিন পর ভেসে এলো। জানিনা বাকি স্যার কে কেমন আছেন তাঁরা। বয়স হলে চলে যেতে হয় এটাই নিয়ম। তবু দু বছর ঘর করা স্যার এর সাথে কিছুটা ভয়ে কিছুটা ভালোবাসায় সেটাই আজ বড়ো বেশি করে মনে পড়ছে আমার।

 সেই স্যার এর ফিজিক্স এর বিজ্ঞান নিয়ে নানা প্রদর্শনীতে ছাত্রদের সাহায্যে করা। ওপরে ভয় পেলেও কেমন একটা পিতৃসুলভ ভালোবাসায় ঘিরে রাখতেন তিনি। আসলে সেই জীবনটা আর ফিরে আসবে না জানি। সেই দিন এর ভালোবাসার শ্রদ্ধার মানুষ গুলো একে এক হারিয়ে যাচ্ছেন। এটাই বোধহয় সবথেকে কষ্টের বেদনার। স্যার আমার প্রনাম নেবেন আপনি। 

স্যার আমার প্রনাম নেবেন - অভিজিৎ বসু।
বারো ডিসেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...