সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বাবরি ভাঙার ৩২ বছর শৌর্য নাকি সংহতি, উত্তর মেলা ভার

একদিকে শৌর্য দিবসের হুংকার। অন্য দিকে সংহতি দিবসের ডাক। শৌর্য আর সংহতির এই দুই এর টানাপোড়েনের একটা দিন হলো এই ছয় ডিসেম্বর আজকের দিন। যে দিনটা আমাদের সবার কাছেই দেশের ইতিহাসে একটা কালো দাগ হিসেবেই পরিচিত হয়ে আছে। আজ দেখতে দেখতে ৩২ টা বছর কেটে গেছে। সেই বাবরি মসজিদ ভাঙার দিন আজ। ১৯৯২ সালের সেই ছয় ডিসেম্বর এর দিন এর কালো দগদগে স্মৃতি আজও কেমন করে আমাদের মনের মধ্যে একটা দুঃস্বপ্নের মতই ঘুরে বেড়ায়। সেই উল্লাস, সেই হুংকার, সেই আস্ফালন, সেই উন্মত্ততা, সেই জয় এর আনন্দ এরপর দেখতে দেখতে কেটে গেছে ৩২ টা বছর। সেই আস্ফালন আর উল্লাস এর দিন আজ শৌর্য দিবসের দিন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে চারিদিকে গোটা দেশ জুড়ে। যে শৌর্য আর বীর্য আজ আমাদের সবাইকে চারিদিক থেকে ঘিরে রেখেছে। আর যার ঘেরা টোপে আমাদের সংহতি,একতা, নিরপেক্ষতা আটকা পড়ে গেছে নিজের অজান্তেই।


 আজকে ছয় ডিসেম্বর,কালো দিবস পালন করুন এই ডাক চারিদিকেই। দেখতে দেখতে ৩২ টা বছর কেটে গেছে বাবরি মসজিদ নিয়ে। কেউ বলছেন বাবরি মসজিদ তোমাকে আমরা ভুলছি না, তুমি থাকবে কোটি কোটি মুসলমানদের হৃদয়ের গভীরে, অন্তরের অন্তঃস্থলে। যে অন্তরের অচিন দেশে জমা আছে গভীর গোপন একটা ক্ষত। যে ক্ষত চিহ্ন আজও শুকিয়ে যায়নি। যে গভীর ক্ষতকে বুকে জড়িয়ে নিয়েই তো বেঁচে থাকা। যে বেঁচে থাকার মধ্যেই ঘিরে থাকে শৌর্য আর সংহতির পাঁচমিশালি নানা টানাপোড়েন। যে কারণে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের এতবছর পরেও আমরা কেমন দড়ি টানাটানির খেলায় মেতে উঠি উন্মত্ত হই। জানিনা এই টানাটানি, এই হানাহানি, এই উন্মত্ততা, এই মনের গভীরে ডুব মেরে লুকিয়ে থাকা হিংস্রতা কবে শেষ হবে। আদৌ কি এতবছর পরেও আমরা কিছুটা হলেও বুঝতে পারবো নাকি সবটাই একটা অদৃশ্য সুতোয় ঝুলতে থাকবে আমাদের চোখের সামনে। 


একদিকে যখন এই বাবরি ধ্বংসের দিনে শৌর্য দিবসের ডাক। অন্যদিকে তখন তৃণমূলের সংহতি দিবস পালন। বন্ধ থাকছে বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনও। সদ্য ফেলা আসা বছরগুলির দিকে তাকালে দেখা যাবে ইতিহাসের তৃণমূল জমানায় এই প্রথম সংহতি দিবস পালনের জন্য বিধানসভার অধিবেশন বন্ধ রাখা হল। কিন্তু কেন বিধানসভার অধিবেশন বন্ধ হবে? তা নিয়ে বিধানসভার অন্দরে শুধু সুর চড়িয়ে ক্ষান্ত হয়নি বঙ্গের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। তবু এই দিনে রাজনৈতিক দড়ি টানাটানি বন্ধ হয়নি কোনোভাবেই। শৌর্য আর সংহতির এই দড়ি টানাটানি বেশ মজার ব্যাপার কিন্তু কি বলেন। 

বাবরি মসজিদ ভাঙার কেটেছে তিন দশকের বেশি সময়। সময় দেখলে একেবারে ৩১ বছর। আর এর মধ্যে মাথা তুলেছে মন্দির। কিন্তু এখনও বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন বঙ্গ রাজনীতির আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। তা না হলে কেন ৬ ডিসেম্বরকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলো নানা কর্মসূচি নিচ্ছে? দল আলাদা। কিন্তু কর্মসূচির নাম পৃথক। কিন্তু সবটাই বাবরি মসজিদকে কেন্দ্র করেই হচ্ছে। তার মানে বাবরি মসজিদ ভাঙার দিনকে কিছুতেই ভুলতে পারিনি আমরা আজও এতোদিন পরেও। আর তাই বোধহয় নানা ভাবে নানা নাম দিয়ে এই দিনকে স্মরণ করা। আমাদের মননে, চিন্তায়, আমাদের মনের গভীরে ডুব মেরে লুকিয়ে আছে সেই দিন এর বিশেষ সেই কিছু স্মৃতি। দুর থেকে ভেসে আসছে আজানের ধ্বনি। মাথার ওপর শূন্য আকাশ। এদিক ওদিক উড়ে বেড়াচ্ছে কালো কাক এর দল। আজানের ডাক শুনে তাদের গলায় কেমন উদাসী সুর এর করুন ডাক। 

রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস সংহতি দিবস পালন করছে এই দিনে। কেন্দ্রীয়ভাবে কোনও কর্মসূচি নেই। কিন্তু রাজ্যের বিভিন্ন ব্লক, পুরসভা, শহরে কর্মসূচির ডাক দিয়েছে তারা। সেই কর্মসূচির জন্যই বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনের ৬ ডিসেম্বর, শুক্রবার বন্ধ রাখা হয়েছে। যাতে বিধায়করা এই বিশেষ দিন এর কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেন, কর্মসূচি জন্য উদ্যোগ নিতে পারেন নিজের এলাকায়। তার জন্যে এই বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে দলের তরফেও। 


সদ্য ফেলা আসা বছরগুলির দিকে তাকালে দেখা যাবে ইতিহাসের তৃণমূল জমানায় এই প্রথম সংহতি দিবস পালনের জন্য বিধানসভার অধিবেশন বন্ধ রাখা হল। কেন অধিবেশন বন্ধ হবে? তা নিয়ে বিধানসভার অন্দরে শুধু সুর চড়িয়ে ক্ষান্ত হয়নি বঙ্গের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। তারা বাবরি মসজিদ ধংসের দিন শৌর্য দিবস পালন করবে বলেও জানিয়ে দিয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মসূচি করবে পদ্ম শিবির। শহর কলকাতায় শ্যামবাজার থেকে সিঁথি মোড় পর্যন্ত মিছিল করলেন তারা। নেতৃত্ব দেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তারমানে দিকে দিকে এই বিশেষ দিনকে স্মরণ করার একটা দিন। যে দিনটাকে আমরা সযত্নে আগলে রাখতে চাই, ভুলতে চাইনা কোনো মতেই কোনও ভাবেই। 

তবে শুধু তৃণমূল আর বিজেপি নয় একমাত্র বিধায়কের দল আইএসএফ তারাও ধিক্কার দিবস কর্মসূচির ডাক দিয়েছে এই দিনে। দলের চেয়ারম্যান উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের খোলাপোতায় এই কর্মসূচিতে থাকবেন বলে জানিয়ে দিয়ে হুংকার ছেড়েছেন। আর ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাতা আব্বাস সিদ্দিকীর কর্মসূচি ভাঙরের বিজয়গঞ্জ বাজারে। যদিও তা অরাজনৈতিক ব্যানারে হবে বলে তাঁর অভিমত। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বড় অংশের মতে, মেরুকরণ ক্রমশ পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির ময়দানে মাথা তুলছে। এহেন আবহে বাবরি মসজিদ ভাঙার দিন নানা কর্মসূচি বঙ্গের শাসক বা বিরোধী কিংবা আইএসএফের। যা বঙ্গ রাজনীতিতে যথেষ্ঠ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন তাঁরা। সত্যিই অসাধারণ এই মেরুকরণের রাজনীতি। যে রাজনীতি আমাদের অস্থিমজ্জায় আজ প্রবেশ করেছে চারিদিক থেকেই। সেই শৌর্য বীর্য সংহতি প্রকাশ এর মাধ্যমে। যাকে আমরা ভুলতে পারিনা কিছুতেই। 

আরএসএস আর কোনও মন্দির-মসজিদ বিবাদে থাকবে না। বিশেষ পরিস্থিতিতে আমরা রামমন্দির আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলাম, আমাদের কাজ শেষ’—বক্তার নাম মোহন ভাগবত। আর বিবাদ নয়, রায় মেনে নিয়ে এবার শান্তিতে বাস করুন’—বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদী।
 
প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের প্রধান এই মন্তব্য করেছিলেন ২০১৯-এর ৯ নভেম্বর বিকালে। ওইদিন সকালে ঐতিহাসিক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যার বিতর্কিত জমিকে রামচন্দ্রের জন্মস্থান বলে হিন্দুদের দাবি মেনে সেখানে রাম মন্দির নির্মাণের রাস্তা খুলে দেয়। সুপ্রিম কোর্টের সেই রায়ের পর দেশ শান্ত ছিল। রায় উল্টো হলে কী হতে পারত শীর্ষ আদালত রায় ঘোষণার ২৭ বছর আগেই দেশ তা প্রত্যক্ষ করে। আসলে সেই পাঁচশো সাড়ে পাঁচশো বছরের প্রাচীন একটা মসজিদকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল উন্মত্ত করসেবকরা। মসজিদ যদিও ঘেরা ছিল কাঁটা তারের বেড়ায়। সেই বেড়া টপকে এই ঘটনা ঘটে যায়। যেদিন শত শত টিভি ক্যামেরা, পুলিশ, আধা সেনার কয়েক হাজার কর্মী, প্রশাসনের শীর্ষ আমলা এবং দেশের প্রথমসারির নেতাদের উপস্থিতিতেই এই ঘটনা ঘটে যায়। 

মসজিদ ধ্বংসকে কেন্দ্র করে দেশের নানা প্রান্ত যখন ইতিহাসের কালো দিন হয়ে থাকা সেই অযোধ্যা কাণ্ড কয়েক দিনের মধ্যে কেড়ে নিয়েছিল হাজার মানুষের প্রাণ। বাংলায় নিহত হন ৩২জন। উত্তর প্রদেশে নিহত ২০১ জনের বেশির ভাগেরই প্রাণ যায় পুলিশের গুলিতে বাবরি মসজিদ ধ্বসের সময় যারা লাঠি উচিয়ে করসেবকদের ধাওয়া করার সাহস দেখায়নি। বাবরি ধ্বসের রেশ ধরে সংঘঠিত হয় গুজরাত এর দাঙ্গা। যা আমাদের আজও চোখের সামনে ভেসে ওঠে।

আসলে বাবরি ধ্বংসের পর ভারতের রাজনীতির গঙ্গা-যমুনা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। রাজনীতি ও সমাজজীবনের ডিএনএ-তে পাকাপাকিভাবে স্থান করে নিয়েছে মন্দির-মসজিদ এর কঠিন রাজনীতি। সেই ধ্বংসলীলায় আসলে জোর ধাক্কা খেয়েছে দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার স্তম্ভটিই। সত্যিই কি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের এই স্তম্ভও কি তাহলে একদম মেকী আর ঠুনকো হয়েই বেঁচে আছে আমাদের সামনে যুগ যুগ, বছর বছর ধরে তার ইতিহাসকে বুকে আগলে ধরে। যে দেশের ইতিহাসে জড়িয়ে আছে শৌর্য আর সংহতির ছোঁয়া। আর সেই একতা সংহতি তো দেশেরই সম্পদ। তাহলে শৌর্য আর একতার কিসের লড়াই।

সেই শৌর্য বীর্য সংহতি নিয়েই তো আমাদের ওঠা বসা দিন যাপন করা একসাথে মিলে মিশে বেঁচে থাকা বেড়ে ওঠা। তাহলে কেনো এত বিবাদ, কেনো এতো লড়াই হানাহানি, কেনো এতো পারস্পরিক সম্পর্কের মাঝে দড়ি টানাটানির খেলায় মেতে ওঠা। শৌর্য বড়ো না সংহতি বড়ো সেটা নিয়ে কেনো শুধুই আকচা আকচি করা একে অপরের মধ্যে। আমাদের দেশের ইতিহাস তো এসবে বিশ্বাস করেনা। এই দেশের মানুষ তো শুধুই একে অপরকে জড়িয়ে আঁকড়ে ধরে ভালোবেসে কাছে টেনে নিয়ে বাঁচতে চায়। সেখানে মন্দির, মসজিদ, গির্জা, প্যাগোডা, চার্চ কাউকেই কিছু পরোয়া না করে। শৌর্য আর একতা পাশাপাশি তারা দুজন হাতে হাত ধরে বেঁচে থাকতে চায় হাসিমুখে, ধর্মনিরপেক্ষতার শক্ত মুখোশ পরে।

 বাবরি ভাঙার ৩২ বছর 
শৌর্য নাকি সংহতি, উত্তর মেলা ভার 
- অভিজিৎ বসু।
ছয় ডিসেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্যে গুগল ও ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...