হুগলী জেলার তারকেশ্বরে তিনি থাকতেন একসময়। বর্তমানে গ্রাম ছেড়ে শহরে সল্টলেকে থাকেন তিনি বর্তমানে। আনন্দবাজার কাগজের প্রথম পাতায় তাঁর লেখা পড়ে আর নানা এক্সক্লুসিভ খবর পড়ে মুগ্ধ হতাম আমি একসময়ে। মনে মনে ভাবতাম যদি একবার এই বিখ্যাত রিপোর্টারকে তাঁকে দেখতে পেতাম একবার। তাহলে যেনো জীবন সার্থক হতো মোর। শুধু দু চোখের দেখা আর কিছুই নয়।
অবশেষে দর্শন হলো তাঁর সাথে আমার মহাকরণের প্রেস কর্নারে। সেই পল্লীডাক প্রেসে কত যে তাঁর নাম শুনতাম সেদিনের কাগজে তাঁর নামে লেখা বের হলেই তাঁর প্রসঙ্গ আসতো। সেই তারকেশ্বরের ফাল্গুনীদার কাছে শুনতাম। সেই টেলিগ্রাফের তারক এর মুখে শুনতাম। আর সেই তাঁকেই নিজের চোখে দেখলাম প্রেস কর্ণারের ভিতর। ইটিভির দীপক এর সাথে বেশ ভালই আলাপ দেখলাম। একটা গেঞ্জি আর প্যান্ট পড়ে। একদম সাদামাটা চেহারা। দেখতে খুব যে ঝাঁ চকচকে সেটা নয়। আনন্দবাজার এর ছাপ আছে কিন্তু সেটা বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। একবার এই মন্ত্রীর ঘর তো আবার অন্য মন্ত্রীর ঘরে ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি সবসময়।
আর আমি আমার নিজের জেলার এহেন সাংবাদিককে দেখেই প্রথম দর্শনেই মজে গেলাম বেশ। সাদা বাড়ির তখন বিরাট ক্যাডার বাহিনী মহাকরণ অভিযানে সামিল হয় দফায় দফায় প্রতিদিন। সকালে দশটায় যাঁরা আসেন মহাকরণ পাহারা দিতে সেই তালিকায় অনেকেই আমার পরিচিত। সেই সোমা মুখোপাধ্যায়, সেই পারিজাত বন্দোপাধ্যায়, সেই চিরন্তন রায় চৌধুরী, এমন আরও অনেকেই হাজির হতেন সকাল বেলায়।
আর পরে একটু বেলায় অফিস এর মিটিং সেরে ঝাঁকেঝাঁকে সব ঝাঁ চকচকে রিপোর্টার হাজির হতো মহাকরণে। সেই অশোক সেনগুপ্ত, রঞ্জন সেনগুপ্ত, অত্রি মিত্র, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, প্রভাত ঘোষ, সুপ্রকাশ চক্রবর্তী, সুকান্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মুখোপাধ্যায়, সব জিদান আর মারাদোনার দল মাঠে নেমে পড়তেন সব মাঠ জুড়ে তারা খেলবেন বলে। কেউ বলে নিয়ে দৌড়বেন কেউ আবার ম্যান মার্কিং করে বসে থাকবেন বারান্দায় চুপ করে। তাদের সাথেই আসতেন শ্যামলেন্দু মিত্র। হ্যাঁ একজনের নাম ভুলে গেছিলাম বিখ্যাত দেবজিত ভট্টাচার্য। আর সেই সোমনাথ চক্রবর্তী। আরও অনেকেই আসতেন নাম মনে নেই। আসতো সুনন্দ সান্যাল। পরে যোগ দেয় এই দলে চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য্য।
সেই প্রেস কর্ণার এর ঘরের পাশে মন্ত্রী অরূপ রায় এর ঘরে মাছের অ্যাকোরিয়াম এ মাছেদের খাবার দিতে ছুটির দিনেও হাজির হতেন যে কর্মী। সেই মন্ত্রীর মাছেদের নিয়ে খবর করে কাগজের প্রথম পাতায় তা ছাপা হলে আমরা সব অবাক হলাম। আর কেমন হাসতে হাসতে খবর বের হবার পরে প্রেস কর্নারে ঢুকে একচক্কর ঘুরেই বাইরে আবার খবর খুঁজতে বেরিয়ে যেতেন তিনি। কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়েই। একটু ধর্ম আশ্রম আর মন্দির নিয়ে ইন্টারেস্ট বেশি ছিল তাঁর। দীপক দাস এর সাথে বেশ ভালো জুটি ছিল তাঁর। কিন্তু কারুর সাথেই বিশেষ ঘনিষ্ট হতে দেখিনি তাঁকে কোনোদিন। আর আমি তো সাহস করে বেশি কথাও বলতে পারিনি কোনোদিন।
সেই মানুষটা সেই শ্যামলেন্দু মিত্র হঠাৎ অবসরের ঘোষণা করলেন ফেসবুকে। সেটা দেখেই আমার মনে পড়ে গেলো কিছু কথা। সেই দীপক দাস আর শ্যামলেন্দু মিত্রদার একসাথে মুড়ি খাওয়া মহাকরণের বারান্দায় বসে। সেই দৌড়ে সবাইকে কাটিয়ে ডজ করে গোল দেওয়া তাঁর। পরদিন কিছুই ঘটেনি এমন ভাব করে ফের প্রেস কর্নারে এসে একটা পাক দিয়েই বাইরে চলে যাওয়া।
সত্যিই কি কোনো সাংবাদিক এর অবসর হয় জীবনে। একজন হার্ডকোর সাংবাদিক তো সারাজীবন ধরেই তাঁর রক্তে এই সাংবাদিকতার নেশা থেকেই যায়। তাই তিনি দীর্ঘ প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে এই কাজ করার পর ঘোষণা করলেন অবসর এর কিন্তু তিনি সত্যিই কি পারবেন সব কিছুই ফেলে দিয়ে অবসর নিয়ে চুপ করে বসে থাকতে। মনে হয় না।
তাঁর মনে পড়বে সেই মহাকরণের সেন্ট্রাল গেট, সেই মহাকরণের কাঠের সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা করার আওয়াজ, সেই মন্ত্রীদের ঘর, সেই নিরাপত্তা রক্ষীদের কাছে খবর নিয়ে মন্ত্রীর ঘরে প্রবেশ করা, সেই চা খেতে খেতে পরদিনের সেরা খবরটা সংগ্রহ করে হাসিমুখে কাউকে কিছু না জানিয়ে অফিস ফিরে যাওয়া, পরদিন প্রথম পাতায় নিজের বাইলাইন দেখে খুশি হওয়া। এসব কি ভুলে থাকা যায় শ্যামেলেন্দু দা। আপনি ভালো থাকবেন দাদা। আপনার এই পোস্ট দেখে মনে হলো কিছু কথা লিখে ফেললাম আমি আমার ব্লগে। ভুল হলে ক্ষমা করে দেবেন।
অবসর ঘোষণা শ্যামলেন্দু মিত্রের - অভিজিৎ বসু।
ষোলো ডিসেম্বর দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন