সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জার্নি কেয়ারটেকার টু ক্যামেরাম্যান

ফেসবুকের দেওয়ালে জন্মদিনের শুভেচ্ছা বার্তা আছড়ে পড়ছে চারিদিক থেকেই। আর তাই মনটা বেশ খুশি খুশি লাগছে তার আজ। সত্যিই আজকের দিনটি তো একটু অন্যরকম একটা দিন তার জীবনে। জীবনের এই জার্নির পথটা কি এতই সহজ ছিল তার কাছে। একদম মসৃন রাজপথের মতই জাতীয় সড়কের পথ ধরে হাসতে হাসতে পৌঁছে যাওয়া ছিল এই ক্যামেরা হাতে নিয়ে আর ক্যামেরার ভারী ব্যাগ বয়ে।


 মনে হয় না, জীবন তো এত সোজা সহজ ভাবে চলে না। জীবনের আঁকাবাঁকা পথে থাকে তিস্তার বাঁক, জীবনের পথের শুরুতে থাকে নানা অকথিত কাহিনী, নানা গভীর গোপন যন্ত্রণা আর ভালোবাসার কথা। যে সব কথাকে মনে রেখে, যন্ত্রণাকে বুকের মাঝে লুকিয়ে রেখে চুপটি করে চুপিসাড়ে এগিয়ে চলতে হয়, নির্দিষ্ট লক্ষ্যপথে ঠিক যেভাবে হাতের জাদুতে ওয়াইড অ্যাঙ্গেল থেকে মিড বা অন্য কোনও শটে পৌঁছে যেতে হয়। জীবনের এই জার্নি তো ঠিক তেমনই। কখনও ওয়াইড, কখনও মিড, আবার কখনও লং। সারাটা জীবন শুধুই এই নানা অ্যাঙ্গেল শটের সমাহার। জন্মদিনের দিন যাকে সে একটু জুম করে দেখতে বসেছে ক্যামেরার লেন্সে চোখ লাগিয়ে। 

আজ সাদা জীবনের কালো কথায় এমন এক ক্যামেরা রুমের কেয়ারটেকার থেকে সেই বিখ্যাত সাংবাদিক এর নির্বাচনী শো 'আপনার রায়' এর প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার যাত্রাপথের সেই বিখ্যাত ক্যামেরাম্যান এর নানা স্বাদের গল্প। হ্যাঁ, আমাদের সেই পার্থ পাল এর কথা। চব্বিশ ঘণ্টার সেই বিখ্যাত ক্যামেরাম্যান পার্থ পাল এর কথা আজ আমার আঁকিবুঁকি ব্লগে।

 সেই গ্রাম থেকে আসা এক কলকাতার এক বিখ্যাত ক্যামেরাম্যানের ঘরে রাত কাটাতে একদিন আশ্রয় নেওয়া তাঁর। মাথার ওপর ছাদ নেই। জীবনের কঠিন লড়াইকে সঙ্গে নিয়েই এগিয়ে চলা হাসিমুখে। আর তারপর সেই অন্যের ঘরে দিনযাপন করার জন্য, তাকে আশ্রয় দেওয়ার সেই কলকাতার বিখ্যাত ক্যামেরাম্যান অজয়দার কথা তাই এই আজকের দিনে বড়ো বেশি করে মনে পড়ে যায় তার। যদি সেদিন তাকে একটু আশ্রয় না দিত এই মানুষটা কি যে হতো তার কে জানে। কোথায় ভেসে যেতো সে কে জানে। সেই তারপর থেকেই তো আকাশ বাংলা অফিসের এর ক্যামেরা কেয়ারটেকার এর কাজ শুরু করে সে। আর তার এই কাজ পেতে অজয়দাই ব্যবস্থা করে দেয় তুলসীদাকে বলে। সত্যিই তার জীবনে এই দুটি মানুষ বড়ো বেশি করে প্রভাব ফেলে আজও। আর আজ তার জন্মদিনের দিন এই দুটি মানুষের কথা বড়ো বেশি মনে পড়ে যায় আজ। 

সেই আকাশবাংলা থেকে তুলসীদার হাত ধরে চব্বিশ ঘণ্টার চ্যানেলে প্রথমে ক্যামেরার কেয়ারটেকার হয়ে যাওয়া আর কাজ পাওয়া। সেই তার ভালোবাসার ক্যামেরাকে দেখভাল করা। ক্যামেরাকে ঠিক করে রাখা ঝাড় পোঁছ করা। এটাই তার কাজ ছিল প্রথম দিকে। সবাই যখন ক্যামেরার ব্যাগ নিয়ে অ্যাসাইনমেন্টে চলে যেতো মনটা কেমন খারাপ লাগতো তারও। মনে মনে ভাবতো সে যদি যেতে পারত ওদের মতো বেশ ভালো হতো। কপাল খুলে গেলো তার একদিন সত্যিই। চব্বিশ ঘণ্টার এক বিখ্যাত ক্যামেরাম্যান যার হাতে ক্যামেরা নাকি কথা বলে সব ছবিতেই। নামটা আর লিখলাম আমি সেই বিখ্যাত ক্যামেরাম্যানের। সে সেদিন শরীর খারাপের অজুহাত দিয়ে বলে সে আজ আর বের হবে না কোনো অ্যাসাইনমেন্টে। আর তখন পার্থকেই ক্যামেরা নিয়ে যেতে বলে অফিস। 

সেই প্রথম দিন তার যাত্রা শুরু হলো ক্যামেরা নিয়ে ব্যাগ নিয়ে। আর সেই যাত্রাই তাকে ধীরে ধীরে পৌঁছে দিলো এই আজকের দিনে। সেই জী চব্বিশ ঘণ্টার ডেপুটি এডিটর ধ্রুবজ্যোতি প্রামাণিক এর বিখ্যাত নির্বাচনী শো আপনার রায় বিখ্যাত যাত্রাপথে। যে যাত্রাপথে সেই একদিন যে কেয়ারটেকার হয়ে ক্যামেরা পাহারাদার এর কাজ করত। সেই পাহারাদার পার্থ হয়ে উঠলো আসল কারিগর। 

আসলে জীবন বড়ই অদ্ভুত। জীবনের এই জার্নি বড়ই অদ্ভুত। জীবনের এই জার্নিতে নানা মানুষের আনা গোনা ভীড় আর ক্যামেরার লেন্সে চোখ লাগিয়ে নানা অ্যাঙ্গেল শটের সমাহার। কখনও লং, কখনও মিড আবার কখনও ওয়াইড। শুভ জন্মদিন পার্থ। ভালো থেকো তুমি। আমার সাদা জীবনের কালো কথায় তোমার এই জার্নির কথাই লিখে ফেললাম আমি আজ। 

জার্নি কেয়ারটেকার টু ক্যামেরাম্যান - অভিজিৎ বসু।
সাতাশ ডিসেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...