সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শ্রীরামপুর চাতরার সেই ঋত্বিক দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আমি এত মানুষের কথা লিখি। এত মানুষের কথা আমার মনে পড়ে যায় রাতের বেলায়। কিন্তু আমার শ্রীরামপুরের বাড়ীর পাশের সেই বিখ্যাত মানুষ, সাংবাদিক, লেখক, কবি, মানুষটির কথা এতদিন মনেই পড়েনি একদম। সদ্য তাঁর পঁচিশে ডিসেম্বর জন্মদিন হয়ে গেলো এই দুদিন আগেই। তবুও তাঁর কথা মনেই আসেনি। 


কেনো জানেন সেটা হলো। এর একটাই কারণ খুব কাছের, খুব নিকটের আর খুব আপনার একজন মানুষকে খুব কাছ থেকে দেখেও সেই মানুষ যদি অসীম উচ্চতায় পৌঁছে যান তাঁকে নিয়ে কিছু লিখতে কিছু বলতে গেলে আমার ভয় হয়। মনে হয় যদি ভুল কিছু লিখে ফেলি, আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায়। তাহলে হয়তো সেই চেনা মানুষটা আরও অচেনা হয়ে যাবেন। থাকনা যেমন চেনা আর অচেনার মাঝে মিষ্টি মধুর সম্পর্ক টিকে আছে সেটাই টিকে থাক কি দরকার আর কিছু লিখে তাকে বিব্রত করার।

 আবার মনে হয় আমার এই নানা মানুষের ভীড়ে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যাওয়া সেই শ্রীরামপুরে চাতরার যে বাড়িটায় আমি একদিন পথ হারিয়ে সিঁড়ি বেয়ে একদিন অন্য দরজায় বেল দিয়ে ফেলেছিলাম মনে হয়। যে ঘরটার দরজা খুলে দিয়ে আমায় বলতেন একজন মহিলা, তুমি বসো আমি ওকে ডেকে দিচ্ছি। সেই শ্রীরামপুরে পুরোনো দিনের বাড়ী, সেই কড়ি বরগার আড়ালে, জানলার কার্নিশের মাথায় মুখ লুকিয়ে বসে গলা ফুলিয়ে পায়রার বক বকম মন কেমন করা ডাক। সেই সুন্দর চৌকো ছোপ এর বারান্দা, সেই পুরোনো বাড়ির চাতাল আর দুর্গা দালান পেরিয়ে ওপরে উঠে এদিক ওদিক দেখা কেউ কোথাও আছে কি না। কাউকে না পেলে চুপ করে বেল টিপে একটু ভয়ে ভয়ে অপেক্ষা করা। 

তারপর হাসি মুখে তাঁর ঘর এর দরজা খুলে বেরিয়ে আসা। আরে অভিজিৎ এসো এসো তুমি। তাঁর হাতে বিখ্যাত কোনও ইংরাজি লেখকের বই। সেই আমার বিয়ের অনুষ্ঠানে আসা তরুনদার সাথে নন্দী মাঠের বাড়িতে সকাল বেলায়। সেই বিখ্যাত স্বরাজ মুখার্জী দার বাড়ীতে দেখা হয়ে যাওয়া, তাঁর নিজের লেখা বই দেবার সময়। সেই তাঁদের পুরোনো দিনের বাড়ী নিয়ে কোনো একটা স্থানীয় সমস্যা হওয়ায় স্থানীয় তৃণমূল নেতা আকবর আলী খোন্দকারকে বলে দেওয়ার জন্য আমার কাছে অনুরোধ করা। সেই তাঁর মেয়ের জন্ম দিন বা কোনো অনুষ্ঠানে সপরিবারে আমার যাওয়া দুপুর বেলায়। কি মজা হয়েছিল সেই দিনে। সেই সব পুরোনো দিনের কথা আজ মনে পড়ে যায় আমার। 

 এমন নানা স্মৃতি যে ভেসে আসছে তাঁর কথা লিখতে বসে। সেই তরুণ মুখোপাধ্যায় এর সাথে তাঁর কাছে যাওয়া বহুবার। সেই সৌরভ এর বিয়েতে কলকাতা থেকে তাঁর শ্রীরামপুরে আসা। এইভাবেই যে আমাদের দুজনের সম্পর্ক টিকে ছিল এতদিন। সেই আমার বউ এর বায়োডাটা দিয়ে বলা যদি কোনো কাজ হয় সেই মুম্বাই এর ওর পাওয়ার সেক্টর এর কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর। সেই মাঝে মাঝেই কোনো নিউজ চ্যানেল আসবে কি না তার সন্ধান নেওয়া ফোন করে। কারণ দেশের বিজনেস বিটের বিখ্যাত সাংবাদিক সে এক জন। আবার কলকাতা প্রেস ক্লাবের আড্ডায় মাঝে মাঝেই বিখ্যাত লোকদের সাথে তাঁকে দেখে হেসে দু চার কথা হয়েছে আমাদের দুজনের। যদি কোনো কাজ হয় সেই খোঁজ খবর পেলে দেবেন বলে জানিয়েছি আমি আর তিনিও হেসে হ্যাঁ বলেছেন।

এই ভাবেই সেই শ্রীরামপুর এর সম্পর্ক আজও কেমন করে যেনো টিকে আছে দুজনের মধ্যে অমলিন হয়ে। রাতের অন্ধকারে আজ তাঁর কথা মনে পড়ে গেলো আমার। সেই বিখ্যাত সাংবাদিক ঋত্বিক মুখোপাধ্যায় এর কথা, আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায়। আমার এই আঁকিবুঁকি ব্লগে। যে মানুষটার কথা লিখতে বসেও মনে হয় সত্যিই কি আমি যোগ্য এই বিখ্যাত সাংবাদিক এর জন্য কিছু কথা লেখার জন্য। যিনি মাটিতে বাস করেন না একদম। শিক্ষায়, কৌলীন্যে, আভিজাত্যে, নিজের স্ট্যাটাসে সব জায়গায় তিনি ভিন্ন এক গ্রহের মানুষ। তাঁর পরিশীলিত মার্জিত ব্যবহার, সুন্দর মিষ্টি মুখের কথা, তাঁর সুন্দর রুচির পরিচয় সত্যিই যে কাউকে মুগ্ধ করবেই। 

আর তাই মনে পড়ে গেলো সেই পুরোনো বাড়ির কথা, ঋত্বিকদার মার কথা, সেই নানা অতীত দিনের কথা। সেই অঙ্কিত ভবনে থাকা শান্তাদির কথা আর অর্পনদের কথা। সেদিন দেখলাম ওই বাড়ির দরজায় তালা পড়ে আছে। জানিনা আজ তাঁর মেয়ের কোন ক্লাস হলো। কলকাতায় চলে যাওয়ার পর বিশেষ আর কথা হয় না আমাদের দুজনের। 

আজ আমার এই এলেবেলে এলোমেলো বিন্দাস জীবনে হঠাৎ করেই মনে পড়ে গেলো এই বিখ্যাত সাংবাদিক এর কথা। যিনি দেশ ছেড়ে বিদেশে থাকতেই বেশি পছন্দ করেন। সারা বিশ্ব ঘুরে বেড়ান তিনি নিজের কাজে আর লেখার কাজে। মাঝে মাঝেই নানা কাজে ঘুরে বেড়ান দেশের সীমারেখা পেরিয়ে বিদেশের মাটিতে। 

আজ বেশ ভালো লাগলো আমার বহুদিন পর তাঁর কথা লিখতে পারলাম বলে। সত্যিই আরও আগেই হয়তো লেখা উচিত ছিল আমার। কিছুটা হলেও বুকে সাহস নিয়ে লিখে ফেললাম দাদা। আপনি ভালো থাকবেন। ভুল লিখলে ক্ষমা করে দেবেন দাদা। আবার ইচ্ছা করে আমার দুজনে সেই পুরোনো ফেলে আসা দিনে ফিরে যাই। শুভ জন্মদিন দাদা। 

শ্রীরামপুর চাতরার সেই ঋত্বিক দা - অভিজিৎ বসু।
আটাশ ডিসেম্বর দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...