সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হাসি মুখের প্রলয়

সেই উজ্জ্বল দুটি চোখ। গোঁফের ফাঁকে মিষ্টি হাসি। সেই এই রাগ তো এই ঝগড়া আবার পরক্ষনেই ভাব হয়ে যাওয়া। সেই পিসিআর ছেড়ে হঠাৎ করেই চলে যাওয়া আবার কেমন বদলে যাওয়া পরক্ষণে ফিরে আসা। আবার সেই নিউজ রুমে কোনো বিখ্যাত সাংবাদিক এর হাঁটা আর কথা অনুকরণ করে সবাইকে দেখিয়ে মজা করে মাতিয়ে রাখা নিউজ রুম। আবার কোনও সময় সেই শ্রীরামপুরে আমার বাড়িতে রবিবার দুপুরে চলে আসা হাসি মুখেই। এমন কত যে সহজ সরল মধুর হাসিখুশি সম্পর্কের শরিক ছিলাম আমরা দুজনে। শুধু তাই নয় এমন মিষ্টি মধুর সম্পর্কের শরিক ছিল আমাদের দুই পরিবারও এক সময়। 


সেই আরামবাগ এর ওর শ্বশুরবাড়ি তৈরি হওয়া। সেই বৃষ্টি ভেজা দুপুর বেলায় কলকাতার এক বিখ্যাত সাংবাদিককে নিয়ে শ্রীরামপুরে চলে আসা ওর। দুপুরে সুন্দর আড্ডা মারা ওদের। সেই ব্যবস্থা করে দিতে সিঙ্গুর থেকে আমার ক্যামেরাম্যান রানা কর্মকারকে ডেকে আনা। সেই ওর ছেলের চন্দননগরে ভর্তি হওয়া। আমার মেয়ের স্কুলের বন্ধুর কোনো ঘর ভাড়া দেবে সেটা ওকে জানিয়ে দেওয়া। এমন নানা পুরোনো কথাই যে আজ মনে পড়ে যায় আমার এই রাতদুপুরে। সেই চ্যানেলে আব্দুল মান্নান এর ফোন নেওয়া যাবে না বলে এডিটর এর ফরমান দেওয়া। ওর হাসি মুখে সেটা মেনে নেওয়া। কোনো কিছু না বলে। সেদিন কেমন প্রতিবাদে মুখর এই মানুষটাকে দেখে কেমন খারাপ লেগেছিল আমার। যদিও হয়তো ও আমায় ওর বিরোধী পক্ষ বা শত্রু পক্ষের লোক ভাবতো হয়তো। আসলে সেটা নয় কিন্তু। ওর ধারণা একদম ভুল। 

 সত্যিই আজ সেই হারিয়ে যাওয়া আমার সেই পুরোনো দিনের বন্ধুর কথা বেশ মনে পড়ছে। সেই ইটিভির হায়দরাবাদ ডেস্ক এর কবেকার বন্ধু। সেই চব্বিশ ঘণ্টার দাপুটে প্রোডিউসার কাম বন্ধু। সেই নিউজ এইট্টিন এর ডিপেনডেবেল ব্যাটসম্যান। সেই আমার বাড়ির পাশে বৈদ্যবাটিতে ওর বাড়ী ছিল। আর একটু কার ফোন নেওয়া হবে এই খবরে সেটা বলতে একটু দেরী করলেই যে চেয়ার ঘুরিয়ে সোজা সাপটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিত অ্যাসাইনমেন্টের টেবিলে। আর তার ভয়ে আমরা সব থর থর করে কেঁপে উঠতাম। সেই আমার হুগলীর বাসিন্দা বিখ্যাত সাংবাদিক প্রলয় লাহা। আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় সেই হাসি মুখের প্রলয় লাহার কথা। 

আমার সাথে আজকাল খুব কম কথা হয় ওর। আর মিডিয়া জব না করে সেই কথা আরও কমে গেছে আজকাল দুজনের। তবু কত যে স্মৃতি, ভালো মন্দ জমা হয়ে আছে কে জানে। আর সেই জমা স্মৃতির উত্তাপ নিতেই রাত দুপুরে এই লেখা লেখা খেলা করা। সেই ওরএইবার জগদ্ধাত্রী পূজোর সময় বড়বাজার এর সামনে দাঁড়িয়ে মনে হলো ফোনে যোগাযোগ করি ওর সঙ্গে। আগের মতই বলি কোথায় তুমি। ও বলবে দাদা, এইতো অফিসে আছি আমি। কিন্তু না, আগের মতোই আর ঘন ঘন প্রস্রাব পাওয়ার মতই ফোনের বোতাম টিপতে পারলাম না আমি। কেনো কে জানে। কেমন একটা টোটো চালকের অস্বস্তি আমায় ঘিরে ধরলো চারিদিক থেকেই। কর্মহীনতার কালো মেঘ আমায় কেমন যেনো আচ্ছন্ন করলো ওকে ফোন করতে গিয়েও। 

ওর বাড়ী পার হয়ে চলে এলাম আমি ভীড় ঠেলে। কতদিন যে খবর নেওয়া হয়নি ওর বাড়ীর। ছেলের কোন ক্লাস হলো কে জানে। সেই একসাথে ট্রেনে ওর সঙ্গী সাথীদের সাথে মজা করতে করতে বাড়ী ফেরা, ট্রেনে সেই বাদাম আর মিষ্টি বাদাম খাওয়া সবাই মিলে। কত যে হাসির গল্প করতে করতে ঘরে ফেরা হতো তার ঠিক নেই যে। সত্যিই অসাধারণ এই জীবনের ফেলে আসা অতীত দিনের স্মৃতি রোমন্থন করতে বেশ ভালই লাগে আমার। বুড়ো বয়সে এসে এই কাজটা কিন্তু খারাপ নয়। রাতের বেলায় হারিয়ে যাওয়া চেনা অচেনা মানুষকে খুঁজে টেনে টেনে বের করা। 

নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাতে তাই আর এসএমএস নয়। সোজা লজ্জা কাটিয়ে ফোন করে ফেলবো এইবার ওকে। কি আর বলবে আমায়। হারিয়ে যাওয়া বন্ধুত্বের সম্পর্ক এর মেঠো পথে হাত বাড়িয়ে দিয়ে না হয় দেখবো টোটো চালকের হাত ধরে কি না সে। নিশ্চয়ই ধরবে আমার হাত। ধরবে আমার ফোন বলবে দাদা বলো কি খবর। সেই আগের মতোই। আর আমিও ওকে হেসে বলবো দাদা বেঁচে আছি আমি না মরে। ভালো থেকো তুমি প্রলয়। বিন্দাস জীবন নিয়ে ভালো থেকো তুমি।

হাসিমুখের প্রলয় - অভিজিৎ বসু।
পঁচিশ ডিসেম্বর দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...