জানিনা আমি আজ কেউ আর এই রিপোর্টারকে সেই মহাকরণের লম্বা বারান্দা দিয়ে ধীর পেয়ে হেঁটে যাচ্ছেন তিনি সেটা আর মনে রেখেছেন কি না। সেই কোনো সময় সিএস এর ঘর থেকে বেরিয়ে তিনি হাসিমুখে সোজা চলে যাচ্ছেন করিডোর ধরে হাঁটতে হাঁটতে। আবার কোনো সময় অন্য কোনো ঘরে ঢুকে পড়ছেন সবার নজর এড়িয়ে। একদম নিজের মত করেই ঘুরে বেড়ানো মহাকরণের এই ঘরে আর সেই ঘরে। ঠিক খুঁটে খুঁটে খবর সংগ্রহ করা। প্রেস কর্নারে এসে হৈ চৈ হুল্লোড় এর মাঝে কোনসময় তাকে আসতে দেখিনি আমি কোনোদিন। নিজের কাজ, নিজের খবরের সোর্সেদের নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকতেন তিনি নিজের বৃত্তে বেঁচে থাকা।
ইংরেজি কাগজের বেশ দাপুটে রিপোর্টার। একদম চুপ চাপ করে খবর করে বেড়ানো এই মহিলা সাংবাদিক আগে ইটিভি বাংলা চ্যানেলে কাজ করতেন একসময় সেটা ইটিভির আদিম যুগে। সেই আশীষ ঘোষ, শুভাশীষ মৈত্র, অম্বরীষ দত্ত আর মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় এর আমলে। নামটা হয়ত বললেই মনে পড়বে পুরোনো দিনের রিপোর্টারদের। আজ তাঁর একটা পুরষ্কার পাওয়ার খবর পেয়ে মনে হলো আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার ব্লগে এই রিপোর্টার এর কথা কিছু তো লেখা হলো না আমার কোনোদিন।
যদিও সবার বিষয়ে কি আর লেখার মতো রসদ মেলে। নাকি লেখার অনুমতি মিলে যায় তার কাছ থেকেই। কিম্বা কাউকে নিয়ে লেখার মত সাহস করে এগোনো যায় হঠাৎ করেই। আসলে অনিন্দিতা চৌধুরী সেই ইটিভির তৃণমূল বিটের হাসি মুখের অনিন্দিতা, সেই বিজনেস বিটের গার্গী, সেই ডেস্ক এর হিরো সুপার ম্যান সৈকত, সেই বর্তমানে কবি ক্রাইম রিপোর্টার দীপঙ্কর, সেই খেলার মাঠের উৎপল পট্টনায়ক, সেই অমৃতাংশু ভট্টাচার্য্য, রবিশঙ্কর দত্ত, জয়ন্ত চৌধুরী, বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য, হৈমন্তী, আরও কতজন যে ছিল সেই তিন নম্বর চৌরঙ্গী স্কোয়ার এর অফিসে।
এমন হাজারো রিপোর্টারদের ভীড়ে একদম অন্য ধরনের একজন রিপোর্টার এই অনিন্দিতা চৌধুরী। যাঁর পরিশীলিত মার্জিত ব্যবহার, যার বর্ম ভেদ করে তার গণ্ডির ভিতরে প্রবেশ করা খুব কঠিন ব্যাপার ছিল। নিজের কাজ, নিজের খবরের বাইরে তার নাগাল বা ছোঁয়া পাওয়া কঠিন ব্যাপার আরকি। তবু কলকাতা অফিসে ক্যাসেট নিয়ে গেলে দেখতাম এদের সবাইকে আমি হাঁ, করে। কলকাতার বড়ো বড় রিপোর্টার বলে কথা। যাঁদের বলা হতো সিটি রিপোর্টার। আমরা তো সব জেলার গ্রামের মেঠো রিপোর্টার।
আর সব কিছুর মাঝে নজরে পড়তো ওর মিষ্টি মধুর হাসি। সেই হাসি মুখের অনিন্দিতা চৌধুরীকেই আমার মনে আছে আজও এতদিন পরেও। আর ও ভয়ঙ্কর ডাকসাইটে সুন্দরী না হলেও আলাদা একটা সৌন্দর্য্য যেনো ছড়িয়ে আছে তার চারপাশে। যে সৌন্দর্য আর ব্যক্তিত্বের কাছে অনেকেই আকৃষ্ট হতেন। একসময় কালীঘাট এর বাড়িতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর বেশ পছন্দের রিপোর্টার ছিলেন তৃণমূলের দলের জন্মের পরপরই এই অনিন্দিতা। যার উপস্থিতি পছন্দ করতেন তৃণমুল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও সেই সময়। আজ যাঁরা বড়ো বড়ো তৃণমূল ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করেন তাদের থেকে বেশ ভালই সম্পর্ক ছিল তাঁর ওই আদিগঙ্গার পাশের বিখ্যাত সেই বাড়ীর সাথে।
সে যাকগে ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়ার কি দরকার। আসলে তখন তো আর এত ঘেরা টোপে, কড়া নজরদারিতে রিপোর্টারদের রাজনীতির লোকদের কাছে পয়েন্ট পাওয়ার জন্য বা নম্বর পাওয়ার আশায় কাজ করতে হয়নি তাকে কোনোদিন। একদম স্বাধীন অকুতোভয় হয়েই কাজ করতে পারতেন তিনি হাসি মুখে মাথা উঁচু করে। আর তাই বোধহয় কাউকে পরোয়া না করেই দিব্যি কাজ করে গেছেন এই বাংলায় এই বাংলা মিডিয়ায় হাসতে হাসতে বেশ কয়েক বছর। সে টিভি চ্যানেলের হয়ে পরে কাগজে লিখে। পরে যদিও কাজের সুত্রে বাংলা ছেড়ে হায়দরাবাদে কর্মরত তিনি দীর্ঘদিন ধরেই। সেই হায়দরাবাদ এর মাটিতেও ইংরাজি কাগজের হয়ে কাজ করেছেন তিনি দাপটের সাথেই। সেই তাঁর একটি লেখায় পুরষ্কার পাওয়ার খবর পেয়ে মনে পড়ে গেলো আমার হাজারো স্মৃতি আর ঘটনা।
আমার হায়দরাবাদ এর এক বছরের পানিশমেন্ট ট্রান্সফার এর জীবনে যে সবসময় আমাকে মানসিক শক্তি আর সাহস দিত লড়াই করার। যার সাথে নানা বিষয়ে কথা হতো আমার। সে বলতো অভিজিৎ দা তুমি যেভাবে লড়াই করে টিকে আছো সেটা আর কজন পারে। আমায় ওর পরিচিত তরুণদার ফোন নম্বর দিয়ে একটি ইংরাজি কাগজে কথা বলতে বলেছে বারবার। কিন্তু বাংলা মিডিয়ার পাতি রিপোর্টার হয়ে কি করে পারবো ইংরাজি মাধ্যমের কাগজে কাজ করতে আমি। সেই ভয়ে আমি আর ওদিকে এগোতে পারিনি কিছুতেই। মহাকরণের প্রেস কর্নারে ইংরেজি কাগজের দাপুটে সব ইন্টেলেকচুয়াল রিপোর্টারদের দেখে আমি ভয়ে গুটিয়ে যেতাম অনেকটাই। বাবা কি দাপট। তাই ওর কথায় কিছু না বললেও একটু চুপ করেই থাকতাম আমি ওর প্রপোজাল শুনে। যদিও ও সাহস দিত তুমি পারবে কিন্তু এগোতে পারিনি আমি।
সেই একসময়ের বিখ্যাত সাংবাদিক অনিন্দিতা চৌধুরী একটি লেখার খবর পেয়ে মনে পড়ে গেলো এমন হাজারও কথা। যে কলকাতায় থাকলে জানিনা সেই পুরোনো দিনের তৃণমূলের পছন্দের রিপোর্টার এর এই এক অবস্থান থাকতো কি না। সে পছন্দের হয়েই থাকতো কি না আজও। কারণ সেটা থাকতে গেলে যা যা গুণ থাকা দরকার সেটা তাঁর একদমই ছিল না কোনো সময়েই। কোনোভাবেই কারুর সাথে সমঝোতা করে চলতে পারে না সেই রিপোর্টার। আর যার ফলে বোধহয় তার কোনো এই মিডিয়া জীবনে খুব বেশি ঘনিষ্ঠ বন্ধুও হয়নি।
অনেকেই তাকে অহংকারী আর দেমাক নিয়ে ঘুরে বেড়ায় বলে আড়ালে আবডালে ফিসফিস করে এমন কথা বললেও আমার মনে হয় ওর মতো সাহায্য করা রিপোর্টার আমি খুব কম দেখেছি কলকাতায়। যে হাসতে হাসতেই সাদা বাড়ির লোকদের গোল দিয়েও কেমন চুপচাপ মুখে মিষ্টি হাসি নিয়েই ঘুরে বেড়াতো হেলেদুলে ভাবটা এমন যেন কিছুই খবর করে নি সে।
সেই অনিন্দিতা চৌধুরীকে আজ হয়তো কলকাতার বাংলা মিডিয়ার অনেকেই ভুলে গেছে। সে নিজেও চায় ভুলে থাকতে। পুরনো স্মৃতিকে জোর করে টেনে বের করার কি দরকার তাঁর কথায়। তবু রাতের অন্ধকারে আচমকা গুটিগুটি পায়ে আমার কাছে এগিয়ে আসে নানা চরিত্র, নানা মানুষ ভীড় করে আমার চারিপাশে। আর আমি তাদের কথা লিখে ফেলি। হাজারো মানুষের ভীড়ে হারিয়ে যাওয়া এক আপাদমস্তক ভালো সুন্দর রিপোর্টার এর কথা। কংগ্রাচুলেশন অনিন্দিতা। তুমি ভালো থেকো।
ইটিভির অনিন্দিতা চৌধুরী - অভিজিৎ বসু।
ষোলো ডিসেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন