সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

প্রতিদিনের সুতীর্থ দা

কিছু কিছু মানুষের সাথে কত অল্প দিনের আমার আলাপ আর পরিচয়। কত কম দিনের একসাথে কাজ করা তবুও কেমন যেন একটা মন ভালো করা স্মৃতিমেদুরতায় আচ্ছন্ন হই আমি এই রাতের হিমেল অন্ধকারে। সেই ছোট খাটো চেহারার হাসিমুখে মহাকরণে এই ঘর থেকে ওই ঘরে পকেটে হাত দিয়ে একসাথে ঘুরে বেড়ানো। আর খবর হলে হাসিমুখে পকেট থেকে নোটবুক বার করে বলে দেওয়া। সে মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বা পার্থ চট্টোপাধ্যায় যেই যা খবর দিক বলে দেওয়া। কোনও দ্বিধা দ্বন্দ্ব ছাড়াই। 


আর তারপরে আবার টিভি ছেড়ে সেই তাঁর কাগজেই বস হয়ে তাঁকে পাওয়া তাঁর অধীনে কাজ করা। অল্প কিছুদিনের জন্য আমি সেই বাংলা দৈনিক কাগজের অফিসে কাজ করেছি। কিন্তু সেই রিপোর্টার থেকে উচ্চপদে আসীন হয়েও সে কেমন একভাবেই ব্যবহার করে গেলো, সে আমার সাথে একদম মহাকরনের পুরোনো সম্পর্ককে না ভুলে। সবাই যে কেনো এমন হয় না কে জানে। পদ পেয়ে সব ভুলে যায় কে জানে। হয়তো ভগবানের মাহাত্ম্যের মতোই পদের মাহাত্ম্য সেটা। 

সেই প্রতিদিনের সুতীর্থ চক্রবর্তী। সেই সবার কাছে প্রিয় আমাদের সবার কৌশিক দা। খুব কম পড়াশোনা করে কম নম্বর পেয়ে আসা মিডিয়াতে কাজ করা রিপোর্টার বা নিউজ এডিটর নয় সে একদমই। মেধাবী ছাত্র হয়েও কেন যে এমন কলম পেশার কাজ বেছে নিলো কে জানে। বহু পরে জেনেছিলাম আমার সেই নবগ্রাম বিদ্যাপীঠ স্কুলে পড়া ডব্লু বি সি এস করা শুভাশীষ গুহর বন্ধু সূতীর্থদা। তখন আমি প্রতিদিন কাগজে হুগলী জেলার স্টাফ রিপোর্টার। 

আসলে কেউ কেউ নিজেকে এত বেশি করে আত্মপ্রকাশ করতে ভালোবাসে ঢাক পিটিয়ে। আর কেউ কেউ আবার নিজেকে শামুকের খোলের ভিতর নিজেকে গুটিয়ে রাখে। কিছুতেই খোল ছেড়ে বেরোতে চায় না সে। এটাই বোধহয় আসল শিক্ষার আলো। সেই নিজেকে গুটিয়ে রাখা মানুষ হলেন সুতীর্থদা। যাই হোক সুব্রত মুখোপাধ্যায় এর ঘরে দেখতাম সবার পিছনে দাঁড়িয়ে মন্ত্রীর মুখ থেকে খবরের নোট নিচ্ছেন তিনি চুপ করে। আবার প্রতিদিন কাগজের অফিসে দেখলাম কেমন যেন চেনা মানুষের মতোই হেসে বলছেন কি খবর রে তোর। বাড়ির সব ভালো তো। মেয়ের কোন ক্লাস হলো রে। একদম পাশের বাড়ীর দাদার মতই ব্যবহার।

 সেই সময় কৃষ্ণ কুমার দাস আমায় ইটিভি বাংলা ছেড়ে হায়দরাবাদ থেকে চলে আসার পরে সাহায্য না করলে এই প্রতিদিনের জেলা রিপোর্টার এর কাজটা হতো না আমার কিছুতেই সেই সময়। আর সেই সময় কিংশুক প্রামাণিক কোনও ইন্টারভিউ না নিয়ে আমায় দেখেই বলেন ঠিক আছে ভালো করে কাজ কর। আর সেই তরুণকান্তি দাসকে দেখলাম এই প্রতিদিনের অফিসে। সেই হুগলী জেলার পার্থ সারথি সিনহা আমার পুরোনো পরিচিত। সেই নির্মল ঘোষ। সেই সুপ্রিয় বন্দোপাধ্যায়। সেই আমার পুরোনো বন্ধু বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত। সেই হাসিখুশি মুখ এর মলয়। সেই ক্ষিরোদ, আরও কতজন যে ছিল সেই অফিসে সেই সময়। 

বহু পড়ে কথা বলতে বলতে জেনেছি আমি সুতীর্থদার শান্তিনিকেতনের সেই পুরোনো বাড়ীর কথা। সেই বছরে একবার বা দু বার সবাই মিলে ওনাদের বোলপুরে আসার কথা। শুভাশীষ এর সাথে একসাথে পড়া করার কথা। দুজনের বন্ধুত্বের কত কথা যে হাসতে হাসতেই বলত সুতীর্থদা আমি বেশ অবাক হতাম। তাহলে কি এই পদ পাওয়া বা না পাওয়ার উপরে মানুষের সাথে সম্পর্ক নির্ভর করে না। এগুলো কি তাহলে ব্যক্তির উপরে নির্ভর করে। যে নিউজ এডিটর পদে সুতীর্থদার আগে যিনি বর্তমান থেকে এসেছিলেন। রিপোর্টারদের ভুল আর খুঁত ধরতেন বেশি তিনি। এমন তো সুতীর্থ দা করত না আমাদের সাথে। তাহলে হয়তো এটা সূতীর্থদার ব্যবহারের স্টাইল। 

আজ এই গভীর রাতে আমার মনে হয় সেদিন যদি ওই বোকা বাক্সের লোভে টিভির হাতছানি পেয়ে দৌড়ে না যেতাম আমি তাহলে হয়তো আজও আমি এমন একজন দাদার মত বন্ধু বস এর সাথেই কাজ করতাম। বেকার হয়ে ঘুরতাম না এই শেষ বয়সে এমন করে আজ। মাঝ রাতে মাঝে মাঝেই কত গল্প হয় দুজনের। সেদিন উত্তরপাড়া পুরসভার পুরপ্রধান দিলীপ যাদব বললেন খুব ভালো মানুষ ও। আমাদের এই মাখলাতে থাকে। শুনে ভালো লাগলো বেশ। 

সত্যিই আজকাল এমন মানুষের অধীনে কাজ করতে বড়ো মন চায় আবার। মনে হয় মস্তবড় মাতব্বরদের সাথে নয় এমন বন্ধু বৎসল বসের কাছে কাজ করতে পারলে বোধহয় ভালই লাগতো আমার। যে অন্তত একটু হেসে কথা বলে বলবে এটা একটু দেখ অভিজিৎ করে দে খবরটা এটা একটু দেখে দিস। আজকাল তো শুধু চারিদিকে হুংকার আর হুংকার। 

আর এই রাতে তাই আমার সাদা জীবনের কালো কথায় হাসিমুখের সেই খুব বিখ্যাত না হলেও সেই হাসি মুখের ভালো মানুষটার কথা লিখে ফেললাম আমি। শুধু ওই কোর্ট প্যান্ট পরা সাহেব বসের ছবি দেখে আমার মনে হলো কলম না পিষে ছাত্র পড়ালেই বোধহয় ভালো কাজ করতে তুমি। কেন যে এই কাগজ কলমের বেড়াজালে আবদ্ধ হলে তুমি কে জানে হয়তো প্রেমে পড়েছিলে তুমিও। ভালো থেকো তুমি। বহুদিন দেখা হয়নি তোমার সাথে আড্ডা হয়নি রাতে। ভালো থেকো তুমি। বোলপুরে এলে দেখা হবে দাদা।

প্রতিদিনের সুতীর্থ দা - অভিজিৎ বসু।
বিশে ডিসেম্বর দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...