শীতকালে রবিবারের সকালটা আমার বেশ ভালই লাগে। এদিকে পকেটে পয়সা নেই অথচ বোলপুরে স্টেশন এর কাছের হাটতলা বাজারে ঘুরে বেড়াতে আমার বেশ চোখ জুড়িয়ে যায় আর মনটা ভরে যায়। সুন্দর লাল মুলো আপনার দিকে তাকিয়ে হাসছে ফিকফিক করে। ঠিক যেনো অষ্টাদশী কন্যার মতই। দশ টাকায় এক কেজি লাল মূলো মিলছে বাজারে। গরম ভাতের পাতে মূলো শাক ভাজার তো কোনো জবাব নেই। অর্ধেক ভাত ওই শাক দিয়েই খাওয়া হয়ে গেলো আমার রবিবার দুপুরে।
কালো কুচকুচে বেগুন এক কেজি ত্রিশ টাকার কম করলো না কিছুতেই রমেশ ভাই। ভেদিয়া থেকে নিজের ক্ষেতের বেগুন নিয়ে এসেছে সে। আর বাজারে এখন ফুলকপি নেওয়ার জন্য লোক ডাকছে। পাঁচ, দশ টাকায় কপি মিলছে আরামসে। এমনকি একটাকায় একটু গরুকে খাওয়ানোর কপিও মিলছে হাটতলা বাজারে। শীতের সুন্দর সকালে মাঠ থেকে তোলা কপি দশ টাকা করে পিস। এই দিশি কপির স্বাদ আলাদা। এই কপির তরকারির স্বাদ বেশ ভালো। আর কপির পাশে সুন্দর ঝুঁটি ওলা ওল কপি দেখেই মন ভালো হয়ে গেলো আমার। ওল কপির গরম ঝোল গরম মশলা দিয়ে তৈরি আর গরম ভাত আর কি চাই বলুন তো। সাথে একটু টমেটোর চাটনি। পাঁচ টাকা করে পিস ওলকপি তিনটিই ছিল পনেরো টাকায় মিলে গেলো তিনটি ওলকপি। হাসি মুখেই ব্যাগে ভরে নিলাম।
সুন্দর ছোট্টো ছোট্ট দেশী নারকেল বাঁধাকপি দশ টাকা করে পিস। দুটো নিলাম কুড়ি টাকা দিয়ে। রাতের খাবারে গরম রুটি আর বাঁধা কপি মন্দ নয় কি বলেন সাথে একটু কড়াইশুঁটি দিয়ে। একটু এগিয়ে দেখলাম গন্ধরাজ লেবু পাঁচ টাকা করে পিস। কুড়ি টাকায় পাঁচটি লেবু পেলাম মাসির কাছ থেকে। আর লেবু ওলার পাশেই শুধু কুমড়ো কাটছে আর বিক্রি করছে সেই চেনা ছেলেটা। সুন্দর বিবি কুমড়ো। কাঁচা হলুদের মতই রং কুমড়োর। দেখলেই প্রেমে পড়তে ইচ্ছা হয় আমার। সেই গরম কুমড়ো ভাজার স্বাদ আলাদা, অনন্য। এক কেজি কুমড়ো ত্রিশ টাকা দাম। দিশি সিম একদম আপনার দিকে তাকিয়ে খিল খিল করে হাসছে। সিমের সর্ষে দিয়ে ঝাল আর গরম ভাত তার তুলনা নেই কিন্তু এই শীতের দুপুরে।
দেখেছিলাম বাজারে একটি কালোপানা বউ এর কাছে সর্ষে শাক কিন্তু নিজের বউ এর ভয়ে সেটা নেওয়া হয়নি আজ। এক কেজি সর্ষে শাক দশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শাকের মাথায় হলুদ সর্ষে ফুল হাসছে মাথা দুলিয়ে। ঠিক যেমন করে হেসে কালোপনা বউটা আমায় ডাকছিল হাত নেড়ে। শীত এলেই এই সর্ষে ক্ষেতের মাঝে ছবি তোলার বেশ হিড়িক লেগে যায় আর কি। সেই সর্ষে শাক এর স্বাদ ভালই। এর মাঝে টমেটো নিলাম কুড়ি টাকা করে। একটু বোতাম মাশরুম নিলাম দাম বেশি পঞ্চাশ টাকা করে এক প্যাকেট।
আলু নতুন আলু তিরিশ টাকা করে। নতুন ছোটো আলুর দম আর গরম লুচি রাতের খাবার মন্দ নয় কি বলেন মেনুতে। পুরোনো আলু নিলাম আটাশ টাকা করে কেজি। সুন্দর দানাওলা কড়াইশুঁটি একটু বেশি দাম সত্তর টাকা কেজি ষাট টাকা করে দিলো না কিছুতেই। পাঁচটা কাঁচকলা নিলাম কুড়ি টাকায়। কাঁচকলার কোপ্তা আর গরম ভাত হলে বুটার আর কিছুই লাগে না। সুন্দর চকচকে পিঁয়াজের দাম এক কেজি পঁয়ত্রিশ টাকা। যদিও তিরিশ টাকার পিঁয়াজ বাজারে আছে। রসুন এর দাম বেশি চল্লিশ টাকায় একশো গ্রাম। আদার দাম একশো গ্রাম পঁচিশ টাকা।
আসলে কি জানেন এই আগে বেশ কাগজে রবিবার এর সকাল বেলায় বাজার সরকার এর লেখা পড়তে বেশ ভালই লাগত আমার। মন দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কোন জিনিসের কত দাম পড়তাম আমি। কাগজে এই বাজার এর দরদাম নিয়ে কত যে মাঝে মাঝে হৈ চৈ হুল্লোড় পড়ে যায় তার ঠিক নেই। বাজার সরকার আর নেই এখন। দিন বদলে গেছে অনেক। তার বদলে বাজারে বাজারে এখনো মমতার সরকারের টাস্ক ফোর্সের হানা দেওয়া। বাজারের দাম বৃদ্ধি হলেই তারা সদলবলে কেমন যেন বাজার বিক্রেতাদের কাছে গিয়ে টুঁটি চেপে ধরে আর বলে দেখ কেমন লাগে এইবার।
আর এই সবের মাঝে আমার এই রবিবারের সকালটা বেশ মন্দ লাগে না। যদিও সারা সপ্তাহ আমার কাছে এখন রবিবার। শীতের সুন্দর সবজি বাজারে চোখ জুড়ানো বাজারে ঘুরতে ঘুরতে আর কেনাকাটি করতে বেশ ভালই লাগে আমার। নাই বা থাক নিজের পকেটের পয়সা বা রেস্ত। আর আমি তাই বউ এর টাকায় বাজার কিনে ঘরে ফিরে এলাম হাসি মুখে রবিবারের সকালে খুশী মনে।
রবিবারের সকাল ও শীতের বাজার - অভিজিৎ বসু।
ঊনত্রিশ ডিসেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি নিজের মোবাইল ফোনে তোলা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন