সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভালো থাকবেন কাজী দা

আজ থেকে প্রায় বছর ছয়েক আগে আমাদের সবার সেই সিটিভিএনের কাজী দা সেই সদা হাস্যময় কাজী ইলাহীদা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন দূরে অনেক দূরে। কাজী দা আর পিন্টুর সেই বহু পুরোনো দিনের জুটি। সুটেড বুটেড হাসি মুখের রিপোর্টার কাজী দা। সেই সাদা জামা আর কালো প্যান্ট পরা। মুখে হাসি লেগেই আছে সব সময়। কোনো টেনশন নেই তাঁর খবর নিয়ে। 

বেশ আরামে সেই বুড়ো বয়সেও টিভির সাংবাদিকতা করে আসছেন তিনি হাসি মুখে দৌড় ঝাঁপ করেই সবার সাথে সমান ভাবেই। সবার সাথে পল্লা দিয়ে তাল মিলিয়ে কাজ করেন তিনি। একদম ফিটফাট হয়ে পকেটে চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে মন্ত্রীর ঘরে ঢুকে পড়তেন হাসতে হাসতেই। একদম অবারিত দ্বার যেনো মন্ত্রীর ঘর। নমস্কার জানিয়ে হাসি মুখে জিজ্ঞাসা করতেন কিছু খবর আছে নাকি। সিনিয়র সাংবাদিক দেখে যে কোনো মন্ত্রী হেসে কথা বলতেন তাঁর সাথে।

 তবে কেউ কোনোদিন কাজীদার মুখে খারাপ কথা শুনিনি আমরা। সেই রাত নটার ব্যান্ডেল লোকাল ধরে বা তারপরের ট্রেন ধরে অফি অফিস থেকে বাড়ী ফেরার সময় আমি দেখতাম তিনিও বাড়ী ফিরছেন কোন্নগরে যাবেন তিনি। সেই জিটি রোডের কাছে ছোটো একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন তিনি। কষ্ট করেই সংসার চালানো। ফ্ল্যাটের দাম শোধ করা। কম টাকায় দিন যাপন করা। সাংবাদিকতা করা। কিন্তু কাজিদাকে দেখে সেটা কারুর বোঝার উপায় নেই একদমই। 

মুখের হাসিতে যে কত কিছুই লুকিয়ে রাখতেন তিনি সেটা একমাত্র তিনিই জানেন। সেই আমাদের সবার পিন্টুকে খুব ভালোবাসতেন কাজীদা। ক্যামেরা নিয়ে ঘুরে বেড়াতো পিন্টু। কাজীদার সাথে এদিক ওদিক। আসলে এই সব বহু পুরোনো দিনের মানুষ গুলো তো মহাকরণের ইট, কাঠ, পাথর এর ভীড়ের মধ্যে আজও মিশে আছেন। এইসব মানুষগুলো হারিয়ে গেলেও তাদের কথা মনে পড়ে যায় আমার। 

সন্ধ্যা হলেই প্রেস ক্লাবে যেতেন কাজীদা প্রায় প্রতিদিন। তারপর রাতে নটা বা তারপুর ট্রেন ধরতেন তিনি প্রতিগিন। হাওড়া স্টেশনে দেখা হলেই ডেকে বলতেন অভিজিৎ চলে আয় আমার এইখানে জায়গা আছে বসে পর তুই। আর তারপরে গল্প করতে করতে ঘরে ফেরা দু জনের। কোন্নগর এলেই প্যান্ট এর কোমর ধরে ওপরে টেনে নিয়ে হাসি মুখে বিদায় নিতেন অভিজিৎ চলিরে ভাই। হাত নেড়ে এগিয়ে যেতেন ভীড় ঠেলে। তাঁর হাতে প্রচুর আংটি পরা থাকতো। হয়তো জ্যোতিষ বিশ্বাস করতেন তিনি। 

এত বড় একজন মানুষ হয়েও কেমন সুন্দর ব্যবহার করতেন কাজী দা সবার সাথেই। সুন্দর ইংরাজিতে প্রশ্ন করতেন স্বচ্ছন্দে প্রেস কনফারেন্স হলে। আর কুন্ডু দা প্রেস কর্নারে এলেই বলতেন হেসে ওই এলো আবার। অংশু দা আরও অনেকেই কুন্ডুদার সাথে মজা করে সময় কাটিয়ে দিত। লিখবো একদিন ওনার কথা। তবে আজ কাজীদার কথা মনে পড়ে গেল আমার এই ভোরবেলায়।

 মনে হলো সেই কবেই তো হারিয়ে গেছেন কাজী দা। কেউ কি আর মনে রেখেছেন তাঁর কথা। জীবন বড়ো অদ্ভুত সামনে থাকলে কত কথা কত কিছুই। আর না থাকলে কেউ আর খোঁজ রাখে না। একদিন দুপুরে কাজীদার স্ত্রী মহাকরণে এসেছিলেন। বোধহয় পূজোর আগে কেনাকাটা করতে। সবার সাথে আলাপ করিয়ে দিলেন তিনি। সত্যিই রাতবিরেতে আমার মনে পড়ে যায় এইসব নানা কথা। পিন্টু আজ আর মিডিয়াতে নেই। কাজীদাও হারিয়ে গেছেন। শুধু রয়ে গেছে মানুষটার কিছু স্মৃতি আর তাঁর উজ্জ্বল মুখের হাসি। ভালো থাকবেন আপনি কাজী দা। 

ভালো থাকবেন কাজী দা - অভিজিৎ বসু।
ষোলো ডিসেম্বর দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...