সাদা জীবনের কালো কথায় রাত বাড়লেই কেমন যেন নানা মানুষের আনাগোনা শুরু হয় আমার এই নির্বান্ধব জীবনে। আমার এই পাগলামো। এই লেখা লেখা খেলা। আর নানা মানূষকে খুঁজে বের করা। আমার সময় কাটানো এই ভাবেই। কেউ বলেন কি আর করবে এই কাজ ছাড়া। রাতের অন্ধকারে স্মৃতিকে আগলে বেঁচে থাকতে হবে জীবনের বাকি কটা দিন।
আবার কেউ আমায় কোনোদিন সাক্ষাতে দেখলেন না একটি বারের জন্যও। দেখা হলো না কোনোদিন তার সাথে। হয়তো জীবনে একবার কি দুবার ফোনে দুজনের কিছু কথা হয়েছে তাতেই যেনো কত আপনার জন হয়ে গেছেন তিনি। কত সহজেই একদম কাছের মানুষের মতোই বলা, অভিজিৎ তোমার লেখা বেশ ভালো। আমি তোমার সব লেখাই পড়ি।
আসলে জীবনের এই নানা ধরনের নানা রকমের মানুষ আর তাদের এই কথা শুনে বেশ ভালো লাগে আমার। মনে হয় এই মানুষকে দেখো, জীবনকে দেখো, জীবন হলো সব থেকে বড় শিক্ষক। সেই জীবন দেখার কাজ করতে আমার মন্দ লাগে না আজকাল। আজ তেমনই একজনকে দেখলাম। যিনি আমায় না দেখেই, না পরিচয় আলাপ হয়েই আমার লেখার প্রশংসা করলেন অক্লেশে, অকৃপণ ভাবে।
বলে দিলেন এই বর্তমান সিস্টেমে আমরা আর মানিয়ে নিয়ে ম্যাচ করে চলতে পারব না কিছুতেই। কারণ এইভাবে বাঁচতে গেলে যা যা করতে হয় সেটা আমরা করতে পারব না অভিজিৎ। এত অকপট সহজ সত্য কথা একজন না দেখা মানুষকে কি সহজে বলে ফেললেন তিনি। আমি ভাবলাম কই এমন মানুষ তো আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আসেনি আগে। তাহলে এমন মানুষের কথাও লেখা দরকার।
আজ তাই সেই তরুন গোস্বামীর কথা। যাঁর সাথে সাক্ষাৎ দর্শন হয়নি কোনোদিন আমার সাথে তাঁর। আদৌ কোনোদিন হবে কি না সেটাও জানিনা আমি ও তিনি। তবু একটা লেখা নিয়ে কিছু কথা বলতে গিয়ে মনে হলো যেন কতদিনের পরিচিত একজনের সাথে অন্যজনের। কথা বললাম আমি ও তিনি কোনও জড়তা না নিয়েই। যিনি আমার আত্মার অন্তঃস্থলের কথা তুলে ধরলেন। যে মনের গভীর গোপন কথা বলতে গেলে অনেকেই স্বচ্ছন্দ বোধ করেন না কেউ কেউ।
সত্যিই কত যে ঘটনা ঘটে যায় তাঁর ইচ্ছায় সেটা বোঝে কে। যিনি একাধারে মাঠে ময়দানে ঘোরা জনসংযোগ করা একজন বিখ্যাত সাংবাদিক। বাংলা মাধ্যমে নয় ইংরাজি মাধ্যমে। আর অন্যদিকে তাঁর জীবন দর্শনের সাথে মিলেমিশে একাকার শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ দর্শন। বিবেকানন্দের বাণী যিনি প্রচার করে বেড়ান নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। যেটা তাঁর অন্যতম সেরা কাজ। ভগবৎ সত্তায় বিশ্বাসী হয়ে জীবনকে দেখার অনুসন্ধান করার প্রচেষ্টা করে যাওয়া।
আজকালের দুনিয়ায় এই স্বার্থপরতার যুগে যা একদম মেলেই না। আর তার সাথে তিনি অসম্ভব ভালো শিষ দিয়ে সুরের মূর্ছনা তুলতে পারেন। রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশন করেন এইভাবেই। এহেন মানুষ বলছেন অভিজিৎ তোমার লেখা বেশ ভালো। আমি সত্যিই বাতিল একজন মানুষ। সব জায়গায় যে লোকটা বাতিল। ঘরে, বাইরে, অফিসে, কর্মক্ষেত্রে সব জায়গায় বাতিল। আর সেই বাতিল হয়ে যাওয়া একজন মানুষকে ভালো বলছেন কেউ প্রশংসা করছেন সেটা সত্যিই একটা অভাবনীয় বাপ্যার আমার কাছে।
আর তাই আমি এই রাতের অন্ধকারে আচমকা কিছু কথা লিখতে বসলাম। এমন জনকে তো আগে কখনও এমন ভালো কথা বলেনি কেউ আমায়। যে আমায় না চিনে বলছে আমি ভালো বা খারাপ। আমার কতদিনের পরিচিত কেউ তো এইভাবেই আমার মনের কথা অকপটে বলতে পারে নি কোনোদিন। একটু যেনো অবগুণ্ঠন রেখে আড়ালে আবডালে কথা বলেছে তারা সবাই ফিসফিস করে। জোর গলায় সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলার বুকের পাটা দেখাতে পারেনি তারা কেউই। তাহলে ইনি পারলেন কি করে।
এতদিন ধরে যে নানা মানুষের ভীড়ে পথ হাঁটলাম আমি একা একা। গ্রামে,শহরে, নগরে প্রান্তরে, হাটে মাঠে, ঘুরে বেড়ালাম সেখানে কি এমন একজনও কেউ ছিলনা। যে একজন অচেনা মানুষকে দরাজ গলায় তার সম্বন্ধে প্রশংসা করতে পারে। একজন সহকর্মীর সঠিক মূল্যায়ন হলে জোর গলায় বলতে পারেন এটাই একদম ঠিক কথা। তার জন্য দুবার ভাবেন না যে এমন বাতিল মানুষের লেখায় এমন মন্তব্য করলে যদি নিজের পয়েন্ট কমে যায় সমাজে।
সেকথা না ভেবেই তো এতদিন তিনি জীবন কাটিয়ে দিলেন তাহলে আর এখন এই সব নিয়ে ভাবনা কেনো। সত্যিই অসাধারণ লাগলো তরুণদা আপনার কথা শুনে তাই লিখতে বসলাম আমি। আপনার এই জীবন দর্শন, আপনার এই কাউকে না চিনেও কাউকে প্রশংসা করা এটাও তো একটা বড়ো শিক্ষা আমাদের। জীবনে মাতব্বর মানুষদের ভীড়ে এও এক নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হলো আমার।
সত্যিই অসাধারণ কথা এক কথা জীবনের কথা আমায় বলেছিলেন তাঁর লেখা চিঠিতে। অভিজিৎ, জীবনকে দেখো। জীবনই হলো আমাদের সব থেকে বড় শিক্ষক। সত্যিই আজ এক অন্য অনুভূতি মাখা জীবন দেখলাম। যে জীবনে আছে মাটির গন্ধ, যে জীবনে জড়িয়ে আছে সুন্দর সুরের মূর্ছনা, যে জীবনে জড়িয়ে আছে টাকা মাটি আর মাটি টাকার মতো সুন্দর দর্শন।
যে জীবনের পরতে পরতে জড়িয়ে আছে স্বামী বিবেকানন্দের বাণী। যে বানীকে জড়িয়ে ধরে এগিয়ে চলেছেন তিনি হাসি মুখে। যিনি হাজার খারাপ এর মাঝে ভালোকে দেখতে পারেন হাসি মুখে। দরাজ সার্টিফিকেট দিয়ে অচেনা অজানা একজন মানুষকে বলতে পারেন তিনি সত্যিই অসাধারণ তোমার কাজ, লেখা, তোমার এই ভাবনা চিন্তা।
আজকালকার দিনে এমন মানুষের সন্ধান পাওয়া দুষ্কর। ভালো থাকবেন আপনি তরুণ দা। দ্রুত মই ধরে নানা মানুষের ওপরে ওঠার মাঝে এইভাবেই আপনি মাঝে মাঝে ফোন করে কথা বলবেন, বেশ ভালো লাগবে আমার। এই ক্ষুদ্র পরিসরের বাতিল হয়ে যাওয়া জীবনে এর থেকে বেশী প্রাপ্তি আর কি হতে পারে দাদা। আমার প্রনাম নেবেন আপনি। ভালো থাকবেন আপনি।
অচেনা তরুন গোস্বামীদা ও আমি - অভিজিৎ বসু।
সতেরো ডিসেম্বর দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন