মেলার ভীড়ে জাল বিছিয়ে বসে থাকা। মেলার ভীড়ে জাল ফেলে অপেক্ষা করা। মেলার ভীড়ে জাল পেতে চুপটি করে ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে থাকা একা একাই। যদি ধরা পড়ে যায় কেউ এই আশায়। মেলায় নানা দোকানের মাঝে। নানা পশরার মাঝে এমন সুন্দর রং আর বাহারি নানা মাপের আর নানা ধরনের সুদৃশ্য সব জাল দেখে আটকে গেলো আমার পা। সব দোকানে ভীড় জমলেও এই দোকান একটু ফাঁকা লোকের আনাগোনা কম যেনো এই দোকানে। তাই আমিও নিশ্চিন্তে মনের সুখে ছবি তুললাম। উঁকি ঝুঁকি দিয়ে দেখলাম ভিতরে সংসার পেতে দু একজন বসে আছে তাঁরা।
তাঁদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সংসার, সুতো, জাল বোনার কাঠি, ভারী লোহার কাঠি কত কিছুই যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে এদিক ওদিক ওই প্লাস্টিকের ছাউনির ঘরে কে জানে। আর এইসবের মাঝেই একমনে জাল বুনে চলেছেন একজন। সত্যিই অসাধারণ এই জীবিকা নির্বাহ। জাল বোনার কাজ। স্বপ্নের জাল বোনার কাজ। যে জাল দিয়েই জীবনের ক্ষুণ্ণিবৃত্তি হয়। যে জাল দিয়েই মাছ ধরে ঘরের নুন আর ভাত জোটে অনেকের। যে জাল দিয়েই জলের রুপোলি শস্য তুলে মাটিতে ফেলে দিলেই তারা কেমন ছটফটিয়ে লাফালাফি করে। আর সকালের নরম রোদ গায়ে মেখে খিলখিলিয়ে ওঠে তারা। যা দেখে আমরা অনেকেই হাততালি দিয়ে উঠি। সত্যিই এই জাল, জল, জঙ্গল, একে অপরকে কিভাবে যে আষ্টেপৃষ্টে নিজেদের জড়িয়ে ধরে আছে জালের শক্ত বুননের মত কে জানে। জালের শক্ত বুননে আটকে আছে সহজ সরল জীবনের মিষ্টি বাঁধন। যে বাঁধন বড়ই অদ্ভুত।
কম আলোয় একমনে ঘাড় কাত করে জাল বুনে যাওয়া সেই বৃদ্ধ। যে সারা জীবন হয়তো জাল বুনেই জীবন কাটিয়ে দিলো হাসতে হাসতে। নিজের জীবনের স্বপ্নের জাল বোনার সময় পেলো না কোনোদিনই। কেমন নানা মাপের নানা সাইজের জাল তৈরি করেই যে জীবন যাপন করলো সে। তাঁর তো আর নিজের জীবনের জাল বোনাই হলো না যে কোনোদিন। ধরা হলো না রুপোলি চাঁদা শস্যের মতো হরেক কিসিমের মাছ। যে সুখের মাছ, যে আনন্দের মাছ, শান্তির মাছ তার মন ভরিয়ে দেয়।
জাল বোনার কারিগররা বোধহয় এমনই আপন ভোলা হয়। আপনমনে, আপন ছন্দে দুলে দুলে তারা জাল বোনে নিজের জীবনের জাল নয়। নিজের সুখের জাল নয়। নিজের স্বপ্নের জাল নয় শুধুই অন্যের জাল। যে জাল দিয়েই জলের মাছ ডাঙায় ওঠে। রোদ মেখে লুটোপুটি খায় তারা। আর চুপটি করে বসে তাদের দেখে এই জাল বোনার কারিগররা। সত্যিই অসাধারণ এই জাল বোনার জীবন। জলের দাগ লাগা জীবন। যে জীবনে কোনোদিন স্বপ্নের দাগ লাগতে দিলো না ওই দুলে দুলে জাল বোনার কারিগর।
জাল এর দোকানে ভীড় কম - অভিজিৎ বসু।
আটাশ ডিসেম্বর দু হাজার চব্বিশ।
ছবি নিজের মোবাইল ক্যামেরায় তোলা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন