আসলে কি জানেন তো এই দুটো করে জন্মদিন নিয়ে হয়েছে বেশ একটা বড় ঝামেলা। আসল আর নকল। ঠিক যেন দুলালের তাল মিছরি। কোনটা যে আসল জন্মদিন আর কোনটা যে নকল সেটা বোঝার উপায় নেই একদমই। হাসি হাসি মুখ করে নিজের ফেসবুকের দেওয়ালে জন্মদিন এর লেখা ফুটে উঠলো। টুডে বার্থডে। আর তাতেই জ্বল জ্বল করছে নানা চেনা আর অচেনা লোকের নাম এর ভীড়।
চেনা মানুষদের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে কোনও দ্বিধা না করেই কেমন পট পট করে অন্যের দেওয়ালে লটকে দেওয়া হ্যাপি বার্থডে টু ইউ। একদম ঠিক সাহেবী কায়দায়। আর একটু পুরনো আমলের হলে শুভ জন্মদিন বা জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই। সাথে কেক আর মোমবাতির ছবি দিয়ে। বেশ মজার ব্যাপার কিন্তু এই আসল আর নকল জন্মদিন নিয়ে।
কদিন আগেই বা একমাস আগেই যার আসল জন্মদিন পালন করা হয়েছে ধুমধাম করে ঘরে আত্মীয় পরিজন দের মাঝে কেক কেটে আর মোমবাতি জ্বেলে। সেই প্রিয় মানুষের আবার ঠিক একমাস পরে নকল জন্মদিনের নোটিফিকেশন দেখেই কেমন ঝাঁপিয়ে পড়া। আর সেই বহুদিনের পুরোনো স্কুল বা কলেজের প্রিয় বন্ধুর জন্মদিনের শুভেচ্ছা অন্য কাউকে দিতে দেখেই একদম দীঘির জলে ঝাঁপিয়ে পড়া। একদম ঠিক আলোর টানে পতঙ্গের মতই। কোনও দ্বিধা না রেখেই নিঃশব্দে সবার আগে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে সারা বছর যোগাযোগ না থাকা বন্ধুকে চমকে দেওয়ার চেষ্টা করা।
সত্যিই জীবন যে কত বিচিত্র সেটা বোঝা যায় এই জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা আর নকল ভালোবাসা দেখে। আমিও আজ সাত সকালেই এমন একটা অভিজ্ঞতার সন্মুখীন হলাম। সকাল বেলায় আমার প্রিয় বন্ধুর জন্মদিন দেখেই ঝাপিয়ে পড়ে তাকে হ্যাপি বার্থডে জানালাম। আর ভাবলাম শুধুই দুটো শব্দে সেরে ফেলবো এই ভাবেই প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে আমার সম্পর্কের কথা। আর তাই একটু তাকে ফোন করে ফেললাম আমি তাকে। ভাই হ্যাপি বার্থডে। অপর প্রান্তে গম্ভীর গলায় উত্তর এলো এটা হলো নকল জন্মদিন রে। আসল তো হয়ে গেলো এই কদিন আগেই। তুই সেটা জানিস তো।
মনে মনে একটু লজ্জিত হলাম আমিও। সত্যিই তো এই তো সেদিন হৈ হৈ করে ওর জন্মদিন পালন হলো। সেটা তো মনে রেখেই কত কথা হলো দুজনের। তারপর আবার এক নকল জন্মদিন এর ফাঁদে পা দিলাম আমি ভুল করে। সত্যিই অসাধারণ এই জীবনে নানা ঘটনা ঘটে যায় সমাজ মাধ্যমে। আর সেই সমাজ মাধ্যমের তাড়নায় আমরা পাগলের মতোই দৌড়ে বেড়াই ছুটে বেড়াই আমরা। ঠিক তেমনি ওই আসল আর নকল জন্মদিন পালন করতে।
মনে মনে একটু লজ্জাই পেলাম আমি। কি আর বলি তাকে আমার সেই প্রিয় বন্ধুকে দ্রুত ফোন রেখে দিয়ে এই যাত্রায় বাঁচতে চাইলাম আমি কোনো রকমে। কিন্তু সত্যিই তো আসল আর নকলের ফেরে পড়ে যদি জন্মদিনের বদলে দুটো মৃত্যুদিন হতো আমাদের। তাহলে কেমন লাগতো কে জানে। আসল মৃত্যুর দিনে কি আর নকল মৃত্যুর উপভোগ করা যায়।
জন্ম আর মৃত্যুর মাঝেই লুকিয়ে আছে এক চিরন্তন সত্য আর সেই সত্যকে বুকে নিয়েই বেঁচে থাকা। আসল আর নকল এর মাধ্যমে একে অপরকে জড়িয়ে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা। সত্যিই অসাধারণ এই জীবন। আর সেই জীবনের স্বাদ সত্যিই আসল আর নকলের স্বাদে ভরপুর অতুলনীয়, অনির্বচনীয় আর লোভনীয়। জীবন যে সত্যিই বড়ই মায়াময়। সে আসল হোক কিংবা নকল।
আসল আর নকল জন্মদিন - অভিজিৎ বসু।
আটাশ ডিসেম্বর দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক ও গুগল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন