সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হারিয়ে যাওয়া

হারিয়ে যাওয়া এক মানুষের বিজ্ঞাপন। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখলাম এই লেখা বিজ্ঞাপনটি আমার ফেসবুকের দেওয়ালে ক্রুশবিদ্ধ যীশুর মতই ঝুলে আছে সে। নাম, ঠিকানা আর ফোনে যোগাযোগের নম্বর দিয়ে কেমন আকুল করা এক আর্তি বাড়ীর লোকের। হারিয়ে গেছে গোটা আস্ত একটা হাত, পা, মাথা, ওলা ব্যস্ত মানুষ। একদম উধাও হয়ে গেছে সে হঠাৎ করেই। যার সব ছিল ঘর বাড়ি, একটা সাইকেল বা মোটর সাইকেল। ঘরের কোণে রাখা একটি ঠাকুরের আসন। পুরোনো ধূপের খোলা প্যাকেট। যা থেকে অল্প সুগন্ধী বের হয় মাঝে মাঝে। ঘরের কোণে দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখা ছিল বাজারের সেই পুরোনো ব্যাগ, চাবির গোছা, বারান্দায় উল্টো করে রাখা কিছু জিনিসপত্র, পুরোনো ফুল গাছের টব আরও কত কি।


দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখা ব্যাগ নিয়ে যে সকাল হলে সেই লোকটি বাজার আনতে যেতো খুশী মনে। ঘরের বউকে জিজ্ঞাসা করতো গলা উঁচিয়ে কি আনতে হবে। আর বউ মুখ ঝামটা দিয়ে বলতো এক কথা রোজ জিজ্ঞাসা করার মানে কি বলতো। দেখছো না সকাল থেকে কত কাজ আমার। দম ফেলার ফুরসৎ নেই যে। হারিয়ে যাওয়া মানুষটা কেমন ভালোবাসার সম্পর্কের জোরে বলতো আরে রাগ করো কেনো বউ। জুলজুল করে ভালোবাসার মিঠে নজরে তাকে দেখতো। আর বিড়বিড় করে বলতো আমি তো তোমায় জিজ্ঞাসা করেই সব কাজ করি। সেই মানুষটাই কেমন উধাও হয়ে গেলো কাউকে কিছু না জানিয়ে, না বলে। সত্যিই তো বড়ই অদ্ভুত এই জীবন।

আমারও এমন হারিয়ে যেতে ইচ্ছা করে মাঝে মাঝে। জীবন থেকে, সংসার থেকে হারিয়ে যেতে ইচ্ছা হয়। মনে হয় ঘর দুয়ার, একটা ছোট দু কামরার ফ্ল্যাট ছেড়ে আমার প্রিয় লাল সাইকেলকে ছেড়ে, সেই সাইকেল এর টুং টুং বেল এর আওয়াজকে ছেড়ে, এই ঘরের পাশের নিম গাছকে ছেড়ে, সেই বক বকম পায়রাদের আকুল করা কাতর চাওনি ছেড়ে, আর ঘরের কাঁচের জানালার কাছে ঘাড় গোঁজ করে ঘুঘু বা ছাতারকে ছেড়ে চলে যাই দূরে অনেক দূরে। কেউ আর খুঁজেই পায়না যেনো আমায়। বেশ ভালই একটা ব্যাপার হবে তাহলে কি বলুন। আচ্ছা এই ফোনটাকে ছেড়ে যাওয়া যাবে কি। নাকি তাকে সঙ্গে নিয়েই হারিয়ে যেতে হবে। না, কেউ নয় একদম একাই হারিয়ে যাওয়া এই বিশ্ব মাঝে। যেখানে মহাবিশ্বের মাঝে লুকিয়ে থাকা সংগোপনে, নিশ্চিন্তে নিরাপদে আর নির্ভয়ে। সত্যিই কি ভালো যে লাগবে তাহলে কি বলেন। 

আমি জানিনা এই চেনা ঘর, চেনা দুয়ার, চেনা মানুষ, চেনা পথ ঘাট প্রান্তর, চরাচর, চেনা টুকরো টুকরো মুখ, সেই মায়াময় মুখের ভালোবাসার কাঁচের ঘরের টুকরো টুকরো হীরে জহরত এর ভালোবাসা, সব ছেড়ে কি হারিয়ে যাওয়া যায়। কে জানে জানিনা আমি। সত্যিই তো কবির কথায়, কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা, মনে মনে মেলে দিলাম যেই ডানা। তাহলে আর হারিয়ে যাওয়ার আগেই এত ভাবনা চিন্তা, পিছুটান মায়াময় কাঁচের ঘরের টুং টাং শব্দ শুনে কেমন থমকে দাঁড়িয়ে পড়া কেনো। কেনো যে এমন মনে হয় আমার কে জানে। তবু তো মনের মাঝে, মাঝে মাঝেই ধুক পুক করে কোথাও আমার হারিয়ে যেতে নেই মানা। তাহলে মানা যখন নেই হারিয়ে যেতেই বা বাধা কোথায়।

 ফেসবুকের দেওয়ালে ঝুলে থাকা ছবির দিকে তাকালাম আমি। কেমন যেনো মিটিমিটি হাসছে সে আমার দিকে তাকিয়ে। জুলজুল করে তাকিয়ে দেখছে সে আমায় এক দৃষ্টিতে। আর বিড়বিড় করে বলছে, এতই যদি সহজ হতো হারিয়ে যাওয়া তাহলে কি আর এত ভাবনা চিন্তা করতে হতো তোমায়। লিখতে হতো এতো কিছু, ভাবতে হতো এত সময় ধরে। কই আমার তো এমন কিছুই মনে হয়নি। এত নিরীক্ষণ করতে হয়নি, ভাবতে হয়নি, চিন্তা করতে হয়নি। টুক করে হারিয়ে গেলাম আমি ঘর সংসার সব ফেলে আপন মনে। আমি এক দৃষ্টিতে ক্রুশবিদ্ধ যীশুর মত ঝুলে থাকা সেই ছবির দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলাম আমি। 

হারিয়ে যাওয়া - অভিজিৎ বসু।
ছয় ডিসেম্বর দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...