বাবার জন্মদিনে ছেলের এই পোস্ট আমার চোখে পড়ে গেলো এই গভীর রাতে। শুভ জন্মদিন বাবাই। সেই পুরোনো কিছু ছবি। পুরোনো কিছু স্মৃতি। আর পুরোনো কিছু গল্প। যে গল্প, যে ছবি, যে স্মৃতির বিন্দুমাত্র উত্তাপ তার শরীরে কোথায় তার আর ছোঁয়া নেই আজ, বাবার স্পর্শের উত্তাপ নেই আজ এতটুকুও। যাকে বুকে আঁকড়ে সে এত বছর ধরে শুধুই বাবার ছবির সামনে একা একাই কেমন করে যেন ফ্যাল করে করে তাকিয়ে রইলো একদৃষ্টিতে আনমনে আর আপনমনে।
সেই শেওড়াফুলির ছাতুগঞ্জের ভাড়া বাড়িতে তখন কতই না ভীড়। একটি ছোট্ট কাঠের খাটের ওপর শুয়ে সে হাত পা ছুঁড়ে খেলা করতো আপনমনে, আপন ছন্দে। কতই বা বয়স তখন হবে তার মাত্র ছ মাস বা এক বছর হয়নি মনে হয় তখন তার। হামাগুড়ি দিতে শেখেনি সে তখনও ভালো করে। মনেই পড়ে না আর সেই সব দিন এর কথা তার আজ। তবু এই আজকের দিনে নতুন বছরের দ্বিতীয় দিনেই সব কিছু মনে পড়ে যায় তার। সেই কবে ছোটো বেলায় বাবাকে হারিয়ে। মা আর দিদির হাত ধরে হাঁটি হাঁটি পা পা করে পথ চলা শুরু তার। বাবার আদর আর বাবার ভালবাসা যে জুটলই না তার কোনোদিনই।
আর আজ তাই এই দিনে তার বাবাই এর জন্মদিনে তার কেমন মন খারাপ করা রাত। মন কেমন করা একটা দিন। যে দিনটা তার জীবনের সব থেকে কষ্টের দিন, যন্ত্রণার দিন আর নিজের প্রিয় বাবাইকে মনে পড়ে যাওয়ার দিন। আজ সাদা জীবনের কালো কথায় আমার সেই সাংবাদিক জীবনের পুরোনো দিনের বন্ধু, রাজনৈতিক নেতা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে থেকে যে কোনো কাজ আর আন্দোলনে একমাত্র ভরসা সেই খানাকুলের গ্রামের ছেলে বিধায়ক থেকে সাংসদ হয়ে যাওয়া সেই আকবর আলী খোন্দকার এর কথা। তাঁর জন্মদিনের কথা। যে জন্মদিনের কথা স্মরণ করেই আকবরদার সেই ছোট্ট ছেলের এই পোস্ট দেখে কিছু কথা লেখার চেষ্টা করা মাত্র।
আমার এই দীর্ঘ পথে, দীর্ঘ সাংবাদিক জীবনে আকবরদাকে দেখে মনে হয় রাজনীতির ময়দানে রাজনীতির অঙ্গনে আজকাল এমন মানুষের সংখ্যা দিন দিন বড়ই কমছে। দ্রুতহারে বাড়ছে নিজের স্বার্থ চরিতার্থ রক্ষা করে, নিজের ঘুঁটি সাজিয়ে নিজের আখের গুছিয়ে নেওয়া লোকের সংখ্যা। রাজনীতি এখন বেশ ভালো পেশা। আর তার মাঝেই সবার সেই বড়ো ভাই। সবার সেই দাদা। গ্রামের মেঠো পথ ধরে উঠে আসা সেই ছেলেটি কেমন করে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডান হাত হয়ে গেলো ধীরে ধীরে কে জানে।
শুধুই দিদির প্রতি আস্থা, ভরসা আর তাঁর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলনের প্রতি বিশ্বাস এই তিনটে জিনিসকে স্মরণ করেই এগিয়ে চলা। সাধারণ মানুষের বিপদে আপদে যখন তখন তাঁর পাশে মোটর সাইকেল চালিয়ে এক ছুটে চলে যাওয়া। সঙ্গে সেই সময় এর তাঁর বিশ্বস্ত একমাত্র সঙ্গী সেই দিলীপ যাদবকে সঙ্গে নিয়ে। পকেটে পঞ্চাশ টাকা দিয়ে গাড়ীর তেল ভরে ছুটে যাওয়া হুগলীর এই গ্রাম থেকে সেই গ্রামে। খিদে পেটে চেপে। আসলে রাজনীতি তো শুধুই নিজের জন্য করা নয়। নিজের প্রতিষ্ঠার পাশেও গ্রামের অত্যাচারিত প্রান্তিক মানুষদের পাশে একটু দাঁড়ানো। যে কাজটা জীবনভর আজও হাসিমুখে করে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। আর যে কাজের ফসল তিনি পেয়েছেন নিজেই। সে কথা বরং থাক আজ।
সেই ভিখারী পাসওয়ান এর নিখোঁজ হয়ে যাওয়া, সেই খানাকুলের প্রত্যন্ত গ্রামে বসন্তপুরে সিপিএমের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে ঘর ছাড়া মানুষদের পাশে ছুটে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়া, সেই চন্ডীতলায় একমুঠো চাল সংগ্রহ করে সুকাই চাচার গ্রামে স্কুল স্থাপন করা সুকাই চাচাকে সাহায্য করা, সেই বহু কষ্টে সিপিএমের দাপুটে নেতা ভক্তরাম পান আর মলিন ঘোষদের হারিয়ে তাঁর বিধায়ক হয়ে যাওয়া, সেই বিধায়ক থেকে আবার মমতার ব্যাগ কাঁধে নিয়ে হাসি মুখে দিল্লির সংসদ ভবনে পৌঁছে যাওয়া। সেই জাঙ্গিপাড়া থানার আইয়া বড়গাছিয়া রাস্তার হাল খারাপ। সেই রাস্তায় বর্ষাকালে গ্রামের মেয়েদের প্রসব হবার সময় যেতে গিয়ে পথেই শিশুর জন্ম দেওয়া। আর সেই পথিকদের গ্রামের খবর ই টিভি বাংলাতে দেখানোর পর নিজের বিধায়ক বা সাংসদ কোটার টাকা দিয়ে রাস্তা সারিয়ে দেওয়া। গাড়ী করে আমায় সেই গ্রামে নিয়ে যাওয়া। সত্যিই এমন কত যে স্মৃতি আছড়ে পড়ে এই রাতে কে জানে।
আজ দোসরা জানুয়ারী। আকবর আলী খোন্দকার বেঁচে থাকলে আজ তিনি প্রায় সত্তর বছর এর দোর গোড়ায় পৌঁছে যেতেন এখন। এই বছর তাঁর আটষট্টি তম জন্মদিন পালন করা হচ্ছে। আর আমার সেই আকবরদার ছোট্ট ছেলের এই ছোট্ট পোস্ট দেখে, ওর নিজের ভালোবাসার বাবাইকে স্মরণ করে এই কিছু লেখা দেখে এতকিছুই মনে পড়ে গেলো আজ।
সেই একদম রাজনীতির অঙ্গনে নতুন ব্যাট করতে নেমে প্যাঁচ পয়জার না জানা আমাদের হাসিমুখের মেজদি। বর্তমানে চন্ডীতলার তৃণমুল বিধায়ক। সেই ছোট্টো রোজ আজ অনেক বড়ো হয়ে গেছে। সেই ছোট্ট ছেলে বাবুর নামটা মনে নেই ঠিক আমার, ওর হাত পা ছুঁড়ে ছাতুগঞ্জের ভাড়া বাড়িতে খেলা করা।একা একাই সে আজ কেমন করে আজকের প্রজন্মের নেতা হয়ে যাওয়া আহ্নিক খোন্দকার আকবর আলী খোন্দকারের ছেলে। ওর এই বড়ো চেহারার ছবি দেখি আর আমার আকবরদার কথা মনে পড়ে যায় খুব।
সেই পুরোনো শ্রীরামপুর এর সাংসদের ভাড়া বাড়িতে সাংবাদিক, গ্রামের লোকদের যখন তখন প্রবেশ করা, নিরাপত্তার ঘেরা টোপে বন্দী না হয়েই দিব্যি আকবর দার হাসিমুখে সারাটা জীবন কাটিয়ে দেওয়া দেখে মনে হয় সত্যিই অসাধারণ এই রাজনৈতিক মানুষটি। যিনি সবাইকে নিয়ে একসাথে হেঁটে চলে হাসি মুখেই রাজনীতি করে গেলেন। আর দিব্যি টুক করে হাসি মুখে আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেলেন একদিন। আজ তাঁর জন্মদিনের দিন আর সেই কথা নয়।
আজ শুধুই একটি ছোট্টো ছেলের তার বাবাইকে জন্মদিনে স্মরণ করার দিন। রোজ এর তার হারিয়ে যাওয়া বাবাই এর জন্মদিনে মনে করার দিন। আর সেই আমাদের সবার মেজদির তাঁর মনের ভালোবাসার মানুষকে এই জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর দিন। ভালো থেকো তুমি আকবর দা। শুভ জন্মদিন দাদা। শুভ জন্মদিন বড়ভাই।
বাবাই এর জন্মদিনে ছোট্ট ছেলের পোস্ট - অভিজিৎ বসু।
দোসরা জানুয়ারী, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন