সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ট্রেন পথের সফরনামা

ট্রেন পথের সফরনামা বেশ ভালই। নানা টুকরো কথার আওয়াজ, নানা মন খারাপ আর ভালোর রকমারি মিশেল। নানা ধরনের মিস্টি মধুর আলাপচারিতা। কতদিন পর ট্রেনের কামরায় কাউকে দেখে মনে মনে বেশ আনন্দ পাওয়া। নাই বা হলো সে আত্মীয় বা খুব নিকটের, প্রাণের পরমাত্মীয় কেউ। নাই বা হলো সে খুব নিজের কেউ। নিজের নামে লোকজনরা তো কবেই যে দূরের আর পরের হয়ে গেছে তার ঠিক নেই যেনো। 


শীতের বিকেলে সন্ধ্যা গড়িয়ে নামে আকাশ থেকে ঝুপ করে। ঠিক যেনো উঁচু টিলা থেকে গড়িয়ে পড়ে আঁধার মাখা বল হঠাৎ করেই। পাখির ডাকে কেমন যেন আকুলি বিকুলি করা ঘরে ফেরার নিদারুণ ডাক। হঠাৎ কানে এলো বছর পঁচিশের এক ছেলের আকুল করা ডাক। দে না ভাই। একশো টাকার জন্য কাতর আবেদন এক যুবকের অন্য কোনও বন্ধুর কাছে বা কারুর কাছে। একটু যেনো পাঠিয়ে দেওয়া যায় সেই কটি মাত্র টাকা। উড়ে আসা টাকার প্রতীক্ষায় প্রহর গোনা ঠাণ্ডা হাওয়া গায়ে মেখে সেই যুবকের ফাঁকা স্টেশনে একা একা। আর বারবার মোবাইল এর স্ক্রীনে তীক্ষ্ণ নজর রাখা। সত্যিই ট্রেন পথের সফর নামাতে আরও কত যে ঘটনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এমন। 

আর এরমাঝে হঠাৎ করেই ঝুড়ি মাথায় একটি লোকের সাথে আলাপচারিতায় এক ট্রেন যাত্রীর নানা টুকরো কথা। কি গো এতদিন দেখিনি যে তোমায়। ঝুড়ি মাথায় ট্রেনে উঠতে উঠতে সেই হকার এর উত্তর ছুটিতে বেড়াতে গেছিলাম গো তাই আমায় দেখতে পাওনি তুমি। কোথায় গো এইতো অযোধ্যা ঘুরে গেলাম আমি। রামলালা দর্শন করে কি বুক ভরা আনন্দ আর সুখের অনুভুতি ওই ঝাঁকা মাথায় কলা বিক্রী করা মানুষকে দেখে আমার মনটা ভালো হয়ে গেলো বড়ো। এক কামরায় উঠে দুজনের অনাবিল আনন্দের জোয়ারে ভেসে যাওয়া রাম দর্শনের আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে মেতে ওঠা তার।

 সত্যিই অসাধারণ এই ট্রেনের নানা অনাবিল সুখের অনুভুতি আর আবেশ নিয়ে ছুটে চলেছে আমার ট্রেন দ্রুত গতিতে দুলকি চালে কেমন ঘরে ফেরার আনন্দে। বন্ধ জানলা, বন্ধ দরজা, দুর থেকে কেমন মন কেমন করা ট্রেনের তীব্র হুইসেল বাজিয়ে ছুটে চলা। এর মাঝে শীতের ঠাণ্ডা হাওয়া গায়ে মেখে ভীড় ছেড়ে,শহর ছেড়ে গ্রামের পানে ছুটে চলা। হুস হুস করে ছুটে চলা ট্রেন, হঠাৎ করেই লাল সিগন্যাল পেয়ে নাম না জানা কোনও স্টেশনে দাঁড়িয়ে পড়া। 

আর এই সবের মাঝে মাঝে ঘরের ফোন আসা কতদূর আর অপেক্ষা করা ঘরের লোকের। কাছের লোকের ফোন, হকার এর নানা কন্ঠের কর্কশ আওয়াজ। স্টেশনের ওপর নিজের ক্ষেতের টাটকা ফুলের মতো কপি বিক্রি করা চাষীর মুখের সগর্ব হাসি সব কেমন যেনো টুকরো কোলাজ রেলপথের ধারে। আর এর মাঝে অন্ধ ভিখারীর বাজনা বাজিয়ে গান। ইয়ে মেরি হামসফর সত্যিই অসাধারণ এই ট্রেন সফর আর হামসফর সব মিলেমিশে যেনো একাকার। যে সফরে এমন নানা টক, ঝাল, মিষ্টির নানা সমাহার। যে সফরে এমন মন ভালো করা সম্পর্কের মাঝে দুজনের প্রাণের কথার আদান প্রদান। দূরে অন্ধকার মাঠের ধারে ছোট্ট ছোট্ট বিন্দুর মত আলো, আঁধারের গা বেয়ে সরে সরে যাচ্ছে আর সেই অন্ধকার কাটিয়ে আলোর বিন্দুকে স্পর্শ করে আলগোছে ছুঁয়ে এগিয়ে চলেছে আমার ট্রেন।

ট্রেন পথের সফরনামা - অভিজিৎ বসু। 
দশ জানুয়ারী, দু হাজার পঁচিশ। 
ছবি নিজের মোবাইল ক্যামেরায় তোলা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...