গ্রামের নাম মহুলী। বোলপুর থেকে মেরে কেটে পাঁচ কিলোমিটার হবে। সিয়ান গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত এই গ্রাম। এমন মিস্টি নামের গ্রাম শুনে ইচ্ছা হলো কিছু লেখার। কিন্তু কি লিখবো। গ্রামের কথা আর নতুন করে লেখার কি আছে। এই সুজলা সুফল শস্য শ্যামলা গ্রাম তো সব এক রকমের। তাহলে মহুলী গ্রাম যা আবার বের গ্রামও তাই। আবার ইকড়াও একই ধরনের গ্রাম।
সেই সবুজ মাঠ। সুন্দর মন ভালো করা ক্ষেত। আলু বোনা হয়েছে মাঠে। সর্ষে ক্ষেতের হাসি মাখা মুখ। কেমন পুকুরের কালো টলটলে জল। সবই তো এক রকম ফারাক আর কোথায়। আর এই মহুলী গ্রামে মাত্র একশো ঘরের আদিবাসীর বাস। তারা সবাই চারটে পাড়ায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে এদিক ওদিক জড়াজড়ি করে বাস করছে মংলা, টুসুরাণী, রতন হাঁসদা, কালু সোরেন থেকে শুরু করে আরও অনেকেই। তাহলে নতুনত্ব তো কিছুই নেই। এই সব দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের জীবনে কোনও নতুনত্ব আর কোনো বিশেষত্ব নেই। গ্রামের মিঠে বাতাস গায়ে মেখে, শীতের উত্তুরে হাওয়ায় কাঁপন অনুভব করেই দিন কাটে এদের।
কিন্তু আজ যেন দুপুর থেকেই কেমন সাজ সাজ রব মহুলী গ্রামের বাসিন্দাদের। গ্রামের মাঠের ধারে যেতে হবে সবাইকে। ওই যে সরকারি পাম্প ঘর থেকে মিষ্টি সুন্দর জল বের হয় কেমন সুন্দর করে। যে জল খেয়ে তাদের পেট ভরে, মন ভরে, আর শরীরও ভালো থাকে, সেই জলের দিদি আসবে গ্রামে। আসবে গ্রামের নানা ছোটো, বড়ো, মেজো, সেজো পঞ্চায়েতের বাবুরাও। কারণ কি নাকি ঘোষণা হবে আজ এই তাদের গ্রামে। রতন বলে আরে গ্রাম তাদের সজল হবে রে। যে তিন বেলা জল মেলে সেই শুখা গ্রাম, ভুখা গ্রাম যে সজল হবে যে আজ। তাই তো নানা মানুষের ভীড় বেড়েছে এই শীতের বিকেলে তাদের গ্রামে।
এই মহুল গ্রামে এখন তিন বার জল আসে ঘরের কলে। সেই জলে সব কাজ করে তারা। বেশ একটা ভালো ব্যবস্থা কিন্তু। আগে যে কি কষ্ট হতো তাদের। ঘরের খাবার জল আনতে যেতে হতো দূরের পুকুরে। গ্রামের একটি টিউবওয়েল ভরসা ছিল কিন্তু সেটা সব সময় ঠিক করে কাজ করত না। সে একটা দিন গেছে বটে তাদের। তারপর ঘরে ঘরে জলের পাইপ বসালো পি এইচ ই এর বাবুরা। দিদিরা বললো গ্রামে ঘুরে ঘুরে বললো, জল আসবে। তখন অবশ্য বিশ্বাস হয়নি তাদের এই নতুন জল দিদির কথা একদম। এমন কথা কতজন যে বলে যায়। এই পাইপ দিয়ে জল পৌঁছে যাবে তাদের ঘরের উঠোনে সোজা।
কিন্তু এখন কেমন যেন লাগে তাদের। সব কেমন মনে হয় সত্যিই তো ঘরে ঘরে খাবার জল পৌঁছে গেছে তাদের মহুলী গ্রামের মানুষের কাছে। আর এই জল পেয়ে খুশি গ্রামের বাসিন্দারা। আজ সেই মহুলী গ্রামকে সজল ঘোষণা করা হলো। পি এইচ ই বা জন স্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের তরফে জল জীবন মিশনের যে কাজ চলছে গ্রামে গ্রামে। সেই কাজের একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো গ্রামে জল সঠিক ভাবে পৌঁছে যাবার পর সেই গ্রামকে সরকারি ভাবে সজল ঘোষণা করা। খাতায় কলমে সেই গ্রামকে সজল ঘোষণা করে সরকারী ভাবে জানিয়ে দেওয়া যে এই গ্রাম আর নির্জলা গ্রাম নয় সজল গ্রাম।
সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বীরভূমের এই গ্রাম মহুলী আজ থেকে সরকারি তথ্য পরিসংখ্যান অনুযায়ী সজল গ্রাম এর তালিকায় তার নাম তুলে ফেললো। আর এতে খুশী মংলা, টুসুরাণী, রতন, আর কালু সোরেন এঁরা সবাই। সত্যিই তো এই সজল গ্রামের তালিকায় নাম উঠে গেলো তাদের ছোট্টো গ্রাম মহুলীর। আর এতে খুশি তারাও। ঠিক যেনো ভোটের খাতায় নাম ওঠার মতই।
সজল গ্রাম হলো মহুলী - অভিজিৎ বসু।
এগারো জানুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি নিজের সংগ্রহ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন