সাদা জীবনের কালো কথায় আজ সেই হারিয়ে যাওয়া কৌশিকের গল্প। সেই আমার সুখ আর দুঃখের বন্ধু কৌশিক, মহাকরণে পাঁচ নম্বর গেটে আড্ডা দেওয়া কৌশিক এর কথা। সেই আকাশ বাংলা চ্যানেলের ডানকুনি এলাকার খবর পাঠানো মিল্টন সেন এর ক্যামেরাম্যান কৌশিক বোস এর কথা। সেই আর প্লাস এর ক্যামেরাম্যান কৌশিক এর কথা। সেই সি এন এর অফিসে কাজ করা সেই রোগা আউটডোর আর ইনডোর সামলানো কৌশিক এর কথা।
সেই রিপাবলিক বাংলাতে দাঁতে দাঁত চেপে বাবুদের আর বসদের শত অত্যাচার সহ্য করেও কেমন হাসি মুখে কাজ করা কৌশিক এর কথা। যে শত কষ্ট করেও হাসিমুখে লড়ে যাচ্ছিল শুধু ওর ছোট্ট মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে। মেয়েকে পড়াতে হবে আর তাকে মানুষ করতে হবে এই আশা নিয়ে। সেই বাংলা মিডিয়া থেকে হারিয়ে যাওয়া কৌশিকের কথা আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায়। আমার আঁকিবুঁকি ব্লগে।
যে ক্যামেরা চালাতে বেশ ভালোবাসত। যে স্টুডিও থেকে রাস্তা যে কোনো কাজ করে ফেলত হাসি মুখে কিন্তু ওকে দেখে সেটা বোঝার উপায় নেই একদম। মনে হবে একে দিয়ে কি আর কাজ হবে। ওর সাথে আমার সেই হুগলী জেলায় পরিচয় কবে থেকে। সেই মিল্টন সেন, সেই বিশ্বজিৎ সিংহ রায়, সেই ফাল্গুনী দা, সেই গৌতম ধোলে, ইটিভির আর খাস খবরের পরেই এসে যায় আকাশ বাংলা চ্যানেল।
মিল্টন সেন ইটিভির ক্যামেরাম্যান এর কাজ ছেড়ে দিয়ে রিপোর্টার হয়ে চলে যায় সেই চ্যানেলে কাজ করতে। আর ওর টিমের সদস্য ছিল সেই সময় জেলায় কৌশিক বোস। বেশ চুপচাপ শান্ত স্বভাব এর ছেলে। উত্তেজনায় কাঁপে না কোনো দিনই। আর লোক দেখানো হামবড়া ভাব নেই ওর। জেলা থেকে পরে ও কলকাতায় চলে যায়। বোধহয় আর প্লাস চ্যানেলে। বিখ্যাত রিপোর্টার জয় চক্রবর্তীর সাথে মহাকরণে আসতো। আসলে রাতবিরেতে এদের কথা আমার মনে পড়ে যায়।
তাই আমি লিখে ফেলি কৌশিক এর কথা। সেই মহাকরণে দেখা হলো ওর সাথে। একসাথে কাজ করা মজা করে দিন কাটানো হলো কিছু দিন। এরপরেই আমি হায়দরাবাদ চলে যাই ভাসতে ভাসতে। ও কোলকাতায় কাজ করে। পরে সি এন নিউজ এর চ্যানেলে ডাক পেলাম। দেখা হলো ওর সাথে আবার আমার। সেই একদম একভাবেই কাজ করে যাচ্ছে সেই ঘেরাটোপে আর নজরদারিতে। সময় পেলে একসাথে দুজনে চা খেতে যেতাম গেটের বাইরে খাতায় সই করে। সেই স্বার্থপর দৈত্যের জেলখানা থেকে বের হয়ে দেখা হতো মাঝে মাঝেই ওর সাথে। আর দেখা হতো আশীষ ঘোষদার সাথেও। ও বলতো অভিজিৎ দা, ভালোই খবর ধরানো হচ্ছে বেশ ভালই হচ্ছে কিন্তু। ওর কথা শুনে বেশ ভালো লাগতো আমার। নতুন জায়গায় কাজে এসে পারছি আমি তাহলে।
কিন্তু হঠাৎ একদিন আমায় ডেকে বললো সি এন এর লোক আর আসতে হবে না দরকার নেই আমার। আমিও কিছুটা বিপদে পড়ে গেলাম সি এন ছেড়ে দিয়ে চলে এলাম। কৌশিক বলেছিল এরা এমনই লোক। ভালো লোকের, কাজের লোকের কোনো দাম নেই দাদা এই মিডিয়ায় আর এই বিরাটির অফিসে। চলে এলাম আমিও কাজ ছেড়ে। ও একদিন বেশী টাকা পেয়ে রিপাবলিক বাংলা চ্যানেলে চলে গেলো। মুখে হাসি নিয়ে। বেশ ভালো লাগলো আমার। কিন্তু কিছুদিন কাজ এর পর অসুস্থ্ হলো কৌশিক।
তবু চাপ নিয়ে ডিউটি করত ও রিপাবলিক বাংলাতে। মাঝে মাঝেই কথা হতো ওর সাথে। বারো চোদ্দ ঘন্টা ডিউটি করে ক্লান্ত হয়ে মাঝরাতে বাড়ী ফিরতো ও ধুঁকতে ধুঁকতে। আবার পরদিন সকালে বেড়িয়ে পড়া ডানকুনি থেকে। আমি বুঝতে পারতাম ওর কষ্টের কথা কিন্তু ওকে কি বলবো আমি কোনও সাহায্য তো করতে পারবো না আমি। তাই চুপ করে শুনতাম।
একদিন শুনলাম ও কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছে। কৌশিক এখন দোকান দিয়েছে বাড়ির পাশে। ওর মেয়ে খুব ভালো ক্রিকেট খেলে। সকাল বিকেল বেলায় দোকান খুলে বসে। টুকটাক বিক্রি হয় কিছু খেলার সরঞ্জামের জিনিস ওর দোকানে। কোনোদিন আবার সেটাও হয় না বিক্রি। তবু তো কেমন হাসি মুখে কষ্ট করেই সংসার চালাচ্ছে কৌশিক। বস নামক দু পেয়ে বিশেষ প্রজাতির জীব এর কাছে হাত জোড় করে আত্মসমর্পণ করে বেঁচে থাকতে হয় না ওকে আর। আর সেই বিখ্যাত তাল গাছের মতো একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় মাতব্বর বস হয়ে যে নিজের সুখ্যাতি নিজেই করে তার সামনে হাতজোড় করে বেঁচে থাকতে হয়না কিছুতেই।
সত্যিই অসাধারণ এই জীবন কিন্তু ভাই কৌশিক। চালিয়ে যা মন খারাপ না করে মেয়ের মতো ব্যাট চালিয়ে খেল তুই। দেখবি ঠিক একদিন এই কঠিন ক্রিজে টিকে যাবি তুই ও তোর মেয়ের মতোই। একটু মাঝে মাঝে ক্যামেরা,বুম, লাইভ ইউ, স্টুডিও, আলো, গেস্টদের চিৎকার, ক্যামেরা ,অ্যাকশন আর লাইট এর শব্দ শোনা যাবে। বস এর চিৎকার মনে পড়বে। এই সবের কথা মনে পড়বে তোর কিন্তু মন খারাপ না করে এই জীবন থেকে আর বের হোসনা। দেখবি সব একদিন গা সওয়া হয়ে যাবে তোর।
হয়তো কার্ড দেখিয়ে নবান্নে ঢোকা হবে না আর কোনো দিন। হয়তো কার্ড দেখিয়ে সরকারী বাস এর যাত্রী হয়ে ফ্রী ঘোরা যাবে না একটু হাসি মুখে। হয়তো ষাট বছর বয়স হলে দু হাজার টাকার পেনশন পাওয়া হবে না আর কিন্তু এই সবের মাঝে ওই দু পেয়ে বস নামক জীবদের থেকে তো মুক্তি পাওয়া গেছে। যাঁরা নিজেদের স্বার্থে অন্য পরিবারের পেটে লাথি মারে আর বুঝিয়ে দেয় তাদের কত ক্ষমতা মিস্টি হাসি হাসি মুখে।
আসলে এই বাংলা সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বাংলা আর বাংলার মানুষ আর বাংলার মিডিয়ার বদল হয়েছে অনেক এই বিশেষ ক্রান্তিকালে। যে বদলের সাথে তাল মিলিয়ে আমি আর তুই চলতে পারিনি। তাই আমি আর তুই এখন বাতিলের দলে। অন্য জনরা কেমন বাতিল হয়ে যায়নি আজও। ভালো থাকিস ভাই কৌশিক। মেয়েকে নিয়ে, পরিবারকে নিয়ে ভালো থাকিস ভাই তুই।
ক্যামেরাম্যান কৌশিক বোস - অভিজিৎ বসু।
চার জানুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন