সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হাওড়ার শাশ্বত ও আমি


একজন হাওড়া, অন্যজন হুগলি। পাশাপাশি দুই জেলা। আমরা দুজন এক সময় পাশাপাশি দুই জেলার বাসিন্দা ছিলাম। দুই জেলার এক সময়ের হুর্তা কর্তা বিধাতাও ছিলাম বলা যায়। দুজনেই হাতে পুলিশের মত টুটু নামক যন্ত্র নিয়ে মোটর সাইকেল নিয়ে দাপিয়ে বেড়াতাম আমরা জেলার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। সেই কবে কার কথা এসব।

 বলতে গেলে হাওড়ার সাথে হুগলীর আলাপ হয় আজ থেকে প্রায় পঁচিশ বছর আগে। সালটা ছিল, 1999 সাল। কাজের সূত্রে আলাপ আমাদের। সহকর্মীর সেই আলাপ থেকে পরে ধীরে ধীরে সেটা পারিবারিক সম্পর্কের সরু মেঠো পথ ধরে দূরে, অনেক দূরে চলে গেছে। আজ শনিবার এই প্রবল শীতের রাতে আচমকাই সেই হাওড়া আর হুগলীর দেখা হলো বোলপুরের এক সরকারী গেস্ট হাউসে। যখন শান্তিনিকেতনের রাস্তায় তাপমাত্রা নেমেছে প্রায় দশ ডিগ্রির নিচে। ঠাণ্ডায় জমে কাবু হলেও এত দিন পর দেখলাম আমাদের সম্পর্ক বরফ জমাট হয়ে জমে যায়নি। আজ এত দিন পরেও একই রকম ঊষ্ণ আছে আমাদের গভীর গোপন সম্পর্ক। 

আসলে মানুষ যেমন খুব ঘুম কাতুরে, যেমন শীত কাতুরে, তেমনি সে স্মৃতি মেদুরতায় কাতর হয় বার বার জীবনের নানা সময়ে। স্মৃতিকে জড়িয়ে ধরে এই শীতের রাতে গরম লেপের ওম পেতে চায় সে। তাই সে
আচমকাই দমকা হাওয়ায়, হারিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বার বার। আর নীরবে একটু স্মৃতির উত্তাপ নিয়ে শরীর গরম করার চেষ্টা করে আর কি। সত্যিই বেশ ভালো মুহূর্তের সাক্ষী থাকলো হাওড়া আর হুগলীর গোটা পরিবার আজ এই মাঘ মাসের সন্ধ্যায়। 

ঠিক কবে হাওড়ার সাথে হুগলীর প্রথম দেখা হয় সেটা কি মনে আছে আজও কে জানে। জানি না ভুল হবে কি না ,তবে আমার মনে হয় হুগলির চুঁচুড়াতে ডি এম অফিসের কাঠের সিঁড়িতে প্রথম একে অপরকে দেখি আমরা। এটাই যত দুর সম্ভব প্রথম দেখা আমাদের। এক ঝলক দেখা, এক মিনিটের কম সময় দেখা। কিন্তু সেই প্রথম দেখায় হাওড়া আমায় হাবে ভাবে বুঝিয়ে দেয়, সে আমার মত গ্রামের আনপড় রিপোর্টার নয়। ওর আদব, কায়দা আমায় বেশ মুগ্ধ করে ফেলে। ও ইংরাজীতে কথা বলতে পারে আর আমি পারি না, এটাই ওকে যেনো একশো তে একশো দশ নম্বর দিয়ে দেয়। সেই সময় হাওড়া একাই কাজ করে দুই জেলার রিপোর্টার হয়ে। সামলাচ্ছে দুই জেলাই। তখন কোনো খবরের সন্ধানে আসে আমার হুগলি জেলায় জেলাশাসকের কাছে এসেছিল সে।সেটাই ছিল আমাদের প্রথম দেখা।

 এরপর আমারও চাকরি পাওয়া ইটিভিতে হুগলির রিপোর্টার হয়ে। তারপর দুজনের একসাথে দিনের শেষে খবর করে ক্যাসেট নিয়ে ধর্মতলায় তিন নম্বর চৌরুঙ্গী স্কোয়ারের অফিস যাওয়া। সেখানে রোজ দেখা হওয়া দুই জেলা রিপোর্টার এর, হাওড়ার আর হুগলির। সেখানে আশিষদা, অনির্বাণ দা, আর শুভাশীষ দা, মৃত্যুঞ্জয়দা কে যমের মতো ভয় পাওয়া।দূরে থাকলেও অম্বরিশদার রাতের বেলায় ফোন এলে ভয় পাওয়া।আর পরের দিকে সিদ্ধার্থ সরকারের ফোন এলে ভয় পাওয়া।এটাই ছিল আমার চরিত্র। কিন্তু আমি দেখতাম ওর মধ্য কোনো ভয়ডর নেই। একদম এক ফুতে সব উড়িয়ে দিয়ে বিন্দাস ঘুরে বেড়ায় সে বসেদের সামনে যেনো বস ওই। আমি যেখানে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করি বার বার। ও সেখানে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় বসেদের সামনে। আর এটাই আমায় আরো গভীর করে মুগ্ধ করে দেয় ওর প্রতি আমার আস্থা আরো বেড়ে যায়। 

আমার আজও মনে আছে সেই লেনিন সরণির ট্রাম লাইন পেরিয়ে অফিসের খবরের দুনিয়া ছেড়ে খাবারের সন্ধানে মেট্রো গলিতে ঢুকে পড়ে গরম কচুরি আর লঙ্কা দেওয়া তরকারি আর আচার খাওয়ার কথা শাল পাতায়। আমার আজও মনে পড়ে হাওড়ার হাত ধরেই তো হুগলী সেদিন অন্য এক জগতে প্রবেশ করতে পেরেছিল। মেট্রো গলির সেই সাউথ ইন্ডিয়ান শ্রী কৃষ্ণ কাফেতে বসে গরম ধোসা খাওয়া বুভুক্ষার মত ওর পয়সাতেই, সেটা আজও মনে আছে আমার। মনে আছে ঠাণ্ডা লস্যিকে ওর তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করে খাওয়ার কথা। আর আমি এক নিশ্বাসে সেটা খেয়ে গলা ব্যাথা হবার কথা।আর গ্লাসের শেষ প্রান্তে এসে প্লাস্টিকের পাইপে এমন জোরে টান মারা যেখানে অন্য টেবিলের লোকরা বুঝতে পারে মালটা সত্যিই গ্রাম থেকে শহরে এসেছে নতুন।ভুলি কি করে সেই সব স্মৃতি উপচে পড়া দিনের কথা।আর সেই যে বৃষ্টির রাতে হাওড়া থেকে বাজাজ বক্সার শো রুম থেকে কিনে শ্রীরামপুর পৌছে দেওয়া। বৃষ্টি ভেজা রাতের কথা ভোলা যায় না মনে হয় বন্ধুত্বের সম্পর্কে।

আর যেভাবে আমার নতুন সংসারের সাক্ষী ছিল পিউ আর শ্বাশত 2001 সালে। সেটাও একটা গল্প বটে।তখন আমি খালি দৌড়ে বেড়াচ্ছি খবরের সন্ধানে জেলার এদিক থেকে ওদিক। তার মাঝেই আর এক নতুন জীবনের খবর এসে হাজির আমার শুকনো জীবনেও। কিন্তু সেই সময় আমার বাবা মা রাজী নয় মানতে এই নতুন জীবনের কথাকে।কি করা যায় তখন খুব চিন্তা। 

সেই সময় বিয়ের দিন এই আনপড় বন্ধুর পাশে ওরাই গাড়ি নিয়ে এসে দাঁড়ায় ওরা দুজন। আমার বাড়ি এসে হাজির হয় ওরা দুজন বিয়ের সন্ধ্যায়। বিয়ের দিন আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে আমাকে সাহস যোগায়, সাহায্য করে। বিয়ের জোগাড় করে দেয় ওরাই।কারণ আনপড় সেই জেলার গ্রামের বন্ধুটি সাইকেল নিয়ে বিয়ে করতে যাবে বলেছিল। ওরা গাড়ি না আনলে সেটাই বোধ হয় স্বাভাবিক নিয়মে হতো আমার জীবনে, কিন্তু ওরা সেটা হতে দেয় নি। আশীষদার কথায় ওরা এসে হাজির হয় সেদিন। আর সেই সময় থেকেই হাওড়া আর হুগলি হয়ে যায় অভিন্ন হৃদয় বন্ধু একে অপরের।  

আমরা আলাদা হয়ে গেলেও, দূরে থাকলেও সেই বন্ধুত্ব আজও রয়ে গেছে আমাদের। তাই আজ এত দিন বাদে বোলপুরের লজ মোড়ের সরকারি বাংলো বাড়িতে বসে শুনলাম পিউ এর মুখে আমরা তোমাদের বিয়ের সাক্ষী কিন্তু মনে রেখো তোমরা এটা। এই কথা শুনে আমার খুব ভালো লাগে আজও। পিউ এর মুখে এই কথা শুনে ওর আর আমার মেয়ে দুজনেই বেশ অবাক হয়েছে মনে হলো। আমাদের এই গভীর সম্পর্কের কথা জেনে। আমার মনে পড়ে যায় সেই রামরাজাতলায় ওর বাড়িতে দুপুরে ওর বউ এর হাতে প্রথম ভাত খাবার নেমতন্নর কথা। কী সুন্দর মুগের ডাল আর বেগুন ভাজা আর পনির এর তরকারি রান্না করেছিল সেদিন। আমি নিরামিষ খাবার খাই বলে কত নিয়ম মেনে রান্না করে ছিল ও। 

সত্যিই কি দ্রুত ঘড়ির কাঁটা টিক টিক করে ঘুরে গেছে হাওড়া আর হুগলির জীবনে। দুজনেই আজ আমরা বুড়ো হয়ে গেছি প্রায়। আমাদের মেয়েরা বড়ো হয়ে যাচ্ছে দ্রুত। তাদের কিছু দিন বাদে এই বুড়োদের দেখতে হবে, দায়িত্ব নিতে হবে বুড়ো বাবাদের। আজ এত দিন বাদে সব যেনো কেমন ছবির মত ভেসে আসছে আমার, দ্রুত গতিতে হুইসেল বাজিয়ে রেল লাইনের ট্র্যাক ধরে দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে স্মৃতির পাতা উল্টে উল্টে।

 এই তো সেদিন কিছুদিন আগেই আমরা একসাথে এক জায়গায় টাইপিস্ট এর কাজ করতাম হাওড়া আর হুগলি পাশাপাশি বসে এক চেয়ারে। যদিও সেটা একসময় খুব দাপুটে মিডিয়া হাউস থাকলেও এখন সেটা আর নেই বলা যায়। নামেই মিডিয়া হাউস সেখানে ঘটি ডোবে না একদম আজ।সেই জায়গার কাজ ছেড়ে দিয়েছি দুজনেই। কিন্তু সেই টাইপিস্ট এর কাজের মধ্যেও আমাদের সু সম্পর্ক বজায় ছিল বরা- বর।

আজ এত দিন পর দেখা হল আমাদের স্ব পরিবারে প্রায় কুড়ি বছর পরে কলকাতা শহরের কোনো রাস্তায় নয়। ধর্মতলা, পার্ক স্ট্রিট বা নিউ মার্কেটে নয়। সাকুল্যে ইকো পার্কের ভেতরেও নয়। বিশ্ব বাংলা গেটের নিচে নয়। দেখা হলো সেই ধুলি ধূসরিত এক সময়ের ক্যানভাসে আঁকা কবির শহরে। যেখানে অনেক আবেগ অনুভূতি উত্তাপ নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, 

পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়।
ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।
আয় আর একটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়।
মোরা সুখের দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়।

মোরা ভোরের বেলা ফুল তুলেছি, দুলেছি দোলায়–
বাজিয়ে বাঁশি গান গেয়েছি বকুলের তলায়।
হায় মাঝে হল ছাড়াছাড়ি, গেলেম কে কোথায়–
আবার দেখা যদি হল, সখা, প্রাণের মাঝে আয়॥

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 

সত্যিই তো পুরোনো দিনের কথা কি ভোলা যায়। যাকে আঁকড়ে ধরে আমরা যুবক থেকে বুড়ো হয়ে গেলাম। সেই সব দিনের কথা ভুলি কি করে। আজকের দিনে সস্পর্কের মেঠো পথে বড়ো কাদা। পা আটকে যায় আমাদের। বড়ো কষ্ট করে শীতের রাতে যেমন আগুনকে বাঁচিয়ে রাখতে হয় হাত পোহাবার জন্য, একটু উত্তাপ নেওয়ার জন্য। গা গরম করার জন্য। ঠিক তেমন কষ্ট করেই এই ভাবেই পুরোনো সম্পর্ক কে, বুকের মাঝে আগলে রাখতে হয়, প্রাণের মাঝে ধরে রাখতে হয়। যেনো কোনো ভাবেই তা ভেঙ্গে না যায়। যেনো এই ভাবেই শীতের রাতে ঘুম না এলে অতীত স্মৃতি রোমন্থন করে উত্তাপ নিতে পাড়ি আমরা বুড়ো বয়সেও। আর সেই ভালবাসার উত্তাপে দ্রবীভূত হই আমরা, হাওড়া ও হুগলী দুজনই।

হাওড়ার শাশ্বত ও আমি - অভিজিৎ বসু।
চৌদ্দ জানুয়ারী, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি নিজের ক্যামেরায় তোলা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...