সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ব্যান্ডেল এর শতাব্দী প্রাচীন মাছ মেলা

শীতকাল মানেই বাংলায় হরেক মেলার পসরা। গ্রাম তো বটেই খোদ কলকাতা শহরেও এই সময় নানা কিছু নিয়ে মেলা চলে। হস্তশিল্প মেলা, সিনেমা মেলা, পিঠে মেলা, বইমেলা, আলুরদম মেলা, গঙ্গাসাগর মেলা, কুম্ভ মেলা, জয়দেব কেন্দুলির বাউল মেলা, সবর মেলা, মুড়ি চপ এর মেলা। চারদিকেই শুধু মেলা আর মেলা। খেলা আর খেলা তার নানা রকমের নানা ধরনের আয়োজন। এই শীতের কটা দিন মেলা, খেলা, আনন্দ উপভোগ করে বেঁচে থাকা বেশ মজা করে টিকে থাকা।

 
এই সবই খুব পরিচিত ঠেকলেও আজ যার কথা বলব তা একেবারেই অন্য স্বাদের একটি মেলা। এ মেলার গায়ে কেমন যেন একটু আঁশটে গন্ধ লেগে আছে। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি, জিলিপি, পাঁপড় অথবা নাগরদোলা নয় মেলার মূল আকর্ষণ এখানে হলো হরেক রকমের মাছ। এই মাছের মেলার মূল স্লোগান হলো ‘মৎস্য কিনিব আর খাইব সুখে’, ৫০০ বছর ধরে এটাই স্লোগান এই ব্যান্ডেল কেষ্টপুরের মাছের মেলায়।

এই মেলায় পাবেন ৪৫ কেজির তেলিয়া ভোলা, ৩০ কেজির আড়,কেজি কেজি রুই কাতলায় জমজমাট কেষ্টপুরের এই মাছের মেলা। রাঘব বোয়াল থেকে শুরু করে চুনো পুঁটি,রুই, কাতলা, ইলিশ, ভেটকি, ভোলা, সামুদ্রিক শংকর মাছ থেকে কাঁকড়া কি নেই এই মেলায়। সব ধরনের মাছ পাওয়া যায় ব্যান্ডেলের দেবানন্দপুরের কেষ্টপুরের এই মাছের মেলায়। সেই মেলায় মাছ কিনতে ভীড় জমে বহু মানুষের পয়লা মাঘ এর সকাল বেলায়।

মাছ কিনতে ভিড় উপচে পড়ে এখানে। মাছ মেলার জনপ্রিয়তাকে ঘিরে পাশেই বিষয়ে আরো অনেক রকমের খাবার এবং অন্যান্য সামগ্রীর পসরা বসে যায় মাঠ জুড়ে। শীতের আমেজে মাছের মেলায় গিয়ে পাশের আমবাগানে মাছ ভেজে পিকনিক করেন বহু জন। বাঙালির মাছ-ভাতের সংস্কৃতি যেন মিলেমিশে যায় এখানে। আর বছরের এই একটা দিনকে ঘিরে চলকে ওঠে স্মৃতির ভাঁড়ার।

হুগলি ছাড়াও বর্ধমান, হাওড়া, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা,বাঁকুড়া থেকে মাছের মেলায় আসেন মানুষ। কেউ আসেন বেচতে, কেউ আসেন কিনতে, কেউ আবার স্রেফ দেখতে ভিড় করেন উত্তরায়ণের দিনে বসা এই সুন্দর মাছ মেলায়। ১০০ থেকে শুরু করে ২০০০ টাকা কেজি দরের মাছ বিক্রি হয় এই মেলায়। 

রুই, কাতলা, চিতল, চিংড়ি, বেলে, ভোলা, ভেটকি, শোল, পাবদা, ট্যাংরা ইত্যাদি প্রায় ৫০-৬০ রকমের নানা ধরনের মাছ থাকে এই মেলায়। কোনওটার ওজন মাত্র কয়েক গ্রাম, কোনওটা আবার ৪০-৫০ কেজির সমান। কথায় বলে মাছে-ভাতে বাঙালি। বাঙালিকে চেনার এ এক চিরায়ত সহজ উপায়। ঝালে, ঝোলে, অম্বলে, মাছ বাঙালির চাই-ই চাই। তাই বলে মাছের প্রতি অকৃত্রিম টান যে হেঁশেল থেকে বেরিয়ে সোজা মেলায় খোলা আকাশের নিচে এসে জুটবে তা আশা করি সহজ ছিল না। হুগলি এই মৎস্য মেলা ঘিরেও রয়েছে নানা ইতিহাস। ৫১৮ বছরের পুরনো গল্প। কবে কীভাবে শুরু হয় এই মেলা, কোথা থেকেই বা এল এমন আজব নাম, এইসব প্রশ্নের উত্তর মেলে সেই সব গল্পেই।

অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মস্থান দেবানন্দপুর থেকে খুব কাছেই অবস্থিত কৃষ্ণপুর বা কেষ্টপুর গ্রাম। জিটি রোড ধরে আদি সপ্তগ্রাম থেকে দেবানন্দপুর মোড়ে পৌঁছতে পারলেই কেষ্টপুর যাওয়ার লালমাটির অপ্রশস্ত রাস্তা আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকবে। ব্যান্ডেল স্টেশন থেকে অটো বা টোটোতে করে ১৫ থেকে আধঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাবেন কেষ্টপুর মোড়। সেখান থেকে ৫০০ মিটার হাঁটলেই রঘুনাথ দাস গোস্বামীর সাধনভূমি শ্রীপাট, প্রায় ৫০০ বছর ধরে বৈষ্ণবদের মহান মিলনক্ষেত্র বলে পরিচিত।

৫১৮ বছর আগে কেষ্টপুরের রাজকুমার রঘুনাথ দাস গোস্বামী সন্ন্যাস গ্রহণের পর পয়লা মাঘ বাড়ি ফিরেছিলেন। সঙ্গে আনা কৃষ্ণের মূর্তিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। তার সঙ্গেই জড়িয়ে মেলার ইতিহাস। কেষ্টপুর এলাকাটি ছিল সপ্তগ্রামের রাজা হিরণ্যদাস ও তাঁর ভাই গোবর্ধন মজুমদারের অধীনস্ত এলাকা। গোবর্ধনের ছেলে রঘুনাথ ছোটবেলা থেকে ধর্ম অন্ত প্রাণ ছিল। মাত্র ১৫ বছর বয়সে পায়ে হেঁটে চলে যান ওড়িশার মন্দির শহর পুরীতে। সেখানেই নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর সাক্ষাৎ পান তিনি। এরপর কেষ্টপুরে ফিরে পয়লা মাঘ মহাপ্রভুর দেওয়া কৃষ্ণমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকেই প্রতিবছর একই দিনে বসছে আসছে এই মেলা। প্রায় পাঁচ শতক পুরনো এই অভিনব মেলায় বিভিন্ন মাছের পসরা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন প্রায় একশোর বেশী মৎস্যজীবী।

কিন্তু, বৈষ্ণবদের মেলার সঙ্গে মাছ এল কীভাবে? এই নিয়ে দুটি গল্পও প্রচলিত আছে। তার একটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, পরম বৈষ্ণব রঘুনাথ দাসের খ্যাতি এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল যে তাঁর ভক্তির পরীক্ষা নিতে তৎকালীন শ্রীপাট নামে খ্যাত ওই এলাকায় মাঘ মাসের প্রথম দিন হাজির হয়েছিলেন ৭০০ জন বৈষ্ণব। অসময়ে আবদার করেছিলেন ইলিশ মাছের ঝোল আর আমের টক দিয়ে ভাত খাবেন বলে। কৃষ্ণের পরম ভক্ত রঘুনাথের প্রার্থনায় সরস্বতী নদীর ধারে থাকা রাজবাড়ির পুকুরে ধরা পড়েছিল জোড়া ইলিশ। মাঘের শীতে বাগানের গাছেও মিলেছিল আমের দেখা। রঘুনাথের ভক্তির এত শক্তি হতবাক হয়েছিলেন সবাই। আর সেই সেই ভক্তির জোরেই এই ঘোর কলিতে আজও জোরকদমে চলে আসছে এই মাছের মেলা।

 অন্য মতের অনুসারীরা আবার বলেন অন্য এক গল্প। তাঁদের কথায়, কিশোর বয়সে সন্ন্যাস গ্রহণের পর দীর্ঘদিন বাদে এই পয়লা মাঘই বাড়ি ফিরেছিলেন রঘুনাথ। সেই আনন্দের এলাকার সমস্ত মানুষ বিভিন্ন জিনিসপত্রের সঙ্গে প্রচুর মাছও নিয়ে এসেছিলেন উপহার হিসেবে। সেই স্মৃতিকে মাথায় রেখে প্রতিবছর পয়লা মাঘ সকাল থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত একদিনের এই মেলা হয় ব্যান্ডেল কেষ্টপুরে।

মৎস্যজীবী, মৎস্যপ্রেমী আর মৎস্যলোভীদের এমন জমজমাট জমায়েতের উদাহরণ বাংলা কেন ভূ-ভারতে কোথাও পাওয়া যাবে না। ভিতরে মন্দিরে যখন হরি নাম সংকীর্তনে বিভোর বৈষ্ণব সাধক তখন মন্দিরের পাশেই দর কষাকষিতে ব্যস্ত মৎস্য বিক্রেতা ও ক্রেতাকুল। প্লাস্টিকের চাদর বিছিয়ে বসে পড়েছেন মাছ বিক্রেতারা। পেল্লাই বটিতে অতিকায় মাছের ধড়-মুণ্ড আলাদা হচ্ছে নিমেষে।

কি নেই সেখানে! ২০ থেকে ৩০ কিলোর ভেটকি কিংবা ১৫০ কিলোর শংকর মাছ। অথবা ৩০ কিলোর সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প থেকে শুরু করে নাইলন টিকা, হালুয়া, ভেটকি, ভোলা, মাগুর, চিংড়ি, কালবোস, মৌরলা ও পুঁটির চেনা ভিড়ে বেশ নজর কাড়বে এক ও দু দাঁড়ার সামুদ্রিক কাঁকড়াও। সমুদ্র, নদী ও বাংলার খালবিলের অচেনা অনেক প্রজাতির মাছই আপনাকে চমকে দেবে। রূপচাঁদা থেকে কাঁচকি আর বাঁশপাতা, খলসে, ফাসা, ন্যাদোস আপনাকে মনে করিয়ে দেবে নদীমাতৃক বাংলার সেইসব হারিয়ে যাওয়া মাছেদের কথা। যে সব অনেক মাছ আর দেখাই যায় না আজকাল।

মেলা থেকে মাছ কিনে অনেকেই কৃষ্ণপুরের আমবাগানে বা কলাবাগানে হাজির হন। উদ্দেশ্য জমিয়ে মৎস্য সহযোগে মহাভোজ। প্রথমতঃ মাছ, দ্বিতীয়ত মাছ এবং শেষ পর্যন্ত মাছের এই মেলাকে সার্থক করতে এলাকার বাড়িতে বাড়িতে অতিথিদের ভিড়। মাছ কেনার পাশাপাশি নানা ধরনের মাছ দেখার সুবর্ণ সুযোগ কি আর সবসময় পাওয়া যায়? একদিকে মাছ বিক্রেতার ভীড়, অন্য দিকে মাছ ভেজে বিক্রির ধুম আর তার মাঝেই কলাবাগানে চলছে জোর কদমে পিকনিক। একদম মাছে ভাতে বাঙালির প্রাণের মেলা এই মাছ মেলা। 

ব্যান্ডেল এর শতাব্দী প্রাচীন মাছ মেলা - অভিজিৎ বসু।
পনেরো জানুয়ারী, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...