সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কুর্চির টানে


কুর্চির টানে ------

একসময় এই গ্রামটার নাম এক ডাকে সবাই চিনে গেছিলো। শুধু মাত্র বললেই হতো অনাহার এর গ্রাম। অমনি চোখের সামনে ভেসে উঠতো আমলাশোলের নাম জ্বল জ্বল করে। যে নামটা সবাই কে নাড়িয়ে দিয়েছিলো আমাদের সেই সময়। গ্রামের ছবি দেখে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে মিডিয়ার সামনে আওয়াজ তুলে ছিল। এসব কি হচ্ছে কি। মানুষ কেউ এইভাবে বাঁচে, বাঁচতে পারে। এত খিদে নিয়ে বাঁচা যায়। কিন্তু অনাহার যাদের নিত্য সঙ্গী ছিল তারা কি করে বাঁচবে কে জানে।

 মৃত্যুর অভিশপ্ত সেই দিনগুলোর গুজরান করেই তো তারা বেঁচে ছিল কষ্ট করে। দারিদ্র্যের সাথে সংগ্রাম করে, লড়াই করে বাঁচতে চেয়েছিল জীবনে। কিন্তু পারেনি বাঁচতে ওরা। তাই আমরা জানতে পেরেছিলাম তাদের জীবনের গভীর গোপন কথা। যা ফাঁস হয়ে গেছিলো একদিন সংবাদ মাধ্যমে। আর তাতেই হৈ চৈ পড়ে যায় গোটা রাজ্যজুড়ে।

আজ এতদিন পরে আমলাশোল কেমন আছে সেটাই মনে হলো আমার। নিজের চাকরি জীবনে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতে হয়েছে অনেক। সরকারি চাকরির সুবাদে সেই সব জেলায় ঘোরা কিন্তু খুব যে সুখকর হয়েছে সেটা নয়। এই জেলাতেও কাজ করতে হয়েছে, কিন্তু সেই দিনের কথা ভুলে যাই কি করে।

 সেই সময় এই আমলাশোলের ঘটনায় নড়ে ওঠে গোটা রাজ্য। একি অবস্থা হলো না খেতে পেয়ে গ্রামের মানুষরা অভুক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে থাকতে মারা যাচ্ছে। কেউ দেখার নেই। কেউ খোঁজ নেবার নেই। ২০০৪ সালের ঘটনা এটা। সেই ঘটনার কালো দাগ এখনও লেগে আছ, যার দাগ তোলা কঠিন। 

চাকরি জীবন কাটিয়ে অবসর দিন যাপন চলছে আমার কিছু দিন হল। একেবারেই অবসর যাপন যাকে বলে। সরকারি চাকরির সুবাদে বাম আমলের আমলাশোল এই আমলে কেমন আছে সেটা জানতে মন চায় আমার। একবার ঘুরে দেখে এলে কেমন হয় তাকে। এই ভেবেই খোঁজ খবর নিতে শুরু করলাম আমি। এদিক ওদিক খুঁজে জানতে পারলাম সেই আমলাশোলে রয়েছে সুন্দর হোম-স্টে। আর সেই খবর পেয়ে মনটা কেমন যেন খুশিতে ভরে গেল আমার। আরো ভালো লাগলো যখন সেই হোম স্টের নাম জানলাম কুর্চি। নামটা শুনেই মনটা বড়ো ভালো হয়ে গেলো। সত্যিই বলতে কি আমলাশোলে কুর্চি কে পাবো এতটা আশা করিনি আমি। 

ব্যাগপত্তর নিয়ে গুটি গুটি পায়ে হাজির হবো বলে ঠিক করলাম সেখানেই। সত্যিই বলতে কি কিছু কিছু নাম-এর মধ্যে যেনো একটা অদ্ভুত মায়া লুকিয়ে থাকে। কুর্চিও সেই গোত্রে পরে আমার মনে হয়। কুর্চি ফুল খুব সুন্দর। ঠিক একদম রঙ্গন ফুলের মত।বেশ সুন্দর গন্ধ ওর। পেটের রোগে এই গাছ খুব ভালো কাজ করে বলে জানা যায়। এর আদি বাসস্থান মধ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতীয় উপ মহাদেশ ও চীনের কিছু অংশে। সারা বর্ষা ধরেই কুর্চির ফুল ফোটে। আর সেই গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে যায় গোটা বাগান। সেই প্রিয় কুর্চি নামের ভালোবাসার ঘর পাবো এই অনাহারের গ্রামে আমি সত্যিই এতটা ভাবিনি, আশা করিনি। 

সত্যিই বলতে কি একদম চুপ চাপ কটা দিন কাটাবো এই আশা নিয়ে ব্যাগ গোছালাম আমি। বেরিয়ে পড়লাম একাই। শহুরে জীবনে অভ্যস্ত আমি ফিরতে চাইলাম কুর্চির আশ্রয়ে, শান্তির আশ্রয়ে কিছুদিনের জন্য আশ্রিত হতে। ওর কাছে নিরালা, নির্জনে একদম চুপ করে ওকে উপভোগ করবো বলে বেরিয়ে পড়লাম।
 কিন্তু তখনও আমি ভাবিনি যে কুর্চির শরীরে বিকাশ ছড়িয়ে গেছে বেশি করে। যাকে কাছ থেকে পাবো বলে গেলাম সে অনেক দূরে সরে গেছে আমাদের জীবন থেকে। এটা যখন দেখতে পেলাম ভালো লাগলো না আমার সত্যিই মনে হলো এত বদল না এলেও হতো বোধহয়।

আমি পৌঁছে গেলাম ওর কাছে ব্যাগপত্তর নিয়ে। কিন্তু সেই গ্রামকে কি পেলাম আমি।সত্যিই বলতে কি কিছুটা আশাহত হলাম। অনাহার যাদের নিত্য সঙ্গী ছিল তারা এখন অনেক বদলে গেছে যেনো। গ্রামের মেঠো পথে এখন কলকাতার বাবু বিবিরা আসছেন ঘন ঘন। গাড়ির আওয়াজ, লাল মাটির ধুলোয় চাপা পড়ে গেছে ওদের জীবনের সহজপাঠ। পেটের ক্ষিধে মেটাতে এখন আর ঘরের শিশুরা নাকি মুড়ি খায় না। কুরকুরে খায় গ্রামের দোকান থেকে কিনে। গ্রামের মেঠো দোকানের পাশে এদিক ওদিক কুরকুরের প্যাকেট পড়ে আছে। যা একদম বিসদৃশ লাগে।তবুও বিকাশের ছোঁয়া পেয়ে কেমন যেনো বদলে গেছে এই অনাহারের গ্রাম।

এই ভাবে ওদের কাছ থেকে দেখবো আমি ভাবিনি। এই সব শুনে অবাক হলাম আমি। তাহলে একদিন যারা ক্ষিদের জ্বালা মেটাতে পিঁপড়ের ডিম ভাজা খেত বলে শুনেছি সেটা কি তাহলে অভিনয় ছিল ওদের। না, বললেন গ্রামের শিক্ষক মধু মান্ডি। গ্রামের এই মানুষটি যিনি নিজেই একটা স্কুল চালান অন্যর কাছে সাহায্য নিয়ে। তিনি বলেন কি আর বলবো আপনাকে বলুন। এত আলোচনা ,এত বড় বড় খবর হয়েছে এই গ্রাম নিয়ে। কিন্তু তারপর এত বিকাশ না হলেও হতো বুঝলেন। এই বিকাশের মাধ্যমে আমাদের যে টুকু নিজস্বতা ছিল সেটা হারিয়ে যেতে বসেছে প্রায়।

আমি তো অবাক ওর কথা শুনে বলেন কি মশাই। বিকাশের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে গোটা দেশ। গোটা রাজ্য আর আপনি অবলীলায় মুখে হাসি নিয়ে বলছেন ওটা একটু কম হলেও ক্ষতি ছিল না। বলতে কি এই কথা শুনে আমি নিজেও একটু অবাক হলাম। কী গভীর সত্য কথা এক লহমায় বলে দিলো এই ছোট্ট মানুষটি নিজের মুখে অবলীলায়।

সত্যিই তো দুই পাশে জঙ্গল, মাঝে পিচঢালা মসৃণ কালো চকচকে, ঝক ঝকে রাস্তা হয়েছে। সত্যিই তো বিকাশ ছড়িয়ে পড়েছে এই রাস্তা ধরে দূরে, অনেক দূরে। আর সেই বিকাশের ছোঁয়া পেয়ে কেমন যেনো একটু অবাক হয়েছে আমলাশোল গ্রাম নিজেই।
যাওয়ার পথে গ্রামের রাস্তায় নজরে পড়ল অ্যাসবেসটসের ছাউনি দেওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়। তার পাশে আর একটা পাকা বাড়ি আইসিডিএস সেন্টার। যেখানে ভাত খেয়ে পেট ভরায় গ্রামের শিশুরা।যে ভাতের অভাব ছিল বলেই গ্রামের লোকদের এই ভাবে বেঁচে থাকতে হয়েছে এক সময়।

গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মধু মান্ডি স্মৃতি হাতড়ালেন, এখনকার চেহারা দেখে তখনকার গ্রাম কি আর বুঝতে পারবেন আপনি। তখন এই কাঁকড়াঝোড়ে গাড়ি যাতায়াতের কোনও পাকা রাস্তাও ছিল না। এখন বেলপাহাড়ি হয়ে চমৎকার রাস্তা। সত্যিই তো বলছে সে।অনেক বদলে গেছে এই গ্রাম। হোম স্টে-তে বসে শীতসন্ধ্যার নিঝুম হিমেল অন্ধকারে শুনতে পেলাম দুর রাস্তায় গাড়ির হর্নের আওয়াজ। অন্ধকারের বুক চিরে সাদা আলোর রোশনাই ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে।কারা যেনো শহর থেকে এলো এই কুর্চিতে। সত্যিই তো বিকাশ ছড়িয়ে গেছে গোটা গ্রামেই। চারদিকে ঝিঁঝি পোকার কলতান, তার মাঝে সন্ধ্যায় এসে পৌঁছল নতুন অতিথি। গমগম করে উঠলো এই হোম স্টে। সুন্দরীদের কলতানে মুখরিত হলো চারিদিক। সত্যিই তো এদের দেখে কি মনে হয় এরা উপভোগ করতে এসেছে ছোট্ট গ্রামকে। তাহলে এত মেকি রং বদলে কেনো এসেছে এরা, জানি না আমি।

কিছুটা বিরক্ত হলাম আমি। এইভাবে জানলে সত্যিই আসতাম না আমি। নতুন অতিথিদের কথা কানে এলো, একি এখানে ওয়াই ফাই নেই চলবে কি করে। তাহলে কি অদ্ভূত জায়গা রে বাবা। তার মানে বিকাশ সঠিক ভাবে ছড়িয়ে না পড়লে আমরা সবাই বাঁচতে পারবো না। এই নিঝুম রাতে মনে হলো আমার। সত্যিই কথা বলেছেন ঐ মাস্টার মশাই এত বিকাশ না হলেও হতো হয়তো। তাহলে হয়তো রাতে ঘরে শুয়ে কুর্চির গন্ধ পেতাম আমিও। যে মাস্টারমশাই একদিন এই জঙ্গল মহলের মানুষদের নিয়ে অন্যভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখতেন। বিকাশ এসে তার স্বপ্নকে সফল হতে দেয়নি। তাই তিনিও আজ কোনো ভাবে গা এলিয়ে বেঁচে থাকতে চান এই বদলে যাওয়া নিজের আস্তানায়।

অনেক কিছুই এখনও বাকি রয়েছে কাজের এই গ্রামে। আমলাশোলের প্রাথমিক শিক্ষক মধু জানালেন, অষ্টম শ্রেণি অবধি পড়ার ব্যবস্থাটুকুই রয়েছে। তারপর ওদলচুয়া বা বাঁশপাহাড়ির স্কুল থেকে মাধ্যমিক। অতঃপর শিলদায় কলেজ। দূরের কলেজে যেতে হবে কিন্তু তার আগের পড়া তো করতে হবে।সেই স্কুলটাই তো নেই কাছে। তাহলে কলেজে পড়তে যাবে কি করে।
শিলদা নামটা আজও আমাদের মনে আছে। মাওবাদী বিশৃঙ্খলার সময় সেখানে থানা থেকে বন্দুক লুঠ হয়ে ছিল। সেই বিখ্যাত শিলদায় কলেজ গড়ে উঠেছে।এটাও তো বড়ো বিকাশ একটা। জঙ্গল এখন শুধু একটি বিষয়ের নীরব প্রস্তুতিতে।শুধু ইকো টুরিজ়ম! বিভিন্ন জায়গায় তৈরি হচ্ছে আরও চার-পাঁচটি রিসর্ট। কাঠ চেরাই ও ড্রিলিং মেশিনের আর্তনাদ,ছেনি হাতুড়ির ঠকাঠক শব্দ। এই নিয়েই এখন বেঁচে আছে আমলাশোল। ঠাণ্ডার মরশুমে পর্যটকের ঢল নেমেছে এই জায়গায়।

অনাহারের দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে আমলাশোল এখন সেই ভালর জন্য দিন গোনে। যে ভালোর জন্য সেখানে আর কুর্চি তার নিজের মতো করে হাসে না। হাসি পেলেও থমকে যায় সে। জঙ্গলের নিঃস্তব্ধ রূপ দেখে মনে হয় সে নিজেও বোধ হয় এই বিকাশের চাপে, কিছুটা হলেও নুজ্ব্য হয়ে গেছে। বিকাশের দাপটে খিদে পেটে নিয়ে স্কুলে আসা পড়ুয়ারা আকাশ পানে তাকিয়ে স্বপ্ন দেখে, তারা ভাবে বড়ো হয়ে এই সব রিসর্টে নিশ্চয়ই তারা একদিন কাজ পাবে। কিছু রোজগার করবে তারা। মোবাইলের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে তারাও। 

আর আমলাশোলে ভোর হয়, রাত হয় নির্দিষ্ট নিয়মে,বিকাশের ঠক ঠক শব্দে। আমি দ্রুত ফিরে আসি কুর্চিকে ছেড়ে। জঙ্গলের নিঃস্তব্ধ রূপকে ছেড়ে ফিরে আসি নিজের ঘরে। বিকাশের আরও কাছে একদম গহ্বরে। দেখি লাল রাস্তার পাশে জঙ্গলের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে বৃদ্ধ মধু মান্ডি। যে বিড় বিড় করে বলে চলেছে এত বিকাশ না হলেও হতো বোধহয়। বেশ তো ছিল আমার এই ভালোবাসার গ্রাম আমলাশোল এক পেট ক্ষিদে নিয়ে।

আমরা তো বদল চেয়ে ছিলাম এক দিন, কিন্তু সেই বদল হয় নি, করতে পারি নি আমরা। আজ কেনো যে বিকাশের দোহাই দিয়ে গ্রামটা এত দ্রুত দলে গেলো কে জানে। স্থবির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে মধু মাস্টার দূরে জঙ্গলের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে। কিছুটা আত্মগ্লানি আর এক রাশ অভিমান নিয়ে। কুর্চি দুর থেকে মাথা নিচু করে তা দেখে আর মনে মনে কষ্ট পায়।


কুর্চির টানে - অভিজিৎ বসু।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
ডিসেম্বর, দু হাজার তেইশ।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...