সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ফিরে এলো হুব্বা

আজ সাদা জীবনের কালো কথায় একদম অন্ধকার জগতের অন্যতম এক নক্ষত্রের কালো কথা। যে নক্ষত্র আমাদের বাড়ির খুব কাছেই থাকতো। যার কথা শুনলে, যার নাম শুনলে, রক্ত হিম শীতল হয়ে যেত আমাদের সবার। তার কথাই আজ সাদা জীবনের কালো কথায়।

সেই ছোটো বেলায় আমরা মার মুখে শুনতাম রাতে বর্গী হানার কথা। সেই বর্গীকে কেউ চোখে দেখিনি কোনো দিন আমরা। কিন্তু বর্গীর নাম শুনেই আমরা ভয়ে কেমন জড়োসড় হয় যেতাম, কেঁপে উঠতাম রাতের অন্ধকারে। ঠিক সেই মতই হুগলির এক সময়ের কুখ্যাত ডন হুব্বার নাম শুনলেই সবাই ভয় পেয়ে দরজা বন্ধ করতাম আমরা। তার লোক, তার বাহিনী এলাকায় আসছে মানেই সব শেষ। এটাই মিথ হয়ে গেছিলো এক সময়।

আমাদের রিষড়ার বাড়ির খুব কাছেই থাকতো সে। রেললাইন পেরিয়ে কোন্নগরের ধর্মডাঙায় তার বাস ছিল। বলতে গেলে একদম প্রতিবেশী ছিল আমাদের সেই হুগলীর কুখ্যাত ডন হুব্বা শ্যামল। সেই হুব্বার নামেই নাকি আসছে সিনেমা। সেই সিনেমা তৈরি করেছেন রাজ্যর এক প্রভাবশালী মন্ত্রী । সত্যিই এর থেকে ভালো খবর আর কি হতে পারে বলুন তো।

 যার নামে এক সময় সব বাঘে কুমিরে এক ঘাটে জল খেত। সেই গ্যাং স্টার এর জীবন নিয়ে সিনেমা আসছে রুপোলি পর্দায়। যে কি না আবার আমার এলাকার দাপুটে মস্তান এক সময়ের। সত্যিই বলতে কি জানেন আমার আজ বেশ ভালোই লাগছে মনে মনে। এই যে তাঁকে নিয়ে বই এর জন্য কাগজে, টিভি তে লেখা লেখি ছবি হচ্ছে সেটা আবার মনে করিয়ে দেয় পুরানো সেই সব দিনের কথা। সে সব কথা আমি পরে বলছি।

 আচ্ছা আজ যদি সে বেঁচে থাকত কেমন লাগতো ওর বলুন তো। ওকে নিয়ে সিনেমা হচ্ছে। সিনেমা হলে গিয়ে নিজের জীবনের কথা দেখে, ওর কেমন লাগতো কে জানে। হয়তো কালো চশমা পরে দলবল নিয়ে হাজির হতো ওরা সবাই সিনেমা হলে। নিজের জীবনের কথা দেখবে বলে। ছবির রুপোলি পর্দায় নিজেকে দেখে সে হয়তো নিজেই সিটি মারত আর বলতো, আবে শালা বেড়ে করেছে মাইরি ছবিটা কি বল তোরা সব।


 কাকে নিয়ে বই দেখতে হবে তো রে। দেখেছিস নেপু কেমন লাগছে আমাকে সিনেমায়। একদম হিরো হিরো।আরে এই যে বাবা লেবু, চিকুয়া, সব অনেকক্ষন ধরে তোরা সব চুপ মেরে আছিস যে বড়ো । কোনো পবলেম নেই তো রে। কেনো তোদের ভালো লাগে নি এই সিনেমাটা। আমায় নিয়ে এই যে ছবি হলো সেটা পছন্দ হয় নি তোদের। বল শালা, কেমন লাগছে তোদের দাদাকে দেখে সিনেমায় পর্দায়। বলেই মোটা গোঁফের ফাঁকে হালকা হাসি ফুটে ওঠে এলাকার ডন তথা হুব্বা ওরফে শ্যামলের মুখে। 

আবার বলে সে, এই সব ঠিক ঠাক আছে তো কেউ খবর পায়নি তো রে। আমরা সব এই জায়গায় ফুর্তি করতে এসেছি কেউ জানতে পারে নি তো রে। দেখিস টিকটিকি গুলো রাত দিন ফলো করছে মাইরি আমায়, পেলেই ভরে দেবে জেলে। খুব সাবধান সব। না গুরু, সব ঠিক আছে কোনো ভাবেই কেউ বুঝতে পারেনি কেউ, যে তুমি এখানে এসেছো সিনেমা দেখতে। 

আরে শালা তোদের মধ্যে কত হারাম খোর তৈরি হয়ে যাচ্ছে, চোখের সামনে ধীরে ধীরে। সব শালা বেই- মানের দল তোরা বুঝলি। হাতে ধরে লাইনে আনলাম সব কটাকে।কাজ শেখালাম আমি হাতে ধরে।আর আজ সব শালা গাদ্দারি করে অন্য দলে নাম লেখাচ্ছিস তোরা।। দাদার রুদ্র মূর্তি দেখে নেপূ আর লেবু হাত কচলায়। বলে না গুরুদেব, আমরা তোমার লোক। মা কি কসম গুরু। এই ছাড় ছাড় পা ছাড়। বলে সিনেমার পর্দায় চোখ দেয় হুব্বা আবার।

দেখতে থাকে নিজের জীবনের ফেলে আসা অতীত দিনের কথা। বাহ সুন্দর দেখাচ্ছে তো বেশ বইটায়।মন্ত্রী মশাই ভাগ্যিস বইটা করেছিলেন তাকে নিয়ে। ভালো গল্প দেখাচ্ছে সিনেমায়।সেই যে দিনটায় সে ভোটে দাঁড়াবে বলে ঠিক করলো। অনেক খুন, জখম হলো এইবার একটু ভালো হতে হবে তাকে। এই ভাবনা মাথায় এলো তার। ভালো কাজ করতে হবে। গরীব মানুষের জন্য তাকে কাজ করতে হবে। তাই হটাৎ ভোটে দাঁড়াবার ভাবনা তার। 

আর যেমন ভাবা তেমন কাজ নির্দল প্রার্থী হয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে পড়লো সে। কোণ্নগর পুরসভা থেকে মনোনয়ন পেশ করতে আসা হুবার। শ্রীরামপুর এসডিও অফিসে দল বল নিয়ে পৌঁছে যাওয়া। সেই দিনটা বেশ ভালই লাগছিল তার নিজের। কেমন একটা যেনো অন্য নেতা মন্ত্রীদের সেবা করা শ্যামল যেনো বদলে গেছে একদম নিজে নিজেই।

তার চারিদিকে শয়ে শয়ে মোটর সাইকেলের ধুলো উড়িয়ে পুলিশি পাহারায় শ্রীরামপুরের কোর্টের মাঠে এসডিও অফিসে আসা। চারিদিকে সব রিপোর্টার এর দলবল তাকে ঘিরে রেখেছে। তার ছবি উঠছে পট পট করে। সাদা ফিনফিনে পাতলা আদ্দির পাঞ্জাবি পরে আর গলায় মোটা সোনার চেন পড়ে হুবা‌ বসে আছে সরকারি অফিসার এর সামনে গা এলিয়ে। পা তুলে নিজের স্টাইলে। বেশ নেতা নেতা ভাব লাগছিল সেই সময় তার।

আচ্ছা ওই যে সব নেতা মন্ত্রী গুলো এত সব বুকনি মারে পাবলিকের কাছে। সত্যিই বলতে কি এরা সব কটাই হারামী মাল। না হলে কি আর এই ভাবে জীবন কাটাতে পারে এরা। আমরা না হয় খুন খারাপি করে দিন কাটাই । কিন্তু ওরা তো এসব কিছু না করেও বড়ো অপরাধী। কই সে সব তো সিনেমায় নেই। এই সব ওঠ অনেক দেখলাম চল চল। বলে হল থেকে বেরিয়ে পড়ে সে দল বল নিয়ে ধুলো উড়িয়ে।

আমার মনে পড়ে যায় সেই দিনটার কথা। ধুলোর ঝড় উড়িয়ে নিজের দল বল নিয়ে ঠিক দুপুর একটায় মনোনয়ন জমা দিতে হাজির হুব্বা। শ্রীরামপুরের এসডিও অফিসে। কলো রে ব্যানের চশমা পরে। সাদা আদ্দির পাঞ্জাবি পরে। গলায় মোটা মোটা সোনার চেন পরা।

অফিসের চাপ হুব্বার ইন্টারভিউ নিতে হবে আমায়। অগত্যা ওর শরণাপন্ন হলাম। বললাম তোমার ইন্টার ভিউ লাগবে। ইশারায় ও একজনকে বললো, এই দাদা কি বলছে দেখ। সে বলল দাদা এখানে কিছু বলবে না আপনি এলাকায় চলুন বলবে দাদা।

এসডিও অফিসে সই সাবুদের ঝামেলা মিটিয়ে সোজা নিজের ডেরায় গেলো সে। পিছু পিছু গেলাম আমিও আমার ক্যামেরাম্যান জ্যোতির্ময় কে নিয়ে। কোন্নগর ধর্মডাঙার মাঠে বসে নিলাম ইন্টারভিউ। সেই কুখ্যাত, বিখ্যাত, ডন হুব্বার প্রথম সাক্ষ্যাৎকার নিলাম আমি। 

একদম নেতা সুলভ কথায়  মেপে মেপে বললো সে। জিতলে সবাই সব গরীবদের পাশে পাবেন আমায়। একবার সুযোগ পাই আমি। দেখবেন সব বদলে দেবো আমি এক ঝটকায়। কেউ আমায় আটকাতে পারবে না দেখবেন। সত্যিই তো ঝটকা মেরেই তো সে সব বদলে দিত সে। দিন কে রাত করতো।আর রাত কে দিন করতো সে এক লহমায়।তার এক ইশারায় গোটা এলাকায় কার্ফু জারি হতো সেই সময়।

আমার ইন্টারভিউ শেষ ধর্ম ডাঙার পূজো মাঠে। দাদার নামে জয় ধ্বনি চলছে মাঠের মাঝে। সব ভীড় জমে আছে চারিদিকে বাইক বাহিনীর দল ঘিরে রেখেছে তাদের প্রিয় দাদাকে। আমি আমার ক্যামেরাম্যান সব জিনিস পত্র গুছিয়ে গাড়িতে স্টার্ট দেবো। সেই সময় হুব্বার আবদার, দাদা মিষ্টি মুখ করতে হবে যে। না হলে ছাড়বো না আমি। বেশ ভালো লাগলো আমার এটা শুনে। হাসতে হাসতে মানুষ মারা লোকটাও কেমন অতিথি বৎসল হয়ে বলে ফেললো কথাটা। ওর কথা রাখতে দাঁড়িয়ে পড়লাম আমরা। দেখানো হলো ইন্টারভিউ ইটিভি তে। সঙ্গে সঙ্গে অজানা নম্বর থেকে ফোন এলো, দাদা ধন্যবাদ, ভালো লাগলো দেখে। 

সেই লোকটাকে নিয়ে সিনেমা হচ্ছে। বই আসছে এটা আমার কাছে অনেক বেশি কিছু। তাই আজ আমার এই কালো অন্ধকার কুঠুরিতে রাত কাটানো হুগলির ত্রাস সৃষ্টিকারি হুব্বার কথা বড়ো বেশি করে মনে পড়ছে আজ। আমি ওকে বলে ছিলাম ফোনেই, আমার মা একা থাকে রিষড়ায়। দেখো যেনো কেউ ডিস্টার্ব না করে। ওদিক থেকে উত্তর এসেছিল দাদা, তুমি কিছু ভেবো না। মাসিমার কোনো অসুবিধা হবে না। হয়ও নি কোনো দিন অসুবিধা। এটাই ছিল ওর মুখের কথা।

যে মুখের কথায় গোটা সাম্রাজ্য চলত ওর। সেই কথার নড় চড় করার সাহস হয়নি কারুর কোনো দিনই। আজ সে নেই। এলাকায় না থেকেও সে যেনো আবার ফের জেগে উঠলো। এই সিনেমার পর্দায় এতদিন পর ফিরে এসে সে যেনো আবার জেগে উঠলো, ফিরে এলো পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায় আচমকাই।

আবার তাকে নিয়ে আড়ালে আবডালে ফিস ফিস আওয়াজ শোনা যাবে এলাকায় এলাকায়। যেনো ঠিক সন্ধ্যায় বিকেলের শো দেখে সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে সে তার দল বল নিয়ে আগের মতই। আর তার এলাকায় আসার খবর পেয়ে দ্রুত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দোকানপাট, বন্ধ হচ্ছে বাড়ির সদর দরজার পাল্লা ভর সন্ধ্যায় আগের মতো।

 কারণ একটাই আবার এত দিন পর বাজারে ফিরে এসেছে হুগলির মুকুটহীন সম্রাট ত্রাস হুব্বা। আগের মতই ঘুরে বেড়াচ্ছে সে এদিক ওদিক বুক ফুলিয়ে। যার চারপাশে আগের মতো তাদের দাদাকে ঘিরে আছে নেপু,চিকুয়া,রমেশ আর,লেবুরা। যারা খুব খুশি তাদের হারিয়ে যাওয়া দাদা, আবার ভোটের মুখে নিজের ঘরে ফিরে আসায়। সবাই হাত জোড় করে বলছে, গুরু সালাম তোমায়।

ফিরে এলো হুব্বা - অভিজিৎ বসু।
উনিশ জানুয়ারী দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য গুগল।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...