সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বসিরহাটের বিমল বসু

বিমল বসু। বসিরহাট। উত্তর ২৪ পরগনা। জেলা সাংবাদিক ২৪ ঘন্টা। আমি কদিন ধরেই ভাবছিলাম বিমলের কথা কিছু লিখবো। এই সাদা জীবনের কালো কথায়। যে কথা বলতেই এই কলম ধরা। সেই সাইকেল নিয়ে নদী পার করে খবর করতে যাওয়া বিমল। সেই বসিরহাট লোকাল ধরে বহুক্ষণ ট্রেন পথ পেরিয়ে কলকাতায় পোদ্দার কোর্টের অফিসে টাটকা মাখা সন্দেশ নিয়ে এসে হাসিমুখে শুভ্রনীল এর টেবিল এর সামনে দাঁড়ানো বিমল। আর আমায় বলা দাদা একটু টেস্ট করে দেখেন দাদা একদম টাটকা জিনিস মুখে লেগে থাকবে দাদা। 


এমন অকৃত্রিম বিমলের কথা আজ ভোর বেলায় হঠাৎ করেই মনে পড়ে গেলো আমার। যে বিমল প্রতিদিন নিয়ম করে আমি ২৪ ঘন্টা চ্যানেলে কাজ ছেড়ে দিলেও সে সকাল বেলায় প্রতিদিন গুড মর্নিং দিতে ভোলে না কোনোদিনই। সেই বিমলের কথা লিখবো বলেই মনটা আঁকুপাঁকু করছিলো আমার কদিন ধরেই। কিন্তু বিমলের কোনও ছবি কিছুই পাচ্ছিলাম না আমি। যাই হোক সেই ছবি জোগাড় হতেই মনে হলো বিমল বসু বসিরহাট তার কথা একটু লেখা যায়।

 সেই সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়ানো খবর করা বিমল। সেই আদ্যন্ত সৎ একজন মানুষ বিমল তার কথা লেখা যায়। সত্যিই এক একজন মানুষ সারাটা জীবন শুধুই কাজ করে যায় তার অনুজ্জ্বল উপস্থিতিতে আমাদের কাছে। হয়তো সোশ্যাল মিডিয়াতে তেমন উপস্থিতি তাদের নেই একদম। তাদের খোঁজ পাওয়া যায়না কিছুতেই। তবু তাদের অকৃত্রিম ভালবাসা, সহজ সরল মন, সুন্দর হাসি, আর খবরের প্রতি ভালোবাসা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে এই মানুষটাও যে আমাদের সবার সাথে কাজ করত একসময়। 

হ্যাঁ, হয়তো দিন বদলের তালে তাল রেখে সে সাইকেল বদলে দামী লাখ টাকার মোটর সাইকেল করে এলাকায় ঘুরতে পারেনি কিন্তু এখনও সে খবরকে ভালোবেসেই খবরের জন্য ঘুরে বেড়ায় গ্রামে গ্রামে নদী পেরিয়ে ভুটভুটি চেপে। এত আর সহজ ভাবে পিচ রাস্তা ধরে, মোরাম রাস্তা ধরে ঘুরে সাংবাদিকতা করা নয়। প্রত্যন্ত বসিরহাট অঞ্চলে সাংবাদিকতা করা বেশ কঠিন কাজ। আর সেই কাজটাই বিমল বসু হাসি মুখে করে চলেছে দীর্ঘ বছর ধরে, আজও ওর নিজের এলাকায়। 

সেই বিমল বসু। সেই ইটিভির তপন দা। এরা যে কত প্রতিকূলতার মধ্যে কাজ করে ক্যাসেট নিয়ে কলকাতায় এসে খবর ধরিয়ে হাসিমুখে সারাদিন পর ঘরে ফিরেছে তার ঠিক নেই কিন্তু। এটাই তো আসল ভালোবাসা। খবরের প্রতি ভালোবাসা। খবরের প্রতি নেশায় মেতে ওঠা। আর সেই নেশায় জীবন ভোর দৌড়ে বেড়ানো। ছুটে চলা। এটা বেশ ভালই। সেই একটা জামা বা গেঞ্জি পরে, কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বিমলের সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়া খবরের সন্ধানে এদিকে ওদিকে। এখন বয়স হয়েছে তাই হয়তো সাইকেল টেনে ঘুরতে অসুবিধা হয় ওর।

 মাঝে মাঝেই ওর সাথে কথা হয় আমার দাদা তুমি আসো একদিন আমাদের এদিকে ঘুরে যাও। তপন দাও বলে সেই কথা। আসলে এইসব দূরের বন্ধু হয়েও কেমন করে যে এরা সব আপনজন হয়ে গেছে তার ঠিক নেই। এই শীত পড়লেই বিমলের সেই বিখ্যাত বসিরহাট এর মাখা সন্দেশ নিয়ে হাসি মুখে অফিস চলে আসা। দাদা এটা একটু দেখবেন আপনি একদম সকালেই তৈরি করে এনেছি দাদা আমি। এই কঠিন হিসেবে ভরা জীবন এর মাঝে এমন টাটকা মাখা সন্দেশ এর ভালোবাসা আর কি পাওয়া যায়।

এমন নিখাদ একজন জেলা রিপোর্টারের এমন ভালোবাসা আর কি পাওয়া যায়। বিমলরা বোধহয় এমন হয়। এমন করেই দৌড়ে যায় খবরের বুম হাতে নিয়ে। হয়তো ঝাঁ চকচকে জীবন পায়না ওরা কিন্তু জীবনকে চালিয়ে নেয়, জীবন চলে যায় ওদের নদীর তীরে ঘুরে বেড়িয়ে। বাদাবনের জঙ্গলে বাঘ এর খবর করে। কোনো সময় জঙ্গি তৎপরতার খবর করে। কোনো সময় শেখ শাজাহানের খবর করে। নিজের খবরকে সঠিক ভাবে না বেচে বিমল বেশ দিব্যি বেঁচে রইলো হাসিমুখেই। 

সেই ওর ফোনে কথা বলা দাদা আমি বিমল। একটু ওই ছবিটা দিতে দেরি হলো আমি পাঠিয়েছি দাদা একটু দেখো তুমি। কতদিন যে ওর ফোন পাওয়া হয়নি আমার। কতদিন যে সেই অফিসে বসে জেলা রিপোর্টারদের পাঠানো খবর নিয়ে আলোচনা করা হয়নি আমার। ওদের সুখে দুঃখে শরিক হয়ে গল্প করা হয়নি আমার। বেশ ভালই ছিল সেই কর্মময় ব্যস্ততার জীবনটা। যে জীবনে বিমল, দীপংকর, অনন্ত, সৌমেন, নান্টু এমন কতজন যে জড়িয়ে ছিল উত্তর ২৪ পরগনায়। আজ ওদের কথা আর ফেলে আসা দিনের কথা বড্ড মনে পড়ে যায় আমার। আর শীতের সকালে মনে পড়ে যায় সেই টাটকা মাখা সন্দেশের মিষ্টি স্বাদ। বিমল তুমি ভালো থেকো। এমন করেই খবরের ময়দানে টিকে থেকো তুমি। 

বসিরহাটের বিমল বসু - অভিজিৎ বসু।
তেসরা ডিসেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য নামটা লিখলাম না আমি।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...