তরুণ চক্রবর্তী মানেই বাংলাদেশ। তরুণ চক্রবর্তী মানেই ইলিশ মাছ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে মুখে একগাল হাসি নিয়ে ছবি তোলা। তরুণ চক্রবর্তী মানেই ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এর এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার। তরুণ চক্রবর্তী মানেই জি ২৪ ঘণ্টার বুম হাতে নিয়ে হাসি মুখে পড়শী রাজ্যে দাপিয়ে ঘুরে বেড়ানো কাজ করা আর খবর করা। তরুণ চক্রবর্তী মানেই সেই রামোজি রাওয়ের সেই ইটিভির লাল বুম হাতে নিয়ে হাসি মুখে নির্মোহভাবে কাজ করে যাওয়া মন দিয়ে।
তরুণ চক্রবর্তী মানেই সেই পুরোনো ইটিভির হায়দরাবাদ এর আমার বাংলা খবরের শুরুর আগে দ্রুত হেডলাইন এ চোখ বুলিয়ে দিয়ে সিগারেট ধরিয়ে স্মোকিং জোনে দাঁড়িয়ে সুখ টান দেওয়া আর দাড়িতে হাত বোলানো। আর সিদ্ধার্থ সরকারের ফোন এলেই বলে দেওয়া দাদা আপনি চিন্তা করবেন না একদম, সব ঠিক আছে কিন্তু আজকে কোনো চাপ নেই দাদা। তরুণ চক্রবর্তী মানেই সেই বিকেল হলেই পোদ্দার কোর্টের ২৪ ঘণ্টার অফিসে এই টেবিল থেকে ওই টেবিলে হাসিমুখে ঘুরে বেড়ানো সেই কাঁধে একটা সাইড ব্যাগ নিয়ে ধীর পায়ে।
তরুণ চক্রবর্তী মানেই সেই সন্ধ্যার আমার বাংলায় হাসি মুখে হাতে ইলিশ মাছ ধরে নৌকার ওপর দাঁড়িয়ে পিটুসি দেওয়া। আর তরুণ চক্রবর্তী মানেই সেই সন্ধ্যার খবরে সেটা দেখে কেমন দুর থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপটি করে বসে থাকা। কিছুটা ভয়, কিছুটা জড়তা, কিছুটা সিনিয়র বাবুদের ঘনিষ্ঠ বলে কাছে ঘেঁষতে না পারা। কিন্তু সব কিছু ছেড়ে ত্রিপুরার মাটি ছেড়ে, বাংলাদেশের ইলিশ ছেড়ে, কলকাতার রাজপথে হাঁটতে দেখে কেমন যেনো মনে মনে ভয়টা কেটে গেলো একদিন আমার।
সেই পোদ্দার কোর্টে বিকেল বেলায় এই টেবিল ওই টেবিল ঘুরতে ঘুরতে অ্যাসাইনমেন্টের টেবিল এর সামনে হাজির হয়ে যাওয়া। কাঁধে হাত দিয়ে ফ্রেঞ্চ কাট দাড়ি নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে বলা, আরে অভিজিৎ যে কি খবর বোলো কেমন আছো তুমি। ভয় কাটিয়ে আমিও ধীরে ধীরে মিশে গেলাম কি করে কে জানে। একদম বিন্দাস হাসি মুখে জীবন কাটিয়ে দেওয়া একটা মানুষ। টিভির পর্দা থেকে শুরু করে অক্ষরের জাদুতে আটকে যাওয়া এক বিখ্যাত সাংবাদিক। হ্যাঁ, তবে একালের মাতব্বর সংবাদিকদের মত হাতে চাবুক নিয়ে ঘুরতে দেখিনি আমি কোনোদিন তাঁকে। আর এটাই বোধহয় ওর সবথেকে বড়ো প্লাস পয়েন্ট।
সবার সাথে সুখে দুঃখে মিশে যাওয়া অনাবিল একটা হাসি মুখে ঘরের লোকের মতো। যেটা আজকাল আর দেখাই মেলে না যে একদম। সব যেনো বর্ম পরা আর হেলমেট পড়া মানুষজন। যাঁদের কাছে যেতে ভয় করে খুব। কামড়ে দেবার ভয়, গাল শোনার ভয়, চাকরি থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেবার ভয়। তেমন কিছু করতে দেখিনি আমি এই তরুণ চক্রবর্তীকে। আর তাই আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় সেই বিখ্যাত রানাঘাটের তরুণ চক্রবর্তীর কথা।
সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক তরুণ চক্রবর্তী কথা। সেই ২৪ ঘন্টার তরুণ চক্রবর্তীর কথা। সেই ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এর ঘনিষ্ট সাংবাদিক তরুণ চক্রবর্তীর কথা, এই সাদা জীবনের কালো কথায়। আমার এই আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায়। যাঁর বিষয়ে কিছুই জানিনা আমি। কি লিখবো কতটা লিখবো সেটাও জানিনা আমি। তবু মনে হলো এই সাংবাদিক এর জীবন নিয়ে লিখলে কেমন হয়। সেই যাঁর ইটিভির আমলে ত্রিপুরা রাজ্যে একমাত্র বাংলা চ্যানেলের ভি স্যাট সেন্টার ছিল। যার সেন্টার উঠে গিয়ে খুব সম্ভবত চলে যায় পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে রিপোর্টার সুজিত ভৌমিক এর কাছে। হয়তো খবর এর দরকারে অফিস এর দরকারে চলে যায় সেই সেন্টার।
যাই হোক ইটিভির আমলে সেই শিলিগুড়ির নবেন্দু গুহ এর পরে গৌতম সরকার এর সাথে এক ভাবেই উচ্চারিত হতো তরুণ চক্রবর্তী ইটিভি নিউজ, ত্রিপুরা তাঁর নাম।আর তাই আমরাও কেমন সমীহ করতাম পাশের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ট রিপোর্টার বলে তরুণ দাকে। সেই তরুণ দা বর্তমানে আজকাল পত্রিকায় কর্মরত। মাঝে মাঝে আমার সাথে খুব কম ফোনে কথা হয়। প্রেস ক্লাবে গেলে দেখা হয় উৎসব অনুষ্ঠানে বা ভোটের সময়। অভিজিৎ রাতে কথা হবে বলে আমায়। হয়তো ভাবে অনেকেই কাজের জন্য আমি ফোন করলাম তাঁকে। তাই হয়তো পরে কথার ইঙ্গিত দিয়ে আপাতত বিরতি। এমন কত যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করলাম এই এলোমেলো এলেবেলে বিন্দাস জীবনে।
আসলে জীবনের ফেলে আসা দিন, জীবনের ফেলে আসা দিনের মানুষের আনাগোনা। জীবনের এই আঁকাবাঁকা পথে বেশ ভালই লাগে এই শেষ বয়সে এসে। মনে হয় সত্যিই তো কতগুলো বছর কেটে গেলো আমাদের এইভাবেই চেনা মানুষের কাছে একসাথে ঘুরে ফিরে হেসে খেলে বেড়িয়ে। আর তাই তাঁদের মনে করে দু চার লাইন লিখে রাখা।
ভালো থাকবেন আপনি দাদা। বাংলা, ত্রিপুরা, বাংলাদেশ, দিল্লিতে কাজ করা এই দাপুটে সাংবাদিককে নিয়ে কিছু লিখতে পেরে বেশ ভালোই লাগলো আমার এই আমার ব্লগে। হয়তো খুব বড় একজন ওপরের দিকে দ্রুত উঠে যাওয়া সিঁড়ি বেয়ে সবাইকে টপকে চলে যেতে পারে নি তরুণ দা। কিন্তু তাই বলে সাধারণের কাছে নাগালের হাতের মধ্যে থেকে বেশ ভালই এই দীর্ঘ সাংবাদিক জীবন কাটিয়ে দেওয়া গেলো। যার মধ্যে একটা আলাদা অনুভূতি আনন্দ আর সুখ আছে। যেটা বোধহয় রানাঘাটের তরুণ চক্রবর্তীর দরকার নেই।
ভালো থাকবেন আপনি। এই ভাবেই হাসি মুখে থাকুন আপনি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে। আপনি আর তুমির ঘেরাটোপে বন্দী না হয়ে একদম বন্ধুর মতো। সত্যিই কারের বন্ধুর মতো। যেটা আজকে আর পাওয়া যায়না একদম। শুভ জন্মদিন দাদা।
ইটিভির তরুণ চক্রবর্তী - অভিজিৎ বসু।
উনিশ জানুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন