সাদা মনের কালো কথা বোধহয় রাতের অন্ধকারে আচমকা মনের স্ক্রীনের সামনে ভেসে ওঠে। ঠিক যে ভাবে বহুদিনের মরা লাশ আচমকা পচা ডোবায় ভেসে ওঠে তেমনি করেই। চারিদিকে কেমন গা গুলিয়ে ওঠা নানা কথা রটে যায়। সেই ভাবেই তো আমার এই পৌষ মাসে রাতে ঘুম আসে না।
মনে হয় আমার নিজের কাছেই হেরে গেছি আমি। কিন্তু কেনো হারলাম, তার অনুসন্ধান করেও কিছুই পেলাম না আমি। শুধু এটা জানি যে, আমি ধীরে ধীরে আমার স্বাভাবিক জীবনের স্রোত থেকে দূরে সরে যাচ্ছি ধীরে ধীরে। শুধু মাত্র আমি একটু শিরদাঁড়া ঝুঁকিয়ে যে কোনো খবরের সাম্রাজ্যর যে কোনো দাদা আর দিদির দলে ঢুকে পড়ে গেলেই, নাম লিখিয়ে দিলেই তাহলেই তো কেল্লা ফতে হয়ে যেত আমার। অন্যদের মতো বিন্দাস মাপা হিসাব করা জীবন কাটাতে পারতাম আমিও। একেবারে ঘণ্টা মাপা ডিউটি। মাসের শেষ দিনে টুং করে এস এম এস ব্যাংকে টাকা আসার। এমন জীবন কাটাতে পারলে কি ভালই না হতো।
কিন্তু মুখে যা সহজেই বলা যায় তাকি আর করা যায় খুব সহজেই। না, তা করা যায় না। সবাই যা পারে আমি তো সেটা করতে পারলেই বেঁচে যেতাম। আর সবার আগে বেঁচে যেত আমার পরিবার। আমার সন্তান নিশ্চিন্ত মনে পড়াশোনা করতে পারতো। কি দুর্নিবার কষ্ট সহ্য করে ওরা বেঁচে আছে।
আসলে কি জানেন আমরা যারা জীবনে আপোস করে বাঁচতে শিখি নি কোনো দিনই। জানি জীবনে আপোস করলে, অ্যাডজাস্ট করলে একটু ভালো হয় জীবনটা। কিন্তু সেটা করতে পারি না বলেই তো আমার এই অবস্থা, এই হাল আজকে। তবু কেন জানি না মনে হয় কিসের জন্যে এই আপোস। তাহলে এই যে মাথা উচুঁ করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা লড়াই করার অঙ্গীকার করা সব কিছু যে মিশে যাবে একটু বেশি ভালো থাকার কারণে। সাদা কালোর ফারাকটা যে প্রকট হয়ে যাবে তাহলে। সাদা জীবন আর কালো জীবনের মধ্যে।
আসলে কি জানেন বেশি ভাবা লোকদের এই এক সমস্যা। তারা বড়ো বেশি হিসেব করে, কে কি ভাববে এটাই বার বার ভাবে। আর তাই তারা এই চুলচেরা হিসাব করতে গিয়েই ডুবে যায়। তবু তারা হিসাব করেই চলতে চায় জীবনে।কিন্তু অন্য দল এসব কিছু না ভেবেই, যার তার পা ধরে হোক আর তেল দিয়ে যেভাবে হোক ঝুলে পড়ে লেগে থাকে নিজের জন্য। যাতে যে কোনো মূল্যে সে টিকে থাকতে পারে এই সিস্টেমের মধ্য এই বহুরূপী সংসারের মধ্যে। তাহলেই তার জীবনের সব সুখ মিলবে এই আশায়।
এই টিকে থাকার আসল রহস্যর মধ্যে লুকিয়ে আছে অনেক কিছুই। যা হয়ত কোনো দিন প্রকাশ্যে আসবে না।কিন্তু সেই সব গভীর গোপন কথা ঘরের দেওয়ালের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকে ফিস ফিস করে। হয়তো আমার কাজ নেই তাই পাগলামো করা। কিন্তু আমার মনে হয়। সাদা জীবনে অভ্যস্ত হতে গিয়ে কিছু কালো কথা বলে ফেলতে হয় আত্ম বিশ্লেষণ করতে হয়। না হলে বোধ হয় পাপ হয়।
আচ্ছা যে বা যারা ক্ষমতার অধিকারী হয়ে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যে কোনো মূল্যে যাকে তাকে অপমান করে ,আঘাত করে মুখোশ পরে ঘুরে বেড়ায় এদিক ওদিক। তারা কি এর ফল কোনো দিন পাবে না। কে জানে আমার মনে হয় ফলের আশা নিয়ে এসব করে না তারা কেউই। এরা শুধু এই সব কাজ করে দেখায় তাদের ক্ষমতার জোর।
এক এক সময় আমার মনে হয় এই সব মিডিয়ার ক্ষমতার অধিকারীরা। যদি কোনো দিন সুযোগ পায় রাজ্যের বা কেন্দ্রের রাজনৈতিক ক্ষমতার মসনদে বসার। তাহলে এরা কত ভয়ঙ্কর সুন্দর হবে ভাবা যায়।
জানিনা আর আমি ভাবতে চাইও না।
শুধু এটা জানি যে সুন্দর সুন্দর পোশাক পরা আর সেজে গুজে ঘুরে বেড়ানো মানুষগুলোর, যদি রং পোশাক খুলে গেলে দেখা যাবে তাদের শুধু কঙ্কালসার চেহারাটাই। যে চেহারায় শুধু ফুটে ওঠে লোভ, হিংসা, আর স্বার্থপরতার আদিম মুখোশ পরা কিছু চক চকে মুখ।
যে মুখে মায়া, মমতা, আর ভালোবাসা বলে কিছুই আর লুকিয়ে নেই। আছে শুধু বদলা নেওয়ার কঠিন কঠোর প্রতিজ্ঞার কড়া বার্তা। ভালবেসে কাছে টেনে নেওয়ার জন্য নয়। দাদা বা দিদির কাছে মাথা নিচু না করার জন্য রয়েছে হাজারো শাস্তি। পৌষের ঘ্রাণ নিয়ে রাতের অন্ধকারে আচমকা হাওয়ায়, যে শাস্তিকে সঙ্গী করেই বেঁচে আছি আমি। ভালো থাকবেন সবাই।
সাদা জীবন কালো কথা - অভিজিৎ বসু।
তেরো জানুয়ারী দু হাজার চব্বিশ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন