জীবনের এই যাত্রা পথে টাইম ফ্রেমে বন্দী থাকে নানা সুখদুঃখের ঘটনা। নানা কথা আর নানা মানুষের সহযোগিতা আর অসহযোগিতার কথা। বাংলার মানুষের কাছে হাত বাড়িয়ে সাহায্য চেয়ে হাত বাড়িয়ে দিলে ঠেলে ফেলে দেওয়া। আর সেই এক জীবনে বাংলার মানুষ না হয়ে উড়িষ্যা, বিহার, এমন ভিন রাজ্যের বাসিন্দা হয়েও কেমন হাসি মুখে হাত বাড়িয়ে দেওয়া। আর হাসি মুখে সাহায্য করা দাদা বলে। জীবন তো এমনই।
আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় সেই রামোজি ফিল্ম সিটির ইটিভির ন্যাশনাল ডেস্ক এর গল্প। সেই ডেস্ক এর হেড সবার প্রিয় স্যার শুভাকর জীর গল্প। সেই ওড়িয়া ডেস্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র সাংবাদিক সত্যদার গল্প। সেই পঙ্কজ কুমার এর গল্প। আর সেই বিহার এর দেবকুমার পোখরাজ জীর গল্প। যাঁরা আমায় আমার পানিশমেন্ট ট্রান্সফার এর জীবনে সবাই বেশ হাসিমুখে সাহায্য করেছিলেন তাঁরা সবাই মিলে।
দাদা বলে সম্বোধন করে হেসে বলেছিলেন আরে কিসের পানিশমেন্ট ট্রান্সফার দাদা। সবাই আমরা একসাথে কাজ করছি কোনও চিন্তা নেই আপনার। বাংলা থেকে হায়দরাবাদ গিয়ে আমি বেশ জলে পড়ে গিয়েছিলাম। হঠাৎ করেই বহুদিন পর ভুবনেশ্বর থেকে শুভাকর জীর ফোন পেলাম এই কদিন আগেই। দাদা হাউ আর ইউ। হ্যাপি নিউ ইয়ার।আমি ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে বললাম আচ্ছা হ্যায়। মনে পড়ে গেলো নানা কথা আর নানা স্মৃতি।
সেই প্রথম দিন ভয়ে ভয়ে দুরু দুরু বুকে ন্যাশনাল ডেস্কে গিয়ে রিপোর্ট করা এগারোটার সময়। পঙ্কজ জী বসে কপি লিখছিলেন সেই সময়। পরে বেলায় শুভাকর জী এলে তাঁর সাথে আলাপ হওয়া। ব্যাগ থেকে বের করে মেয়ের ছবি দেখানো। আর রামোজি রাও এর ভালো কাজের জন্যে প্রশংসা করে চিঠি দেখানো। বেশ একটু ভয় আর আতঙ্কে দিন কেটে গেলো আমার। ভাগ্যলতায় ভাড়া থাকি বলা সবাইকে। বিকেল পাঁচটার সময় সবাই মিলে একসাথে বেশ চা খেতে যাওয়া। তারপর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যাওয়া। একটু একটু করে ভয় কেটে যাওয়া আমার।
ইংরাজি জানিনা বলে শ্রীরামপুরে এর একটি বই এর দোকান থেকে ডিকশনারি কিনে নিয়ে যাওয়া। কারণ বাংলা বা হিন্দী থেকে ট্রান্সলেট করে কপি লিখতে হবে বলে। যা আমি পারতাম না একদম। আর তাই বোধহয় অনেক পরিকল্পনা করেই আমায় সেই কারণে সেই সময় ন্যাশনাল ডেস্কে বদলি করা হয় প্ল্যান করেই। যাতে আমি আর কোনোদিন বাংলায় ফিরে আসতে না পারি। যিনি এই কাজে সহযোগিতা করেছিলেন সেই মিষ্টি কথা বার্তায় সবাইকে ভুলিয়ে হিরো হয়ে ঘুরে বেড়াতেন তিনি আমাদের সামনে বুক ফুলিয়ে। আমাদের সবার গ্রুপ এডিটর বলে কথা সেই বিখ্যাত রাজেশ রায়না। যদিও শুনলাম আমি কিছুদিন আগে তাঁর নাকিচাকরি চলে গেছে নেটওয়ার্ক এইট্টিন থেকে। কত যে এমন সাধারন কর্মীর জীবন আর চাকরী নিয়ে তিনি ছেলেখেলা করেছেন তার কোনও হিসেব নেই। যাই হোক আসলে এই পৃথিবী আমাদের সবটাই বোধহয় ফিরিয়ে দেয় সুদে আর আসলে।
আজ আর সেই রাজেশ রায়নাকে কেউ মনেই রাখে নি। যে আমায় কোলকাতায় ফিরিয়ে দেবে বলেও দেয়নি। আমায় আমার রিপোর্টার জীবন আর স্থায়ী চাকরি ছেড়ে চলে আসতে হয় বাধ্য করে সে। উল্টে সেই সময়ের এইচ আর মধুসূদন মান্ডাকে দিয়ে জোর করে সাদা কাগজে সই করে চাকরি ছেড়ে দিতে বলা হয়। না হলে আমায় স্থানীয় পুলিশে দেওয়া হবে বলেও ভয় দেখানো হয় আমায়। আসলে এই সব ভয় পেয়ে সই করে দেবো এমন লোক আমি নই। যাকগে সেই হায়দরাবাদ এর জীবনে আমার এই নানা খারাপ অভিজ্ঞতার মাঝে সত্য দা, পঙ্কজ জী, পোখরাজ জী, শুভাকর জী ছিলেন হাসিমুখে। আরও কয়েকজন ছিলেন সেই সময়।
সত্য দা ছেলের বিয়ের সময় ফোন করলেন এক দিন হুগলীতে তাঁর বিয়ে হয়েছে। পঙ্কজ জী সাথেও কথা হয়েছিল। ইটিভি বিহারের দেবকুমার পোখরাজ জী তো দাদা কেমন আছেন বলে সম্মান করেন খুব। আর আমাদের স্যার এখনো ভুবনেশ্বরে নিউজ এইট্টিন এর অফিসে কাজ করছেন। কিছুদিন হলো দেবকুমার জী কে মনিটরিং ডিপার্টমেন্ট থেকে আর কাজ আর কন্টিনিউ করতে বলা হয়নি। তিনিও আর কাজ করছেন না। সত্য দা অবসর নিয়েছেন অনেক আগেই। সেই পঙ্কজ জী ফিরে গেছেন নিজের বাড়ীতে অন্য কাজ করছেন হয়তো।
কবেই ভেঙে গেছে সেই ইটিভির চেনা ন্যাশনাল ডেস্ক। কিন্তু সেই ডেস্ক এর মানুষের সাথে আজও আমার সম্পর্ক অমলিন হয়েই রয়ে গেছে এতদিন পরেও। সবাই বলেন আরে দাদা কি খবর আপনার। আমিও বেশ ফিরে যাই তাঁদের কথা শুনে পুরোনো দিনের স্মৃতি পথ ধরে দূরে অনেক দূরে বহুদূরে। সেই রামোজি রাও এর বাস ধরে বাড়ী ফেরা। সেই ভাগ্যলতার ভাড়া বাড়িতে ছাদের ওপর থাকা, সেই একা একা মাকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করে রান্না করার চেষ্টা করা, সেই পুলক দা আর শুভাশীষ এর জন্য বেঁচে থাকা। সেই জয়ন্ত ওর বৌ এর সাহায্য নেওয়া। সেই রুনার সাথে দেখা হওয়া বালতি কেনার সময়। সেই ইটিভি বাংলার নতুন চেনা লোকজনদের আমায় দেখে কথা না বলে দূরে সরে চলে যাওয়া। সেই সৌমাদিত্য আরও সব নতুন লোকদের নতুন চ্যানেলে কাজ করবে বলে হায়দরাবাদ চলে আসা। আর ধ্রুবর নেতৃত্বে নতুন চ্যানেল শুরু হওয়া। সেই যে চ্যানেলে রাজনৈতিক পরামর্শ দাতা হিসেবে প্রবীর ঘোষালের যোগ দেওয়া। যিনি আমায় বলেছিলেন তিনি ধ্রুবকে বলবেন কোলকাতায় ফিরিয়ে আনার জন্য। না, ফেরা হয়নি আমার আর।
সত্যিই তো স্মৃতির সরণীতে শুধুই নানা ছবি আর ছবি। রাতের অন্ধকারে সেই ছবির জগতে ঘুরে বেড়ানো আমার একা একা অন্ধকার পথ ধরে। সেই সন্ধ্যায় একা একা ফিল্ম সিটিতে হেঁটে হেঁটে ঘুরে বেড়ানো। দেড় হাজার কিলোমিটার দুর থেকে ফোন করা বাড়িতে। ঘরে ফিরতে পারিনি বলে আফশোষ করা পুজোয়। বুটার মন খারাপ হয়ে যাওয়া। বর্তমানের বিখ্যাত ইউটিউবের অন্যতম সেরা সাংবাদিক মানব গুহর ট্রান্সফার হয়ে আমার ঘরে এসে বাস করা। আরে কাকা আমিও চলে এলাম বলে। তারপর ধ্রুবর হাত ধরে ওর কোলকাতায় ফিরে আসা। একবুক আশা নিয়ে ধ্রুব চিনতে পারবে ভেবে ও আসবে শুনে অপেক্ষা করা ওর জন্য আমি আর পুলক দা ভাত ডাল তরকারি তৈরি করে নিয়ে গেছিলাম অফিসে যদি খায়। না, ওর ব্যস্ত জীবনের মাঝে ভাত শুকিয়ে কাঠ হয়ে ঠাণ্ডা হয়ে গেছিল কি করে কে জানে ওর আর সময় হয়নি সেদিন।
আসলে জীবন তো এমন। হায়দরাবাদ এর জীবন। ন্যাশনাল ডেস্ক এর জীবন। সেই ডিসেম্বর মাসে বুটার ওর মার হায়দরাবাদ আসা। দেখতে দেখতে সাত দিন পার করে বছরের পয়লা তারিখ আমায় কাঁদিয়ে ওদের কোলকাতায় ফিরে আসা। এইসব দিন কি ভুলে থাকা যায় এই সাদা জীবনে আর কালো কথায়। ভেঙে গেছে সেই হায়দরাবাদ এর ন্যাশনাল ডেস্ক। নেই রামোজি রাও আজ। শুধুই কিছু কথা, কিছু স্মৃতিকে বুকে আগলে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা। আর সেই চারজনকে স্মরণ করে আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আঁকাবাঁকা অক্ষরে আঁকিবুঁকি ব্লগে কিছু কথা লিখে রাখা। স্যার আপনাদের সবাইকে মিস করি আমি। ভালো থাকবেন আপনারা সবাই। বড়ো একবার ফিরে যেতে ইচ্ছা করে সেই ন্যাশনাল ডেস্কে।
হায়দরাবাদ এর সেই ন্যাশানাল ডেস্ক - অভিজিৎ বসু।
পাঁচ জানুয়ারি, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন