সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গ্রাম ভুতুরা

কি সুন্দর গ্রাম এর ছবি ফিরে এলো সকাল সকাল। সেই মহম্মদ বাজারের ভুতুড়া গ্রাম। জানিনা আমি ঠিক এই ভুতুরা বানান ঠিক কোনটা। যদিও বানান নিয়ে কী বা মাথাব্যথা আমার। এমন সুন্দর একটা গ্রামের নাম যে কেনো ভূতুড়া হলো কে জানে। ভূত প্রেত দত্যি দানো তো থাকে না এই গ্রামে। এই গ্রামে থাকে সব মাটির গন্ধ মাখা মানুষ। বাঁশ বন আর সর্ষে ক্ষেতের পাশে সবুজ ঘাসের মাঠে ঘুরে বেড়ায় তারা সব হাসিমুখে।


 সেই আদিগন্ত মাঠের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট্ট প্লাস্টিক দিয়ে ঘেরা ছোট্ট একটা হেলে পড়া ঘর। সেই সুন্দর বিশাল বড় একটা ছায়াঘেরা উঠোন। সেই সবুজ মাঠে হলুদ টাটকা সর্ষে ক্ষেতের সুগন্ধী মেখে ভোর হয় এই গ্রামে। ভোরের হালকা কুয়াশা মেখে পাখির দল উড়ে যায় মাঠ পার হয়ে নদীর দিকে যেখানে বালি ওঠে সেই দিকে। আর কেমন গাছের ফাঁকে ঝুলে আছে একটি সবুজ কচি লাউ মাথা দুলিয়ে হাসছে সে আমার দিকে তাকিয়ে আনমনে লজ্জা পেয়ে।

গোবর দিয়ে নিকোনো উঠোনে কেমন সবুজ লাল ছোপ ছোপ শাড়ি পরে রান্না করতে বসেছে যে মহিলা নাম জানি না যে তার। নামটা জিজ্ঞাসা করা হয়নি আমার। দুব্বা,পার্বতী বা আসমানী বা শায়রা যে কোনও নাম হতে পারে তার। নামে কী বা আসে যায়। রোগা পটকা পাতলা ক্ষয়াটে চেহারা। মাটির ওপর উনুন ধরিয়ে রান্না হচ্ছে। গুঁড়ো হলুদের আর লংকা ফোড়নের গন্ধে ম ম করছে সেই উঠোন, ঘর, দুয়ার, সর্ষে ক্ষেত, মাথার ওপর নীল আকাশ। আর আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে সাদা বকের দল দল বেঁধে। 

ঘরের মানুষটা শহরে গেছে আধার কার্ডের নাম ঠিক করতে তাহলে রেশনের বেশী চালটা জুটে যাবে যে তাদের। ঘরে ফিরেই ভাত চাই তার ভালোবাসার মানুষটার। একপেট ক্ষিদে যে লোকটার। পেটের ক্ষিদে আর শরীরের ক্ষিদে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে তার। তাই মাটির উঠোনে দ্রুত গতিতে খুন্তি নাড়ছে গ্রামের বউ।


গ্রামের একদিকে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে প্রাথমিক স্কুল। নীল সাদা জামা কাপড় পড়ে কিছু ছেলে আর মেয়ে। হাতে চকের গুঁড়ো মেখে অনাবিল আনন্দ উপচে পড়ছে ওদের মুখে। চক চক করছে ওদের চোখ
স্কুলের পাশে টিউকলে জল বের করার আওয়াজ শুনে নামতা পড়ছে ওরা চিৎকার করে জোরে জোরে। ভাতের গন্ধে ম ম করছে স্কুলের চারপাশ। কাঠকুটো দিয়ে রান্না হচ্ছে জোর কদমে। গরম ভাত আর তার সাথে সয়াবিনের ঝাল ঝাল তরকারি আজকের মেনু। 

নামতা পড়া শেষ। থালা হাতে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়া ওদের। অপেক্ষার প্রহর গোনা। কখন আসবে সেই গরম গরম ভাত। স্কুলের মাস্টার মশাই এর আবেদন একটু খেয়ে দেখুন না আপনি খারাপ নয় কিন্তু। আর তার মাঝে লাইন ভেঙে এগিয়ে যাওয়া এক ছোট্টো ছেলের। কেমন যেন বড্ড বেশি খিদে পেয়েছে ছোট্টো শিশুর। সব মিলিয়ে বেশ মন ভালো করা জলছবি ফিরে এলো। 

সেই নির্জন বাঁশবন। সেই শুকনো বাঁশপাতা পার হয়ে ঘরের লোহার দরজা ঠেলে ঢুকে পড়া। সেই গ্রামের লাল কুকুর এর চুপটি করে শুয়ে থাকা। সেই চেনা পথ, চেনা মানুষ, সেই চেনা ঘর, চেনা দুয়ার, চেনা ক্ষেত পার হয়ে বাস ধরলাম আমি। ঘরে ফেরার বাস ধরলাম আমি। গ্রাম ছেড়ে শহরের পথে। 

গ্রাম ভূতুরা - অভিজিৎ বসু।
বিশে জানুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি নিজের মোবাইল ক্যামেরায় তোলা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...