সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইটিভির সেই ক্যাসেট জয়ন্ত

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ সেই বারাসাত থেকে দৌড়ে দৌড়ে ক্যাসেট নিয়ে গঙ্গা পার হয়ে শ্রীরামপুরে ইটিভির অফিসে আসা সেই জয়ন্তর কথা। সেই জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় বোধহয়। সেই ইটিভির প্রথম দিকের একজন কর্মী। সেই ওর হুগলীর গোঘাটে বাড়ী। সেই এম এ পাশ জয়ন্ত। সেই স্নেহাশীষ শুরের বাড়িতে ওর বাবার পূজো করা। সেই সূত্রে ইটিভির চাকরি হওয়া জয়ন্তর অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট এর। 

বহুদিন ধরেই ওকে আমি খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম। আগে মাঝে মাঝেই নতুন বছর পড়লেই ও ফোন করতো আমার বিএসএনএল এর নম্বরে। অভিজিৎ দা হ্যাপি নিউ ইয়ার। কেমন আছো তুমি। বৌদি ভালো আছে তো। ভাইঝির কোন ক্লাস হলো। কিন্তু এই বছর আর ফোন করেনি ও। কিন্তু তবু মনটা আমার ওর জন্য কেমন কেনো উচাটন ছিল বেশকিছু দিন ধরেই। ওকে আমি খুঁজছিলাম সমাজ মাধ্যমে নানা ভাবেই। আজ হঠাৎ ওকে পেয়ে গেলাম। 

সেই ভিড়ের মাঝে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে ও। কেমন যেনো একটু সব সময়ে ও ভয়ে ভয়েই থাকতো ও। সেই একটা সাধারন মানের জামা, একটি চটি পড়ে গলায় ইটিভির কার্ড ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়াতো ও। কোলকাতা চৌরঙ্গী স্কোয়ার এর অফিস থেকে ওকে হায়দরাবাদ বদলি করা হয় হঠাৎ করেই। তার আগে ওকে বোধহয় বারাসাত জেলা অফিসে বদলি করা হয়। সেই সময় সমীরণ পাল ছিল বারাসাত এর রিপোর্টার ইটিভির। সেই জয়ন্ত সমীরণ এর করা খবরের ক্যাসেট নিয়ে আসত শ্রীরামপুরে। আর দৌড়ে দৌড়ে এসে হাঁফিয়ে বসে পড়তো। 

ওর দুঃখের কথা বলতো, নতুন সংসার হয়েছে তার কথা বলত। কষ্ট করে ভাড়া বাড়িতে থাকতে হয় সেই কথা বলতো ও। হয়তো চেষ্টা করলে ও গ্রামে একটা মাস্টারি চাকরি জুটিয়ে নিতে পারতো। কে জানে একজন ইতিহাসে বোধহয় এম এ পাশ করেছিল জয়ন্ত সেই সময়। আরামবাগের বাড়িতে ওর গ্রামের বাড়িতে গেলে ও সুব্রত যশ এর সাথে দেখা করতো। কলকাতা অফিস থেকে মাঝে মাঝেই ফোনে যোগাযোগ করতো আমার সাথে বলতো দাদা কি খবর গো।

 হঠাৎ করেই বারাসাত থেকে ওর বদলি হলো হায়দরাবাদ এর হেড অফিস। জানিনা আমি কেনো যে এই ভাবে হঠাৎ করেই একজনকে বদলি করা হয় কে জানে। আসল কথা হলো যাতে বাংলা থেকে সে না যায় তেলেগুদের দেশে কাজটা ছেড়ে দেয় তাই বদলি করা। কিন্তু জয়ন্ত চলে গেলো বউ নিয়ে হায়দরাবাদ এর রামোজি ফিল্ম সিটিতে কাজ করতে। সেই ইটিভির অফিসে। সেই গুটি গুটি পায়ে ওর অফিস যাওয়া। সেই বাংলা ডেস্ক এর সিদ্ধার্থ সরকারের হাতে পড়া। ওকে ডেস্ক এর লেখার কাজ দিলেও ও সেটা করতে পারে না কোনো ভাবেই। ওকে রাতের ডিউটি দিলে বউকে ছেড়ে একা রাতে ডিউটি করতে ওর আপত্তি প্রবল। 

এমন নানা সমস্যার মাঝেই ও চাকরি করে চলে দাঁতে দাঁত চেপে। ভাগ্যলতার একটি ছোট্ট একচিলতে ঘরে ওর সংসার। সেই রামোজি রাও এর নীল সাদা বাস করে অফিস যাওয়া। মাসের ত্রিশ তারিখ হলেই বেতন মেলা। সেই কষ্ট করে সংসার চালানো। এসব তো দুর থেকেই দেখতাম আমি। কিন্তু এক সময় আমিও পৌঁছে গেলাম একদিন হায়দরাবাদ। বদলি হলাম ওর মতই। সেই সময় ওর কাছে অনেক সাহায্য পেলাম। ওর বাড়িতে ওর বৌ কতোদিন যে আমায় ভাত রেঁধে খেতে দিয়েছে তার হিসাব নেই। আর রান্না না করতে পেরে আমি ওর বাড়িতে খেতাম কোনও লজ্জা না করেই।

 ওর ঘরের সেই একচিলতে ছোট্ট ঘরের এককোণে ওর মেয়ে একমনে পড়া করতো। খুব ভালো ওর মেয়ে পড়াশোনাতে। ওর বউ একটি স্থানীয় তেলেগু স্কুলে পড়াতো। ওরা বেশ ভালই তেলেগু বলতে পারতো সেই সময়। সেই ভাগ্যলতার মোড় থেকে নেমে কতটা পথ হেঁটে যেতে হতো ওর বাড়ি। মাত্র দুই বা আড়াই হাজার টাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে ও থাকতো সেই সময়। একটু চুপ চাপ, কম কথা বলা, ভয়ে ভয়ে দিন কাটিয়ে ওর জীবন চলে গেলো। 

হায়দরাবাদ এ সিদ্ধার্থ সরকারের ভয়। হায়দরাবাদ এ তেলেগু অফিসের লোকদের ভয়। কোলকাতায় ম্যানেজার সুদীপ্ত রায় চৌধুরীর ভয়। ঘরে ওর বউ এর ভয়। সত্যিই সারাজীবন জয়ন্ত ভয়েই কাটিয়ে দিলো ওর জীবনটা। সেই অফিস ফেরত এর সময় শনিবার আমার অফ ডে এর দিন ও সন্ধ্যায় অফিস ফেরত আমার ঘরে এসে বসত। সুখ দুঃখের কথা হতো দুজনের। ওর গ্রামের কথা, ওর বাড়ির কথা। ওর বৌ আর মেয়ের কথা হতো। কি করে চাকরিটা বাঁচাবে সেই কথা হতো। মেয়েকে মানুষ করবে কি করে সেই কথা বলত ও আমায়। এক জেলার লোক বলে কিছুটা হালকা হতো ও আমার কাছে এইসব কথা বলে। ওর মনের কথা বলে। 

আমিও সেই সময় হায়দরাবাদ এ বদলি হয়ে ওকে পেয়ে নিজের সুখ দুঃখের কথা বলতাম। ‌ও বলতো অভিজিৎ দা, তুমি এত ভালো রিপোর্টার তবু তোমায় বদলি করা হলো এইভাবে। এরা সব এমন খারাপ লোক দাদা। ও বলতো তোমার শ্রীরামপুরে অফিসে ক্যাসেট নিয়ে গেলে তোমার মা আমায় জল মিষ্টি দিতেন। কত গল্প করতেন তিনি। সত্যিই তো দিনগুলো বেশ ভালই ছিল যে। হারিয়ে গেলো কবেই এমন দিন গুলো। তারপর বদলি হয়ে হায়দরাবাদ থেকে ইটিভি বাংলা কলকাতা ফিরলো ও বোধহয় কলকাতা ফিরে এলো আবার। কিন্তু সেই ক্যামেরার দেখভালের কাজ দিলো ওকে অফিস। বাগুইআটির বাড়িতে ভাড়া নিলো জয়ন্ত। সেখান থেকেই সেক্টর ফাইভ যাতায়াত করতো সে।

কিন্তু সেই কলকাতা ফিরে এসে আর বেশিদিন ওর চাকরি বজায় রাখতে পারে নি জয়ন্ত। প্রায় জোর করেই ওকে চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হলো। সেই ইটিভির ক্যাসেট পৌঁছে দিয়ে যে এক ঘণ্টার খবর ধরাতো হাওয়ারলি বুলেটিনে। একদিন সেই জয়ন্ত বেকার হয়ে গেলো। বেশ কিছুদিনের আগের কথা সন্ধ্যা বেলায় ওর ফোন। দাদা কেমন আছো তুমি। চব্বিশ ঘণ্টা চ্যানেলে কাজ করছ। আমি বললাম না, ছেড়ে দিয়েছি। শুনে একটু থমকে গেলো ও। বললো আমি এখন লেকটাউন, বাগুইআটির নানা বাড়ীতে পূজো করি। কিছু যজমান ধরেছি এই করেই সংসার চালাই মেয়েকে তো পড়াতে হবে দাদা।

 আমি শুনে একটু কষ্ট পেলাম কিন্তু ওকে কি বলব আমি চুপ করে শুনলাম ওর কথা। সত্যিই অসাধারণ এই ক্যাসেট জয়ন্তর জীবন। ওর বউ গ্রামে গিয়ে থাকবে না কিছুতেই বোধহয় ভবানীপুর এর মেয়ে ওর বৌ। তাই শহর ছাড়বে না কিছুতেই আর চাষের কাজ জমির দেখভাল করতে পারবে না জয়ন্ত । না হলে দুটো ডাল ভাত এর বন্দোবস্ত ঠিক হয়ে যেতো ওর। শুধু কোলকাতায় কাজ করবো। গ্রাম ছেড়ে শহরে থাকবো। রিপোর্টারদের আশপাশে ঘুরবো মাঝে মাঝেই লুকিয়ে তাদের ফোন করবো এই মোহেই আজ জয়ন্ত কেমন যেনো ওর এই জীবনটা শেষ বয়সে এসে কিছুটা ভেসে গেলো। 

যে কোলকাতা ছেড়ে একদিন হায়দরাবাদ গেলো সবার মনের দুঃখ নিয়ে। আবার বহু বছর পরে সবার সাথে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ও ফিরে এলো কিন্তু সেই কলকাতায় ফেরত আসা ওর পক্ষে খুব সুখের হলো না। এইচ আর এর চাপে জোর করে ওকে চাকরি ছেড়ে দিতে বলা হলো। সাদা কাগজে সই করে ভয় দেখিয়ে যা ও পরে আমায় বলেছিল। যেটা শুনে আমি অবাক হয়েছিলাম। 

সত্যিই অসাধারণ এই ক্যাসেট জয়ন্তর জীবনের কথা।‌ যে জীবনের কথা আমি আমার সাদা জীবনের কালো কথায় লিখে ফেললাম। একদিন ফোন করতে হবেই ওকে। কেমন আছে ও জানতে হবে। যে মানুষটা আমাদের খবরের ক্যাসেট পৌঁছে দিত একদিন। যে খবর পৌঁছে দেওয়া মানুষটার কোনও খবর আর কেউই নেয়না আজ‌ । ভালো থেকো তুমি জয়ন্ত। 

ইটিভির সেই ক্যাসেট জয়ন্ত - অভিজিৎ বসু।
তেসরা ডিসেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...