সাদা জীবনের কালো কথায় আজ সেই কলকাতা থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর। সেখান থেকে আবার কোলকাতায় কাজ করে সোজা রাজধানী দিল্লীতে সাংবাদিকতা করতে চলে যাওয়া সেই বিখ্যাত সাংবাদিক বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত এর কথা। সেই ইটিভির বুদ্ধ। সেই কলকাতার বেশ ঝকঝকে সুন্দর ধোপদুরস্ত সফিস্টিকেটেড পকেটে হাত দিয়ে ঘুরে বেড়ানো রিপোর্টার বুদ্ধ। সেই ওর গায়ে একটু শহুরে গন্ধ লেগে থাকা রিপোর্টার বুদ্ধ। আলিমুদ্দিন এর বিট করা পলিটিকাল ইন্টেলেকচুয়াল রিপোর্টার বুদ্ধ।
আর সেই বুদ্ধকেই শহর ছেড়ে কলকাতা ছেড়ে আলিমুদ্দিন ছেড়ে হঠাৎ করেই একদিন জেলায় চলে যেতে হলো। পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর, গড়বেতা, আর চমকাইতলার এলাকায় ওকে ঘুরে বেড়াতে হলো ধুলো মাটি মেখে। প্রথমে ওর বেশ কষ্ট হয়েছিল আমার মনে হয়। পরে ধীরে ধীরে ও এডজাস্ট করে যায় এই জেলায়। আর সেই পুরোনো আমলের দাপুটে সিপিএম আর কম শক্তি তৃণমূলের এই লড়াই এর ময়দানে বেশ আনন্দে কাজ করে ও।
যে একদিন শহর ছেড়ে গ্রামে যাবে না বলে কত আপত্তি করেছিল একসময় ইটিভির কর্তাদের কাছে যা শোনা যায়। পরে সেই আবার গ্রাম ছেড়ে শহরে আসতে চায় না কিছুতেই। সত্যিই অসাধারণ এই জীবনের নানা অধ্যায়। ইটিভির জেলার সাংবাদিকতা এই গ্রামীন সাংবাদিকতা বেশ ভালই কিন্তু। একবার যদি ঠিক করে জেলাকে ভালোবেসে ফেলা যায় তাহলে আর কথা নেই কোনও। আমার মনে হয় সেটা বুদ্ধর পরের দিকে হয়েছিল। সল্টলেকের রাস্তা ছেড়ে, ধর্মতলার ভীড় ছেড়ে কেশপুরকে, গড়বেতাকে ভালোবেসে ফেলা।
কত যে আমি আর ও দুজন মিলে তৃণমূল সিপিএম এর রাজনৈতিক সন্ত্রাসের খবর করেছি তার শেষ নেই। আর এই হাল আমলে তেমন রাজনৈতিক সন্ত্রাস এর ছবি দেখাও যায় না আর। আজকাল এর সাংবাদিকতা একটু নিরামিষ রান্নার মতই। তেল ঝাল কম দিয়ে জিরে আর পাঁচ ফোড়ন দিয়ে রান্না করা যেনো। যদিও আজকালের এই প্রজন্মের সাংবাদিকরা বলবেন দাদা কবে ঘি খেয়েছেন সেকথা ভুলে যান দাদা। এখন অনেক কঠিন কাজ এই জেলার সাংবাদিকতা। যাক সেই তর্কে গিয়ে লাভ নেই।
ওর আমলে কত যে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে তার শেষ নেই। একের পর এক ঘটনা ঘটে যাওয়া আর ওর ছুটে যাওয়া। বেশ শহুরে জীবন ছেড়ে গ্রামীন জীবনে হেসে খেলে দাপটে কাজ করা। একদিন সেই বুদ্ধ চলে এলো ফের কলকাতায়। এরমাঝে কিছুদিন মহুয়া বাংলায় কাজ করলো বড়ো পদে। সেই পার্ক স্ট্রীট এর অফিসে। আবার নিজের চেনা শহরে ফিরে আসা হাসি মুখে।কিছুদিন পরে সেই চ্যানেল এর ডামাডোলে ফের চাকরি বদলি করে কাগজের অফিসে যোগ দেওয়া। বেশ একটু থিতু হলো ও যেনো সেই থেকেই।
বহুদিন পরে আমিও টিভির কাজ ছেড়ে ওর কাগজেই যোগ দিলাম একদিন জেলা রিপোর্টার হয়ে। ও তখন সেই কাগজে দাপুটে সাংবাদিক আর চিফ রিপোর্টার এর দায়িত্বপ্রাপ্ত। কিন্তু আগের মতোই সেই একভাবেই আমাদের দুজনের সম্পর্ক তেমন রয়ে গেছে এতোদিন পরেও। বললো কদিন জেলায় কাজ কর তারপর তোকে কোলকাতায় নিয়ে চলে আসবো আমি। না, আমার আর ওর কথা মতো কোলকাতায় ওদের কাগজে আর আসা হয়নি।
অল্প কিছুদিন পর আমি আবার চলে গেলাম টিভিতে। ও রয়ে গেলো সেই কাগজেই হাসি মুখে ওর চেনা সংসারে চেনা মানুষদের সাথে। সেই বাপি দা, সেই কৃষ্ণ, সেই কিংশুক প্রামাণিক, সেই সৌরভ বাবু, সেই মলয়, সেই পার্থসারথি সিনহা, সেই শুভঙ্কর যে বর্তমানে কাজ করে, সেই গৌতম ভদ্র, আর সবার মাথার ওপরে সেই সৃঞ্জয় বোস কাগজের মালিক। যিনি বুদ্ধকে বেশ পছন্দ করতেন বরাবর।
কিন্তু জীবনে সব কি আর নিয়ম মেনে হয়। আবার কলকাতা ছেড়ে বুদ্ধ চলে গেলো ব্যাগপত্তর গুছিয়ে দিল্লিতে। একদম রাজধানীতে সাংবাদিকতা করতে। আমার প্রথম শুনে কেমন মনে হলো। আবার ওকে নিজের চেনা শহর ছেড়ে চলে যেতে হলো দূরে অনেক দূরে দেড় হাজার কিলোমিটার দূরে। ওর সাথে কথা বলে সেটা মনে হয়নি আমার। বেশ বিন্দাস হাসি নিয়ে দিল্লির বুকে সাংবাদিকতা করছে ও।
আমি ওর এই কথা শুনে ভাবলাম সত্যিই ওর বেশ বুকের পাটা আছে। শহর ছেড়ে গ্রাম। আবার গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসা। আর তারপর সোজা দিল্লির রাজধানীতে সাংবাদিকতা করতে বুকে সাহস নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া এটা কিন্তু ওর পক্ষেই একমাত্র সম্ভব। এখন তো ওর কাজের জায়গা, কাজের পরিধি আর আলিমুদ্দিনের ঘেরাটোপে বন্দী নয়। এখন ওর সামনে বিস্তীর্ণ অঞ্চল যেখানে ও ঘুরে বেরিয়ে হেঁটে চলে খবর করতে পারে। নিজের মত করে লিখতে পারে। নিজেই যেনো নিজের বস।
সেই ইটিভির তিন নম্বর চৌরঙ্গী স্কোয়ার থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলার প্রত্যন্ত গ্রামে ঘুরে বেড়ানো এক মেঠো সাংবাদিক আজ রাজধানীর বুকে সাংবাদিকতা করছে হাসি মুখে বুক ফুলিয়ে গাড়ি চালিয়ে। আর তাকে আমি চিনি একসময় তার সাথে আমি কাজ করেছি এটা ভেবে বেশ গর্ব হয় বুক ভরে যায় আমার। নাই বা আমি আজ সাংবাদিকতা করি টোটো চালকের কথা বলি যদিও এখনও সেটা চালিয়ে আমায় বেঁচে থাকতে হয়না। তবু এমন সব বিখ্যাত লোকজন তো আমার চারপাশে ভীড় করে ছিল একদিন একসময়। আর তাদের কথা মনে করে স্মৃতি রোমন্থন করতে বেশ ভালো লাগে আমার এই শীতের তীব্র ভোরবেলায়।
ওদের দিল্লির বাঙালি সাংবাদিকদের নিজেদের উদ্যোগে শীতকালে পিকনিক করা দেখে কোনও রাজনৈতিক অনুগ্রহ নিয়ে নয় সেই পিকনিক সেই কথা শুনে বেশ ভালো লাগলো আমার। সেই ওদের নানা চেনা হাসি মুখের ছবি দেখে মনে পড়ে গেলো আমার ওর কথা। সেই কথাই লিখে ফেললাম আমি আমার এই আঁকিবুঁকি ব্লগে। যেখানে দেখলাম জ্যোতির্ময় কর্মকার। সেই চব্বিশ ঘণ্টা ছেড়ে টিভি নাইনের রিপোর্টার সে। যেখানে দেখলাম চিত্রিতাকে দিল্লির দাপুটে মহিলা সাংবাদিক। দেখলাম সিএন নিউজ এর ইন্দ্রানীকে। দিল্লিতে কাজ করছে নবনীতা। আরও কত চেনা মুখ। যাঁরা ঘর ছেড়ে বাড়ী ছেড়ে কেমন হাসিমুখে কাজ করে চলেছে তাঁরা সবাই খবরের এই প্রধান পীঠস্থানে।
ভালো থাকিস ভাই বুদ্ধ। জীবনে যা হয় তাকে মেনে নিয়ে চলতে পারলে জীবনকে উপভোগ করা যায়। এটাই জীবনের আসল সারসত্য কথা। আর আমি সেটা পারলাম না বলেই কেমন করে তোর থেকে পিছিয়ে পড়লাম আজ। তার জন্য আফশোষ বা দুঃখ নেই আমার এই এলেবেলে, এলোমেলো, বিন্দাস জীবন নিয়ে। এগিয়ে চল ভাই হাসি মুখে মেনে নিয়ে আর মানিয়ে নিয়ে কিছুটা হলেও এডজাস্ট করে। সেটাই যে জীবনের ধর্ম মেনে নেওয়া আর মানিয়ে নেওয়া। আর না হলে শুধুই পিছিয়ে পড়া দ্রুত গতিতে পিছিয়ে পড়া। সমাজ থেকে, সংসার থেকে, বন্ধুদের থেকে, আত্মীয় স্বজনের থেকে সবার থেকেই শুধুই পিছিয়ে পড়া। ভালো থাকিস ভাই।
দিল্লির রাজপথে কলকাতার বুদ্ধ - অভিজিৎ বসু।
আট জানুয়ারি দু হাজার পঁচিশ।
সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন