সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মহাকরণের সুমন ঘড়াই

সকাল বেলায় ঠিক এগারোটার মধ্যে প্রতিদিন একদম নিয়ম করেই রং বেরঙ এর উজ্জ্বল জামা পরে সেজে গুজে হাসি মুখে হাজির হয়ে যেতো ও মহাকরণে প্রেস কর্নারে। আর আমায় দেখেই হালকা করে ঘাড় নেড়ে মৃদু হাসি দিয়ে বলতো কি এসে গেছো তুমি আগেই। আমি একটু সাত সকালেই পৌঁছে যেতাম মহাকরণের প্রেস কর্নারে।‌ সেই সময় সব বিখ্যাত সাংবাদিক এর দল প্রেস কর্নারে আসতেন সেই সময়। সকাল সকাল হাজির হতো আজকালের অংশু দা। 


আর সেই সময় বাংলার সেরা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কাজ করা বেশ নায়ক এর মত হাসি মুখের সুমন ঘড়াইকে বেশ ভালই লাগত আমার। খুব যে খবর আদান প্রদানের সম্পর্ক স্থাপন হয়েছিল আমাদের মধ্যে সেটা নয় কিন্তু। তবু প্রতিদিন এর মত এক জায়গায় কাজ করতে গিয়ে যে টুকু ওই হাই আর হ্যালো করা আর কি। কারণ একনম্বর চ্যানেলের লোকদের কাছে সবাই যেতে চায়। এটাই দস্তুর ছিল মহাকরণে সেই সময় আর এই কালেও। 

ওর সকালেই হাজির হয়ে যাওয়া সেই ফাঁকা প্রেস কর্নারে। এসেই মোবাইল নিয়ে বসে পরা। সেই চ্যানেল টেন এর গার্গী আর চব্বিশ ঘণ্টার সুতপা সেন এলেই ওদের সাথে জুটি বেঁধে একসাথে চা খেতে যাওয়া। আবার সেই আনন্দবাজার পত্রিকার বিখ্যাত সাংবাদিকদের সাথে সেই রঞ্জন সেনগুপ্ত দা, সেই জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়,সেই সুকান্ত দা, সেই দেবজিৎ ভট্টাচার্য আরও কতজন যে আসতো সেই সময় এদের সাথে হাসি মুখেই কথা বলা দেখে বেশ ওদের আমার অন্য গ্রহের, আর এক ভিন গ্রহের বাসিন্দা বলেই মনে হতো কেমন যেনো। তবু তো কাছ থেকেই এদের দেখতাম সব বিখ্যাত সাংবাদিকদের। 

সেই টেলিগ্রাফ পত্রিকার বিখ্যাত সব সাংবাদিকদের সাথে ওর বেশ ভালই সখ্যতা ছিল সেই সময় সেই অর্ণব গাঙ্গুলী, প্রাণেশ চক্রবর্তী বোধহয় আরও ছিল দু একজন। আবার সেই পিন্টুকে দেখলেই কি খবর বলে হাসি মুখে ওর কথা বলা। বেশ মিশুকে মানুষ কিন্তু সুমন ঘড়াই। আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় বহুদিন ধরেই ওর কথা লিখবো বলে ভাবছি আমি। মাঝে ওর গঙ্গাসাগর মেলায় গিয়ে অসুস্থ হয়ে পরা ওকে কলকাতায় নিয়ে আসা এসব খবর দেখেই কেমন মনটা খারাপ হয়ে যায় আমার। কতো দৌড় ঝাঁপ করে কাজ করত ও মহাকরণে। এই মন্ত্রীর ঘর থেকে ওই মন্ত্রীর ঘরে ছুটে বেড়াতো। এই একতলার এক ঘরে সাংবাদিক বৈঠক সেরে আবার দৌড়ে দোতলায় উপেন বিশ্বাসের ঘরে ছুটে যাওয়া। আর সেটা শেষ হলেই খবর আসা মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রেসকে ডেকেছেন। বেশ মজার আনন্দের এই দৌড় যাপন ছিল এই সময়ে আমাদের। 

সেই মহাকরণে রাখী পূর্ণিমার দিন সাংবাদিক, পুলিশ সবাইকে রাখী পরানোর দিন ওর আর আমার না যাওয়া মুখ্যমন্ত্রীর সেই ঘরের সামনে লাইনে না দাঁড়ানোর কথা আমার আজও মনে আছে বেশ। সেদিন আমার ওকে বেশ হিরো মনে হয়েছিল আমার একদম সুপার হিরো। আর সত্যিই তো ও কিন্তু মহাকরণে হিরো সুপার ম্যান হয়েই আমার চোখে ধরা পড়েছিল। আজ হঠাৎ করেই ওর কথা, মহাকরণের সেই লম্বা বারান্দায় লোহার চেয়ারে বসে থাকার কথা, সেই দিনগুলির কথা মনে পড়ে গেলো আমার এই শীতের তীব্রতায় ঢেকে যাওয়া কুয়াশামাখা সকালে।

 আসলে জীবন তো এমন। সেই সুন্দরী গার্গী চ্যানেল টেন এর কোথায় হারিয়ে গেল কে জানে। সেই মন্ত্রী মদন মিত্র সাংবাদিক বৈঠক করলেই ওর খোঁজ করতেন সবার মাঝে। জীবনের এই নানা সিনেমার পর্দায় এমন সব মানুষের উজ্জ্বল উপস্থিতি মনে করিয়ে দেয় ফেলে আসা দিনের নানা কথা। যা আজ এই শীতের সকালে ভীড় করে আমার কাছে। এক সময়ের উজ্জ্বল মুখের স্মৃতি ধীরে ধীরে কেমন ধূসর হয়ে যায় জীবনের এই যাত্রাপথে। উল্টে যায় ক্যালেন্ডারের পাতা। নতুন বছর চলে আসে। পুরোনো বছরকে ফেলে দিয়ে।

 তবু তো এইসবের মাঝেই রঙিন নক্ষত্রের মতই মহাকরণে সেই সময়ের বিখ্যাত রিপোর্টার সুমন ঘড়াই আমার কাছে কেমন হিরো সুপার হিরো হয়েই আজও বেঁচে আছে ওর সেই অমলিন হাসি মাখা মুখে।
কতদিন যে ওর সাথে কথা বলা হয়নি। কতদিন যে ও বলেনি আমায় অভিজিৎ কি খবর গো কিছু খবর হয়নি তো। আরে তুমি পৌঁছে গেছ রাইটার্স। সত্যিই জীবন বড়ই স্মৃতিকাতর আর সেই স্মৃতিকে বুকে আগলেই তো বেঁচে থাকার চেষ্টা করা গোটা জীবনভর। আমার হারিয়ে যাওয়া জীবন, ফেলে আসা জীবন, উধাও হয়ে যাওয়া জীবন, আমার দৌড়ের জীবন, সত্যিই এই বুড়ো বয়সে এসে সেই জীবনটাকে আর একবার ফিরে পেতে বড্ড সাধ হয় আমার। 

ভালো থেকো তুমি সুমন। কলকাতায় গেলে নিশ্চয়ই দেখা হবে একদিন। সবাই মিলে একসাথে একদিন মিলতে পারলে বেশ মজা হবে। সেই বিখ্যাত হাসি মুখের ধীর স্থির ঠাণ্ডা মাথার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ট কাছের রিপোর্টার সুতপা সেন, সেই তুমি, সেই আমি, সেই হারিয়ে যাওয়া পিন্টু, সেই গার্গী, সেই অংশু দা, সেই তরুণ মুখোপাধ্যায়, সেই রূপম চট্টোপাধ্যায়, সেই রঞ্জন সেনগুপ্ত আরও কতজন যে ছিল সেই সময়। এদের নিয়ে ফিরে যাওয়া সেই মহাকরণের প্রেস কর্নারে। শীতের দুপুরে আড্ডা দেওয়া, ফিরে যাওয়া ফেলে আসা সোনালী অতীতময় দিনে। বেশ ভালো হবে কিন্তু কি বোলো। ভালো থেকো তুমি।

মহাকরণের সুমন ঘড়াই - অভিজিৎ বসু।
তেসরা ডিসেম্বর, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...