সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শীতের সকাল

আজ সাদা জীবনের কালো কথায় জীবনের কথা। যে জীবনে শুধু তাড়া আর দৌড়। কতো লোকের কত কাজ। কত ব্যস্ততা। কত দৌড়। কত তাড়া। এই শীতের ঘাপটি মারা সকালে কত তাড়া সকলের। একদম নিঃশ্বাস ফেলার ফুরসত নেই, কোথাও তাদের। একদম ঘড়ি ধরে মেপে মেপে পা ফেলে এগিয়ে চলা। পা টিপে টিপে সময় ব্যয় করা, অল্প খরুচে কেপ্পন মানুষের মতই। একটু এদিক ওদিক হলেই পা পিছলে হড়কে যাবার সম্ভাবনা।

এদের দেখে একসময় আমার কেমন যেনো হিংসা হয়, এই সব কাজ ওলা মানুষদের দেখে। কী সুন্দর এরা জীবনের শীতের কুয়াশা মাখা ভেজা রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ঠিক নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ঠিক ঘড়ি ধরে মেপে মেপে।

ওই যে শীতের সকাল হলেই দেখতাম ঘড়ি মেপে সেই গায়ে সাদা চাদর মুড়ি দিয়ে এই শীতের ভোর বেলায়। সেই যে হরে কৃষ্ণর নাম করে সকলকে ঘুম ভাঙিয়ে যেতেন কালো গান গাওয়া সেই বৈষ্ণব লোকটা। কত দিন ছোটো বেলায় ভেবেছি ওকে নাম জিজ্ঞাসা করবো। কিন্তু না,পারিনি আমি। 

সেই কাঁধে ছেড়া ব্যাগ নিয়ে। পায় দু রঙের হাওয়াই চটি পরা সেই নাকে, কপালে, চন্দনের তিলক কেটে সে সকাল হলেই চলে আসতো আমাদের বাড়ির দরজায়। একদম সময় মেপে ঘড়ি ধরে এক তালে খঞ্জনি বাজিয়ে ভজো গৌরাঙ্গ, কহ গৌরাঙ্গ, লহ গৌরাঙ্গের নাম রে,গান শুনিয়ে চলে যেত সে আপন মনে।

 যদি কেউ দাঁড়াতে বলতো তাহলে সে দাঁড়াতো তার বাড়ির দরজায়। আর না হলে পরের বাড়িতে দরজায় দাঁড়িয়ে সেই হরি নাম গান শুনিয়ে যেত সে। একদম যন্ত্রের মত গান শুনিয়ে চলে যেত সে প্রতিদিন এই বাড়ী ওই বাড়ি। 

এখনো আমার সেই কালো লম্বা তিলক আঁকা মুখটা মনে আছে আজও। হয়তো অনেক দূর থেকে ট্রেন পথেই সে আসতো এই শীতের ভোর বেলায় গান গাইতে। কোনো দিন ঝুলি ভরে যেত তার অনেক। কোনো দিন খালি থাকতো অনেকটাই। কিন্তু তার সেই কাজের কোনো ফাঁকি দেখিনি। সেই খঞ্জনির আওয়াজ শুনলেই বুঝতাম এই বার আমায় বিছানা ছেড়ে উঠে পড়তেই হবে। আর ঘাপটি মেরে লুকিয়ে শুয়ে থাকা যাবে না এই ঠাণ্ডায়। 


সেই যে শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, মৌসুমেও এক সময় ধরে ঘড়ি মেপে বড়ো রাস্তার ওপার থেকে সেই পাল কাকুর গলা শুনতাম আমি। বাবার কারখানায় যাবার জন্য এক জন সহকর্মীর সেই ডাকটা বড়ো মিষ্টি লাগতো আমার। 
বোস, বলেই থেমে যেত পাল কাকু। সেই সাতটা এগারোর ঘড়ির কাঁটা কোনো দিন বারও বা পনেরোর ঘর পার হতো না হাজার ঝড়, জলেও। কী করে যে এমন ঘড়ি ধরে মেপে জীবনে চলতে পারে এরা কে জানে।বাবা বলতেন, আসছি।

 অনেক পরে যখন সেই ঘড়ি ধরে মেপে মেপে সারা জীবন দৌড়ে, কাজ করেও যখন সেই কারখানার গেটে তালা পড়লো আচমকাই। সেই থেকে আর সকাল হলেই পাল কাকুর গলা শুনতাম না আমি আর কোনো দিন।

 একদিন দেখলাম রিষড়া স্টেশনের পশ্চিম রেল গেটের লোহার রডে সারি সারি লটারি সাজিয়ে বসে আছেন একা চুপ করে পাল কাকু। উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন তিনি আকাশ পানে। যে দৃষ্টির সীমানায় শুধুই শুন্যতা। আদিগন্ত বিস্তৃত শূন্যতা নিয়ে দিব্যি বেঁচে আছেন তিনি। আর কোনো তাড়া নেই তাঁর জীবনের ঘড়ি ধরে মেপে এগিয়ে যাবার।

 সারাদিন ঠিক আমার মতোই একা একা বসে থাকা আর কি। আর সময় মেপে মেপে চলার কোনো তাড়া নেই আর তার। যে লোকটা ঘড়ি কে হারিয়ে সারাটা জীবন দৌড়ে গেলো। সেই কেমন করে যেনো দৌড় হারিয়ে ফেলে বসে গেলো রাস্তার পাশে চুপটি করে হঠাৎ। অনেক দিন ভেবেছি আমি জিজ্ঞাসা করবো তাঁকে, কি খবর আপনার। আপনি ভালো আছেন তো। কেমন আছেন আপনি। বাড়ির লোকরা সব ঠিক আছে তো। না আর খবর নেওয়া হয় নি আর আমার কোনো দিন। 

তারপর হঠাৎ একদিন দেখলাম আর সেই লোহার রডে সাজিয়ে রাখা লটারীর দেখা নেই আর। অন্য কেউ দখল করেছে সেই জায়গা। ঘড়ি ধরে মেপে মেপে এগিয়ে চলা মানুষটা যে কোথায় আচমকা উধাও হয়ে গেল কে জানে। আর খবর নেওয়া হলো না আমার তাঁর। কথা বলা হলো না আমার আর তাঁর সাথে ঘড়ি ধরে মেপে চলা জীবনের মানুষটার সাথে। জানা হলো না জীবনের শেষ লগ্নে এসে সে কি পেলো জীবন থেকে। এটা জানার বড়ো আগ্রহ ছিল আমার। কিন্তু কই আর যে তাঁকে খুঁজেই পেলাম না আর কোনো দিন কোথাও।  

আর সেই যে অনেক কাল আগে কলকাতার শিয়ালদহ রাস্তার কাছে নেবুতলা পার্কের পাশে ছোটো দোকানের ভেতর কালো চশমা পরে বসে থাকতেন নাড়ু কাকু বাবার অভিন্ন হৃদয় বন্ধু। যে দোকানে গেলেই পাশের চায়ের দোকান থেকে এনে সেই সুজির বিস্কুট খেতে দিত আমায় ডেকে ভালোবেসে। বড়ো ভালো বাসতেন তিনি আমায়। সেই সুজির বিস্কুট খেয়ে জিভে লেগে থাকত তার স্বাদ আমার মুখে অনেকক্ষন।

 কলকাতার ওই লেদের দোকান থেকেই সংসার চালাতো কারখানা বন্ধের পর নাড়ু কাকু। কত মেপে মেপে পা ফেলে জীবন কাটিয়েও শেষ বেলায় কেমন সব এলো মেলো হয়ে গেলো এদের জীবন গুলো এক ধাক্কায় কারখানার গেটে তালা পড়তেই। কত মধুর স্মৃতি ছিল আমার এই সব মানুষদের নিয়ে সেই সব দিন গুলো কেমন করে হারিয়ে গেলো শীতের ভোর বেলায় কুয়াশার মাঝে হারিয়ে গেলো।

 সেই যে শীতের রাতে হাওড়ার সালকিয়ার সেই ছোট্টো এক চিলতে ঘরে বাস করা সেই অজিত কাকু যার হাতের ওয়েল্ডিং এর কাজ আর পাইপ ফিটিং এর কাজ খুব ভালো ছিল বলে সবাই বলত। হিসাব করে একেবারে মেপে মেপে বলে দিতেন কি কাজের কত জিনিস লাগবে। পাকা মিস্ত্রির মত হিসাব করে এস্টিমেট দিতেন তিনি। 

তাঁকে নিয়েই তো বাবার কারখানা বন্ধের পর সেই এই শীতের সময় সাইথিয়াতে কাজে এসেছিলাম ছোটো বেলায় প্লাম্বিং এর কাজ করতে সবাই মিলে। চেনা লোকের কাজ বলে কথা। সারারাত জেগে কত ভালোবেসে ঠাণ্ডায় মাটিতে শুয়ে সরকারি হাসপাতালে জলের লাইনের কাজ করে ছিলেন তিনি।তারপর কোথায় যে তিনি হারিয়ে গেলেন কে জানে। 

সেই তার ভেঙে পরা জীর্ণ ঘরে বসে এই ঠাণ্ডায় গরম রুটি আর ঠাণ্ডা খেজুর গুড় দিয়ে ভিজিয়ে খাওয়ার কথা আমার আজও মনে পড়ে। কাকিমা আমায় নিজের ছেলের মতো ভালোবেসে গরম রুটি সেঁকে দিয়েছিলেন একটা একটা করে পরম যত্নে।অতি কষ্টের দারিদ্রের মাঝেও, আসলে বোধ হয় দারিদ্র্যের মধ্যে ভালোবাসা গা ঢাকা দিয়ে লুকিয়ে থাকে। অতি সংগোপনে ঘাপটি মেরে। সময় সুযোগ পেলেই সে বেরিয়ে পড়ে। স্থান কাল পাত্র ভুলে।

এসব মানুষ গুলোর এক সময় কি দৌড়ের জীবন ছিল। সেই দৌড়টাই একদিন আচমকাই দমকা হাওয়ায় থেমে গেলো এদের। হারিয়ে গেলো তাদের সব কিছুই।আজ সব কেমন ছন্নছাড়া হয়ে বেঁচে আছে বা বেঁচে নেই এরা।

 জীবনেও কি ভোলা যাবে উত্তরপাড়ার মাখলার সেই শম্ভু কাকুর কথা। কত স্মৃতি যে লুকিয়ে আছে সেই মাখলার বাড়ির মধ্যে দিন কাটানোর কথা আমার। স্কুলের ছুটি পড়লেই শীতের সময় বেড়াতে যেতাম আমি সেই মাখলার বাড়িতে। সেই বাড়িতে কত দিন যে কাটিয়েছি আমি ছোটো বেলায়।

শীতের দুপুরে ছাদে উঠে কত খেলা খেলেছি একসাথে সবাই মিলে। রাতের বেলা খাবার পর থালা ভর্তি ফল কেটে দিতেন কাকিমা।কাকু বলতেন, খেয়ে নাও শরীর ভালো হবে। খাবার পর ফল খেতে হয় বুঝলে। সেই দৌড়ে সামিল হওয়া মানুষটাও কেমন করে হারিয়ে গেলো একদিন। খবর পেলাম শম্ভু কাকুও নেই মারা গেছেন। 

 আসলে বোধ হয় এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। জীবনের অমোঘ নিয়ম তো হলো মরণের কাছে ছুটে যাওয়া। যা আমি ভাবছি অস্বাভাবিক সেটাই স্বাভাবিক নিয়মেই হয়েছে সব কিছু। এসব নিয়ে আক্ষেপ করে ভেবে মন খারাপ করে কি হবে তাহলে। লোকরা হাসবে যে। বলবে লোকটা স্মৃতির জ্বরে পাগল হয়ে গেছে।  

মনে পড়লো আমিও তো কত দৌড়ে বেড়াতাম একসময়। এই প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত। খবরের নেশায় সেই দৌড় ছিল দেখার মতই। দিন রাত দৌড়ে বেড়াতাম এদিক থেকে ওদিক। সে একটা দিন ছিল বটে।সেই দৌড়টাও তো নিজেই নিজের অজান্তে বন্ধ করে দিলাম কেনো কে জানে। কেউ কেউ বলে আত্মঘাতী মানুষটা, কেউ বলে বদ্ধ পাগল লোকটা। কিন্তু যে যাই বলুক আমি কি, আমি নিজেই জানি না মনে হয়। 

আসলে সেয়ানা না হয়ে, পাগল হওয়া ভালো বোধহয় কিছুটা। তাতে দু পক্ষের লাভ হয়। এক যারা সমাজে, অফিসে, সংসারে সেয়ানা হয়ে, সেয়ানা সেজে বেঁচে থাকে তাদের জীবনের লাভের খাতা ভরে যায় একটু বেশি করে। আর যারা পাগল তারা হিসেব নিকেশ করে উঠতে পারে না কোনো ভাবেই। তাই তাদের যা মনে হয় সেটাই নিজের মনে করে ফেলে। তাতে তাদের লাভের বদলে ক্ষতিটাই বেশি হয়। লাভ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে আমায় এমন ভেবে চিন্তে কাজ করিনি কোনো দিন। আজ রাতে বসে সেই ভাবনাই আসছে আমার। 

আচ্ছা সেই যে আমাদের সাথেই কাজ করতো, দৌড় প্রতিযোগিতায় আর দৌড়বে না বললো সবাইকে। একে একে, ডেকে ডেকে, বললো এই মাঠে আর দৌড়ানো যাবে না কিছুতেই। সমতল মাঠটা আচমকাই ক্ষমতার পালা বদলে বড়ো এবড়ো খেবড়ো হয়ে গেছে রে। চল ভাই, সবাই এই মাঠ ছেড়ে পালিয়ে যাই আমরা। এই মাঠে আর দৌড়ানো যাবেনা কিছুতেই।

 প্রতিদিন যে মানুষটা দৌড় থামিয়ে দেবার কথা বলে স্বপ্ন দেখাতো সবাইকে আর আমরা অনেকেই সেই মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে চলে এলাম দুম করে। কোনো কিছু আগু পিছু না ভেবেই। সত্যিই তো চেনা মাঠটা বড়ো বেশি অচেনা লাগছিল আমাদের অনেকেরই। তাই নির্দ্বিধায় মাঠ ছেড়ে দিলাম, বেরিয়ে এলাম সব বুক ফুলিয়ে। কিন্তু আজও সেই আমাদের স্বপ্ন দেখানো লোকটা নিজে আজও ওই একই মাঠে দৌড়ে যাচ্ছে সে নিশ্চিন্তে, নিরাপদে আর নির্ভয়ে। বোধহয় অসম এই বদলে যাওয়া মাঠে কি করে খেলতে হয় সেটা প্র্যাকটিস করে নিয়েছে সে। বেশ দিব্যি সুখেই বেঁচে আছে সে।

কই মুখ থুবড়ে পড়ছে না তো সে। দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে সে। আসলে এই যে দৌড়ের নেশাটা কাটাতে পারা খুব মুশকিল মনে হয় আমার। আর তাই বোধহয় আমরা সব মাঠের বাইরে চলে এলেও সে মাঠের বাইরে আস্তে পারে নি আজও। দিব্যি সুখেই বেঁচে আছে । এদের কি বলবো জানি না। শুধু এটা বলবো যে ভাই সত্যিই অসাধারন পারফরম্যান্স। ঠিক শীতের মরশুমে লাল হলুদের ডার্বির মত পারফরম্যান্স।

যাকগে এসব বলে লাভ কি। তাই তো এই শীতের ভোর বেলায় এত মানুষ ম্যারাথন দৌড়তে রাস্তায় নামলো অনেকেই। যাতে দৌড়ের অভ্যাসটা না চলে যায়।আসলে এটাই আসল কথা।দৌড়ের অভ্যাসটা বজায় রাখতে হবে। যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে শিরদাঁড়াকে ভঙ্গুর করে নিয়ে দৌড়তে হবে। তাতে লাভ বই ক্ষতি হবে না।

কিন্তু শীতের কুয়াশা মেখে যে হলুদ রঙের ছোপ ছোপ পাখিটা নিশ্চিন্তে নিরাপদে খেজুর গাছের কলসীর ওপর বসে আছে একমনে ওই হলুদ মাঠের ধারে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জিরেন কাঠির দিকে ঠায় সে। ঠাণ্ডা হাওয়ায় কেমন এলো মেলো হয়েও সে বসে আছে পরম নিশ্চিন্তে, নির্বিঘ্নে।

 কোনো তাড়া নেই তার, দৌড় নেই তার। সে জানে একসময় সেই জীরেন কাঠি থেকে বেরিয়ে আসবে সেই অমৃত সুধা। যা সে প্রাণ ভরে ঠোঁট ডুবিয়ে সেই অমৃত সুধা পান করবে আপন মনে। আর মনে মনে বলবে দৌড়ই জীবনের সব কিছু নয়। 

জীবনকে উপভোগ করতে গেলে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, অপেক্ষা করতে হয়। শীতের কুয়াশা মাখা হিম শীতল ভোরের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। আর ঠিক এক সময় অপেক্ষার প্রহর শেষে ভোরের কুয়াশা কেটে যায়। সূর্যের মিঠে নরম আলোয় আলোকিত হয়ে যায় গোটা প্রকৃতি। 

আর ঠিক সেই মুহূর্তে আমি দেখি আমার কালো জীবনে, ভোরের সাদা আলোর রোশনাই কেমন উপচে ছড়িয়ে পড়ে আমার সারা শরীরে একটু একটু করে। আমি ঘাড় উঁচু করে দেখি হলুদ ছোপ ছোপ পাখিটা কেমন নিশ্চিন্তে , আকন্ঠ অমৃত সুধা পান করছে আপনমনে। ওর কোনো তাড়া নেই। ওর কোনো দৌড় নেই। আমি শুধু ওকে দেখি। ওকেই দেখি। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ওকেই দেখি।

শীতের সকাল - অভিজিৎ বসু।
বাইশ জানুয়ারী, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য গুগল ও নিজের সংগ্রহ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...