বহুদিন পর আমি অনুপদাকে দেখলাম। অনুপদার কোথায় বাড়ী সেটা ঠিক জানা নেই আমার। জানার চেষ্টাও করিনি কোনোদিন আমার ২৪ ঘণ্টার চাকরি জীবনে। দেখলাম হাসিমুখে ফুলের মাঝে দাঁড়িয়ে অনুপ দা। দেবের পাশে দাঁড়িয়ে অনুপ দা। সেই একদম বুক ফুলিয়ে টানটান করে। এই ফেসবুকের গ্যাঁড়াকলে কিন্তু বেশ হঠাৎ করেই হারিয়ে যাওয়া মানুষ। হারিয়ে যাওয়া জীবন। হারিয়ে যাওয়া অতীত সব হু হু করেই ফিরে আসে আমাদের চোখের সামনে সিনেমার সাদা কালো পর্দায় সেই মন ভালো করা ছবির মতো। হারিয়ে যাওয়া অনুপদারা হঠাৎ করেই হাসিমুখে ফিরে আসেন কেমন করে যেনো কেমন রঙিন ফুলের বাগানে, অফিসের উজ্জ্বল বোর্ডের সামনে, সিনেমার পর্দার সেই আকাশপানে থাকা নায়কের পাশে হাসি হাসি মুখ করে।
সত্যিই না হলে হয়তো অনুপদাকে আর মনেই পড়তো না আর আমার এই এলোমেলো আর এলেবেলে জীবনে। সেই অফিস এর সবার সব কাজ হাসিমুখে করে দেওয়া অনুপদা। হাসি মুখে কোনোও বিরক্তি না রেখে সব ধরনের কাজ করে দেওয়া সেই অনুপদা। যাকে আমি কোনোদিন বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখিনি মিডিয়ার অফিসে। যাকে কোনোদিন রাগতে দেখিনি আমি। সবার সব ধরনের বায়নাক্কা সামলে দেওয়া সেই অনুপদা। বেশ ভালো লাগলো বহুদিন পর অনুপদাকে ছবিতে দেখে। মনে হলো আরে এই অনুপদা তো ছিল আমার সাদা জীবনের কালো কথায়। সেই সুব্রত, অনুপদা, সেই সাধন, সেই সুদীপ আরও কতজন যে ছিল এমন চারপাশে।
কারণে অকারণে ওদের হাঁক পেড়ে ডেকে নেওয়া। ওদের দৌড়ে আসা কে ডাকছে, আর কোন পদ ডাকছে তার ওপর নির্ভর করে ওদের ব্যস্ত হয়ে ছুটে আসা সেই দুর থেকে। তারপর বেশ ভালো করে বুঝে নিয়ে তাঁদের ফরমাস মেনে কাজ করে দেওয়া হাসি মুখে। বেশ কঠিন ব্যাপার কিন্তু। কার মুড়িতে বাদাম বেশি ঝাল কম। কার মুড়িতে তেল কম লংকা কম। কার শুধুই পেট খারাপ এর কারণে শুকনো খোলায় চিঁড়ে ভাজা। এমন মনে রাখা যে বেশ কঠিন কাজ। বিকেল হলেই কি করে যে এই কঠিন কাজ সামলে দিত অনুপদা সব হাসি মুখে কে জানে। আমাকেও বেশ কদিন রুটি আর আলুভাজা এনে দিয়েছে হাসিমুখে।
আজ অনুপদার ছবি দেখে মনে পড়ে গেলো এইসব নানা কথা। যে কথার কোনও মানে নেই। যে কথা লেখার কোনও দরকার নেই। যে কথা কেনো লিখলাম সেটাও জানা নেই আমার। তবু এই আমাদের মিডিয়ার ঝাঁ চকচকে অফিসে কেমন যেনো চুপচাপ করেই একটু নিষ্প্রভ হয়েই অনুপদা, সুব্রত, সাধন এরা সব থেকেই যায়। নিজেদের সগর্ব উপস্থিতি না দেখিয়ে, নিজেদের দাপট না দেখিয়ে, নিজেদের পদের মাহাত্ম্য অন্যকে না বুঝিয়ে। কেমন যেনো চুপ করেই একটু দূরে সরিয়ে রেখে নিজেদের মতো করেই অবস্থান করেন ফ্যাসিলিটি নাম নিয়ে। অফিস এর এক কোণে চুপটি করে। আর মুখ বুজে সবার সব কাজ করে দেয় হাসি মুখে। সত্যিই অসাধারণ এই জীবন। যে জীবনে ঝাঁ চকচকে জীবন আছে। যে জীবনে দ্রুত মই বেয়ে ওপরে উঠে যাওয়া আছে, যে জীবনে আবার ওপর থেকে মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে যাওয়া আছে, যে জীবনে আবার অনুপদার মতই ওই হাসি মুখে সব কাজে হ্যাঁ বলা মানুষ আছে, জীবনও আছে। যাদের জীবনে কোনো না নেই। ভালো থেকো তুমি অনুপদা।
ফ্যাসিলিটির অনুপ দা - অভিজিৎ বসু।
নয় জানুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন