সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী

কথায় আছে সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী। লাউ এর সাথে বৈরাগ্যের কি মধুর সম্পর্ক আমার ঠিক সেটা জানা নেই। কিন্তু এখন সেই সাধের লাউও কেমন করে যেন ব্রাত্য হয়ে গেছে এই সবুজ শীতের তিন ফসলি মাঠে। পূর্ব বর্ধমানের দামোদর নদের পাড়ে জামালপুরে অনেক লাউ গাছ আছে। লকলকে লাউ ডগা আছে। সেই লাউ এর ডগায় শিশির ভেজা হিমের পরশ আছে। আর সেই হিমের পরশ গায়ে মেখে লাউ এর গাছে দল বেঁধে হাসি মুখে ফল ধরা আছে। 

হ্যাঁ, গ্রামের কথায় আমরা যাকে বলি লাউ গাছে জালি পড়া। কিন্তু এই লাউ গাছে জালি পড়বে না কিছুতেই। আর এই শীতের মরশুমে লাউ চিংড়ির মিস্টি স্বাদ আছে। কিন্তু এই লাউ গাছে কিন্তু ফল হবে না কোনও ভাবেই। কোনমতেই ফল ধরতে দেওয়া চলবে না কিছুতেই এই লাউ গাছে। খানিকটা যেন শ্রীকৃষ্ণের কংসমামার মতো কোনো ভাবেই শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হতে দেওয়া যাবেনা এই গাছে। বোঝো ঠ্যালা কি অবস্থা।

বর্ধমানের জামালপুরের বাসিন্দা ভোলানাথ মালিক,
হারু মালিকরা খুশি মনেই চাষ করেছেন দামোদর নদের পাড়ে লাউ গাছ এর। তাদের চাষের জমিতে লাউ গাছে রীতিমত ঢেউ খেলছে শীতের ঠাণ্ডা উত্তুরে হাওয়া। কিন্তু গাছে লাউ নেই একটাও।‌ কিন্তু সেই গাছে ফুল আছে, ফল নেই। ঠিক যেনো নিঃসন্তান মা এর ফাঁকা কোলের মতই।‌ চৈত্রের খাঁ খাঁ মাঠে দুর প্রান্তরে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে থাকা লাল পলাশের দল। যার সুন্দর ফুল আছে অথচ ফল এর দেখা নেই সেইভাবে। 

হ্যাঁ, জামালপুরের চাষীদের লাউ ধরাতে ঘোর আপত্তি কৃষকদের। তাই গাছে দু একটা লাউ ছাড়া গোটা জমিতে একদম লাউ নাই। শীতের বাজারে লাউয়ের থেকে লাউশাকের চাহিদা এখন বেশী।তাই কৃষকরা লাউয়ের বদলে লাউশাকে মন দিয়েছেন বেশি করে। 
চাষী ভোলানাথ মালিক বলেন, ধান, আলুর পরিবর্তে তারা বিকল্প চাষ করেছেন। কারণ তাদের মত ক্ষুদ্র বা প্রান্তিক চাষীরা লাভবান হতে পারবেন না। তবে বিকল্প চাষ হিসেবে লাউকে বেছে নিলেও গাছে লাউ ফলানো যাবে না একদমই। 

বাজারে লাউ শাকের চাহিদা লাউয়ের থেকে অনেক বেশী। দেশী প্রজাতির লাউ চাষ করলে এমনিতেই তার ফলন কম। আর হাইব্রিড বীজের লাউ চাষ করলে অবশ্য ফলন অনেক বেশী। তবুও শাকের চাহিদার কাছে হার মানবে লাউ। তাই তারা জমিতে মাচা বেঁধে লাউগাছের চাষ করেছেন।একটা লাউ ফুল ফুটে বড় হতে যা সময় লাগবে তার তুলনায় প্রায় প্রতিদিনই বেশী লাউ শাক বাজারে বিক্রি হবে। আর তাতেই তাদের দুপয়সা রোজগার হবে।

ভোলানাথ মালিক বলেন, বর্ষার শেষে তারা জমিতে লাউ বীজ বপন করেন।মাস খানেকের মধ্যেই লাউ গাছ ডালপালা মেলতে শুরু করে।লাউগাছ একটু বড় হলেই জমিতে তারা দু ফুট উচ্চতায় মাচা বাঁধেন। তারপর আর খুব বেশী ঝক্কি নেই তাদের। এবার শুধু সময় মত জমিতে জল দেওয়া আর পরিমাণ মত সার ও কীটনাশক ছড়ানো। আর তাতেই বাজিমাত। 

এক বিঘে জমিতে লাউ চাষ করে যা আয় হবে তার থেকে অনেক বেশী পরিমাণে শাক বাজারে বিক্রি করে বেশী লাভ হবে।লাউগাছ চাষে খুব বেশী সার লাগে না।তারা মাটিতে চাষের আগেই জৈব সার মিশিয়ে দেন।গাছ একটু বড় হবার পর জমিতে অক্সিজেন মানে ইউরিয়া সার প্রয়োজন মত ব্যবহার করা হয়। আর পোকার আক্রমণ হলে মাঝেমধ্যে কীটনাশক ছড়াতে হবে। তবে প্রতি সপ্তাহে পরিমাণ মত জল দিতেই হবে গাছের গোড়ায়। না হলে গাছের বৃদ্ধি কমে যাবে।

মোটামুটি তারা ছ'মাস এই লাউশাক বিক্রি করে ভালই আয় করেন বলে জানান চাষীরা। লাউ ফলিয়ে সেই আয় তাদের হতই না একদম। আর তাই তারা বোধহয় প্রাণ খুলে সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী গানটা গেয়ে উঠতে পারছেন না ঠিক মতো। তাদের জীবনে সাধের লাউ নয়, এখন সাধের লাউশাক জীবনের দু পয়সা রোজগারের পথ করে দিয়েছে কিছুটা। 

সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী - অভিজিৎ বসু।
আট জানুয়ারী, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক ও সংগ্রহ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...