আসলে হেরে যাওয়া মানুষের আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখতে বেশ এই শীতের নিশুতি রাতে আমার ভালই লাগে। লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে ঠিক যেনো সেই ডিয়ার লটারীতে কোটি টাকা মিলবে এই স্বপ্ন দেখা আর কি। আমিও যে তার ব্যাতিক্রম নই। আর হারতে হারতে খেলার মাঠ থেকে পড়ে গিয়েও আবার উঠে হাত পা ঝেড়ে ফেলে এগিয়ে যেতে যেতে নতুন করে স্বপ্ন দেখা এক মানুষের লড়াই করা দেখতেও বেশ মন্দ লাগে না আমার কিন্তু। স্বপ্ন দেখা যে মানুষের নেশা।
কেউ কেউ তো হাসি ঠাট্টা করে তামাশা করে বলে দুর বাংলার মাটি ছেড়ে, দীঘার সমুদ্রের নোনা জল ছেড়ে আরব সাগরের জলে পা ভিজিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এটা আবার কি সাংবাদিকতা নাকি। জ্যোতি বসুর বিখ্যাত উক্তির মত এমন তো কতই হয় আর কতই দেখলাম। আসলে বাংলা হলো সংষ্কৃতির পীঠস্থান, বাংলা হলো সাংবাদিকতার পীঠস্থান।
যেখানে একসময়ের লাল মাটি আর বর্তমানের সবুজ মাটিতে খবরের সোনার ফসল ফলে হাসতে হাসতে। সেই বাংলার মাটি ছেড়ে ওই দুর্ভিক্ষের রাজ্য কালাহান্ডির ওড়িশা আর মুম্বাই এর আরব সাগরের জল তো নোনা কবেই লিখেছেন সাহিত্যিক সমরেশ বসু। সেই জলে জলকেলি করে এক নম্বর হয়ে এত লাফালাফির কি আছে ভাই। সিনেমার পর্দায় সেই গান এর কথা মনে পড়ে গেলো যে, বাংলায় ফিরে এসো বাবা।
আসলে বাংলায় ফিরে আসতেই তো চেয়েছিলাম ঘর ছেড়ে, সংসার ছেড়ে, আত্মীয় স্বজন ছেড়ে, কে আর দূরে সরে থাকতে চায়। কে আর চেনা মাঠ, চেনা ক্রিজ, চেনা খেলোয়াড়, চেনা বোলার ছেড়ে নতুন মাঠে খেলতে যেতে চায়। সেই বিশ্ব বাংলার মাটিতে মা মাটি মানুষের গন্ধ মাখা মাটিতে হাসি মুখে খেলার যে কত সুবিধা কে না জানে বলুন। যেখানে রান আউট হলে আম্পায়ার আউট দিতে ভয় পান। যেখানে বোল্ড আউট হলে আম্পায়ার এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখেন কি নির্দেশ আসছে সেই দুর থেকে ইথার তরঙ্গের মধ্য দিয়ে ভেসে ভেসে।
আর তারপর বলেন না না, এটা নো বল। আউট হয়নি কোনো মতেই মাঠের ক্যাপ্টেন। আর সেই ক্যাপ্টেন আবার আউট হয়েও হাসি মুখে ব্যাট হাতে ক্রিজে দাঁড়িয়ে পড়েন রাজনৈতিক অনুগ্রহে। সেই মাঠেই তো খেলতে চেয়েছিলাম আমিও অন্য সবার মতোই হাসিমুখে। বেশ মজা করে আনন্দ করে দুলে দুলে শীতের মিঠে রোদ গায়ে মেখে একে চন্দ আর দুয়ে পক্ষ বলে মিস্টি সাংবাদিকতা। যে সাংবাদিকতা করতে কোনো সমস্যা নেই, ঝুঁকি নেই শুধুই অনাবিল প্রশান্তি আর অনেক প্রাপ্তি আছে জীবনে।
না, আমি আবার বরাবর এই ধরনের কাজে অভ্যস্ত নই। যেখানে চ্যালেঞ্জ সেখানেই ঝাঁপিয়ে পড়ে আর অন্ধকারে সাঁতরে গঙ্গা পার করে লুকিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা মানুষ আমি সেই কবে ছোটবেলা থেকেই। সেই কলকাতা থেকে অনেক দূরের জেলা থেকে এই সাংবাদিকতার পীঠস্থানে এসে হাজির হয়ে বুঝেছিলাম যে এই মাঠ মন্দ নয়। তবে এই মাঠের খেলোয়াড়রা সব গড়পড়তা মানের।
তাই মাঠের ভিতরে অফিস এর কাজ থেকে মাঠের বাইরে রাস্তার কাজ করতে মন্দ লাগে নি আমার। আসলে সব জায়গায় খেলার অভিজ্ঞতা আর অভ্যাস না থাকলে চলে। সেই অভিজ্ঞতা নিয়েই তো বাংলার একনম্বর চ্যানেলকে দৌড়ে ধরে ফেলার স্বপ্ন দেখা একদিন। যাই হোক সেই স্বপ্ন সফল হয়নি আমার। আর তাই বাংলার বাইরে বেরিয়ে, আরব সাগরের নোনা জল হোক কিংবা ওড়িশার বঙ্গোপসাগরের নোনা জল, বা জল জঙ্গলের অসম। যেখানে সেখানে ব্যাট হাতে নেমে পড়তে দম লাগে। আর সেই স্বপ্নকে সঙ্গী করেই তো নোনা জলের মাঠে খেলতে নেমে এক নম্বর হবার স্বপ্নকে সফল করা। বেশ মজার ব্যাপার কিন্তু। এই মাঠে কিন্তু আম্পায়ার আউট হলে আউট দেন। চোট্টামো করে বলেন না, নট আউট। এই গোল্ড কাপ খেলার চ্যালেঞ্জ আলাদা।
সেই দূরের মাঠে বাংলা থেকে হায়ার করে খেলতে নিয়ে যাওয়া এক দাপুটে খেলোয়াড় এর ফোন পেলাম আমি আজ। ঘুমোছিলাম আমি সেই সময়। দাদা আমি তোমায় একটা জিনিস পাঠালাম দেখো তুমি। ঘুম চোখে উঠে দেখলাম আমি। বাহ দারুন ব্যাপার বাংলার ছেলের সেই ছয় বছর পর সন্তোষ ট্রফি জেতার মত ব্যাপার। অচেনা মাঠে এবড়ো খেবড়ো মাঠে এক বাংলার দামাল ছেলের এক নম্বর হওয়ার ফল প্রকাশ আর তাতে সে ফার্স্ট হয়েছে।
যা তিনি আমার মতো একজন বাতিলের দলে পড়া মানুষকে বলছেন খুশি হয়ে। বেশ নিজেকে কেউকেটা মনে হলো আমার। সত্যিই তো চেনা মাঠে খেলা তো সোজা। অচেনা মাঠে খেলে জিতে কলার তোলা বোধহয় আরও সোজা। যা করে আজ বেশ ফুরফুরে মেজাজে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়বে ধ্রুব। আর রাতের অন্ধকারে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মনে মনে বলবে বাহ ভালো ধ্রুব। এইভাবেই জীবনের বাকি কটা দিন কলার তুলে খেলে যাও আর জিতে যাও তুমি। যে জেতে সেই তো সিকন্দর।
অচেনা মাঠে জেতা এক মানুষের গল্প - অভিজিৎ বসু।
চার জানুয়ারী, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন