সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ঝুড়ি

কুমোর-পাড়ার গরুর গাড়ি-
বোঝাই করা কলসি হাঁড়ি।
গাড়ি চালায় বংশীবদন,
সঙ্গে যে যায় ভাগ্নে মদন।
হাট বসেছে শুক্রবারে
বক্সীগঞ্জে পদ্মাপারে।
জিনিসপত্র জুটিয়ে এনে
গ্রামের মানুষ বেচে কেনে।
উচ্ছে বেগুন পটল মুলো,
বেতের বোনা ধামা কুলো,
সর্ষে ছোলা ময়দা আটা,
শীতের র‌্যাপার নক্সাকাটা।
ঝাঁঝরি করা বেড়ি হাতা,
শহর থেকে সস্তা ছাতা।
কলসি-ভরা এখো গুড়ে
মাছি যত বেড়ায় উড়ে।
খড়ের আঁটি নৌকো বেয়ে
আনলো ঘাটে চাষির মেয়ে।
অন্ধ কানাই পথের ‘পরে
গান শুনিয়ে ভিক্ষে করে।
পাড়ার ছেলে স্নানের ঘাটে
জল ছিটিয়ে সাঁতার কাটে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

শুক্রবারের হাটে যাবার সৌভাগ্য আমার হয়নি কোনো দিন। কবির লেখায় বেতের বোনা ধামা কুলোও কিনতে পারিনি আমি কোনো দিন। আসলে ঝুড়ি নিয়ে কি করবো আমি সেটাই ভাবার সময় হয়নি কখনো।রান্না ঘরের কোণে অযত্নে পড়ে থাকা ঝুড়িকে উল্টে পাল্টে দেখিনি কোনোদিন আমরা কেউই মনে হয়।

আচ্ছা সেই বংশী বদনের মত যদি হওয়া যেত বেশ মজা হতো তাই না। গুড়ের হাঁড়ি কলসী নিয়ে লাঠি উঁচিয়ে হাট হাট করে এগিয়ে চলা যেত। গ্রামের মেঠো রাস্তা ধরে। ঝুড়ি ভরে বাজার নিয়ে ঘরে ফিরে বাড়ির উঠোনে সব কিছু একসাথে ঢেলে দিয়ে, সুখের সংসারে সবাইকে ডেকে বলা যেত, দেখো দেখো তোমরা সবাই কেমন বাজার এনেছি আমি আজ। 


আর বাড়ির কাকিমা, জেঠিমারা, সব যে যার কাজ ফেলে হাসি মুখে ,ঘর থেকে বেরিয়ে আসতো সবাই। তারপর দরজা থেকে মুখ বাড়িয়ে বলতো বাহ সত্যিই তো বাড়ির ছোটো ছেলেটা বেশ বড় হয়ে গেছে গো আমাদের। আর তারপর নিকানো উঠোনে গড়া গড়ি খেত লাল টুকটুকে টমেটো, যার রং একদম নতুন বিয়ে করা ন কাকিমার ঠোঁটের মতই সুন্দর ছিল।আর সবুজ কামরাঙ্গা আর মেথির সুন্দর গোছা। 

আসলে এই সব ভাবতে বেশ ভালোই লাগে আজকাল আমার। ছোটো ছোটো ঘর, পাশাপাশি গা ঘেঁসে থাকা। একসাথে বাস করা। এক হয়ে মিশে গিয়ে সবাই মিলে সংসারের হাল ধরা। কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাওয়া মাঝ নদীতে ঠিক একা একা নৌকা চালানো নয়। দাঁড় বাওয়া নয়। সবাই মিলে দাঁড় টানা। 


 আসলে এই জড়িয়ে ধরে বেঁচে থাকার মধ্য একটা বেশ আমোদ ফুর্তি টান ছিল একে ওপরের মধ্যে। সেই যে বছর প্রবল জ্বর হলো ছোটো কাকার, সেই বার জেঠিমা তো সারা রাত জেগে কত জল পটি দিলো ছোটো কাকার কপালে। বললো ছোটো তুই একটু ঘুমও আমি জেগে আছি। আর পাশের ঘরের নতুন বিয়ে হওয়া ন কাকিমা তো নতুন কেনা বার্লি গুলে এনে কাকাকে খাইয়ে দিল পরম যত্নে ভালোবেসে। নতুন পড়া কাপড়ের আঁচল দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিল। যে, ন কাকা অফিস যাবার সময় নতুন বউকে না দেখে অফিস বের হতো না কোনো দিন। সেই ন কাকাও কেমন দরজায় মুখ বাড়িয়ে বলে গেলো ছোটো তাড়া তাড়ি খেয়ে নে। সুস্থ হতে হবে তোকে।না হলে এসব সামলাবে কে।

 উঠোনে ছড়িয়ে পড়া বাজারের মতই ভালোবাসা জড়িয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা ছিল সবার মধ্যে। এঘরের বিবাদ,বিপদে পাশের ঘরের মানুষ গুলো কেমন ঝাঁপিয়ে পড়ে তার সমাধান করার চেষ্টা করতো। কি করে যে সব,বদলে গেলো কে জানে। পরম মমতায় যত্নে ঝুড়ি ভরে রাখা হতো সেই সব বাজার। সেই সব দিন গুলো সত্যিই আলাদা ছিল একদম।


আমিও তাই কদিন ধরেই ভাবছিলাম,সেই ঝুড়ি নিয়ে যদি সত্যিই কোনো ভাবে এই ছোটো ঘরে ফিরতে পারি আমি একা একা‌ কেমন হয় তাহলে। যে ঘরে কাকিমা, জেঠিমা, দিদা, মামী আজ কেউই আর নেই আমার। যে ঘর ছেড়ে সবাই দূরে, বহু দূরে চলে গেছে অনেক দিন আগেই। যে ঘর বড়ো ছোটো। যে ঘরে বড়ো উঠোন নেই, দালান নেই, লাল মেঝে নেই। শ্যাওলা পড়া বাথরুম নেই।


যে ঘরের ইঞ্চি মাপা ড্রয়িং রুম , ইঞ্চি মাপা ঘর আর এক চিলতে বারান্দা আছে। মুখ বাড়িয়ে অনেক কষ্টে দুপুর বেলায় একটু রোদ এসে উঁকি মরে সেই বারা- ন্দায়। যে রোদকে গায়ে জোর করে মেখে কেমন আহা কী সুন্দর বলে আমরা তিন জন এ ওর মুখের দিকে তাকাই অপলক নয়নে। আমাদের বোবা দৃষ্টি ঘরের সুন্দর রং করা পাঁচিলের ওপর ধাক্কা মারে আচমকা। আমরা সবাই কেমন চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকি ইঞ্চি মাপা ঘরে একে অপরের কাছে খুব কাছে। 


যাই হোক যেমন ভাবা তেমনি কাজ। অনেক খুঁজে ঝুড়ি কিনতে বের হলাম আমি। আসলে এই ঝুড়ির মধ্যে থেকে আমি অনেক কিছু ফিরে পেতে চাইলাম। দর দাম করে ঝুড়িও পেলাম ঠিক মনের মতই। ঠিক সেই পুরোনো দালান ওলা একান্নবর্তী পরিবারের সেই ঝুড়ির মতই। মনটা বড়ো ভালো হয়ে গেলো আমার শীতের সন্ধ্যায়।আসলে পুরোনো বন্ধুর সাথে দেখা হলে যেমন ভালো লাগে তেমনি ভাবেই ভালো লাগলো বেশ এই ঝুড়ি কিনতে পেরে।


 সত্যিই তো ঘর ছোটো হোক, ইঞ্চি মাপা ড্রয়িং রুম হোক,আর এক চিলতে বারান্দা হোক।ঝুড়ি তো বড়ো হয়েছে আমার। আর কি চাই। বেশ দরদাম করে মনের আনন্দে আত্মহারা হয়ে ঝুড়ি মাথায় নিয়ে ঘরে ফিরলাম আমি শীতের সন্ধ্যায়।

বেশ ভালো মনে আনন্দে ফুর ফুরে মেজাজে ঘরে ফিরছি সস্তার ঝুড়ি কিনে মাথায় করে। আরে রাস্তায় তো মহা বিপদ ঝুড়ি মাথায় লোক দেখে রাস্তার চার পেয়েগুলো কেমন হৈ হৈ করে তেড়ে উঠলো আমায় দেখে। ওদের কথায়, আরে এ আবার কে এলো রে পাড়াতে। কেমন চেনা লোকটা কে, ওদের অচেনা লাগলো মনে হয় তাই এমন চিল চিৎকার জুড়ল ওরা। একদম রাস্তার ধারে চুপ চাপ বসে থাকা সারমেয় গুলো একযোগে দল বেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়লো আমার ওপর। আমি তো মাথায় ঝুড়ি নিয়ে বেশ ফুর ফুরে মেজাজে ফিরে আসছিলাম। সবটাই কেমন গেলো চটকে। 


একটা পুরনো দিনের টাটকা স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে ফিরছিলাম আমি। সেই ভোর বেলায় মামার বাড়িতে, বজরা মামা এই ভাবে ঝুড়ি মাথায় করে ক্ষেতের ফসল তুলে এনে উঠোনে ঢেলে দিয়ে বলতো কর্তা আরো মাঠে তোলা আছে ওগুলো নিয়ে আসি মাঠ থেকে। কর্তা চুপ করে খড়ম পরে কাঠের চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে থাকতেন সাদা চাদর গায়ে দিয়ে। আর দিদা ছোটো সাদা প্লেট করে লাল সেদ্ধ আগুনে পোড়া বেল মাখা দিয়ে যেত চিনি দিয়ে। কর্তা বসে খেতেন সেটা চামচ দিয়ে একটু একটু করে। শীতের রোদ লুটো পুটি খেত উঠোনে কর্তার পয়ের সামনে। আর সেই রোদে শুয়ে লালু আড় মোড়া ভাঙতো।


 আমরা সব ভীড় করতাম বজরা মামা আর কি আনে দেখার জন্য উঠোনের মাঝে ভীড় করে দাঁড়াতাম সবাই। পুকুর থেকে জাল ফেলে বড়ো মাছ তুলে উঠোনে ঢেলে দিয়ে যেত সোনা চাচা। জ্যান্ত বড়ো মাছটা তখন শীতের নরম রোদে আছাড়ি পিছাড়ি খেত ল্যাজ ঝাপটে। কর্তা সব কিছু আসার পর দিদাকে বলতেন ওদেরকে সব দিয়ে দিও একটু করে। দিদা বলতেন এই তোরা দাঁড়িয়ে যাস সব চলে যাস না। মুড়ি তরকারি খেয়ে টিফিন করে তারপর যাস তোরা আর বাজার নিয়ে যাস ঘরের জন্য।

 কী আষ্টেপৃষ্টে, জড়িয়ে ধরে রাখা জীবন ছিল সব সেই সময়। একদম অন্যরকম ভালোবাসা লুকিয়ে রেখে, সবাই মিলে বেঁচে থাকার নিরন্তর চেষ্টা ছিল। আসলে বোধ হয় জীবনের এই বড়ো-ছোটো, ধনী- দরিদ্র, উঁচু- নিচু, স্ট্যাটাস আপডেট ওলা আর স্ট্যাটাস হীন, ধান্দাবাজ স্বার্থপর আর পরোপকারী আত্ম স্বার্থহীন , শুধুই নিজের জন্য বেঁচে থাকার চেষ্টা করা আর নীরবে নিভৃতে চুপ করে দাঁড়িয়ে অন্যের কথা ভেবে আকুলি বিকুলি করা এসবের মধ্য বেশ একটা ফারাক থাকলেও গভীর গোপন ভালোবাসা লুকিয়ে আছে যে। 

যে ভালবাসা ওই কঠিন কঠোর মানুষটার কাছে আমরা দেখতাম সবাই। দাদুভাই কে প্রতিদিন দুধের বাটির শেষ সরটা আমায় দাদু দিতে ভুলতেন না তিনি কোনো দিনই। ঠিক যেমন করে বজরা মামাদের বাজার দেবার কথা মনে করিয়ে দিতেন তিনি। এটাই বোধ হয় স্বাভাবিক জীবনের নিয়ম। যে নিয়মকে ভেঙে চুরে আমরা নিজেরাই সব ইঞ্চি মাপা জীবনে ঢুকে গেছি একে একে নিজের ইচ্ছায়। 

নিজেদেরকে বদলাতে বদলাতে, ছোটো বারান্দায় এক কোণে চুপ করে একা একা চায়ের কাপ নিয়ে বসে থেকেছি আনমনে মাথার ওপর এক চিলতে আকাশকে বুকে আগলে নিয়ে। আর ভেবেছি সত্যিই কি অসাধারণ অনুভূতি আমাদের, একদম ঠিক ফিতে মাপা অনুভূতি আর ভালোবাসা যার কোনো অংশীদার নেই। শুধু একা আমি তার অংশীদার আর কেউ নয় এর ভাগীদার। 


যে অংশীদারিত্ব নিয়ে আমাদের গর্বের শেষ নেই। বন্ধু মহলে, অফিস মহলে ইঞ্চি মাপা নয়, একদম ফুট,গজ মাপা গর্ব আমাদের। যে গর্বের প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়ে একে অপরের সঙ্গে অজানা অচেনা মানুষ হয়ে লড়াই করার বৃথা চেষ্টা করা। সে বন্ধু, শত্রু, সহকর্মী, সহমর্মী যেই হোক না কেনো। 


আসলে এটাই বোধ হয় আমরা। সত্যিই তো এই ভাবেই বেঁচে থাকা কি খুব দরকার। ঝুড়ি মাথায় নিয়ে ঘরে ফিরছি আমি। কনকনে ঠাণ্ডা গায়ে নিয়ে আমি হাঁটছি ঝুড়ি মাথায় করে একা একা। আশে পাশে কেউ নেই। আমার ফাঁকা ঝুড়ি যেনো ভরে যাচ্ছে ধীরে ধীরে অতি সন্তর্পনে। ফিরে আসছে আমার হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা, বুকের মাঝে লুকিয়ে থাকা মায়া, মমতা আর সহমর্মিতা আর সহানুভূতির ঢেউ ধাক্কা মারছে ঝুড়ির ধারে। ঠিক সমুদ্রের তীরে নোনা ঢেউ এর মত।

একটু একটু করে ভারী হয়ে যাচ্ছে আমার খালি ঝুড়িটা। আমি হাঁটছি, আর হাঁটছি। এক দম একা একা হেঁটে চলেছি টল মল পায়ে। চিৎকার করা কুকুর গুলো কেমন করে যেনো চুপ করে গেল হঠাৎ। তাহলে ওরাও কি চিনতে পারলো অবশেষে আমায়, কে জানে, হয়তো তাই পেরেছে তাই অমন চুপ মেরে গেছে ওরা।

ওরা বোধ হয় বুঝতে পারলো আমি শুধু দু পেয়ে আত্মসর্বস্ব একটা জীবমাত্র নই। যে শুধুই ভালবাসার অভিনয় করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে নিরন্তর সারাটা জীবন,তেমন মানুষ নয় আমি। যার মাথার ঝুড়ি থেকে সবুজ কচি লাউ ডগার মত নরম ভেজা ভালোবাসা উপচে উপচে পড়ছে আমার সারা শরীরে, ছড়িয়ে পড়ছে সেই ভালোবাসার সুখস্পর্শ। 

দুলছে, দুলছে আমার হাঁটার তালে তাল মিলিয়ে তারা মাথা তুলে দুলছে। ছোটো ছোটো ভালোবাসার কনা, ভালোবাসার অনুরণন, আমার সারা শরীরে, মনে, ছড়িয়ে পড়ছে ধীরে ধীরে। আর সেই আমি ফিরে এসেছি আমার ইঞ্চি মাপা ড্রয়িং রুমে, ইঞ্চি মাপা ঘরের ভিতরে। সেই বড়ো ঝুড়িকে মাথায় নিয়ে।

ঝুড়ি - অভিজিৎ বসু।
একুশে জানুয়ারী দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক ও নিজের ফোনে তোলা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...