কিছু মানুষের হাসিটাই যেনো কথা বলে। কিছু মানুষের দাদা তুমি চিন্তা করোনা আমি ঠিক পৌঁছে যাবো সময়ে লাইভ আউটপুট দিয়ে দেবো তোমায়। আবার ঠিক ভীড় এড়িয়ে ফাঁকা জায়গায় লাইভে কেনো দাঁড়িয়ে পড়েছে সে নিয়ে অফিসে কথাও শোনে সে। আবার দুর্গাপুজোর সময় হাসি মুখে একের পর এক মণ্ডপ থেকে পর পর লাইভ করে দিতে ওর জুড়ি মেলা ভার। আবার ছোটো চ্যানেল থেকে অনেক কষ্টে বড়ো চ্যানেলে কাজ করতে এসে বড়ো চ্যানেলের এক কর্তার কোপে পড়ে বুক ফুলিয়ে হাসি মুখে চাকরি ছেড়ে চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখে মনে হয় সত্যিই অসাধারণ ওর এই হাসি ওকে জীবনের যুদ্ধে বারবার নানা ভাবেই জিতিয়ে দেয়। ওর দুঃখে, কষ্টে, সুখে, আনন্দে সব অবস্থায় ও এক ভাবেই বেঁচে থাকতে চেষ্টা করে। মুখে সেই ওর চেনা হাসি নিয়েই।
আজ সাদা জীবনের কালো কথায় আমার সেই পরিচিত বাংলা মিডিয়ায় সিনিয়র সেরা লাইভ সাংবাদিক যদি হয় উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়। তাহলে জুনিয়র সেরা লাইভ সাংবাদিক সেই সুচারু মিত্র। একদম হাসিমাখা মুখের আমাদের লাইভ বয়। ছোটো মাঠ থেকে উয়াড়ি দল থেকে অনেক কষ্ট করে চান্স পেয়ে বড় মাঠে খেলতে এসেছিল ও। বেশ ভালই লাগত ওকে আমার। কোনও কিছুতেই না নেই আর পারবো না এমন কথা ওর অভিধানে নেই। সবকিছুতেই হ্যাঁ, দাদা দেখছি আমি।
সেই ছোটো মাঠের প্লেয়ার বড়ো মাঠে খেলতে এসে সবার মন জুগিয়ে চলার চেষ্টা করলো। গায়ে গতরে খেটে হোক, যে ভাবে হোক এক্সট্রা সময় ডিউটি করে হোক। নানা ভাবেই মন রাখার চেষ্টা করা বাবুদের নিজের জমি শক্ত করতে। দশ মিনিট বাকি খবরের শেষ মুহূর্তে লাইভ লাগবে প্রোডিউসার এর কড়া আদেশ। অ্যাসাইনমেন্টের টেবিলে তখন আমার পাগল পাগল অবস্থা। কি করি কাকে বলি। সবেধন নীলমণি লাইভ বয় সাংবাদিক সুচারু মিত্র মার্কেটে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দাদা আমি আছি তো তোমার ভাই। কোনও চিন্তা করো না। এই বলেই চলে গেলো স্পটে আর বুলেটিন স্টার্ট হচ্ছে যখন মন্তাজ শুরু তখন ওকে ফোন করতেই দাদা আউটপুট দেখে নাও।
কতদিন যে ও এইভাবেই বাঁচিয়ে গেছে আমায় কে জানে। আর সেই লাইভ করাতে না পারলে প্রোডিউসার বলবেন উনি দিতে পারেন নি। যিনি ওই টেবিল এ বসে আছেন আর ঝিমোচ্ছেন বলে আঙুল তুলবেন আমার দিকে। আর বিখ্যাত সেই সকালের ম্যানেজার সুবীর চক্রবর্তী বলবে হলো না, হলো না, বলে কাঁচের ঘরে এডিটরের কাছে আর ডেপুটি এডিটর এর সামনে গিয়ে মাথা দুলিয়ে অ্যাসাইনমেন্টের নামে চুকলি করবেন যেটা করেই তিনি পকেটে হাত দিয়ে এসে আমায় বুকে জড়িয়ে বলবেন অভিজিৎ আমার বহুদিনের বন্ধু।
আর যেটা আমি প্রাণপণে রুখতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আটকাবো। এই দু পক্ষের লড়াই এর আমার প্রধান যোদ্ধা ছিল এই সুচারু মিত্র। আর বুলেটিন শেষ হলেই লাইভ শেষ হলেই সেই ওর চেনা নম্বর থেকে ফোন আসা কি দাদা হলো তো লাইভ। তুমি টেনশন নিও না দাদা একদম,আমি আছি তোমার ভাই আছে এটা মনে রাখবে। সেই সুচারুই নতুন এক গৌহাটির চ্যানেলে ইন্টারভিউ দিতে আসবে বলে না এসে কত যে টেনশন দিলো আমায় সে ঠিক আছে। আসলে এমন নানা চরিত্র ঘুরে বেড়ায় আমাদের চারপাশে। যাঁরা হয়তো এইভাবেই কাজ করে যান হাসিমুখে। আর সেই হাসিমুখেই একদিন বড় চ্যানেলের এক কর্তার রোষে পড়ে চাকরি চলে যায় তার।
ওর সেই কলার তুলে সেক্টর ফাইভের নিউজ রুমে প্রবেশ করা দেখে মনে হলো যাত্রা মঞ্চে যেনো বিবেকের আবির্ভাব হলো। হাসিমুখে ক্রিজে দাঁড়িয়ে ব্যাট হাতে ছয় মারল হাসতে হাসতেই সেই মিডিয়া সিটির অফিসে তখন পিন পড়লেও শব্দ হয়। আর ২৪ ঘণ্টার চাকরি ছেড়ে চলে গেলো ও ওর চেনা হাসি মুখ নিয়েই। হয়তো ওর থেকে কম কাজ করে সেই সময়ে দাদাদের ধরে অনেকেই বেঁচে ছিল। ও হয়তো দাদাদের ঠিক করে চেপে ধরতে পারেনি আর তাই ও হাসি মুখেই বড়ো মাঠ ছেড়ে চলে গেলো আবার সেই ছোটো মাঠে। যেখানে সে রাজা হয়ে ওপেনার হয়ে মাঠে খেলে বেড়ায় আর হাসিমুখে বড়ো চ্যানেলের কর্তাদের দুর থেকে মনে মনে নিশ্চয়ই বলে যে দেখো তোমরা আমার ক্যারিয়ারকে শেষ করে দিতে পারোনি তোমরা যে যা চেষ্টা করেছিলে সেটা হয়নি।
যাই হোক আমি সেই হাসিমুখের সুচারুকে আজও মনে রেখেছি। সেই উল্টোডাঙ্গা স্টেশনের কাছে ঠাকুর দেখতে গিয়ে ওর ফোন করে পূজো কর্তাকে বলে দেওয়া। তারা মণ্ডপ ঘুরিয়ে ঠাকুর দেখিয়ে দেওয়া আমার বাড়ীর লোকদের। সেই পূজো এলেই ওর ভরসায় অ্যাসাইনমেন্টের লোকদের টেনশন মুক্ত হয়ে একটু হাসিমুখেই ডিউটি করা। সেই ছোটখাটো চেহারার কম মাতব্বর সাংবাদিক হলেও সব জায়গায় কেমন করে যেনো ম্যানেজ করে দেয় ও হাসিমুখে সবকিছুই। এমন একজন ব্যক্তিকে নিয়ে আমার ব্লগে তাই কিছু কথা লিখে ফেললাম আজ। ওর কথায় বলি আমি আজ ও নিজেই এই কথা বলে ওকে নিয়ে, সেই রণে বনে জলে জঙ্গলে যেখানে বিপদে পড়িবে আমায় স্মরণ করিবে।
সুচারু মিত্র হলো সেই ক্যাটাগরির রিপোর্টার। হয়তো খুব তথ্য সূত্র সমৃদ্ধ খুব হাইফাই আপডেটেড ভার্সন এর রিপোর্টার নয় ও। তবু ও ওর নিজের মতো করে কাজ করে বোকা বাক্সের পর্দায় ভেসে থাকতে পারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ভরিয়ে দিতে পরে গড়পড়তা বোকা বাক্সের দর্শকদের মন। আমার কথা ভেবে ও ওর নিজের ছোটো চ্যানেলে চেষ্টাও করে আমার কাজের জন্য দু একবার বলে ঋতব্রত কে। সেটা হয়তো হয়নি আর কোনোভাবেই তবু চেস্টা তো করে।
তবু ওর এই জার্নি ছোটো মাঠ থেকে বড়ো প্রথম ডিভিশনের মাঠে। আবার কলার তুলে ছোটো মাঠে ফিরে এসে খেলতে নেমে পড়া হাসিমুখেই এটা কিন্তু একটা বড়ো ব্যাপার। শেষে একটাই কথা বলবো আমি এই ভাবেই হাসিমুখে খেলে যা ভাই। শিরদাঁড়া সোজা রেখে। আর চালিয়ে ব্যাট করে যা। বেঁচে থাকা যে জীবনের ধর্ম। তোর উজ্জ্বল হাসিমুখের জীবন নিয়ে এইভাবেই ভালো থাক তুই। আর বদলে ফেলিস না কিছুতেই নিজেকে। এমন নির্মল হাসিমুখেই বেঁচে থাকার চেষ্টা কর। বড়ো হয়ে গম্ভীর মুখের সুচারু মিত্র হয়ে যাস না তুই। ভালো থাকিস ভাই তুই।
হাসি মুখের সুচারু মিত্র - অভিজিৎ বসু।
ছয় জানুয়ারি, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন