সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এমন এক সাংবাদিকের গল্প। যাঁকে ছাড়া সেই মহাকরণের সাংবাদিকতার নানা গল্প লেখা সম্পূর্ণ হয় না আমার। যাঁকে বাদ দিয়ে আমার এই আঁকিবুঁকি ব্লগের লেখা অসম্পূর্ণ থেকে যায় অনেকটাই। আলুনি হয় মহাকরণের সেই ফেলে আসা দিনের সাংবাদিকদের মিষ্টিমধুর সংসার এর কথা। যাকে ওপর থেকে দেখলে বেশ রাশভারী আর বেশ গম্ভীর মনে হয়। বেশ দূরত্ব বজায় রেখে চলা উন্নাসিক একজন মহিলা সাংবাদিক। যাঁর কাছে গিয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করতে ভয় লাগে। দিদি তুমি কার ঘরে গিয়েছিলে দু লাইন খবর দেবে বলতে অস্বস্তি হয় আর ভয় হয়। কিন্তু যদি তাঁর সাথে মিশে যাওয়া যায় আর তাঁকে কাছে থেকে দেখা যায় মনে হবে না সেটা একদমই।
দুর থেকে দেখা মানুষের থেকে আকাশ পাতাল ফারাক আছে এই কাছ থেকে দেখা মানুষটার। এর থেকে অনেক কঠিন উন্নাসিক সাংবাদিক ঘুরে বেড়ান আমাদের আশেপাশে ভীড় করে চারিদিকে নানা ভাবে নানা রূপে। যাদের চিনতে একটু সময় লাগে। যাঁদের বেড়া টপকে তাঁর কাছে যেতে বড্ড কষ্ট হয়। হ্যাঁ, আজ সেই হাসিমুখের গ্ল্যামারাস সাংবাদিক। যাঁকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবার সামনে থেকে ডেকে নিয়ে নিজের গাড়িতে তুলে নিয়ে সোজা হাসপাতাল ভিজিট করতে চলে যান গল্প করতে করতে। আর আমরা সব ফ্যাল ফ্যাল করে দাঁড়িয়ে দেখি মহাকরণের ভিআইপি গেটে সেই দৃশ্য। আর সেটা দেখে গর্বে বুক ফুলে ওঠে ওর সেই বিখ্যাত ক্যামেরা ম্যান সুনীল মুন্দ্রার।
সত্যিই অসাধারণ এই সাংবাদিক এর জীবন। প্রতিদিন কাগজ থেকে টিভির দুনিয়ায় চলে আসা ওর। মাঝে কিছুদিনের জন্য ইংরাজি কাগজে চলে যাওয়া। আজ সেই মহাকরণের বিখ্যাত সাংবাদিক ২৪ ঘণ্টার এক সময়ের স্তম্ভ, নবান্নের সবার প্রিয় আমাদের সবার দিদি সেই সুতপা সেন। যদিও সম্প্রতি তিনি আর আর তাঁর প্রিয় চ্যানেলে নেই বর্তমানে। সেই যখন উত্তর পূর্বের এই নতুন চ্যানেলে এলেন তিনি আমায় জিজ্ঞাসা করলেন অভিজিৎ আমার কি করা দরকার তুমি বোলো। না, সেদিন সত্যি কথা বলতে পারিনি আমি তাঁকে কি করা দরকার। ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর এর চ্যানেল ছেড়ে অনামী ব্র্যান্ডে চলে আসা কি ঠিক না বেঠিক।
যাকগে আজ সেই সুতপা সেন এর গল্প আমার সাদা জীবনের কালো কথায়। মহাকরণের বারান্দায় যে কোনও ঘরে প্রবেশ করতে যাঁর কোনও অনুমতি লাগে না কারুর। খবর নিয়ে হৈ চৈ হুল্লোড় না করেও কেমন এলো চুলে দিব্যি খবর নিয়েই একটা গোটা জীবন কাটিয়ে দেওয়া হাসতে হাসতেই তাঁর। অন্য এক রাজনীতির বৃত্ত থেকে উঠে এসেও কেমন ভিন্ন ঘরানার রাজনীতির সংসারে দিব্যি হাসি মুখে কাজ করা। যেটা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি বলেই আমি আজ ব্রাত্য খবরের দুনিয়ায়। ওর সেই ঠাণ্ডা মাথার সিদ্ধান্ত যে কোনো জায়গায় কভারেজ করতে গিয়ে হাসিমুখে কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করে ফিরে আসা। বেশ ভালো সাংবাদিক এর গুণ এটা কিন্তু। একজন মহিলা সাংবাদিক হয়েও কেমন করে যেনো সবার সাথেই পাল্লা দিয়ে লড়ে যাওয়া ওর।
ওর সাথে দেখা হলে যদিও আর হয় না আজকাল দেখা একদম আমার সেটার কোনও সম্ভাবনা নেই। কথা হলে মেয়ের খোঁজ নেওয়া আর কতদিন ওর পড়া আছে খবর নেওয়া বেশ একটা ঘরের লোকের মতই ওর ব্যবহার। যেটা একসাথে বহুদিন কাজ করেও অন্যদের থেকে এটা পাওয়া যায়না একদমই। কেউ কেউ বোধহয় দূরের থেকেও কেমন করে বেশ কাছের আর নিকটের হয়ে যায় কেমন অজান্তেই। আবার কেউ খুব কাছের হয়ে দূরের মানুষ হয়ে যান। এটাই বড় আশ্চর্যের ব্যাপার কিন্তু।
আর তাই এই শীতের সকালে মনে হলো মহাকরণের সেই কাঠের সিঁড়ি। সেই সিঁড়ি বেয়ে একে ওপরকে টপকে চলে যাওয়া মুখ্যমন্ত্রীর সামনে নোটবুক আর পেন নিয়ে সাংবাদিকদের। অপেক্ষমান সাংবাদিকদের দৌড়ে ছুটে যাওয়া, মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা, হাসি মুখে সুতপা সেন এর নাম ধরে ওকে ডেকে নিজের গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যাওয়া। সেই সব দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায় আমার। বড্ড মিস করি আমি সেই ফেলে আসা মহাকরণের দিনগুলোকে। দৌড়ে বেড়ানোর দিন গুলোকে। ছুটে বেড়ানোর দিন গুলোকে। ভালো থেকো তুমি দিদি। এমন হাসিমুখে সবার প্রিয় দিদি হয়েই আনন্দে থেকো। জীবনের হাজার দুঃখ কষ্ট কে ভুলে থেকে ভালো থেকো তুমি।
মহাকরণের সুতপা সেন - অভিজিৎ বসু।
ছয় জানুয়ারি, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন