আজকাল টিভি খুলতেই বেশ ভয় করে খুব আমার। বুকটা কেমন ধুকপুক করে আমার। চারদিকেই শুধুই হেলে পড়া বাড়ীর খবরে ভরপুর গোটা টিভির পর্দা। রাস্তার চারিদিকে ভীড় উপচে পড়ছে। কখনও উত্তরে হেলে পড়ছে বাড়ী তো আর তারপরেই দক্ষিণে হেলে পড়ছে বাড়ী। আর সেই সব দেখেই এই আপাত শান্ত জীবনে কেমন যেনো থমকে দাঁড়িয়ে পড়া আমার। হেলে পড়া বাড়ীর খবর করতে নানা চ্যানেল থেকে ছুটে আসা সাংবাদিকের দল। রাস্তা জুড়ে হৈ চৈ হুল্লোড় আর হট্টগোল।
সত্যিই ফেসবুকের দেওয়ালে চোখে পড়লো ঠাট্টা করে লেখা বাম আমলের তৈরি বাড়ী হঠাৎ করে কেনো এই আমলে হেলে পড়ছে তার রহস্য কি বলতে পারেন। এই কথা বলে জিজ্ঞাসা করেছেন এক বাংলার বিখ্যাত প্রবীণ দাপুটে সাদা কালো গোঁফের পাকা মাথার সাংবাদিক। যিনি সবেতেই এই খুঁত ধরতে ব্যস্ত আর প্রশ্ন করতে ব্যস্ত থাকেন তিনি। আসলে কঠিন মনের জিজ্ঞাসু সাংবাদিক তো তাই হয়তো এমন আগ্রহ তাঁর বরাবর।
সে যাই হোক আমি কিন্তু বেশ আতংকেই দিন যাপন করছি ইদানীং দিন,রাত,ভোর, সন্ধ্যা সব সময়। আমি আমার বাড়ীর টিভির পর্দা কালো পর্দায় ঢেকে দিয়েছি। কোনোভাবেই টিভির নব ঘুরিয়ে অন করছিনা ওই যন্ত্র। এই টালা না টালিগঞ্জ। এই মেটিয়াবুরুজ না পাটুলি। ভবানীপুর না বাগুইআটি। সেই খবর দেখে এই নানা চিন্তায় ঘুম আসছে না আমার আজকাল। ঘুম আসছে না স্বয়ং হাসিমুখের কলকাতার মেয়রেরও। কি যে হলো শহরের কে জানে। শীতের সকালে ঘুম ভেঙেই শুধুই হেলে পড়া বাড়ীর খবর।
এতো মহ বিপদে পড়া গেলো দিব্যি হাসিমুখের দাঁড়িয়ে থাকা বাড়ীর এই হঠাৎ করেই হেলে পড়া। হয় ডানদিকে না হলে বাম দিকে। কোনোও সময় আবার সামনের দিকে ঝুঁকে পড়া তার। আচ্ছা যদি আমার এই ছোট্ট সারা জীবনের একমাত্র ভরসা আশ্রয় এর বাড়ীটা হেলে পড়ে কি হবে তাহলে কে জানে। কোথায় যাব আমি এই শীতের নিশুতি রাতে জানি না আমি। পরিবার নিয়ে তো পথে বসবো তাহলে। আর তাই সেই চিন্তায় ঘুম আসছে না আমার আজকাল।
ঠিক যেনো মানুষের মতোই। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ঋজু মানুষের হঠাৎ করেই ঝুঁকে পড়া আর একটু একটু করে হেলে পড়া। ঠিক যেনো স্ট্যান্স বদলে ক্রিজে নতুন স্টাইলে ব্যাট করতে নামা। আর সেটা দেখেই আশপাশের লোকদের অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখা। পাল বাবুর বদলে যাওয়া মেনে নিতে পারেন না পাশের বাড়ীর মিত্র বাবু। আর তাই বলেন পাল অমন বদলে যাবে তিনি বুখতে পারেন নি। আবার সেই দত্ত বাড়ির অতি সাধারণ বৌ কেমন করে যেন স্বামীর উপরি আয়ে হঠাৎ করেই বদলে গেছে। ঝুঁকে পড়েছে কেমন করে ওই লোকাটের স্লিভলেস ব্লাউজ পড়ে নিজে নিজেই।
সত্যিই জীবন বড়ই বিচিত্র যেনো। এই হেলে পড়া বাড়ির মতোই। একবার শিরদাঁড়া সোজা হয়ে জীবন ধারণ করে লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে আশপাশের মানুষজনের হাততালি কুড়িয়ে বেঁচে থাকা নির্মল আনন্দে। আবার সেই হেলে পড়া দুলে ওঠা বাড়ীর মতোই কেমন মন খারাপ করে ফ্যাকাশে মুখে বেঁচে থাকা সমাজে মুখ লুকিয়ে।
সত্যিই অসাধারণ এই হেলে পড়া জীবন আর সোজা সাপটা জীবন। যে জীবনের এই নানা জলছবি নানা কোলাজ আমায় কেমন করে যেনো আচ্ছন্ন করে রাখে এই বুড়ো বয়সে এসে। আর আমি একবার ভাবি হেলে পড়া বাড়ীর মতোই সেই নিজেকে বদলে নিয়ে বেঁচে দেখি না একবার কেমন লাগে আমার। পরক্ষণেই ভাবি কি আর হবে এই বুড়ো বয়সে স্ট্যান্স বদলে জীবন বদলে এতদিন পরে হেলে গিয়ে। তার থেকে বরং যেমন আছি সেভাবেই কাটিয়ে দিতে চাই আমি আমার এই এলেবেলে এলোমেলো বিন্দাস জীবন।
হেলে পড়া বাড়ী - অভিজিৎ বসু।
চব্বিশ জানুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য গুগল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন