সাদা জীবনের কালো কথায় আজ সেই ইটিভির শুভঙ্কর এর কথা। শুভঙ্কর চৌধুরী। সেই টিভি ছেড়ে ধীরে ধীরে ওর কাগজের সাংবাদিক হয়ে যাওয়া। সেই শ্রীরামপুরে স্টেশনের পাশেই ওদের বাড়ি। ওর মা আর দিদিকে নিয়ে ওর পরিবার। হাসিখুশি, ভদ্র, মার্জিত রুচিশীল ব্যবহার এর ছেলে শুভঙ্কর। আর মা অন্ত প্রাণ ও। ওর এই মা এর প্রতি ভালোবাসা শ্রদ্ধা দেখে একটা কথা মনে হয় আমার। মাতৃভক্তি অটুট যত সেই ছেলেই হয় কৃতী তত। এই কথাটা একদম হাতেনাতে ফলেছে ওর জীবনে। ও আজ অনেক বড়ো সাংবাদিক ইংরাজি কাগজের।
বেশ নাম ডাক হয়েছে ওর কিন্তু প্রথম অবস্থায় ওকে কম লড়াই করতে হয়নি সেই ৫৫ বি মির্জ্জা গালিব স্ট্রীট এর অফিসে। সেই টিভির সাংবাদিকতা করতে গিয়ে। কিন্তু যার প্রতিভা থাকে তাকে যতই আটকে রাখার আর চেপে রাখার চেষ্টা করা হোক সে ঠিক বিকশিত হয়ে ফুটে বের হবেই। আর সেটাই হয়েছে ওর জীবনে। নানা চড়াই উৎরাই পার করে আজ ও অনেক বড়ো রিপোর্টার। মা আর ছেলের সংসারে ওরা বেশ আনন্দে দিন কাটাতো শ্রীরামপুরের সেই দোতলা বাড়িতে। ওকে ডাকতে গেলে দেখতাম ওর মা বসে আছেন। ওর দিদির কলকাতায় বিয়ে হয়েছিল। খুব সম্ভবত হুগলী জেলার কোন্নগরে স্কুলের চাকরি হলো ওর দিদির। আর তারপর দিদি আর ভাই একসাথে কাছে থাকবে বলে ওদের শ্রীরামপুরের বাড়ী বিক্রি করে চলে যাওয়া কলকাতায়।
সেই পুরোনো বাড়ী বিক্রী করতে গিয়ে কত সমস্যা। তবু সব গুটিয়ে নিয়ে শুভঙ্কর চলে গেলো কোলকাতায়। সেই ইটিভির পার্ক স্ট্রীট এর অফিস এর পার্ট উঠে গেলো ওর। ও টেলিগ্রাফ কাগজে যোগ দিলো। আমার বেশ ভালো লাগলো এটা শুনে। ওর এই টিভি ছেড়ে চলে যাওয়া। আর এখন তো ও শিক্ষা বিটের বেশ দাপুটে রিপোর্টার। কিন্তু সেটা ওকে দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। খুব যে হইচই করে লাফিয়ে কাজ করে সবাইকে বুঝিয়ে দিতে চায়, ও সেটা কোনোদিন করেনি। কেমন একটা পকেটে হাত দিয়ে হাসি মুখে এক্সক্লুসিভ খবর লিখে ভাবটা এমন তো কতোই হয়। এতে আর বলার কি আছে। এটাই তো রিপোর্টার এর কাজ। এমন লো প্রোফাইলে থেকেও হাইপ্রোফাইল পাওয়ারফুল রিপোর্টার এর জীবন কাটিয়ে দেওয়া বেশ মন্দ নয় কিন্তু এই ব্যাপারটা।
ওর বিয়ের সময় নিমন্ত্রণ করেছিল আমায়। যে কোনো কারণেই হয়তো আমার যাওয়া হয়নি। সেসিন হুগলী জেলার কোন্নগরে সব বিটের রিপোর্টারদের পিকনিকে একটি গ্রুপ ছবি দেখে মনে পড়ে গেলো আমার ওর কথা। একটা বড়ো ব্র্যান্ড এ কাজ করেও কেমন যেন একটা অগোছালো ভাবেই জীবন কাটিয়ে দেওয়া। যে কোনো নম্বর, মেয়ের কলেজ ভর্তির সময় যে কোনো আলোচনা করতে বিরক্ত হয়নি ও কোনোদিন। যেটা সাধারণত কলকাতার রিপোর্টারদের একটা বড়ো ব্যাপার থেকেই যায়। একটু দূরে নিজেকে ঘেরাটোপে লুকিয়ে রাখা আপাতগম্ভীর একটা ভাব করে। যাতে কেউ তার ধারেকাছে ঘেঁষতে না পারে। কিন্তু সেটা ও আমার ক্ষেত্রে করেনি কোনোদিন। আমি জেলার পাতি রিপোর্টার আর ও সেই কলকাতার সাদা বাড়ীর রিপোর্টার এই ভেদাভেদ ভুলে আমার সাথে কথা বলত ও।
মাঝে মাঝেই ফোন করতাম বলতো মাকে নিয়ে নার্সিং হোম এসেছি। পরে ফোন করছি আমি তোমায়। কত বার এমন অসুস্থ হয়েছেন ওর মা আবার ফিরে এসেছেন বাড়ী। কিন্তু এই কিছুদিন আগেই ওর মা চলে গেলেন কিছুদিন আগেই। ও একা হয়ে গেলো একদম। ওর বউ, দিদি, ভাগ্নী সবাই আছে কিন্তু সেই ছোটো বেলা থেকে ওর যে মা আর ছেলের জুটি সেটাই ভেঙে গেলো এতদিন পরে। কতদিন ওর সাথে মজার আড্ডা দেওয়া হয়নি আমার। কতদিন সেই পুরোনো দিনের লোহা, দীপালি, বিশ্বজিৎ, অরূপ দত্ত, পিয়ালি, মৌসুমী, শাবানার কথা মনে করে গল্প করা হয়নি আমাদের দুজনের। বেশ মজার গল্প বলতো ও পুরোনো দিনের। সেই বিশ্বজিৎ দা, জয়ন্ত দা এদের গল্প। আর সেই বিখ্যাত দাপুটে হীরক কর এর গল্প। বেশ মজার ছিল দিনগুলো কিন্তু।
আজ সকাল বেলায় হঠাৎ করেই আমার শুভঙ্কর এর কথা মনে পড়ে গেলো। আর তাই সেটা আমি লিখে ফেললাম আমার ব্লগে। কেউ কেউ বলেন আমায় দাদা, এইবার তেল শেষ হয়ে যাবে আপনার। এতো তেল দিয়ে লিখবেন না আর। কেউ বলে কি দরকার এইসব নানা রিপোর্টারদের প্রোফাইল নিয়ে লেখার। প্রোফাইল রাইটার তো তুই নয়। কি দরকার এদের নিয়ে লেখার। কিন্তু আমি মনে ভাবি আমার জীবনের আশপাশে সেই শুভঙ্করদের পুরোনো অন্ধকার ঘর, সেই আমগাছে ঘেরা ওদের বাড়ির বারান্দা, সেই ওর মার চেয়ারে বসে থাকা, সেই ওর দিদির আর ভাই এর হৈ চৈ হুল্লোড় করে জীবন কাটিয়ে দেওয়া, সেই শুভঙ্কর এর টিভির চাকরি ছেড়ে কাগজে যোগ দেওয়া, সেই ইটিভির ফেলে আসা বন্ধুদের নিয়ে কত আলোচনা করা আর মজার গল্প করা এগুলো তো ছিল একসময়। তাহলে তাদের কথা ভুলে যাই কি করে। কেনো এসব কথা লিখলে লিপিবদ্ধ করলে ক্ষতি কি। ভালো থেকো তুমি শুভঙ্কর। উঁচুতে উঠে গিয়েও এমন মাটির রাস্তায় পা ফেলে হাসি মুখে হেঁটে বেড়াও তুমি। যাতে আমার মত ছাপোষা লোকজন তোমার নাগাল পায় মাঝে মাঝে। ভালো থেকো তুমি।
ইটিভির সেই শুভঙ্কর - অভিজিৎ বসু।
আট জানুয়ারি দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন